somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রোকসানা লেইস
স্রোতের অজানা টানে সমুদ্র বালিয়াড়ি বেয়ে বোহেমিয়ান- গৃহকোন, জীবন যাপন ফেলে চলে যায়। তুমি দুহাত বাড়িয়ে আলিঙ্গনে বাঁধতে চাও জোছনা গলে হারিয়ে যায় সুখ । আছড়ে পরা ঘূর্ণিজল মনে বাজায় অচেনা সবুজ দিগন্ত ..

প্রাণ হরিয়ে তৃষা হরিয়ে আরো আরো চায় প্রাণ

১৪ ই নভেম্বর, ২০১৮ সকাল ১১:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



তৃতীয় পর্ব
রাতের বেলা বাসার ওয়াইফাইয়ের মাধ্যমে ইন্টারনেট সচল হলো। জরুরী খবরাখবর আদান প্রদান হলো পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে ইমেল চেক করে পেলাম প্লেন কোম্পানির ইমেল। ওরা আমার ব্যাগ খুঁজে পেয়েছে। কখন পৌছালে রিসিভ করতে সুবিধা হবে, জানতে চেয়েছে। তা হলে কালই ব্যাগ পেয়ে যাব। কাল সকালে এলেই ভালো হবে জানিয়ে দিলাম। যাক নিশ্চিন্ত হওয়া গেল।
সকালের নাস্তা করে বেরিয়ে গেলাম ঘুরতে। ট্যাক্সি এসে নিয়ে গেল আমাকে রেস্টুরেন্ট পর্যন্ত সেখান থেকে গাইডের সাথে বিভিন্ন কিছু দেখার জন্য হাঁটব। পর্যটক হতে হলে হাঁটতে জানাটা খুব জরুরী। প্রথম যখন হাঁটতে হয়েছিল বাংলাদেশের মেয়ে আমি দু পা চলি না রিকসা অথবা গাড়ি ছাড়া, আমার সে কী ত্রাহি অবস্থা হয়েছিল। গাড়িতে যাওয়া যাবে কাছে কিন্তু যে কোন বিষয়ের গভীরে ঢুকতে হবে এই দুপায়ের গাড়িতে চড়েই। জঙ্গল পাহাড়, নদী সমুদ্র,স্থাপনা, উদ্যান সব কিছুর জন্য দু পা সম্বল।
প্রথমদিনেই ঘুরতে বেরিয়ে উঠে পরলাম শহরের সব চেয়ে প্রাচীন গীর্জার উপর সবগুলো সিঁড়ি বেয়ে। বাইরে থকে দেখে মনে হলো তিন চার তলার সমান উঁচু হবে। পেসোর হেলান টাওয়ারের মতন ঝুঁকে আছে একদিকে অল্প, অত বোঝা যায় না। ভিতরে আধো অন্ধকার। মেঝের এখানে ওখানে কাঁচ দেয়া। নিচেও ঘর আছে। মাথার উপর একটা বড় ঘন্টা ঝুলছে। গীর্জার যে বৈশিষ্ট দেখি বিশাল রুম সবাই বসে প্রার্থনা করে। তেমন বড় ঘর দেখলাম না। ছোট ছোট কিছু ঘর বন্ধ অন্ধকারাচ্ছন্ন। রিসিপশনে দাঁড়ানোর সাথে মহা উৎসাহে অর্ভ্যথনার সাথে, গির্জার বিষদ বর্ণনা দিয়ে আমাদের বর্ণানাও নেয়া শুরু করল অর্ভ্যথনাকারী। আমরা দুজন মেয়ে, কে কোথায় থাকি, দুজায়গার দুজন মানুষ কি ভাবে এক সাথে এলাম। অনেক জানার অনেক উৎসক্য।বাংলাদেশের নাম কখনো শুনে নাই জন্য দুঃখ প্রকাশ করল। ওর সাথে কথা বলে উপরে উঠতে শুরু করলাম পাশের সিঁড়ি বেয়ে।




দুতলার সমান উঁচুতে ঝুলানো ঘন্টা পেরিয়ে আরো উঁচুতে উঠা হলো। সিঁড়ি ক্রমাগত সরু হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু শেষ সিঁড়ি ছোঁয়ার অনেক বাকি । অনেক দিন হাঁটা চলা করি না। হুট করে সিঁড়ি ভেঙ্গে উঠতে, পা কাঁপছে। কিন্তু আমি থামব না। থেমে, নিঃশ্বাস নিয়ে ঠিক উঠব। এবং শেষ মেষ উঠে এলাম ছাদে। সারা শহর চোখের সামনে।মুখোমুখি দাঁড়িয়ে চেয়ে আছে আরো একটি গির্জ। দালান কোঠা, মাঠ, দিগন্ত এবং মেঘ মুক্ত আকাশের সূর্য তাকিয়ে আছে আমার দিকে আমিও মুগ্ধ নয়নে দেখছি সবাইকে। নেদারল্যান্ডের বাঁধ দেয়া নদী গুলো স্থির হয়ে মানুষের বেঁধে দেয়া পথে বয়ে চলেছে।
ওল্ডহোভ চার্চ, ডাচ শহর লিউয়ার্ডেনের শহরের কেন্দ্রে স্থাপিত অসম্পূর্ণ গির্জা টাওয়ার। ওল্ডহোভ পনের শতকে নির্মিত হয়েছিল। তৈরির সময় একপাশে হেলে যায়। পরে একবার পুরো দালান ধ্বংস হয় শুধু টাওয়ারটি ছাড়া । আবার তৈরি করা হয়। টাওয়ারের উচ্চতা ৩৯ মিটার । টাওয়ারটিতে ১৮৩ টি সিঁড়ি রয়েছে। টাওয়ারের উপরে কেন্দ্র থেকে দুই মিটার আনুভূমিকভাবে স্থানান্তরিত হয়। মূল পরিকল্পনায় টাওয়ারে একটি নতুন গির্জা সংযুক্ত করা হয়েছিল, যা পুরাতন সেন্ট ভিটাস গির্জার প্রতিস্থাপন।

গির্জা থেকে বেরিয়ে বাজার মতন জায়গায় পর্যটকের উপচে পরা ভীড়ে ঘুরে দেখছি লিউয়ার্ডেনের জীবন যাত্রা। ফোনের একটা দোকান পেরিয়ে যাচ্ছিলাম, সেখানে থেমে আবারও একটা সীম কিনলাম সারা ইউরোপ কাজ করে এমন। ত্রিশ দিনের জন্য বিশ ইউরোর সীমটা দারুণ সহযোগী ছিল আমার এক মাসের ভ্রমনে। যে দেশেই গেলাম নেদারল্যান্ডে সীম আমাকে সব সময় সব জায়গায় আপ টু ডেট রাখল। আর নিলাম একটা পোর্টেবল চার্জার। পথে ঘাটে ফোন একটু বেশি ব্যবহার হচ্ছে সারাদিন চার্জ থাকে না। তবে এখানকার ট্রেনগুলোতে ফোন চার্জ করার ব্যবস্থা আছে। তবে সব সময় তো ট্রেনে চড়ছি না। তাই সাথে থাকা ভালো।
তারপর হাঁটতে হাঁটতে, ল্যান ফান তাল লেঙ্গুয়েজ সেন্টারে উপস্থিত হলাম। পৃথিবীর সব ভাষা ব্যবহারের মুক্ত অঞ্চল। ২০১৮ এর শুরুর দিক থেকে, লান ফান তাল এই প্রতিষ্ঠানটির কাজ শুরু হয়েছে। একটি মুক্ত রাষ্ট্র যা সব ভাষাকে স্বাগত জানায়। ভাষা ছাড়াও সংস্কৃতিক কর্ম শিল্প সাহিত্যে ছবি আঁকা নাটক, কবিতা চর্চা হয় এখানে।
একটা ঘরে পৃথিবীর যাবতিয় ভাষা লেখা, দারুণ এক চার্ট কাঠের কিউবে তৈরি। ছাদ থেকে মেজে পর্যন্ত ঝুলছে। স্বাভাবিক কৌতুহল হলো বাঙলা ভাষা আছে নাকি জানার জন্য। অক্ষর ভিত্তিক সাজানো নামগুলোর মধ্যে বি, ধরে খুঁজতেই পেয়ে গেলাম বাঙলা। কি যে ভালোলাগল। বাংলার দুপাশের ভাষাগুলোও আমার অচেনা। সিভরেনটিনা খুঁজছিল বুলগেরিয়ান ভাষা।
কত ভাষা আছে এই পৃথিবীতে যার অনেক নামও জানি না।









আহা পরবর্তি কদিন পায়ের ব্যথা বুঝিয়ে দিল, এমন হঠাৎ আমাকে ব্যবহার করবে না। প্রতিদিন ব্যবহার করবে। ইচ্ছে ছিল আরো একদিন ওমন সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠি তা হলে ব্যথা কমে যাবে। ব্যায়ামের পরদিন যেমন হয় কিন্তু তেমন কিছু আর পাওয়া গেল না বেয়ে উঠার জন্য। অতএব হাঁটা হাটির উপর থাকতে হলো।
নেদারল্যান্ডস ভৌগোলিকভাবে সমতল দেশ, যার প্রায় ছাব্বিশ ভাগ এলাকা সমুদ্রপৃষ্ঠির নিচে অবস্থিত, এবং সমুদ্রপৃষ্ট থেকে মাত্র এক মিটার উঁচু বাকি পঞ্চাস ভাগ ভূমি ।
রাইন নদী, যার সাথে দেখা হয়ে ছিল জার্মনের কোলনে। যার উৎপত্তি সুইজারল্যান্ডে। ডিনান্ট, বেলজিয়ামে দেখা হয়েছিল মোউস নদীর সাথে ফ্রান্সে, জন্ম । তারা বয়ে চলে এসেছে নেদারল্যান্ডে, উত্তর সাগরের সাথে মিলনের টানে।
নদী, সাগরের প্রেমে তারা মত্ত। কিন্তু তাদের ভালোবাসায়, মানুষের জীবন বিপন্ন। বারে বারে পানির নিচে তলিয়ে যায় জমি। বাসা বাড়ি দোকান শহর। ভেসে যায় কত মানুষ। পানি সেচ করে সরিয়ে জমি পানি মুক্ত করছে ডাচরা শত শত বছর ধরে। জমি বাঁচানোর জন্য নানা রকম বুদ্ধি বের করেছে প্রয়োজনের তাগিদে। ১৯৫৩ সালে শেষ বিধ্বংসী বন্যায় ১৮০০ জনেরও বেশি মানুষ মারা যায় । ভেসে যায় গবাদি পশু ফসল। বাড়িঘর প্লাবিত হয় ভেঙ্গে যায়।
শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে, ডাচ ও পানির মধ্যে বিশেষ সম্পর্ক। প্রবাদ বলা হয়, ঈশ্বরের সৃষ্টি বিশ্ব কিন্তু ডাচের সৃষ্টি নেদারল্যান্ড। শতাব্দী ধরে ডাচ সমুদ্র থেকে জমি ছিনতাই করছে।
উডমিল তৈরি করে বাতাসের সাহায্যে জল সেচে সে জমি ব্যবহার করে আসছে অনেক কাল। প্রতিদিন উন্নত থেকে উন্নত ব্যবস্থ আবিস্কার এবং তার ব্যবহার নিয়ে চলছে পরীক্ষা নিরীক্ষা। যে পানি ছিল আতংক এখন তারা যেন খেলছে সেই পানি নিয়ে। সমুদ্র নিয়ন্ত্রন করে পানির উপর জীবন যাপনের ব্যবস্থা করছে। প্রতিটি যুগ নতুন উদভাবনে নতুন কিছু স্থাপনা দিয়ে বসবাস সুনিশ্চিত করা হচ্ছে। ডেল্টা ওয়ার্কস এবং আফস্লুইটিজেক, যা ডাচকে পানি থেকে রক্ষা করার জন্য নির্মিত হয়েছে। এই বাঁধ নির্মান পদ্ধতি সমুদ্রের পানির জোয়ার ভাটা সময় হিসাব করে মোটে ত্রিশ মিনিটের মধ্যে কাজ করার সুযোগ পাওয়া গেছে। এবং এ ভাবে কি বিশাল একটা প্রজেক্ট তৈরি করা হয়েছে। ভাবলেও যার সীমা পরিমীমা পাই না। অথচ রীতি মতন জীবন বাঁচানোর বিশাল এই পদ্ধতি স্থাপন করে ফেলেছে আবিস্কার, প্রকৌশলি। শুধু তাই নয় ফল ভোগ করছে পুরো জাতি। আধুনিক প্রযুক্তির এক অত্যশ্চর্য আবিস্কার। অনেক দেশ এখন এই পদ্ধতি ব্যবহার করা শুরু করেছে।
আমি ভাবি যদি বাংলাদেশেও এমন পানির ব্যবহার করা যেত। বর্ষকালে নেমে আসা ঢলের পানি সংরক্ষন ও পরে তার ব্যবহার করা যেত শুকনো মৌসুমে।
মোয়স এবং রাইন উভয়ই নদীর মোহনায়, পাঁচ কিলোমিটার দীর্ঘ বাঁধে সতেরোটি তালা রয়েছে, যার প্রতিটি ৫৬ মিটার প্রশস্ত। যা প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ২৫,000 ঘনমিটার পানি সরাতে পারে। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় রোবট নেদারল্যান্ডের বাঁধে স্থাপন করা আছে। কোন রকম মানুষের সাহায্য ছাড়া জোয়ার ভাটার সময় হিসাব করে খুলছে আর বন্ধ হচ্ছে । মিঠা পানি এবং নোনা পানির সামঞ্জস্য বজায় রাখার চেষ্টা করা হয়েছে, প্রাকৃতিক দিক খেয়াল রেখে যাতে পশু, পাখি, জলজ প্রাণীর উপরও কোন প্রভাব না পরে। সঠিক ভাবে ঝিনুক, প্রবাল কোরাল থাকে জলে। তারপরও কিছুটা বিরূপ প্রকৃতির স্বভাব দেখে বদল করা হয়েছে স্থাপনা, প্রকৃতির ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য।




সমুদ্র থেকে পুনরুদ্ধার করা হয়েছে জমি। জলস্রোত নিয়ন্ত্রন করার জন্য তৈরি হয়েছে শক্তিশালী বাঁধ। জলকে যেন শাসন করছে রীতিমতন ডাচরা। তেমনি বাধের উপর এবং আশে পাশে তৈরি হয়েছে, বিশাল রাস্তা। তৈরি হয়েছে ডেল্টাপার্ক নিল্টজ জানস নামে থিম পার্ক, দারুণ মজার ওয়াটার স্লাইড, হারিকেন-মেশিন, বাতাসের শক্তি সম্পর্কে ধারণা দেয় এবং সেখানে ম্যামোথের কঙ্কাল রয়েছে। ব্লুরিফ অ্যাকোয়ারিয়ামে অন্যান্য রঙিন মাছ এবং করাল সাথে সীল এবং হাঙ্গর ।




ডেল্টা রচনা, নির্মাণ ইতিহাস এবং নকশা সম্পর্কে প্রচুর পরিমাণে তথ্য আছে এবং ভিতরে বাঁধগুলি দেখার সুযোগ রয়েছে। "ডেল্টা-এক্সপোজিশন" নেদারল্যান্ডসের ২০০ বছরের পানির সাথে যুদ্ধ জীবন এবং ডেল্টা ওয়ার্ক নির্মাণের উপর ফোকাস করা হয় । নাটকে ১৯৫৩ সনের বন্যা সম্পর্কে পুরো রচনায় ইতিহাস দেখানো হয়।


আগের দিনের উডমিল গুলো যা পানি সেচত বাতাসের সাহায্যে এখন সেগুলো আধুনিক মটরে চলে। কিছু গ্রামে প্রাচীন সেই ব্যবস্থা দেখার জন্য ঐতিহ্য হিসাবে রাখা হয়েছে। জমি শুকনো রাখার জন্য, ডাচ নির্মিত মিল ও পাম্পিং স্টেশন, কিন্ডারডিজক উইন্ডমিলস এবং ওউডেজমাল পাম্পিং স্টেশন, ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ স্বীকৃত একটি জায়গা। । বিংশ শতাব্দীর পানির গতি পরিবর্তনের এই কাজগুলি ঐতিহ্য ও বিশ্বের বৃহত্তম ও প্রাচীন কাজ। জল সমৃদ্ধ ল্যান্ডস্কেপ নেদারল্যাণ্ড জুড়ে। ভূমি এবং পানির প্রান্তে বাস করা। জায়গাগুলির মধ্যে চমৎকার ভিন্ন আঙ্গিকের পানি সমৃদ্ধ প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখার সুযোগ পেলাম। ন্যাশনাল পার্ক ডি বিবসবচ, তার বিশুদ্ধ নদী এবং পানির উপসাগর এবং উইলো বনের সাথে ন্যাশনাল পার্ক উইডেন-ওয়েরিবিবেনেও রয়েছে একটি জল সমৃদ্ধ সাজানো গ্রাম যার মধ্যে মানুষ জিথোওরনের মত অদ্ভুত পানির গ্রামে বাস করবে। জলের সৌন্দর্য উপভোগ করার এক অন্য রকম সুযোগ । শহর এবং সুন্দর খাল এবং পুরানো বন্দর ।
সমুদ্রর বন্দর শহর রটারডামের বেশিরভাগ অংশ জলের নিচে। এখন 'ভাসমান ভবিষ্যত' পরিকল্পনা করা হচ্ছে একে ঘিরে।
হল্যান্ড এবং জলের সম্পর্ক মালার বুননে গাঁথা। ডেল্টা ওয়ার্কস এবং আফস্লুইটিজেক, যা ডাচকে পানি থেকে রক্ষা করার জন্য নির্মিত হয়েছিল। নেদারল্যান্ড আন্তর্জাতিকভাবে পানির ব্যবস্থাপনায় বিশ্বের গবেষণায় বিখ্যাত।
বিজ্ঞানীরা পূর্বাভাসে জানিয়েছে অনেক আগে যে সামুদ্রিক পানির স্তর আগামী ১০০ থেকে ২০০ বছরে কমপক্ষে এক মিটার বৃদ্ধি পাবে। নেদারল্যান্ডস সে সমস্যার সমাধান খুঁজে বের করায় ব্যাস্ত। তাদের নতুন কৌশল যুদ্ধের পরিবর্তে পানির সাথে বসবাস করা। স্কুল ছাত্র ছাত্রীদের শিখানো হচ্ছে কাপড় জুতো পরে জলের নিচে সাঁতার কাটা। দেখে শুনে মনে হয় যে কোন অবস্থার জন্য তৈরি থাকার প্রস্তুতি নিয়ে রাখছে তারা।
ডাচরা সাইকেল চালাতে খুব পছন্দ করে। রাস্তায় সারি সারি সাইকেল দেখা যায়। রাস্তায় আলাদা লেইন আছে সাইকেল আরোহিদের জন্য।সাইকেল চালানোর মতন সাঁতার কেটে চলাটাও জনপ্রিয় হয়ে যাবে হোলান্ডে হয়তো অদূর ভবিষ্যতের কোন এক সময়।

লিউয়ার্ডেন খুব ব্যাস্ত শহর না কিন্তু এবছর সাংস্কৃতিক রাজধানী হওয়ার কারনে জমজাট পর্যটকের ভীড়ে।
এথেন্সের জ্যাপ্পিওন মেগারনে, সংস্কৃতি মন্ত্রী ম্যালিনা মারকৌরী ২২ নভেম্বর, ১৯৮৩ সনে ইউরোপের বৈচিত্রপূর্ণ সাংস্কৃতিক কাজগুলোকে জনগনের মধ্যে পরিচিত করার উদ্যোগ নেন।
মেলিনা মারকৌরি বলেন সংস্কৃতি সমাজের আত্মা। আমাদের অবশ্যই ইউরোপের জনগণের মধ্যে বৈচিত্র্য এবং পার্থক্যগুলি চিনতে হবে।পরিচিত করতে হবে সকলের মধ্যে চর্চার মাধ্যমে। সেই উদ্দেশে প্রতি বৎসর বিভিন্ন দেশে সংস্কৃতিক রাজধানী পালনের সূচনা হয়।
সাংস্কৃতিক রাজধানী ঘোষিত হওয়া শহরে শিল্প সৃজনশীলতার ঐতিহ্যময় বিষয়গুলো অনুষ্ঠিত হয়। উৎসব মুখর হয় শহর। বিভিন্ন কালচারের লোকজন আসে শহরে। পর্যটকের ভীড় বারে। বছর জুড়ে চলে নানা রকম অনুষ্ঠান আনন্দ।
যা আজও ধরে আছে, ইউরোপীয় পরিচয় নির্ধারণের সংস্কৃতি, শিল্প ও সৃজনশীলতা প্রযুক্তি, বাণিজ্য ও অর্থনীতির চেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। ইউরোপের সংস্কৃতির মধ্যে সংলাপ তৈরির লক্ষ্যে, উচ্চাকাঙ্ক্ষী হিসাবে আমাদের বৈচিত্র্য সাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে, এমন একটি ধারনা নিয়ে যার কাজ শুরু হয় । এই বৈচিত্র্যের প্রতি ইউরোপিয় ইউনিয়নের প্রতিটি দেশ অবগত।
১৯৯০ সালে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ছিল। ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং গ্লাসগো শহর, তখন সাংস্কৃতিক রাজধানী, তাদের যৌথ অভিজ্ঞতা থেকে উপকৃত হওয়ার জন্য সংগঠক এবং সাংস্কৃতিক রাজধানীর সমন্বয়কারীর সভা অনুষ্ঠিত হয়। ফলস্বরূপ ইউরোপের সাংস্কৃতিক শহরগুলির নেটওয়ার্ক গঠন করা হয় এবং সমস্ত সাংস্কৃতিক রাজধানীর মধ্যে সম্পর্ক আরও দৃঢ় হয়। ব্যবহারিক এবং ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার বড় পদক্ষেপ নেওয়া হয়। নেটওয়ার্ক ইউরোপীয় সংস্কৃতির রাজধানী শহরের ধারণাটিকে প্রচারের সংস্কৃতির মূল মাধ্যমে ইউরোপের জনগণকে প্ররোচিত করার জন্য অনেকগুলি কাজ করে। তাছাড়া অর্থনৈতিক ভাবে একটা বিশাল প্রভাব পরে এই সব কর্মকাণ্ড ঘিরে। রমরমা জমজমাট হয়ে উঠে শহর। স্বাভাবিক ভাবে ব্যবসা বৃদ্ধি পায়। ঘুরে অর্থনৈতিক চাকা দ্রুত।
সংস্কৃতির ইউরোপীয় রাজধানী: ইতিহাস, বিবর্তন এবং প্রভাব প্রতি বছরই নতুন করে বৃদ্ধি পাচ্ছে। সাথে নতুন প্রযুক্তির সংযোগ হচ্ছে। মহা উৎসাহ উদ্দিপনা শুরু হয় সেই শহর ঘিরে যেখানে এক বছরের জন্য সাংস্কৃতিক রাজধানী হয়। সাধারনত এ পর্যন্ত প্রতি বছরের জন্য দুটো শহর নির্ধারন হয়।
বিষয়টা সম্পর্কে আমার তেমন জানা ছিল না। হঠাৎ করেই গিয়েছিলাম এবং ভাগ্যক্রমে এ বছর ২০১৮ তে লিউয়ার্ডেন স্ংস্কৃতিক রাজধানীর সাথে আমার একটি স্মৃতি রয়ে গেল। লিউয়ার্ডেনের সাথে আছে ভালেত্তা, মেডিটেরয়িান আইল্যান্ড মালটার একটি শহর এবছর।
গ্রীসে সংস্কৃতির পূর্ব ইউরোপীয় রাজধানী। সংস্কৃতি মন্ত্রী, মেলিনা মারকৌরি ধারণা করেছিলেন এবং সংস্কৃতির ইউরোপীয় রাজধানীর ধারণাটি চালু করেছিলেন এবং ১৯৮৫ সালে এথেন্স সংস্কৃতির প্রথম ইউরোপীয় শহর হিসাবে পরিচিত ছিল।
সংস্কৃতির ইউরোপীয় রাজধানী যে সব দেশে হবে। ইতোমধ্যে ২০২২ সাল পর্যন্ত মনোনীত হয়েছে। এসব সর্ব সম্মতি ক্রমে যৌথ ভাবে ইউনিয়নের সদস্যদের সিদ্ধান্তে নির্ধারন হয়।
২০১৯ প্লভদিভ, বুলগেরিয়া এবং মাতেরা, ইতালি
২০২০ রিজিকা, ক্রোয়েশিয়া এবং গালওয়ে,আয়ারল্যান্ড
২০২১ টিমিশোরা, রোমানিয়, এলফিসিনা, গ্রীস এবং নভি সাদ,সার্বিয়া, প্রার্থী দেশ এখনও ঠিক হয় নাই।
২০২২ কুনাস, লিথুয়ানিয়া এবং এসচে লাক্সেমবার্গ
স্লাভলান্টনিা বুলগেরিয়ার মেয়ে যার সাথে ঘুরে বেড়ালাম কদিন। সে আমাকে আমন্ত্রন দিয়ে রাখল। আগামি বছর তার দেশে যাওয়ার জন্য।
বুলগেরিয়া যাওয়ার ইচ্ছা আমার অনেক দিনের । সোফিয়ার গোলাপ দেখার জন্য। দেখা যাক আগামি বছর যাওয়া হয়ে উঠে কিনা। সিভেটলিনার বাড়িতে থাকা যাবে। তাদের জীবন যাপনের প্রাত্যাহিক বিষয় কাছে থেকে দেখা যাবে। "আগামি বছর আমার শহর হবে রাজধানী তুমি চলে এসো" বলতে গিয়ে ওর চোখে আলো ছড়াল। চোখের সামনে পাহাড় বাড়িঘর এবং বাড়ির লোকজনকে যেন দেখতে পাচ্ছে।
প্রতিটি মানুষের নিজের বাড়ির প্রতি টানটা আমি উপলব্ধি করি। কত আন্তরিক। অথচ আমাদের কিছু মানুষের ধারনা। শুধু বাঙালিরাই এ বিষয়ে একমাত্র সার্থক। তাদের মতন আবেগ আর ভালোবাসা আর কারো নেই। অথচ আমি পৃথিবীর মানুষকে যত দেখছি। যত তাদের সাথে কাছে থেকে মিশি কোথাও ভালোবাসা রাগ অনুরাগ বা হিংসা বিদ্বেস কোন কিছুরই কোন ঘাটতি দেখি না। ঘুরে ফিরে বলতে ইচ্ছা করে
জগৎ জুড়িয়া এক জাতি আছে সে জাতির নাম মানুষ জাতি; এক পৃথিবীর স্তন্যে লালিত একই রবি শশী মোদের সাথী। শীতাতাপ ক্ষুধা তৃষ্ণার জ্বালা সবাই আমরা সমান বুঝি।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই মার্চ, ২০২৩ সকাল ১১:১৫
৬টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:১৩

ফেসবুকে বাঙালিদের মধ্যে ইদানিং নতুন এক ফতোয়া চালু হয়েছে, এবং তা হচ্ছে "দাওয়াতের নিয়্যত ছাড়া কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।"
সমস্যা হচ্ছে বাঙালি ফতোয়া শুনেই লাফাতে শুরু করে, এবং কোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×