somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তোতা মিয়ার বিখ্যাত নিরিবিলি হোটেল

৩০ শে জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ১২:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঢাকা শহরের ফাস্টফুড আর রেস্টুরেন্টে খেতে খেতে মুখে অরুচি এসে গেছিল। ভাবছিলাম কিছু আনকমন খাবার কোথায় পাব? ইতিমধ্যে খোজ পেয়ে যাই গাজীপুর জেলার কাপাসিয়া উপজেলার টোক বাজারের হোটেল নিরিবিলির।


তোতা মিয়ার হোটেলের অবস্থানঃ
গাজীপুর জেলার কাপাসিয়া উপজেলার টোক ইউনিয়নের টোক নয়ন বাজারে টোক বাজারের পূর্ব পাশে অবস্থিত বিখ্যাত নিরিবিলি হোটেল। গাজীপুরের কাপাসিয়া, কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া আর ময়মনসিংহের গফরগাঁও এর মিলন স্থানে এই টোক বাজার।
তোতামিয়ার নিরিবিলি হোটেলের কো-অর্ডিনেটঃ N 24°15'35.472" E 090°38'41.768"
(এই কো-অর্ডিনেট কপি করে গুগল ম্যাপে পেইস্ট করে সার্চ দিলেই হোটেলের নির্ভুল লোকেশন দেখা যাবে)


নিরিবিলি হোটেলের ইতিহাসঃ
তোতা মিয়ার জন্ম এই এলাকাতেই। ৮ ভাইয়ের সংসার। তোতা মিয়া প্রায় ২০ বছর আগে কক্সবাজের এক হোটেলে বয় হিসেবে কাজ শুরু করেন, সেখান থেকে চট্টগ্রামের একটি হোটেলে দীর্ঘদিন বাবুর্চি হিসেবে কাজ করেন। রান্নার হাত ভালো থাকায় চট্টগ্রামের ওই হোটেলের সুনাম চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে, সাথে হোটেলের বিক্রিও বেড়ে যায়। তোতামিয়ার রান্নার খ্যাতি একসময় এই টোক বাজার এলাকার লোকজনের কানেও পৌঁছে যায়। এক পর্যায়ে তারা তোতা মিয়াকে অনুরোধ করেন নিজের এলাকায়ই একটি খাবারের হোটেল দেওয়ার জন্য। সে অনুরোধে সাড়া দিয়ে সাত বছর আগে তোতা মিয়া টোক নয়ন বাজারে নিরিবিলি পরিবেশে চালু করেন ‘নিরিবিলি হোটেল’ নামের এই হোটেলটি। তোতা মিয়া, তার ছেলে ও তার একভাই মিলে চালান এটি। সব রান্নার তত্বাবধানে থাকেন তার স্ত্রী সালেহা বেগম। তিনি ও তার স্ত্রী নিজে বাড়িতে রান্না করে হোটেলে নিয়ে আসেন। প্রতিদিন সব মিলিয়ে প্রায় ৭০ টি আইটেম তৈরী করা হয়। সকাল ৮টা থেকে একটানা রাত ২টা পর্যন্ত খোলা থাকে তোতা মিয়ার হোটেল। তবে সব ধরনের আইটেম পেতে হলে অবশ্যই দুপুর ১ টার মধ্যে সেখানে উপস্থিত হতে হবে।


তোতা মিয়ার সাথে সেলফি
খাবারের আইটেমঃ
এখানে প্রায় ৭০ আইটেমের খাবার পাওয়া যায়। যার মধ্যে প্রায় ৪০ পদের ভর্তা এবং বাকি ৩০ পদের বিভিন্ন আইটেমের মাছ-মাংস ও ডাল। শুধুমাত্র আচার পাওয়া যায় ১৪-১৬ রকমের। এখান থেকে মাঝেমধ্যেই প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি ও বড় বড় ভিয়াইপিদের জন্য ভর্তা-ভাজির আইটেম নিয়ে যাওয়া হয়। হোটেলের ভিতরে তোতা মিয়ার সাথে তোলা বিভিন্ন মন্ত্রী-এমপি, সরকারী অফিসারের অসংখ্য ছবি ফ্রেমে বাধাই করে টানানো আছে।
তবে না খাইলে পুরাই মিস আইটেমগুলো হলঃ
মাংসঃ হাসের মাংস, মুরগীর মাংস, কবুতরের মাংস, কোয়েল পাখির মাংস
মাছ: শোল মাছ, রুই মাছ, চিংড়ি মাছ, বাতাসী মাছ, বাইন মাছ, ইলিশ মাছ, গুড়া মাছ, শুটকি মাছ , বেলে মাছ, টেংরা মাছ, কৈ মাছ,
ভর্তা: আলু ভর্তা, সর্ষে ভর্তা, কালো জিরা ভর্তা, শুটকি ভর্তা, মরিচ ভর্তা, ডিম ভর্তা, পেপে ভর্তা, টাকি মাছ ভর্তা, পেপে ভর্তা, সবজি ভর্তা, ডাল ভর্তা, শিম ভর্তা, আরো অনেক(নাম মনে নেই!)
আচার: বড়ই আচার, জলপাই আচার, চালতের আচার, মিক্সড আচার(বড়ই+তেতুল+চালতে)
ডাল: মাসকালাই, মশুর ডাল, মুগ ডাল,
সবজি: ১২ রকমের মিক্সড সবজি, ঝিংগা, চিচিংগা, পটল, আলুসীম, বরলা
ডেজার্ট- পায়েস, দধি, মিষ্টি
সবশেষে আসি পানের কথায়। হোটেলের সামনেই আছে স্বপন ভাইয়ের “ভালবাসার মিষ্টি পান”। ১০-৩০ টাকার মধ্যে ৪০ রকম মশলা দেয়া পান পাওয়া যায়। নামের সাথে টেস্টের মিল আছে পানের, মুখে দিলেই মাখনের মত সব গলে যাবে পানের।


তোতা মিয়ার হোটেলের পাশেই আছে ছোট্ট একটি বাজার। ভাগ্য ভাল হলে সেখানে পেয়ে যেতে পারেন আসল গরুর দুধের সর। ৫০ টাকা প্লেট নিবে। না খাইলে পুরাই মিস করবেন।


ভর্তা-ভাজির একাংশঃ


সুস্বাদু বিভিন্ন আইটেমঃ





স্বাদ ও দামঃ
স্বাদে-গন্ধে অতুলনীয় তোতা মিয়ার হোটেল। স্বাদের ব্যাপারে কোন কথা হবে না। মুখে দিলে নিজেই টের পাবেন। তবে দাম গ্রামঞ্চলের তুলনায় একটু বেশী মনে হইছে আমার কাছে, বিশেষ করে কবুতরের মাংস, চিংড়ি মাছ এর। যদিও ঢাকার তুলনায় এই দাম কিছুই না। এছাড়া অন্যান্য আইটেমের দাম ঠিক আছে।



যেভাবে যাবেনঃ
তোতা মিয়ার নিরিবিলি হোটেলে আসতে হলে ঢাকার গুলিস্তান (ফুলবাড়িয়া) থেকে ঢাকা পরিবহন, প্রভাতী বনশ্রী পরিবহন, ঢাকার মহাখালী থেকে ভাওয়াল পরিবহন, জলসিড়ি পরিবহন, বন্যা পরিবহন, অনন্যা পরিবহন, অনন্যা ক্লাসিক পরিবহন, উজান ভাটি পরিবহনের গাড়ি দিয়ে কাপাসিয়া হয়ে টোক নয়ন বাজারে যেতে হবে। এছাড়া গাজীপুর চৌরাস্তা থেকে সরাসরি রাজদূত বা পথের সাথী পরিবহনের গাড়ি দিয়ে সরাসরি টোক নয়ন বাজারে যাওয়া যায়। মহাখালি থেকে টোক বাজারের ভাড়া পড়বে ১১০-১৩০ টাকার মধ্যে। আর চৌরাস্তা থেকে টোক বাজারের ভাড়া পড়বে ৮০-৯০ টাকার মধ্যে।
মহাখালি থেকে টোক বাজার যেতে সময় লাগবে আড়াই থেকে তিন ঘন্টা, সাথে যোগ হবে জ্যামের সময়। এবং চৌরাস্তা থেকে দেড় ঘণ্টার মাঝেই পৌছে যাবেন টোক বাজার।টোক বাজার নেমে ২০০ গজ বাম দিকের রাস্তায় হাটলেই দেখা মিলবে হোটেল নিরিবিলির।
ফেরার সময় হোটেলের সামনের মেইন রোডে দাড়ালেই পেয়ে যাবেন ঢাকাগামী বাস। যেকোন একটায় উঠে পড়লেই হবে।

ধন্যবাদ সবাইকে। পোষ্ট বিষয়ক কোন জিজ্ঞাসা থাকলে কমেন্ট করুন, যথাসম্ভব চেষ্টা করবো।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ১২:৪৭
৬টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সিকান্দার রাজার চেয়ে একজন পতিতাও ভালো।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৭

সিকান্দার রাজা কোকের বোতল সামনে থেকে সরিয়ে রাতারাতি হিরো বনে গেছেন! কিন্তু তাকে যারা হিরো বানিয়েছেন, তারা কেউ দেখছেন না তিনি কত বড় নেমকহারামি করেছেন। তারা নিজেদেরকে ধার্মিক বলে দাবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×