সূর্যটা যখন দক্ষিণে হেলে পরে শীতকাল এলে। রোদটা বেশ জমিয়ে উজাড় ভালোবাসায় জড়িয়ে রাখে জানালাটা, যদি মেঘ সূর্যকে না ঢেকে দেয়। বাইরে হীমের পরশ। ঘরে উত্তাপের ছড়াছড়ি।
আমি যেখানে যাই নতুন কোন লতাপাতা গাছ দেখলেই নিজের কাছে একটা রাখতে ইচ্ছে করে। দেশে থাকতে আমার প্রিয় একটা যাওয়ার জায়গা ছিল বলধা গার্ডেন। একজন সৌখিন মানুষ কত রকমের গাছ লাগিয়েছিলেন পৃথিবীর কত দেশ থেকে এনে।
দু বছর আগে গিয়েছিলাম বলধা গার্ডেনে আবার। সেই প্রথম দেখা আমাজন লিলি নাই। আরো অনেক গাছ নাই হয়ে গেছে। দিনে দিনে উন্নত হওয়ার চেয়ে মুষড়ে কষ্টে বেঁচে বর্তে আছে কিছু গাছ। গাছের চেয়ে প্রেমের কোলাহল বেশি চারপাশে। প্রেমের চেয়ে বেশি আগ্রহ শরীরের প্রতি। ঘোমটা আর বোরখার আড়ালে ঢাকা শরীর নিয়ে গাছের আড়ালে এমন অনেক যুগল গাছ নয়, ফুল,পাতা প্রকৃতি নয়,নিজেরও দেখছে না ভিতর খুঁড়ে কি যেন বের করে আনার চেষ্টা করছে। প্রকৃতির পরিবেশের সৌন্দর্য কেমন কুলসিত মনে হলো জৈবিক চাহিদার কাছে। পশু তো নয় মানুষ। এমন উদাম দুপুরে তাদের গায়ের উপর গা লাগিয়ে খোলা ময়দানে থাকা, আমার গাছ, ফুল দেখার ভালোলাগার বারোটা বাজিয়ে দিল।
ভালোলাগা থেকে ভুমিতে ছড়ানো গাছ থেকে কখনো কুড়িয়ে একটা ডাল বা লতা, বীজ নিয়ে আসি অনেক সময় যত্ন করে ।
পৃথিবীতে কত বিচিত্র গাছ লতা ফুল ফল ভিন্ন প্রকৃতির সাথে যাদের বসবাস সব জায়গায় সবার বেঁচে থাকার উপায় নাই। যদি না তাদের সঠিক পরিবেশটা তাদের দেয়া না হয়। বিরল প্রকৃতিতে সে রকম পরিবেশ তৈরি করার জন্য প্রয়োজন প্রচুর খরচ। যেমন আছে প্রিন্সেস অফ ওয়েলেস বা ডায়ানা ম্যামরিয়াল পার্ক লন্ডনে। নিউ ইয়র্ক বোটানিক্যাল গার্ডেন বা সানডিয়াগো বোটানিক্যাল গার্ডেন বা নায়েগ্রা বোটানিক্যাল গার্ডেন। পৃথিবী জুড়ে আরো বহু উদ্ভিদ বাগান।
প্রচণ্ড শীতে কাঁপতে থাকা বাইরের পৃথিবীর কোন আভাসই পায় না কাঁচ ঢাকা ঘরে রাখা উদ্ভিদরা। বা প্রখর তাপে যখন পুড়ে মরুভুমি গার্ডেনের ভিতর তখন রেইন ফরেস্ট। আমাজন লিলি থেকে শতবর্ষী ফুল যাদের সাথে তেমন বড় মাপের জায়গাগুলোতে দেখা হয়ে ছিল আমার। তেমন বোটানিক্যাল গার্ডেন গড়ে তোলার সামর্থ আমার নাই কিন্তু ইচ্ছে আছে। যখনই কোন বীজ ডাল লতা লাগাই নিজের ঘরে। অনেক সময় তারা বেশ বেঁচে উঠে। ফুলও দেয় ভিন্ন প্রকৃতি পেয়েও। কিন্তু আপন ভঙ্গীমায় পাখা মেলে উড়ার সুযোগ পায় না পরিবেশের বৈরিতায়। কিছুকাল আমার সাথে থেকে তারা হারিয়ে যায় অনেক সময়।
এই গাছটা নাকি পারুল গাছ ফুল হয় কিনা জানি না দেখা হয়নি কখনো।
অনেককাল আগে প্রশান্ত সাগরের পাড়ে ক্যালির্ফনিয়ায় দেখেছিলাম অপূর্ব সাদা সাদা ফুল পদ্মের মতন ফুটে আছে খাড়া পাহাড়ের গায়ে। কত কসরৎ করে তুলে নিয়ে এসেছিলাম সে সময়ও কিছু ফুলসহ লতা কিন্তু রেখে এসেছিলাম তাদের বাড়িতে যেখানে ছিলাম।
অনলাইন ঘেটে সাদা পদ্মের রঙিন ভার্ষন পেলাম যা ফুটে থাকে পাহাড়ের খাঁজে ভাজে।
সাগরের পাড়ে বালু কামড়ে ঝাঁক বেঁধে পরে থাকা তেমন এক লতাগুল্মের সাথে দেখা হলো অনেককাল পরে, গত বছর আবার প্রশান্ত সাগরের পাড়ে। ফুলের মতন সবুজপাতা গুলো। পরখ করে দেখেছিলাম হঠাৎ দেখি দারুণ বেগুনি রঙের ক্যাকটাস ফুলের মতন ফুল ফুটে আছে। তাকে যত্ন করে ঘরে কাপড়ে মুড়িয়ে নিয়ে এসে টবে লাগিয়ে রেখেছি। আর জানালায় রোদ পেয়ে মাটি নোনা হাওয়া ছাড়াই সে আনন্দে ফুটে উঠেছে। অথবা আমাকে আনন্দ দেয়ার জন্য যেন ফুটল। ক্যালিফোর্নিয়ার নেটিভ লুইসিয়া কটিলেডন।
একটি ফুল আমাকে ভালোবেসে ফুটে উঠে এই আনন্দের কোন তুলনা হয় না। তাদের ভালোবাসায় মুগ্ধ হয়ে রই।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে নভেম্বর, ২০২০ রাত ২:২৩