somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নিঃশব্দ দূরত্বে (৮)

০৩ রা মার্চ, ২০১৯ রাত ১২:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


গভীর রাতে আভার ঘুম ভেঙ্গে যায়।পাশে ডলি আর ইতি ঘুমাচ্ছে।ইতির শোওয়া খুব খারাপ।শাড়ি একদম ঠিক থাকেনা।বাহিরে কুহুক ডাকছে।আভা কান পেতে শুনে।স্বপ্নের রেশটুকু এখনও মনে আছে।যখন মুখ ঘুরিয়ে আভার দিকে চায়,আভা বিস্ময়ের সাথে লক্ষ্য করে উনি মাধাবদা নয়।এরপরই তার ঘুম ভেঙ্গে যায়।আভার খুব মন খারাপ হয়ে যায়।কান্না পায় খুব।ইতিকে ডাক দেয়।
-কি হয়েছে?
ঘুম জড়ানো কন্ঠে ইতি বলে।
-বাহিরে যাবো
আভা বলে।
-চল।
ওদের কথায় ডলিরও ঘুম ভেঙ্গে যায়।আভাদের বাহিরে যেতে দেখে ডলিও বলে উঠে যে সেও হিসি করতে যাবে।ইতি লন্ঠন হাতে নেয়।
-বাহিরে কে যায়?
পাশের ঘর থেকে ধীরেন্দ্র বলে।
-বাবা,আমরা। প্রস্রাবখানার দিকে যাচ্ছি।
ডলি উত্তর করে।
ধীরেন্দ্র আর কিছু বলেনা।
ফিরে এসে তিন বোন আবার শুয়ে পড়ে।আভার আর ঘুম আসেনা।ভাবতে থাকে এমন স্বপ্নের অর্থ কি?

খুব সকালেই মাধব উঠে পড়ে।সে আজ নতুন এক জায়গায় যাবে।বাড়ির কাউকে কিছু বলেনি।গোস্বামীদের কারখানায় যাবে।ব্যাগ,ট্রাংক এসব বানানো শিখবে।বি.কম পড়া শেষ হলে সে ব্যবসায় নামবে।তাই চুপেচাপে কাজটা শিখতে চায়।
-এত সকালে উঠলি যে?
দিঘীর পারে যাবার সময় মাধবকে দেখে প্রশ্ন করে কুন্তলা।
মাধব পেয়ারার ডাল ভেঙ্গে নেয়, দাঁত মাজবে বলে।কুন্তলার পিছে পিছে আসে। দিঘীর পারে বসে।কুন্তলা বাসন মাজতে থাকে।
-মা,তোমাকে বলা হয়নি।আমি গোস্বামীর কাছে কাজ শিখবো।সপ্তাহে দুইদিন।রবিবার আর বৃহস্পতিবার।
-ব্যাগ বানানো শিখে কি করবি?
-হাতের কাজ শিখে রাখা ভালো।কি বলো?
-শোন বাপ,এরচেয়ে পড়াশুনায় মন দে বেশী করে।
-শিখিনা মা!
-আচ্ছা যা।
দিঘীর জলে মাধব মুখ ধুয়ে বাড়ির ভেতরে আসে।আভা রেয়াজ করছে।ওর গলাটা অসম্ভব ভালো।সকালে ওর রেয়াজ শুনতে কি যে ভাল লাগে।মাধাব বাড়ি থেকে বেড়িয়ে পড়ে।গোস্বামীর কারখানায় পৌঁছায়।
-কি মাধব, এসেছো?
গোস্বামী হেসে মাধবকে বলে।
-চলে এলাম।কি শিখাবেন?
মাধব প্রশ্ন করে।
-তাহলে এসো, তোমাকে বুক ডন দেওয়া শিখিয়ে দিই।
-আসলাম ব্যাগ বানানো শিখতে।এখন বলছেন ব্যয়াম করতে।
-ভাইরে এটা অত্যন্ত পরিশ্রমের কাজ।শরীরে শক্তি না পেলে করবে কি ভাবে?

দুপুরে বাড়ি ফিরে মাধব।কুন্তলা রান্নাঘরে ছিল।মাধবের আসা টের পেয়ে,ওকে স্নান সেরে আসতে বলে।মাধব জামা-কাপড় বদলিয়ে রান্নাঘরে আসে।
-মা তেলের শিসি দাও।
কুন্তলা সরিষার তেলের শিসি এগিয়ে দেয়।
সব ভাইবোন মিলে দিঘির জলে ঝাঁপাচ্ছে।মাধবকে দেখে ডলি ওর কাছে আসে।
-দাদা,আমিও সাঁতার শিখবো।
মাধব ডলিকে সাথে নিয়ে জলে নেমে পড়ে।ডলির পেটের নীচে হাত দিয়ে জলের উপর ভাসিয়ে রাখে।ডলি জলের উপর হাত-পা আছড়াতে থাকে।
আভা ওদের কাছে এগিয়ে আসে।
-কিরে ডলি,মাধবদা ছাড়া তোর আর অন্য কোন দাদা নেই?এতক্ষণ চুপ করে পারে বসেছিলি।যেই দাদা এলো আর সাঁতার শিখার বায়না জুরে দিলি। কেনরে শান্তদা কি দোষ করলো?
-বেশ করেছি।তোর কি তাতে?
আভার কথায় ডলি উত্তর করে।
-ডলি এমন কথা বলেনা। দিদি হয়না?
মাধব বলে।
-দাদা আমাকে ছাড়ো।আমি আর সাঁতার শিখবোনা।
ডলির কথায় মাধব ওকে ছেড়ে দেয়।পার হতে অনেক দূরেই ছিল ওরা।মাধব ছেড়ে দিলে ডলির পা মাটি খুঁজে পায়না।ডক ডক করে কয়েক ডোক জল খেয়ে ফেলে।মাধব বুঝতে পেরে টেনে তুলে।ডলি মাধবকে সাপটে ধরে।মাধব ডলিকে পারে রেখে এসে, সাঁতরিয়ে অনেকদূর চলে যায়।
-দাদা,আমার জন্যে দুইটা শাপলা আনো।
আভা চেঁচিয়ে বলে।
মাধবের একটু ভয় ভয় লাগে শাপলা ফুলগুলির কাছে যেতে।সাপের বড্ড উপদ্রব ওখানে।তবু হাতের কাছে যে কয়টি পায় টেনে ছিঁড়ে নিয়ে আসে।

ডলি কাঁচের গ্লাসে ফুলগুলি সাজিয়ে পড়ার টেবিলে রেখে দেয়।রাতে আভা পড়ছিল।ইতি বই নিয়ে ঘরে আসে।বিছানায় বসে।
-কিরে ইতি পড়ছিস না কেন?
আভা প্রশ্ন করে।
-পড়ছি তো।
-শব্দ কই?
-মনে মনে পড়ছি।
-জোরে জোরে পড়।
ইতি জোরে জোরে পড়া শুরু করে-পৃথিবী কমলা।পৃথিবী কমলা।লেবুর মত গোল।লেবুর মত গোল।
-কি পড়ার ছিরি তোর।একবারে বলতে পারছিস না।পৃথিবী কমলা লেবুর মত গোল।
ইতি পড়া থামিয়ে দেয়।
-তোর শাপলা খুব পছন্দ।তাইনা দিদি?
আভা মাথা ঝাঁকিয়ে সম্মতি জানায়।
-শাপলা ফুল ভালো লাগে না মাধবদার দেওয়া ফুল ভালো লাগে তোর?
ইতির কথায় আভা পড়া থামিয়ে দেয়।ইতির চোখের দিকে চায়।ইতি চোখ নামিয়ে নিয়ে পড়ায় মনোযোগ দেয়।আভা পড়া বন্ধ করে বাহিরে চলে যায়।
মাধব বাড়িতে ঢুকে আভাকে বারান্দায় বসে থাকতে দেখে।ইতির পড়ার শব্দ শুনতে পায়।
-তুই এখানে বসে?পড়া নাই আজ?
মাধব আভাকে প্রশ্ন করে।
-আমার পড়তে ইচ্ছা করছেনা।
-তাই বারান্দায় বসে আকাশ দেখছিস।
-হ্যাঁ।তাতে কোন অসুবিধা আসে?
বেশ রাগের সাথে আভা বলে।
-মা,তোমার এক মেয়ে পড়া বাদ দিয়ে আকাশের তারা গুনছে দেখো।
মাধব জোরে জোরে বলতে বলতে নিজের ঘরের দিকে চলে যায়।আভাও পিছ পিছ আসে।
-কিছু বলবি?
জামা খুলতে খুলতে মাধবকে প্রশ্ন করে।
-তুমি আমাকে বললে।তুমি সন্ধ্যায় নিজে কেন পড়তে বসোনা?খালি আড্ডা দাও।
-আমরা এখন বড় হয়ে গিয়েছি না?আমাদের রাতে পড়লেও চলে।
-কত বড় হলে সন্ধ্যায় পড়তে বসা লাগেনা বল?
মাধব আভার চুলের বেণী ধরে মাথা ঝাঁকিয়ে দেয়।
-খালি পাকা পাকা কথা।যাঃ পড়তে বস গিয়ে।
-উঃ ছাড়ো।লাগছে।
মাধব আভার চুল ছেড়ে দেয়।
আভা মাধবের ঘর ছেড়ে বেরিয়ে আসে।নিজেদের ঘরে গিয়ে পড়তে বসে।
-মন ভালো হয়ে গিয়েছে।নারে দিদি?
ইতির প্রশ্নের কোন উত্তর দেয়না।
-মাধবদা খুবই ভালো তাইনা?ছেলেদের অতো ভালো হতে নেই।
ইতি কথা শেষ করেই জোরে জোরে পড়া শুরু করে।

কাঁথা গায়ে দিয়ে আভা শুয়ে ছিল।ভর দুপুর।মাথায় ঠান্ডা স্পর্শ পেয়ে চোখ মেলে মাধবকে দেখতে পায়।আভা আবার চোখ বুঁজে।মনে মনে চায় মাধব ওর মাথায় হাত দিয়ে থাক।
-সারা গায়ে খুব ব্যথা নারে?
মাধব প্রশ্ন করে।
-হ্যাঁ।
আভা উত্তর করে।
কুন্তলা এক বাটি সাগু হাতে নিয়ে ঘরে আসে।
-তুই এখানে বেশীক্ষণ থাকিসনা বাপ।এই রোগ খুব ছুঁয়াচে।বাড়িতে ঢুকলে সবাইকে ধরে, তারপর ছাড়বে।
কুন্তলা মাধবকে বলে।
-মা আমার খুব মাথা ধরেছে।একটু মাথা টিপে দেবে?
-আখায় ভাত দিয়েছি।একটু পরেই আসছি।
-আমি মাথা টিপে দিই?
মাধব কুন্তলাকে বলে।
-দে।আমি রান্না সেরে আসছি।
কুন্তলা চলে যায়।
মাধব আভার মাথা টিপে দিতে থাকা।আভা চোখ বুঁজে চুপচাপ শুয়ে থাকে।
-দাদা,তোমার যে বউ হবে,সে খুব সুখী হবে তোমাকে নিয়ে।
-তুইও খুব ভালো।দেখিস তোর বড় তোকে খুব ভালোবাসবে।
আভার চোখের কোন দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ে।মাধব কাঁথার কোনা দিয়ে মুছে দেয়।
-তোর কি খুব মাথা ধরেছে?
আভা চোখ খোলে।মাধব পড়তে পারেনা সেই চোখের ভাষা।কিম্বা পড়তে চায়না।পৃথিবীতে কিছু দূরত্ব থাকে যা কখনও লঙ্ঘন করতে পারেনা কেউ কেউ।মাধব হয়তো সেই দলেরই একজন।সে অনেক কিছু বুঝেও হয়তো না বোঝার ভান করে থাকে।যা নিজের সাথে এক ধরণের প্রতারণা। আভা তার জ্বরে উতপ্ত হাত দিয়ে মাধবের হাত চেপে ধরে।ব্যকুল চোখে চেয়ে থাকে মাধবের চোখে।সে হয়তো অনন্তকাল হবে। বাহিরে পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়।আভা হাত সরিয়ে নেয় মাধবের হাত হতে।ইতি ঘরে প্রবেশ করে।জামা-কাপড় না ছেড়েই আভার পাশে শুয়ে পড়ে।গাঁথা গায়ে জড়ায়।
-কিরে তোকেও ধরলো নাকি?
মাধব প্রশ্ন করে।
-মনে তো হচ্ছে।আমাকেও মাথা টিপে দেবে?মাথার মধ্যে কট কট করছে।
-দেবো।
মাধব আস্তে করে বলে।
চলবে…….
নিঃশব্দ দূরত্বে (১) (Click This Link)
নিঃশব্দ দূরত্বে (২) (Click This Link)
নিঃশব্দ দূরত্বে (৩) (Click This Link)
নিঃশব্দ দূরত্বে (৪) (Click This Link)
নিঃশব্দ দূরত্বে (৫) (Click This Link)
নিঃশব্দ দূরত্বে (৬) (Click This Link)
নিঃশব্দ দূরত্বে (৭) (Click This Link)



সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১১:০০
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×