somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভায়োনিচ ম্যানুস্ক্রিপ্ট: (প্রথম পর্ব)

২৯ শে আগস্ট, ২০২৫ রাত ৯:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


কটা বিষয় আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করার উচ্ছ্বাস দমন করতে পারছি না, ফলে আমার অনুসন্ধান সবটুকু শেষ করে একটা অনুমানভিত্তিক সম্ভাবনা দেখানো পর্যন্ত অপেক্ষা করতে পারলাম না। আপাতত যেটুকু মনে জেগেছে, তা শেয়ার করি। পরবর্তীতে নাহয় আবার গুছিয়ে লিখব।

কখনও কি আপনার সামনে এমন আর্টিকেল এসেছে, যেখানে রহস্যময় বইয়ের সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে? আমার মনে হয় কখনও না কখনও এমনটা পেয়েছেন। এমন রহস্যময় বইয়ের নাম করতে গেলে সবার আগে আসে কোডেক্স গিগাস'এর কথা! এই বইটি এক রাতের মধ্যে লেখা হয়, যার পৃষ্ঠা সংখ্যা পনেরো শ! পৃষ্ঠাগুলো গাধার চামড়া দিয়ে তৈরি, এবং একজন ব্যক্তির হাতেই লেখা! যার হাতে লেখা, তিনি শয়তানের উপাসনার দায়ে জেলে বন্দী ছিলেন, এবং পরদিন নিজের মৃত্যু হবে জেনে একরাতের মধ্যে শয়তানের উপাসনা সংক্রান্ত যাবতীয় মন্ত্র বা রিচুয়াল লিপিবদ্ধ করে যাবার সিদ্ধান্ত নেন! অতঃপর এক রাতের মধ্যেই পনেরো শ পৃষ্ঠার বইটি লিখে ফেলেন! বিশ্বাস হয়? আরো অবাক বিষয় হল, বইটির প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত হাতের লেখা একই, একই বলতে একক ব্যক্তির তো বটেই, একই মেজাজে লেখা, কোথাও কোন তাড়াহুড়ো নেই।

স্বভাবতই বলতে হয় যে এক রাতের মধ্যে পনেরো শ পৃষ্ঠার একটি বই হাতে লেখা সম্ভব না। যেখানো আবার পনেরো শ চামড়ার পৃষ্ঠা যোগাড় করারও ব্যাপার আছে! তাই এটা দ্ব্যর্থহীনভাবে অনুমান করা হয় যে এটি শয়তানের নিজের হাতে লেখা বই! শয়তান এসে বই লিখে গেছে এমন কথা ভাবতে বা মানতে ইচ্ছে হয় না বলেই এই বই নিয়ে আমি কখনও মাথা ঘামাতে যাইনি। থাকুক কিছু রহস্য!

কিন্তু ভায়োনিচ ম্যানুস্ক্রিপ্ট বইটাকে ওটার মত এক কথায় উড়িয়ে দিতেও পারলাম না। এই বইটি সম্পর্কে চমকপ্রদ সব তথ্য একটু গুগল করলেই হাজার হাজার পেয়ে যাবেন। সেসব আমার বলার উদ্দেশ্যও নয়, আমি বলব আমার কথা। তবে আপনাদের কৌতূহল তৈরি করতে নেটের মারফত পাওয়া সারা বিশ্বে প্রচলিত এই বই সম্পর্কিত কিছু বক্তব্য তুলে ধরা আবশ্যক হচ্ছে।

যতটুকু গবেষণা করে এ পর্যন্ত এ বইটি সম্পর্কে যা যা আবিস্কৃত হয়েছে তার মধ্যে প্রধান বিষয়টি হল এই বইটি এমন এক ভাষায় লেখা যার পাঠোদ্ধার এখন পর্যন্ত কেউ করতে পারেনি৷ বইটি ১৪০৪ থেকে ১৪৩৮ খ্রিষ্টাব্দে লেখা হয়েছে বলে রেডিওকার্বন বিশ্লেষণে প্রতীয়মান হয়েছে। বইটি কে লিখেছেন তাও জানা জায়নি, তবে লেখা বিশ্লেষণ করে প্রতীয়মান হচ্ছে যে এটি দুইজন লেখকের লেখা, প্রথমদিকে একজন লিখেছেন, কিছুদূর পর তা আরেকজন লেখা ধরেছেন! কিন্তু কী যে লিখছেন তা এখন পর্যন্ত কোন গবেষকই বের করতে পারেননি। এই গবেষকদের তালিকায় এলান টুরিং পর্যন্ত আছেন। এটা নিয়ে আরেক মাতামাতি করেছেন রবার্ট ব্রমবা নামের আরেক আমেরিকান গবেষক। যাহোক, এসব আপনারা নেট থেকেই জানতে পারবেন। এই বই সম্পর্কে মিথ হল, এখানে অপার্থিব গাছপালার ছবি আঁকা আছে! এখান থেকেই আমার আগ্রহের শুরু। আমি খুব একটা গাছপালার নাম জানার সুযোগ পেয়েছি এমনটা নয়, তবে শৈশব হতে বন জঙ্গলে ঘোরার অভিজ্ঞতা যেমন আছে, বিচিত্র সব গাছ ও গুল্ম দেখার স্মৃতিও কম নয়। হয়ত নাম জানিনি, কিন্তু গাছ তো দেখেছি বা দেখলেই চিনতে পারব। সেই কৌতূহল থেকে বইটি ডাউনলোড করলাম, এরপর আমার মাথায় চারটি বিষয় এল— প্রথমত, যে গাছগুলোর ছবি আঁকা হয়েছে তা অপার্থিব একদমই নয়। আজ থেকে পাঁচ ছয়শো বছর আগে কোন বিশেষ অঞ্চলে এমন গাছ থাকা অস্বাভাবিক নয়, হতে পারে কোন দ্বীপ এলাকা, যা পরবর্তীতে পানিতে তলিয়ে গেছে! দ্বিতীয়ত, এখানকার অনেক গাছই আপনার দেখে মনে হবে যে আরে, এই গাছ তো আমিই দেখেছি কোথায় যেন! আপনি মিলও খুঁজে পাবেন, আপনার অভিজ্ঞতার সাথে, অথচ বিশ্বখ্যাত গবেষকরা কেন মিল পেলেন না আমি ধরতে পারছি না। হয়ত তাঁরা কেবল ভাষাই ঘাঁটছেন, গাছগুলো নয়। তৃতীয়ত, আমার যা মনে হচ্ছে যিনি বা যাঁরা বইটি লিখছিলেন তারা একেকটি গাছের বিশেষ কোন অংশ মনে রেখেই ছবি এঁকেছেন। অর্থাৎ হার্বাল চিকিৎসায় যদি কোন গাছের ফুল গুরুত্বপূর্ণ হয়, তাহলে কেবল ফুলকেই আঁকার ক্ষেত্রে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, যার ফলে ফুল মিললেও পাতা বা গাছ মিলছে না। বই লেখা হয়েছে ঘরে বসে, জঙ্গলে গিয়ে গাছকে সামনে রেখে নয়! চতুর্থত, এই বইটি যারতার পড়ার জন্য লেখা হয়নি, গুপ্তজ্ঞান এবং তা কেবল বিশেষ শ্রেণির সাধক বা গবেষকের জন্য লেখা হয়েছে বিধায় ভাষায় যেমন ধাঁধার ব্যবহার করা হয়েছে, চিত্রেও তেমনি প্রহেলিকা সৃষ্টি করতেই হয়ত গাছের কিছু অংশ ঠিকঠাক এঁকে আবার কিছু অংশ ইচ্ছে করেই উদ্ভট করা হয়েছে, অনেকটা ওইসব সাররিয়েলিস্টিক চিত্রের মতন যেখানে সহজ একটি ছবি এঁকে আবার তার উপর অন্যান্য আঁকিবুঁকি দিয়ে মূল ছবিকে ঢেকে দেওয়া হয়!

উচ্ছ্বাসের ঠেলায় এতটুকু লিখলাম, পুরো বইয়ের বিষয়ে আমি দীর্ঘ লেখা নিয়ে শীঘ্রই হাজির হব। এই বইটা কেবল গাছ গুল্মের ছবি দেওয়া বই নয়, এই বইতে আছে এস্ট্রোনমির চর্চা, আছে গর্ভাশয়, নারী শরীর নিয়ে উদ্ভট সব গবেষণা এবং রেসিপি। পুরো আলোচনাটা অবশ্যই আরো ইন্টারেস্টিং হবে। এ পর্যন্ত একবাক্যে বইটি সম্পর্কে এটুকুই বলতে পারি, এটি মূলত কোন কবিরাজি বই যেখানে সাধুদের উদ্দেশ্য চিকিৎসা নির্দেশনা ও গণণাবৃত্তান্ত দেওয়া হয়েছে। এমনও হতে পারে বনজঙ্গলে একাকী জীবনযাপন করে যেসব সাধক, তাদের উদ্দেশ্য সারভাইভাল গাইড হিসেবেও বইটি রচনা হয়ে থাকতে পারে।

আপনাদের কৌতূহল তৈরি হোক, আমি শীঘ্রই এটি নিয়ে বিস্তারিত লিখব।
আপাতত কিছু দৃষ্টি আকর্ষক পয়েন্ট দেখাই—


চিত্র-১: এরকম সূর্যমুখী টাইপ ঢোলকওয়ালা গুল্ম রাস্তার পাশে বা মাঠের পাশে আমার মত আপনারাও অনেকে দেখে থাকবেন।


চিত্র-২: পুরনো বাড়ির স্যাঁতস্যাঁতে দেয়ালে বা ইটের খোয়াযুক্ত মাটি আছে এমন মাঠে এরকম হলদে দানাযুক্ত বেয়ে ওঠা নাতিদীর্ঘ গুল্মলতা দেখেননি এমন মানুষ খুব কমই পাওয়া যাবে।


চিত্র-৩: সবশেষে এই লেখাগুলোর প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। একদম শেষে যা আছে তা অনেকটা saw saw প্রতীয়মান হচ্ছে, আরো পেছন থেকে পড়লে আমাদের মনে হতে পারে sand/ saw often saw sand গোছের কিছু একটা লেখা। যদিও এটা সুনিশ্চিত যে ওখানে saw লেখা হয়নি। ইউরোপীয় বর্ণমালার সাদৃশ্য নিয়ে হয় একটি ছদ্মভাষা তৈরি করা হয়েছিল, অথবা একটি অঞ্চলের ভাষা ছিল এটি যা অঞ্চল ও ওই ভাষাভাষী সমেতই বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এই লেখাটুকু তুলে ধরার পেছনে কারণ হল, অনেক প্রাজ্ঞ জগদ্বিখ্যাত বিশ্লেষকই দাবী করেছেন যে এই ল্যাঙ্গুয়েজ কোন নির্দিষ্ট গঠন প্যাটার্ন অনুসরণ করছে না, অথচ আমার মনে হচ্ছে এখানে যথেষ্ট ভাওয়েলের উপস্থিতি আছে, এলোপাথাড়ি লেটার বসানো হয়েছে এমনটা কোনভাবেই মনে হচ্ছে না। হয়ত এজন্যই এটা নিয়ে এত বেশি মিস্ট্রি বা জল্পনা কল্পনা চলছে প্রায় একশো বছর ধরেই! যাহোক, আমার এটুকু তুলে ধরার বড় উদ্দেশ্য হল এটাই বোঝানো যে একই শব্দের বারবার ব্যবহারের মানে হচ্ছে এটি নিঃসন্দেহে কাব্যিক ঢঙে লেখা, সহজিয়া ভাষা, অনেকটা আমাদের চর্যাপদের মতো।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে আগস্ট, ২০২৫ রাত ৯:৪৯
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দ্যা এডামেন্ট আনকম্প্রোমাইজিং লিডার : বেগম খালেদা জিয়া

লিখেছেন ডি এম শফিক তাসলিম, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৪

১৯৪৫ সালে জন্ম নেয়া এই ভদ্রমহিলা অন্য দশজন নারীর মতই সংসার নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন, বিয়ে করেছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের অন্যতম সুশাসক শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কে! ১৯৭১সালে এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×