১.
লোকাল বাসের পিছে বসে রমিজ সিগারেট টানছে । সামনের সিটে বসে দুই মহিলা , কোলে বাচ্চা। খক করে এক দলা থুথু ফেললো জানলা দিয়ে.... শালা , কুত্তা ! কাকে গালি দিল কে জানে। বাচ্চা তার দিকে চেয়ে হাসে , মায়ের কাঁধে ভর দিয়ে তাকায় । কথা বলা শিখেনি। রমিজ সিগারেটের ধোঁয়া ফুস করে ছেড়ে দিল বাচ্চাটির মুখে।বাচ্চাটি চোখ পিটপিট করে। চোখে কাজল , কপালে বড় কাজলের টিপ। বাচ্চাটি হা করে আছে , জিহ্বা সামনে বেরোনো। রমিজের ইচ্ছে হচ্ছে জ্বলন্ত সিগারেট দিয়ে জিহ্বায় ছেকা দিতে । আরেক দলা থুথু ফেললো রাস্তায় , লুঙ্গিতে নাক মুছলো । তাড়াহুড়া করে বাস থেকে নামলো সূত্রাপুরের আগে। বাচ্চাটা কাঁদছে , চিৎকার করে কাঁদছে। বাচ্চাটির জিহ্বায় দগদগে পোড়া দাগ।
রাস্তার পাশে ড্রেনের ভেতর লুঙ্গি তুলে প্রস্রাব করতে বসলো রমিজ । ছরছর করে শব্দে হচ্ছে। ড্রেনের ভেতরের কীট পোকামাকড় গুলো কিলবিল করছে। প্রস্রাবের গতি বাড়িয়ে দিল রমিজ । শেষ ফোঁটাটা লুঙ্গিতে মুছে উঠে দাঁড়াল। মাজাটা ব্যাথা করছে। এই কয়দিন ধকল গেছে খুব। আরেক দলা থুথু ফেললো রমিজ। মুখ বাঁকা করে অশ্লীল একটা গালি দিল --- ।
ময়নার মা খুব দেমাগী মা** ।রাস্তার ওষুধে আর কাজ হয় না। ডবল ডোজ নিয়েই আকাম হল। গলা চেপে ধরতেই মা* বেহুঁশ । আর কোন সারা শব্দ নেই , নড়াচড়া নেই। শ্বাস প্রশ্বাস বন্ধ। রমিজ বুঝলো মারা গেছে। লুঙ্গি পড়েই দৌড় দিয়েছে সে।
কয়েকদিন পর একটা লাশ পাওয়া গেল পরিত্যক্ত বাড়ির খুপরি ঘরে। মহিলার লাশ। নাম শরীফা। বিবাহিত , ময়না নাম একটা বাচ্চা আছে তার। তদন্ত চলছে।
এইসবে রমিজের কোন অনুশোচনা নাই। বরং আনন্দ আছে , মজা আছে। জীবনটায় ঘেন্না ধরে গেছে তার।
২.
রেল লাইন পাড় হয়ে বাবার হাত ধরে বাড়ির পথে যাচ্ছে ছেলেটি। ছোট্ট ছেলের মুখে অনেক প্রশ্ন। একের পর এক বাবাকে প্রশ্ন করে। বাবাও আগ্রহ নিয়ে প্রশ্নের উত্তর দেয়।ইচ্ছে করলেই তারা রিকশা নিতে পারে , কিন্তু ছেলেটা নেবে না। হেঁটে গেলে হাঁটতে হাঁটতে কথা বলা যাবে , সময় পাওয়া যাবে। ছেলেটি বাবাকে জিজ্ঞেস করে , ''আচ্ছা বাবা সবাই ভালো হয় না কেন ?'' বাবা চুপ করে থেকে ছেলে উল্টা প্রশ্ন করেন , ''আচ্ছা তুমিই বলো - সবাই খারাপ হয় না কেন ?''
প্রশ্ন শুনে ছেলেটি বাবার মুখের দিকে তাকায়। বাবা মিটিমিটি হাসেন। ছেলেটি ভাবে , থাক। আরেকটু বড় হলে ঠিক জেনে যাবে। তখন এই উত্তর বাবাকে দেবে।
আঁধার নেমে আসছে ,অন্ধকার হচ্ছে চারপাশ। রাস্তার শেষ প্রান্তের বাড়িতে আলো জ্বলে উঠলো , আলোকিত হয়ে উঠলো । এটা ওদের বাড়ি। অন্ধকারেই আলো চেনা যায়।
ছেলেটা বাবার মুখের দিকে চেয়ে মিটিমিটি হাসে। উত্তরটা সম্ভবত সে পেয়ে গেছে।
ছবিঃ ইন্টারনেট
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে নভেম্বর, ২০১৯ দুপুর ২:২০