'এ কি তুমি অনলাইন? এখনও অফিসে?'
"নাহ্, রাস্তায়। কঠিন ট্র্যাফিক জ্যাম।"
'হায় হায়, ইফতার করবা কখন? বাসা থেকে ফোন করছেনা?'
"হুমম, খবর নিয়েছে।"
'সাথে খাবার-দাবার কিছু আছে? আযানের আগে বাসায় পৌঁছাতে না-পারো যদি!!'
"সাথে পানি আছে, রোজা ভেঙ্গে নেবো। তুমি কি বাসায়?"
'হুমম, বাসায়। কিছু কাজ বাকি রেখে চলে এসেছি। তাঈ করছি বসে বসে। শোন, গাড়িতে ফ্রুট্স্ টাইপ কিছু রেখো এবার থেকে।'
(কোনও উত্তর নেই)
'কি হোলো? শুনতে পাওনি? গাড়িতে ফলমুল কিছু রেখে দিও এবার থেকে।'
"থ্যাংক্স ফর ইওর কন্সার্ন। আমি তো এই কন্সার্ন ডিসার্ভ করিনা।"
'রাগ? এখনও?? বয়স হয়ে যাচ্ছে দেখছো তো? ক'দিন বাঁচবো বলো?'
"আমারও তো সেই একই কথা। ক'দিন আর বাঁচবো। নিজের জীবন যদি নিজের মতই চালাতে না-পারলাম তবে কেনই বা বেঁচে থাকা?"
'আজব, এ কেমন কথা? কী নেই তোমার? বাচ্চা কাচ্চা, সংসার, বাবা-মা সবাই তোমার আশেপাশে। এমন ভাল ক্যারিয়ার, এর বেশি কী লাগে বেঁচে থাকার জন্য? আল্লাহ্র কাছে শুকরিয়া করো। যা-আছে তা নিয়ে ভাল থাকা যায়। ভালো থাকার চেষ্টা করতে হয়।'
"আমাকে এসব বোলোনা প্লীজ। মিছিমিছি সময় নষ্ট। জানি একটু পরেই তুমি আমাকে বলবা আমার চাওয়া বেশি, লোভ বেশি, সুখে থাকতে আমাকে ভুতে কিলায়---বাদ দাও এসব। যারা বোঝেনা, তাদের বোঝানো যায়। কিন্তু বুঝেও যারা না-বোঝার ভাণ করে তাদের তো বোঝানোর চেষ্টা করাই বৃথা।"
'কথাটা ঠিক বললে না। আমি তো ভালই আছি। জীবনের অর্ধেকটা পার করে এইটুকু বুঝেছি যে আমি কী চাই। আমার বাচ্চারা, আমার কাছের মানুষেরা, এদের নিয়ে আমি একটা জীবন পার করে দিতে পারি। ধরা-ছোঁয়ার বাইরে কোনও কিছু নিয়ে হা-হুতাশ করে নিজেকে হুদাই অসূখী করার পক্ষপাতী আমি নই।'
"ভালো তো, ভালো। তুমি ভালো আছো, এটাই আমার ভালো লাগে। একজন তো অন্ততঃ ভালো আছে!"
'এভাবে বোলোনা। তোমার জীবন তোমার, আমারটা আমার। আমি জানি আজ পর্যন্ত যা পেয়েছি, তার কিছুই আমার চাইতে হয়নি। সর্বশক্তিমান আমাকে না-চাইতেই অনেক কিছু দিয়েছেন। নিয়েছেন যা, দিয়েছেন তার বহুগুণ বেশি। আমি যদি তা'নিয়ে সন্তুষ্ট না-থাকি তবে সেটা খুব অন্যায় হবে।'
"আমার যা পাওয়ার ইচ্ছা ছিলোনা, তোমার সর্বশক্তিমান সেটা ঝোলা ভরে আমায় দিয়ে দিলো। চেয়েছিলাম একটামাত্র জিনিস, তাইই উনি দিলেন না। এটা বরং আমার কাছে বড় বেশি অন্যায় বলে মনে হয়।"
'এটাই তো বেঁচে থাকার শর্ত। পৃথিবীটা একটা এক্সাম-সেন্টারের মত। তুমি, আমি, আমরা সবাই একজনের খেলার পুতুল। তাঁর শর্তমত বাঁচতে পারলে জিৎ, তাঁর নিয়মের বাইরে যেতে চাইলেই হার। তুমি তো বেকুব, তাই এত সোজা কথাটা তোমার মাথায় ঢোকেনা'।
"জানি জানি আমি বেকুব। তোমার কাছে তো আমি সারাজীবনই বেকুব।"
'এখনও বাসায় পৌঁছাওনি?'
"আমি বাসার পার্কিংএ গাড়ির ভেতরে বসে আছি।"
'আচ্ছা তোমার মাথা খারাপ? নামো গাড়ি থেকে! আর কয়েক মিনিট পরেই আযান দেবে! খোদা হাফেয। আমিও টেবিলে গেলাম।'
"শোনো! একটা লাস্ট মোমেন্ট কথা!"
'বলো। জলদি!!'
"থাক্, বাদ দাও। ভালো থেকো।"
'হুমম, বাদ দেওয়াই ভালো। তুমিও ভালো থেকো।'
কথোপকথন-২
কথোপকথন-৩
কথোপকথন-৪
কথোপকথন-৫
কথোপকথন-৬ (শেষ)
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০১০ সকাল ৯:০০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




