পৃথিবীর একটা নির্দিষ্ট দেশের সপ্তাহখানেক আগের ঘটনা হবে, একটা বয়স্ক শিয়াল কোনো ভাবে শয়তানের ধোঁকায় হোক আর নিজের বিকৃত রুচির কারণেই হোক, একটা মুরগিকে খেয়ে ফেলল। একেবারেই খেয়ে ফেলল। এবং খাওয়ার পরপরই ঘটনাটা কিভাবে যেন বাতাসের বেগে ছড়িয়ে পড়ল। সাথেসাথে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতিনিধিগণ, পুরো কয়েকটা সাজোয়া গাড়ির বহর আর অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সাথে সাথে বেরিয়ে পড়ল শেয়ালটাকে ধরার উদ্দেশ্যে।
শেয়ালটাকে সাথে সাথে ধরে জনসম্মুখে হাত-পা বেঁধে উপুড় করে শোয়াল। উপুড় করে শুইয়ে একজন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মী হাতে থাকা AK-47 টা নিয়ে এগিয়ে গেল শেয়ালের দিকে। এগিয়ে গিয়ে শেয়ালের মাথা বরাবর অস্ত্রটা বাগিয়ে ধরে ৫টার বেশি গুলি করল, কিন্তু একটু বিরতি দিয়ে দিয়ে। কারণ তাদের দেশের শেয়াল আইনে লেখা আছে শেয়াল মুরগি ধরলে কি করতে হবে এবং কিভাবে শাস্তি দিতে হবে। শাস্তি প্রয়োগ করতে হবে এমনভাবে যেন অপরাধী তার প্রাপ্য শাস্তির একেবারে সবটুকু পায়। একটু সময় নিয়ে গুলি করল যাতে করে শেয়ালের জানটা একটু বেশি কষ্ট পায় জানটা কবজ হওয়ার সময়। গুলিটুলি করে যখন শেয়াল একেবারে তড়পড়াইতে তড়পড়াইতে নিস্তেজ হয়ে গেল তখন ইয়া বড় একটা ক্রেন নিয়ে আসা হলো। তারপর শেয়ালের পিঠে একটা হুক বেঁধে ক্রেনে করে অনেক উঁচুতে তোলা হল শেয়ালের মৃত শরীরকে। উঁচুতে তোলার পর জনসম্মুখে ঘোষণা দেয়া হলো কোনো শেয়াল যদি এই ধরণের ঘটনার পুনারাবৃত্তি ঘটায় তাহলে তাকেও এমন ঘটনার পুনারাবৃত্তির স্বীকার হতে হবে।
পাশে দাঁড়িয়ে থাকা শেয়ালের আত্মীয় স্বজন এই ধরেন শেয়ালের শেয়ালনী, তার মা, তার বোন হুহু করে কাঁদতে থাকল আর বলতে থাকল আহ! মানুষ কত নিষ্ঠুর! কত বর্বর! একটা অপরাধীকে কেউ কখনো এভাবে এত নিষ্ঠুরভাবে শাস্তি দেয়? আর সেসময় মুরগির বাবা-মা বিলাপ করতে করতে বলছিল অন্য কথা। শেয়াল কত নিষ্ঠুর! কত হিংস্র! এভাবে মুরগিকে খেতে পারে একটা শেয়াল? দয়া-মায়া বলে কি কিছু নেই? পৃথিবী থেকে কি সব দয়া, অনুগ্রহ একেবারে উঠিয়ে নেয়া হয়েছে? এসব প্রশ্নের উত্তর হয়ত তারা পেল না কিন্তু তারা অন্তত নিজেদের সন্তান হারানোর বেদনাটা ভুলে থাকার জন্য পাথেয় পেয়ে গেল। খুনী শেয়ালের বিচার হয়েছে। এটাই তাদের পাওয়ার ছিল। এইতো আমাদের দেশের ফেলানি, বিউটি কিংবা তনুর বাবা-মার মত কারো কাছে দৌঁড়াদৌঁড়ি করা লাগেনি বিচারে জন্য। বিচার চাওয়ার আগেই বিচার পেয়ে গেছে। কিন্তু শেয়ালের দ্বারা মুরগী এভাবে খুন হলো কেন? মূলের ঘটনাটা কি নিশ্চয় দেখা লাগে। দেখা যাক তাহলে।
অনুসন্ধানে দেখা গেল মুরগিকে যদি বাহিরে কোনো ধরণের প্রোটেকশন ছাড়া ছেড়ে দেওয়া হয় তাহলে তো মরার পর তার লাশটা পাওয়ারও কোনো সম্ভাবনা থাকে না। কারণ শেয়াল তো সবসময় ওৎ পেতেই বসে আছে মুরগি ধরার জন্য। যদিও শেয়ালে অনেক ভাবে বোঝানো হয়েছে মুরগি না ধরার জন্য এভাবে অবৈধ ভাবে তারপরেও সবকটা কি আর কথা শোনে? তাই কি করা হয়? মুরগিকে এক ধরণের ফ্লেক্সিবল খাঁচার মধ্যে আবদ্ধ করা হয়। যেটার মধ্যে আবদ্ধ থেকে সে যেখানে ইচ্ছা সেখানে যেতে পারবে, সবধরণের কাজ করতে পারবে তবে কতিপয় শর্তসাপেক্ষে। আবার এই খাঁচার বিষয়টা কার্যকর করে মুরগিদের নিরাপত্তা বিধান করায় নিয়োজিত দ্বায়িত্ব প্রাপ্তরা এটা নিয়ে অনেক সময় একটু বেশিই বাড়াবাড়ির পর্যায়ে চলে যায় তবে সেটা খুবই কম। মাঝে মাঝে ওভার সেফটি অবলম্বন করতে চায় এই আর কি। এই ধরেন অনেকে বলে খাঁচা ফ্লেক্সিবল হলে হবে না। খাঁচা হতে হবে অনেক মজবুত। এবং খাঁচায় ঢুকে কোথাও চলাচল করা যাবে না। সবসময় খাঁচার মধ্যেই থাকতে হবে এমন। কিন্তু মূল আইন বলছে অন্য কথা। খাঁচায় থেকে সে চলাচল করতে পারবে যেখানে খুশি, যা ইচ্ছা তাই করতে পারবে তবে কিছু শর্ত থাকবে এই যা। এমনকি যুদ্ধ ক্ষেত্রেও যাওয়ার অনুমতি আছে এই আইনে। এখন এই খাঁচার মধ্যে আবদ্ধ থাকার পরেও খাঁচার নির্মাতার পক্ষ থেকে বলে হয় এই খাঁচা মুরগীকে রক্ষা করতে পারবে তার শতভাগ নিশ্চয়তা খাঁচা দিচ্ছে না। কিন্তু এটা সম্ভাবনা সৃষ্টি করছে। এটা সম্ভাবনা দিতে পারে যে, খাঁচা বিহীন গেলে সে নিশ্চিত শেয়ালের আক্রমণের স্বীকার হতো, এখন সেটার ঝুঁকি অনেক অনেক কমে যাবে। ভাগ্য ভালো থাকলে একেবারেই কমে যেতে পারে। এবং শেয়ালের পক্ষে খাঁচা বিহীন থাকা অবস্থায় আক্রমণ করাটা যতটা সহজ ছিল তা অপেক্ষা খাঁচায় থাকা অবস্থায় তা অারও কয়েক'শ গুণ কঠিন হয়ে যাবে।
এবার শেয়ালের জন্যেও কিছু নিয়ম আছে সেটা দেখা যাক। শেয়ালকে বলা হয়, তুমি তোমার দৃষ্টি সংবরণ করে চলবে। নির্দিষ্ট সময়ে গেলে তোমাকে তোমার প্রাপ্য মুরগির অংশ বুঝিয়ে দেয়া হবে। তবে সেটা নির্দিষ্ট সময়ের পর। এবং বৈধ ভাবেই করা হবে সেটা। এখন তাকে যদি আবার একেবারেই খাবার না দেয়া হয় তাহলে তো সে বাঁচবে কিভাবে? আইন প্রণেতা অনেক মানবিক। সর্বাধিক মানবিক তিনি। আর বলা হয়, কোনো মুরগির দিকে যদি নজর দাও অবৈধ ভাবে আর যদি কিছু করো তাহলে কিন্তু ঐ উপরে বলা গল্পের শেয়ালের মত অবস্থা হবে। শেয়াল তখন অনেক দমে যায়। একেবারে দমে যায় বলা চলে। তারপরেও কিছু জান শক্ত শেয়াল ঐ বৈধ সময় পর্যন্ত নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে না। অথবা নিজের প্রবৃত্তির কাছে হার মেনে যায়। তখন কোনো একটা আকাম করে বসে। আর আকাম করলে নির্ঘাত সে ধরা খায়। পার পেতে পারে না কোনোভাবেই। অার তখন উপরের শেয়ালের মত অবস্থা হয়।
মোরাল অফ দ্যা স্টোরি: পৃথিবীর কোনো নিয়ম কখনোই মুরগিদের শতভাগ নিরাপত্তা ব্যবস্থার বিধান করতে পারবে না। এবং পারেও নি এখনো পর্যন্ত। এখন উপরে বর্ণিত তথকথিত বর্বরোচিত আইন প্রণয়নকারী এমন একটা জীবন ব্যবস্থা দিয়েছেন যেখানে মুরগিরা কিছু নিয়ম মেনে চললে একেবারে পরিপূর্ণ না হোক, প্রায় পরিপূর্ণ নিরাপত্তা পাবে। আর দূর্ঘটনাজনিত যদি দুই একটা মুরগি শেয়ালের কাছে চলে যায় আর শেয়াল সেটা খেয়ে ফেলে তখন শেয়ালের পালিয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ থাকবে না। ধরা সে পড়বেই। তার জন্য জনসাধারণের লাঠি নিয়ে দৌঁড়ানো লাগবে না কারো। তাড়িয়ে বেড়াতে হবে না কাউকে। আর ধরা পড়লে কি হবে সেটা তো সবাই জানেই। নির্যাতিত মুরগির অভিভাবকদের তখন আর কারো কাছে দৌঁড়াদৌঁড়ি করা লাগবে না কষ্ট করে। সে আপনাতেই বিচার পেয়ে যাবে। তারপরেও কিছু শেয়ালের দোসর দিন দুপুরে গলাবাজি করে। নানা যুক্তি দেখায়। খালি চেষ্টা করে মুরগিগুলোকে কিভাবে খাঁচা ছাড়া করা যায়। খাঁচা ছাড়া করে বাহিরে এনে ভালোভাবে শেয়ালের খাওয়ার উপযোগী করে দেয়া যায়। এরা আবার এই মুরগি সম্প্রদায়েরই লোক। তখন ঘটনা অন্যদিকে মোড় নেয়। বিভিন্ন বিতর্কের সৃষ্টি হয়। কিন্তু এ শেয়ালের দোসররা যতই গলাবাজি আর বিতর্কের সৃষ্টি করুক তারা মুরগিকে কিভাবে রক্ষা করা যায় তার যুক্তিযুক্ত কোনো বিকল্প ব্যবস্থা দিতে পারে নাই। এবং দিতে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে এবং প্রতিনিয়ত ব্যর্থ হচ্ছে। তারপরেও এই স্বজাতি শ্রেণির গাদ্দারদের জান এত শক্ত, এত কিছুর পরেও তাদের গলাবাজি থামে না। বরং প্রতিনিয়ত তা বৃদ্ধি পাচ্ছে।