somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অবাক মানচিত্র ও আমার পিতামহী

২৫ শে মে, ২০১৯ সকাল ১০:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



প্রায়ই আমি আমার দাদীর মুখোমুখি গিয়ে বসি। এই বসে থাকার কারণটা আসলে একটু অন্যরকম। সংসারের কাজে সদাব্যস্ত আমার মা তার সকল ডিউটি পালন করে চলে পরম নিষ্ঠায়। সকালে উঠে তার প্রথম কাজ থাকে দাদীর জন্য সাগু তৈরী করা। এরপর তাকে ধুইয়ে মুছিয়ে খাইয়ে দিয়ে চলে তার অন্যন্য সকল কর্মগুলি। স্কুল থেকে ফেরার পরে মা প্রায়ই বলেন, সারাদিন দাদী একা একা থাকেন, ওর কাছে গিয়ে একটু বসতে পারিস না? এ কারনেই প্রায়ই আমার এই নির্বাক জড়মূর্তী তবে এক আশ্চর্য্য এবং আমাকে অতল ভাবনার খোরাক জন্মানো খনির পাহাড়ের মুখোমুখি বসতে হয়। আর তখনই আমার মনের মাঝারে বয়ে চলে দাদীকে নিয়ে ভাবনার সমুদ্র।

দাদীকে আমি অপলক নিরখ করি। দাদীমার তাতে ভ্রুক্ষেপ নেই। দাদীমার শত শত কুঞ্চন আর তেলতেলে চোখের পাতার ভাঁজে লেখা রয়েছে এক অবাক মানচিত্র। সেই মানচিত্র ঘিরে থাকে সাদাটে রোয়ার মত অক্ষিপল্লব। তার মাঝে ঘোলা চোখের মনি আর চারপাশ জুড়ে খয়েরী বর্ন বলয়। মাঝে মাঝে তার এই ঘোলা চোখ আর খয়েরী বলয়টাকে আমি ধরেই নেই আমার বিগ্গান বই এ অঙ্কিত কোনো গ্রহ বা উপগ্রহ হিসাবে। দাদীমার ঘোলা চোখের মনিটার চারপাশটা তখন আমার কোনো মহাশূন্যের শূন্যদ্যান হয়ে পড়ে। শূন্য চোখে তাকিয়ে থাকেন তিনি আমার অবাক করা চোখে।

দাদীমার চোখ এক অবাক বিস্ময়। আসলে সকল বৃদ্ধ মানুষের চোখই এক এক অজানা ইতিহাসের বই। যেই বই অপঠিত থেকে যায়। অথচ এই বই এ লেখা আছে কত দীঘল রাত্রী আর বৈচিত্রময় দিনের অজানা কাহিনী। কত সুখ দুঃখ ভালোবাসার গল্প এবং উপন্যাস।
এই চোখের মানচিত্র দিয়ে বয়ে গেছে কত নদী, উপনদী আর সুনীল সমুদ্র। ঝড়ঝাপ্টা আর বিদ্যুৎ চমকে গেছে এককালের এই চিরল চোখের পাতা বেয়ে।

আমি তার পায়ের পাতায় হাত বুলাই। খড়খড়ে খড়ি ওঠা চামড়ায় হাত বুলিয়ে চমকে উঠি আমি। দাদীমা তখন শতবর্ষী বৃক্ষ থেকে হয়ে যায় খসখসে ধুসর চামড়ার এক বিশাল কুমীর। কুমীরের তুলনাটা খুব খারাপ লাগে আমার কাছে কিন্তু নিজের মনের সাথে দ্বন্দ চলে না। যা মনে আসে মনকে তাই ভাবতেই দিতে হয় নইলে মনের সাথে হবে প্রতারণা।

দাদীমার খসখসে পায়ের পাতায় কিছু অদ্ভুত আঁচিল। ভীষন বিচ্ছিরী। খুটে উঠিয়ে দিতে চেয়েছি আমি অনেক অনেকবার। কি ভীষনভাবে সেটে থাকে আঁচিলগুলো দাদীমার পায়ের পাতার শিকড়ে। কোনোভাবেই উঠানো যায় না। হাত দিলে বড় ভয় লাগে আমার। কিসের ভয় সেও জানি আমি।

দাদীমার মাঝে আমি আমার নিজের একদিন বৃক্ষ বা কুমীর হয়ে যাবার দূরদর্শী ভয়ংকর চিত্রটি দেখতে পাই।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই মে, ২০২১ রাত ৯:১২
১টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×