ক্যান আই হ্যাভ এ্যা হাগ? পিছন থেকে কথাটা ভেসে এলো। গতবছর ডিসেম্বরে একদিন মলে হাঁটছিলাম। হঠাৎ এমন একটা বাক্য কানে যেতে ঘুরে দাঁড়ালাম। দেখি আমাকেই লক্ষ করে বলছে, কথাটা একটি ছেলে। আঠাশ ত্রিশ বছরের মধ্যে হবে বয়স। হ্যান্ডসাম ছেলেটি হাগ চাচ্ছে আমার কাছে।
অনেকে হাগ দেয়ায় খুব পটু। নির্মল জড়িয়ে ধরা এই হাগ করাটা এদেশের খুব স্বাভাবিক একটা ধারা। সৌজন্যমূলক নির্মল। তবে সাধারনত পরিচিত এবং অনুষ্ঠানে এই হাগ করা হয়।
শুনেছিলাম হাগ নিয়ে বেশ কথা বার্তা চলছে তখন। তবে তেমন পাত্তা দেইনি তাই খুব ভালো জানাছিল না। কত ধরনের নতুন কিছু চালু হয়। হাগ করা নিয়েও নতুন করে একটা আন্দোলন চলছে।
রিতা এবং মেলিন্ডা ভ্রমণের সময় পরিচিত হয় এবং নিজেদের স্যাসোল মিডিয়ায় সংযুক্ত করে। এক সময় রিতা মেলিন্ডাকে জানায় আমি কানাডা আসছি এবং তোমাকে হাগ করার জন্য আসব। মেলিন্ডার কাছে একরাত থেকে রিতা চলে যায়। শুধু নির্মল এই হাগ দেয়ার জন্য রোড ট্রিপের একটা স্টপেজ দিয়ে, পথে পরিচিত বন্ধুর কাছে আসে রিতা।
বর্তমান সময়ে মানুষ খুব একাকী হয়ে যাচ্ছে। এই একাকী সময়ে কাজে পাওয়ার মতন বন্ধু। হাগ করার মতন কেউ যখন থাকে না। তখন অপরিচিত জনদের হাগ দিয়ে যদি কারো মনে একটু ভালোলাগা তৈরি করা যায়। দুঃখি, বিষন্ন, একাকী একজন মানুষকে যদি একটু ভালোলাগা দেয়া যায় মূহুর্তের আলিঙ্গন দিয়ে। তাহলে সেটা করতে অসুবিধা কোথায়। মানুষ মানুষের জন্য এই ভাবনাই মূল বিষয়।
রিতার নিজস্ব কিছু সমস্যা ছিল। একাকী বসে থেকে, খেয়ে খেয়ে বিশাল ওজন বানিয়ে ছিল শরীরে। গত বছর রিতা অতঃপর উঠে পরে নিজের মতন কিছু একটা করবে বলে। পনেরশ অচেনা মানুষকে হাগ করে সে। রিতার এই কার্যক্রম বেশ প্রচলিত হয়ে যায় কানাডায়। অনেকেই মূহুর্তের জন্য একটা হাগ পেতে চায়, দিতে চায়।
রিতার আগে অস্ট্রেলিয়ার সিক পাপিস ব্যাণ্ডের দল ফ্রি হাগ ক্যাম্পেইন চালায় ২০০৬ সনে।
গিভ মি এ্যা হ্যগ এত পপুলার হয় ওদের গানটা প্রচারের সাথে সাথে চৌয়াত্তর মিলিয়ন ভিউ হয় । রাস্তার উপর ফ্রি হাগ ক্যাম্পেইনে দাঁড়িয়ে প্রায় বাইশ হাজার লোকের সাথে হাগ করে।
ফ্রি হাগস ক্যাম্পেইন এমন একটি সামাজিক আন্দোলন । জনসমাবেশে খোলা জায়গায়, অপরিচিত ব্যক্তিকে আলিঙ্গন করে নিঃস্বার্থ ভাবে, অন্যকে ভাল অনুভূতি দেয়ার জন্য ।
আমাদের সংস্কৃতিতে হাগ করার প্রচলন নাই। পরিবারের লোকজনের মধ্যেও হাগ করা হয় না। হাগ তো দূরে থাক আমরা অপরিচিত ব্যাক্তির মতন আপনি আপনি করে বাবা মার সাথেও কথা বলি অনেক পরিবারে।
এমন সংস্কৃতির মানুষ আমি হুট করে অপরিচিত একজনকে হাগ করে বসতে পারলাম না। যদিও জানি ব্যপারটা নির্মল। অনেকে ইচ্ছা করে ডেকে ডেকে, হাগ দিচ্ছে নিচ্ছে। তবে আমি অভ্যস্ত নই তাই সরি বলে চলে এসেছিলাম।
যত বেশি নাগরকেন্দ্রিক হচ্ছে জীবন, তত বেশি দূরে সরে যাচ্ছে মানুষ থেকে মানুষ। মানুষের কাছে আসার, অচেনা কাউকে একটু ভালো থাকার এই প্রচলনটা হয় তো বেশ প্রচলিত হয়ে উঠত। হাগ করার এই রীতি আরো বেশি প্রচলিত হয়ে উঠত এ বছর হয় তো অস্বাভাবিক মহামারীর অবস্থা তৈরি না হলে।
কিন্তু করোনা, এসে মানুষকে আরো দূরে সরিয়ে দিল মানুষ থেকে। মানুষ এখন ভয়ে ভয়ে অন্য মানুষের দিকে দেখে। দূর থেকে অচেনা কারো দিকে চেয়ে এক টুকরো হাসি বা কোন কথা বার্তা যেমন জমে উঠত হঠাৎ করে কখনো রাস্তা, রেস্তুরা, মলে, বাসে ট্রেনে। এখন অন্য মানুষ দেখে, পাশ কাটিয়ে মুখ ঘুরিয়ে চলে যাওয়ার প্রবনতা আরো বেড়ে গেলো।
তবে কোভিড দূর হলেই কিছু মানুষ হাগ করতে বেড়িয়ে আসবে বলেও অনেক পরিকল্পনা করছে।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ১:৪৬