কথোপকথন-১
কথোপকথন-২
"খুব ভাব, না?"
-কেনো?
"বহুক্ষণ অনলাইন দেখছি, কিন্তু নক্ করছোনা তো! ইদানিং বেশ ভাব মারছ নাকি?"
-সবসময় আমাকেই কি নক্ করতে হবে? এক-দু'বার তুমিও তো নক্ করলে পারো!
"এই যে করলাম!"
-আমি ধন্য হয়ে গেলাম। কখনও তো করোনি আগে! আজ সূর্যটা, থুক্কু চাঁদটা কোনদিকে উঠেছে দেখতে হবে।
"ছাই উঠেছে। কতক্ষণ ধরে বারান্দায় বসে তাকিয়ে আছি আকাশে, তোমার চাঁদ-বাবাজীর দেখাই নেই!"
-তাহলে এই ব্যাপার! চাঁদ ছ্যাঁকা দিয়েছে বলে এই অভাগার কপাল খুললো!
"কী আবোল তাবোল বকছো! এত রাত জেগে কী করছো? ঘুমোও গিয়ে, যাও।"
-সত্যি কথা কি জানো? ঘুম পেয়েছিল ঠিকই, অফলাইন হওয়ার আগে দেখি তুমি লগিন করলে। চোখের ঘুমটুম সব হাওয়া হয়ে গেল।
"এই বুড়া বয়সে খোকামিগুলো না-করলে হয়না?"
-বারবার বয়সের কথা বলো কেন? আমার বয়স যতই বাড়ুক, তোমার কাছে কিভাবে যেন খোকাই হয়ে যাই।
"আ-হা! সেই চড়টা এখনও গালে চিড়চিড় করে। তখন তোমার খোকামি কোথায় ছিল শুনি?"
-হা হা হা! সত্যি, সেদিন তোমাকে বড় জোরে মেরেছিলাম। তারপরে আমার এত কষ্ট হয়েছিল। তোমাকে তো টানা দু'সপ্তাহ চোখেই দেখিনি। আমাকে একবার স্যরি বলারও সুযোগ দিলেনা।
"স্যরি বললে সেই চড় কি মুছে যাবে? কত কষ্ট পেয়েছিলাম জানো? তোমার জায়গায় আর কেউ হলে উল্টা মাথায় তুলে রাখতো। আমি আশ্চর্য হয়ে গিয়েছিলাম তোমার এই রিঅ্যাকশন দেখে!"
-আচ্ছা আমার তখন মাথার ঠিক ছিল? ট্রেন ছেড়ে দিচ্ছে, তুমি রাগ করে নেমে গেলে। আমি তন্ন তন্ন করে খুঁজেও তোমাকে পেলাম না। অচেনা একটা ষ্টেশন, সেদিন তোমার কোনোও ক্ষতিও তো হতে পারতো!
"বেশ করেছি নেমে গিয়েছি। আমাকে রাগিয়েছিলে কেন? তোমার জন্যেই হারিয়ে গিয়েছিলাম, আবার সেই তুমিই কিনা খুঁজে নিয়ে আমাকে চড় দিলে?"
-আ-হা, বলো তুমি, আমার মনের ভেতর দিয়ে কী হচ্ছিল বুঝতে পারো তা? আর তখনও তো জানতাম তুমি আমার। এক চড়ের কারণে চিরতরে এমন দূরে চলে যাবে জানলে সেদিন চড় না-মেরে বুকে জড়িয়েই ধরতাম!
-কি হলো? এত পুরোনো রাগ এভাবে পুষে রাখলে হয়? আমি তো অনেক অনেক বার মাফ চেয়েছিলাম। এখনও চাইছি, প্লীজ মনে রেখোনা! সেদিনের ঘটনা নিয়ে তোমার চাইতে রিগ্রেট আমার বেশি হয়, জানো?
"তোমার কথাবার্তার ধরণে হাসি পায়। কী যে বলো, মাথার ঠিক নেই, না?"
-কী বললাম আবার?
"কিছুনা।"
"আমার কোনও রিগ্রেট নেই।"
-সত্যি বলছো?
"মিথ্যে বলবো কেন?"
-ভাল কথা, তোমার কন্ট্যাক্ট লিস্টে আর কে-কে অনলাইন?
"কেউ না তো! খালি তুমি। এত রাতে আর কে জেগে চ্যাট করবে?"
-তবে বলো, আমার সাথে কথা বলার জন্যই তুমি লগিন করেছ!
"উমম, হ্যাঁ করেছি। তো, কী হয়েছে তাতে? তোমার সাথে কথা বলতে পারিনা?"
-নিশ্চয়ই পারো। হাজারবার পারো। খালি তোমারও যে রিগ্রেট হয় সেটাই স্বীকার করতে চাওনা।
-কি হলো? রাগিয়ে দিলাম?
"কিছুটা।"
-থাক বাবা, তোমার রাগে ভরসা হয়না। আবার যদি হারিয়ে যাও...এত বছর পরে খুঁজে পেয়েছি, আর হারাতে চাইনা।
"সেভাবে খুঁজলে আমাকে ঠিকই পেতে। যা যত্নে থাকে, তা হারায়না। অযত্নের জিনিস বেদখল হওয়ার পরে আফসোস করা ঠিক না।"
-সে আমার চেয়ে ভাল কে বোঝে বলো? হাতে পেয়েও যদি রাখতে না পারি, সে যে আমার কত বড় ব্যর্থতা, এর কষ্ট সীমাহীন।
"তোমরা পুরুষরা এমনই। ভালবাসা যখন হাতের নাগালে থাকে তখন তাকে তুচ্ছজ্ঞান করো। যখন সেটা দূর্লভ হয়ে যায় তখন মরো মাথা কুটে।"
-মাঝে মাঝে আমার কী মনে হয় জানো? মনে হয় আমাকে খুব কঠিন একটা শাস্তি দিতে চেয়েছিলে। সেটা এভাবেই দিলে।
"কথাটা কিছু ভুল বলোনি। ভীষণ অভিমান হয়েছিল আমার। ভীষণ। ভীষণ!!"
-কিন্তু আমাকে শাস্তি দিতে গিয়ে নিজে কি কম কষ্ট পেলে?
-কি হলো? কথা বলবেনা আর?
"আজ উঠি? ঘুম পেয়েছে খুব।"
-যাবে? যাও। খালি একটা প্রশ্নের উত্তর দিয়ে যাও। যদি সত্যি বলতে না চাও, তো কিছুই বোলোনা। তবু মিথ্যে বোলোনা প্লীজ!
"মিথ্যে বলবো কেন শুধু শুধু?"
-সত্যি কি ঘুম পেয়েছে? তুমি কাঁদছো না তো?
"আমার ভালো লাগছেনা এসব কথা। আজ উঠি।"
-উত্তরটা পেয়ে গেলাম তাহলে? কেঁদনা। যতটা ছেলেমানুষ ভাবো আমাকে, ততটা আমি নই। তোমাকে কষ্ট দিতে চাইনি কখনও এটা মনে রেখো। আজ যদি কষ্ট দিয়ে থাকি, বিশ্বাস করো, আমি ইচ্ছে করে দেইনি।
"বিশ্বাস করেছি।"
-ঠিক আছে তবে। মন খারাপ কোরোনা। ভালো থেকো।
"আচ্ছা।"
কথোপকথন-৪
কথোপকথন-৫
কথোপকথন-৬ (শেষ)
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০১০ সকাল ৮:৫৭