somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রোকসানা লেইস
স্রোতের অজানা টানে সমুদ্র বালিয়াড়ি বেয়ে বোহেমিয়ান- গৃহকোন, জীবন যাপন ফেলে চলে যায়। তুমি দুহাত বাড়িয়ে আলিঙ্গনে বাঁধতে চাও জোছনা গলে হারিয়ে যায় সুখ । আছড়ে পরা ঘূর্ণিজল মনে বাজায় অচেনা সবুজ দিগন্ত ..

হোম অফিস

২৮ শে ডিসেম্বর, ২০২০ সকাল ৯:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিশাল পরিবর্তন হয়ে গেল বছর ২০২০ জুড়ে। সক্কালবেলা উঠে তাড়াহুড়া করে রাস্তায় নামা। বিশাল ট্রাফিক জ্যাম তখন রাস্তা জুড়ে। সক্কলে কাজে যাওয়ার জন্য রাস্তায় নেমেছে। বাচ্চারা স্কুলে যাচ্ছে। ছোট যে বাচ্চাটা স্কুল শুরু করেনি তাকেও টেনে উঠিয়ে নিয়েছে মা। নামিয়ে দিবে সারাদিনের জন্য ডে কেয়ারে। তারপর নিজের কাজে যাওয়া।
যেতে যেতে টিমহর্টন, স্টার বাক্সের ড্রাইভ থ্রু তে লম্বা লাইনে দাঁড়ানো। কফি আর মাফিন বা ব্যাগল, স্যান্ডউইস তুলে নেয়া। চুমুক দিতে দিতে পথ চলা। অস্থিরতা আর ব্যস্ততায় শুরু হয় দিন।
কারো বা সকালে খেতে ভালোলাগে না। তারা বারোটা বাজলে লাঞ্চ আওয়ারে এক্কেবারে ব্রাঞ্চ করে নেয় ভালো মতন। বন্ধু, কলিগদের সাথে আড্ডা দিতে দিতে। অফিস শেষ হতেই আবার ছোটা ব্যাস্ততায় জ্যাম ঠেলে। পথে বাচ্চা উঠানো, বাজার করা। বাড়ি ফিরে রান্না খাওয়া টাইডি আপ সেরে দিনের শেষে স্বস্থির নিঃশ্বাস নেয়া। সেই অন্ধকার সময়ে চোখের পাতা খুলতে না চাইলেও এর্লামের শব্দের সাথে সাথে জোড় করে উঠাতে হয় শরীর বিছানা থেকে। ইচ্ছা না করলেও আরেকটু সময় শুয়ে থাকার উপায় নেই। তাহলে সব কিছুতে লেট হবে। আর সব জায়গায় চলবে দেরী হওয়ার খেসারত দেয়া আর জবাবদিহীতা।
এমন সময়ের সাথে পা ফেলে দ্রুত চলায়, অভ্যস্থ মানুষ কেমন থমকে গেলো ঘরে থাকার হুকুম পালন করতে গিয়ে এবছর। ঘর থেকে বেরুনো যাবে না। শুধু ঘরে থাকো লকডাউনে, কাজ বন্ধ প্রথমে।
তারপর কারো অফিস জানাল কাজ চলবে, ঘরে বসেই কাজ করো।
ঘরের সেট আপ সাজানো হলো নতুন করে । এক কোনায়, ডাইনিং টেবিলে বা একটা ঘর করে নেয়া হলো অফিস করার জায়গা। প্রথম প্রথম খুব অস্বস্থি হলেও বেশ ভালোলাগতে শুরু হলো এই ব্যবস্থা অনেকের কাছে। সকালে উঠে দৌড়াতে হয় না। টিপটপ তৈরি হওয়া নেই। ঘরে বসেই অফিসের কাজ গুলো করা যাচ্ছে কম্পিউটারে। কাপড় পরিপাটি করে পরা, ইস্ত্রি করার ঝামেলা নেই, ঘরের পাজামা পরেই কাজ করার সহজ স্বস্থি। কখনো অফিসের মিটিং থাকলে পাজামার উপরে একটা সার্ট বা টপ পরে ক্যামেরা অন করলেই হয়।
অফিসের মালিক পক্ষও ভাবতে শুরু করলেন বেশ তো ভালো। ঘরে বসেই কাজ হচ্ছে যখন তবে এত ব্যয় করে অফিস রাখার কি প্রয়োজন। অনেকেই অফিস রাখার ব্যয় কমানোর কথা ভাবতে শুরু করেছেন ।
কর্মীরাও ভাবছে এই আরাম ঘরে বসে কাজ। যাতায়াতের খরচ এবং সময় সব বাঁচে। মাঝে মধ্যে ঘরের মানুষের সাথেও সময় ব্যয় করা যাচ্ছে। ইচ্ছে হলে নিজে বানিয়ে টাটকা খাবার খাওয়া যাচ্ছে। ফাস্ট ফুড বা রেস্তুরায় যেতে হচ্ছে না দুুরের লাঞ্চ সারতে। ডার্লিং, সন্তান সবার সাথে মাঝে মধ্যে সারাদিন ধরেই দেখা হচ্ছে, কথা হচ্ছে। পারিবারিক জীবনটা মধুময় হচ্ছে।
বেশ ক'বছর আগে একটা গবেষণা হয়েছিল, একজন তরুণ যেসব কারখানা দিনরাত চব্বিশ ঘণ্টা ধরে চলে তেমন কিছু অফিসের কর্মিদের কাজের সময় সীমার সেটআপ বদল করে দিয়েছিলেন। তাদের পছন্দের সময়ে কাজে আসতে দিয়ে। যারা সকালে উঠে কাজ করতে পছন্দ করেন তারা সকালে অফিসে আসবে। যারা দেরিতে উঠতে পছন্দ করে তারা দেরিতে আসবে। যারা রাতে জাগতে পছন্দ করে তারা রাতে আসবে। এমন প্রত্যেক কর্মির পছন্দের সময়ে কাজে আসার ব্যবস্থা করে দেওয়ার পর দেখা গেল উৎপাদন বেড়ে গেছে। কাজ খুব ভালো হচ্ছে।
তখন থেকে তারা এই অফিসের আটটা পাঁচটার নিয়ম বদল করার চেষ্টা করছিল। প্রত্যেক মানুষের দেহ ঘড়ি তার নিজস্ব নিয়মে চলে। অথচ নাগরিক জীবনে আমরা সবাইকে একই ভাবে চালাতে চাই। সকালে উঠো তাড়াতাড়ি ঘুমাতে যাও। এটা খুব প্রচলিত কথা । সবাই মনে করেন এই নিয়ম মেনে চললেই জীবনে সব চেয়ে ভালো কাজটি করা যায় কিন্তু সবার জন্য এই তথ্য সঠিক না। কেউ ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠতে পছন্দ করলেও কেউ সকালবেলা ঘুমাতে পছন্দ করেন। তাদের শরীরের চক্রটি সে ভাবেই ঠিক করা। তারা যে সারা রাত জেগে থাকেন, সেটা ভোরে উঠা মানুষরা সহ্য করতে পারেন না। অনেকটা আস্তিক মানুষরে নাস্তিকদের সহ্য করতে না পারার মতন।
আসলে প্রত্যেক মানুষের নিজস্ব শারীরিক নিয়ম চাহিদা আছে। তাদের সে ভাবে চলতে দিলে তারা অনেক ভালো কাজ করতে পারেন। জোড় করে অন্য সময়ে ভালো কাজ করানো তাদের দিয়ে সম্ভব না।
আমার একজন বন্ধু, সব সময় আমাকে সকালে তার সাথে দেখা করতে বলত। কিন্তু আমি কিছুতেই সকালের সিডিউল নিতাম না। কারণ সকাল আমার ঘুমে কাটবে। তারপর আস্তে ধীরে উঠে দুপুরে আমি বেরুব।
আথচ আমার বন্ধুটি অন্ধকার থাকতে উঠে ঘরদোর পরিস্কার করতে লেগে যাবে। তারপর সকালের কাজে বেরিয়ে পরবে।
আমার মনে পরে যায় একটা বাসায় থাকতাম প্রতিদিন উপরতলা থেকে ভোরবেলা এত্ত আওয়াজ আসত বিছানায় শুয়ে আমার মেজাজ খারাপ হতো। অথচ উপরতলার সকালে উঠা মানুষটি জানত না, সারারাত আমি কতটা কাজ করে ভোরবেলা শুতে গিয়েছি।
এবারের এই পরিবর্তনে অফিসপাড়ার চেহারা হয়তো অনেকটা বদলে যাবে। অনেক অফিস স্বাভাবিক অবস্থায় হয়তো আর সাজানো অফিস সেট আপে ফিরবে না। কর্মিদের ঘরে বসেই কাজ করতে দিবে।
এই যে খাখা করছে বিশাল অফিস পাড়া, স্কুল, চিকিৎসা কেন্দ্র গুলি এখন। যেখানে ভোর থেকেই লেগে যেত মানুষের ভীড়। সেখানে মানুষ নেই কিন্তু কাজ থেমে নাই বিক্ল্প উপায়ে কাজ ঠিক চলছে। আর বাড়ি গুলো পরে থাকত একা। মানুষ বাড়ি ফিরত শুধু রাতে ঘুমানোর জন্য। এখন মানুষ বাড়িতে থাকা উপভোগ করছে। নিজেদের মধ্যে সম্পর্ক, কাছে থাকা বাড়ছে। হোম অফিস কার কাছে কেমন লাগছে । আমার তো বেশ লাগছে।



সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০২০ দুপুর ২:৫৪
১২টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×