৫ম পর্বের লিংক: Click This Link
.
মানুষ কোন কিছুর সাহচার্য সহজে ভুলতে পারে না। জীবন্ত কিছু হলে তো কথাই নেই, জড় পদার্থের জন্যও তার মন পুড়ে। গতকাল মোবাইলটা ছিনতাইয়ের পর থেকে মনটা বিষন্ন। প্রায় দুই বছর স্যামসং এ সিক্স (২০১৭) মডেলের মোবাইলটা আমার সাথী ছিল। আজ ও নেই। মনটাকে শান্ত করার জন্য সূরা কাহফ শেষ করি। প্রায় প্রতি শুক্রবার আমি এই আমলটা করি। মনটা কিছুটা প্রশান্ত হয়। ল্যাপটপটা নিয়ে বসি। অফিসের ইআরপির সমস্যাটার সমাধান করতে হবে। না হলে মান্থ ক্লোজিংয়ে সমস্যা হবে। গ্রুপে রিপোর্ট পাঠাতে পারবে না। কাজের মধ্যে ডুবে গেলাম। এরর দেওয়া প্রোগামটা মনোযোগ সহকারে ডিবাগ করছি। ডিবাগিংটা খুব ধৈর্যের কাজ ও সময় সাপেক্ষ। তবে এই বয়সেও আমি ওটা উপভোগ করি। যখন সমাধানটা পেয়ে যাই, একটা গল্প বা কবিতা লেখার মতই আনন্দ পাই। কিছুক্ষণ পরেই আনন্দটা ধরা দিল।
.
এদিকে শাহানা তাগাদা দিচ্ছে। বাজারে যাওয়ার। পুরোটা শেষ না করে ওঠতে পারছি না। ওর অনুযোগ, তুমি না বলেছিলে আজ বাজার করে দিবে?
গতকালের দুর্ঘটনার পর আমি মনে মনে ঠিক করেছি, মেজাজটা ঠাণ্ডা রাখবো। কিন্তু গলার উষ্ণতাটা চাপা দিতে পারলাম না, “যখন কথা দিয়ে ছিলাম, তখন অফিসের এই ঝামেলা হবে জানতাম না।“
“ঠিক আছে, তোমার বাজারে যাওয়া লাগবে না।“ শাহানাও ক্ষেপে উত্তর দিল।
আমি সন্ধির পথে গেলাম। “এই পাঁচ মিনিট – একটা ই-মেইল করে ওঠছি।“
একাউন্টসের সহকর্মী তাহমিদ ভাইকে ই-মেইলে বিস্তারিত লিখে ওঠে পড়লাম।
.
বাজার থেকে ফিরে আবার ল্যাপটপে বসলাম। কারণ আমার মোবাইলে অফিসের কেউ আমাকে পাবে না। স্কাইপিতে দেখি তাহমিদ ভাই নক করছে। সাড়া দিলাম। সিস্টেমে নতুন ভাবে কিছু জিনিস সেট করতে হবে। আমি একটা ডক ফাইলে তা পাঠিয়ে ছিলাম। সেটা নিয়ে তাহমিদ ভাইয়ের কিছু কনফিউশন ছিল। সেটা ক্লিয়ার করার জন্য শাহানার মোবাইল নম্বর দিলাম উনাকে। কাজ শেষে তাহমিদ ভাই জানতে চাইলে আমার মোবাইলর কী হয়েছে? আমি সংক্ষেপে ছিনতাইয়ের ঘটনাটা উনাকে বললাম।
উনি শুনে বললেন, “ইশতিয়াক ভাই, তখন কী সাড়ে নয়টা বাজে।“
আমি বলি, “না, এগারোটা বা সোয়া এগারোটা হবে।“
উনি বললেন, “আমি সাড়ে ন’টার সময় ফার্মগেট দিয়ে যাচ্ছিলাম। গাড়ি থেকে দেখলাম একটা বাসের জানালার পাশের এক যাত্রীর মোবাইল নিয়ে একটা লোক দৌঁড়। তার মানে এখানে প্রায়ই ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে।“
আমিও তাহমিদ ভাইয়ের কথায় সায় দিলাম।
.
রবিবার অফিসের গাড়িতে মাজহার ভাই ও অন্য দুই সহকর্মীকে আমার মোবাইল ছিনতাইয়ের ঘটনা সংক্ষেপে বলি। তাহমিদ ভাইয়ের অভিজ্ঞতার কথাও বলি। মাজহার ভাই রসিকতা করে বলেন, আপনি বেঁচে গেছেন।
“কী ভাবে?” আমি জানতে চাই।
মাজহার ভাইয়ের বর্ণনা আমি সংক্ষেপে দিলাম:
বাস ফার্মগেটে থেমে আছে। কেউ ওঠছে, কেউ নামছে। মাজহার ভাই ফার্মগেটের জনস্রোত দেখছেন জানালা দিয়ে। হঠাৎ সামনের সিটে বসা এক ভদ্রমহিলার আর্ত চিৎকার। কী ঘটনা, মহিলা এতো জোরে কেন চিৎকার করছে? সামনে এগিয়ে গিয়ে দেখেন, মহিলা তার কান হাত দিয়ে ধরে আছেন। রক্তে হাত, গালের পাশটা ভেসে যাচ্ছে। মহিলার কানে দুল ছিল। জানালার পাশে বসে ছিলেন। দুল টান দিয়ে নিয়ে গেছে। কানের লতি ছিড়ে গেছে। বাস থামিয়ে কয়েকজন ভদ্রমহিলাকে পার্শ্ববর্তী আল-রাজী হাসপাতালে নিয়ে গেলেন।
আমি হতাশা গলায় বলি, "মাজহার ভাই, এভাবে দেশ চলে।"
উনি হাসতে হাসতে বলেন, "ইশতিয়াক ভাই, দেশ তো চলছে!"
আমি ক্লিশ হেসে বলি, “হ্যাঁ, ঠিক বলেছেন। দেশ চলছে। আমরা চলতে পারছিনা।"
.
চলবে...
.
মো. শামছুল ইসলাম
২০ এপ্রিল ২০১৯
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে এপ্রিল, ২০১৯ বিকাল ৪:৩০