somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

১৫ বছর পরে

১১ ই নভেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



প্রিয় অমি,
আশা করি ভালো আছো। তুমি যতদিনে এই চিঠি পড়ছো, ততদিনে আমি নিশ্চয়ই মরে গেছি।
তুমি জেনে অবাক হবে যে, আমি যখন লিখতে বসেছি তখন তুমি, পর্দার আড়াল থেকে লুকিয়ে লুকিয়ে তোমার বাবাকে লিখতে দেখছো! তোমার দুচোখে শৈশবের অসীম কৌতুহল। খেলার সাথী লাল বলটা, গড়িয়ে গড়িয়ে আমার ঘরে এসে পড়েছে, কিন্তু তুমি আসতে ভয় পাচ্ছো। তোমাকে আমি বকা দেবো না, আঘাত করবো না; তবুও তুমি আমাকে পছন্দ করো না। তোমাদের সবার কাছে আমি খুব খারাপ একজন মানুষ।

আমার দৃঢ় বিশ্বাস, তুমি বড় হয়ে খুব ভালো একজন মানুষ হবে। হ্যা, আমি জানি এই পৃথিবীতে বাবা-মা ছাড়া একজন ভালো মানুষ হওয়া সহজ নয়। কিন্তু আমিও বাবা মা ছাড়া এই সমাজে বড় হয়েছি। ভালো মানুষ হইনি সত্য, তবে তুমি সেটা পারবে।
আমার মৃত্যুর পর, আমি সেটাই চাইবো। তোমাকে কোনদিন টাকা পয়সা, জীবন ধারণ নিয়ে ভাবতে হবে না। তোমার জন্য আমি প্রয়োজনের চেয়েও অনেক বেশি টাকা রেখে যাচ্ছি। মনে রেখো, চাইলেই এই কাগজের টাকা দিয়ে অনেক মানুষের উপকার ও কল্যাণ করা যায়।

তোমার লাল বল ফিরিয়ে দিয়েছি, আমি চাইনা তুমি আমার জন্য কখনো দুঃখ পাও।
আমার মৃত্যুতে তুমি খুব একটা দুঃখিত হবে না। তুমি হয়তো তোমার খালামনির কাছে বড় হবে, আমি জানি, তিনি তোমাকে খুব ভালোবাসবেন, যত্ন নিবেন। তোমার মা কত ভালো মহিলা, আর আমি কত দুষ্ট একজন মানুষ সেসব তোমাকে বলবেন।
তবে, বেলাশেষে আমি কিছু সত্যি কথা লিখে যেতে চাই।

তোমার মাকে আমি কোনদিনও বুঝতে পারিনি। তোমার মা, যখন যা চেয়েছেন আমি দিয়েছি। অসাধ্যকে সাধ্য করেছি। আমার ভাই বোনদের শখ আহ্লাদ এবং তোমার মায়ের বিলাসি জীবন যাপনের স্বার্থে আমি আমার আদর্শ আর সত্যকে ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছি।
আমি বলবো না, তোমার মা একজন খারাপ মহিলা। আমরা কেউ কাউকে কোনদিন ভালোবাসতে পারিনি- এই কথাটাও আমি অবিশ্বাস করি। তোমার মা যেদিন আরেকজনের সাথে ইংল্যান্ড চলে যায়, সেদিন আমাকে বলে যায়নি।
আমি জানলে তাকে কক্ষনো যেতে দিতাম না! কিন্তু তুমি জেনো, সে সুযোগ আমাকে দেয়া হয়নি।

অমি,
তুমি কখনো ভেবো না- আমার সব অর্থ-সম্পদ অবৈধ কিংবা ঘুষের পয়সা। আমি বৈধ ভাবেও অনেক টাকা আয় করেছি, তবে তা ভোগ করার খুব একটা সৌভাগ্য হয়নি। তোমার সে সুসৌভাগ্য হোউক।
তোমার বাবা হিসেবে, আমি কোনদিন তোমাকে মনের মতো আদর করতে পারিনি! তুমি তোমার বাবাকে ভয় পাও। বাবার সামনে হাসো না, কথা বলো না, বল খেলো না। নিশ্চয়ই আমি খুব খারাপ একজন মানুষ! তাই হয়তো, তোমার জন্য একটা নতুন "মা", আমি এনে দিতে পারবো না। সত্যি বলতে, আমি প্রচন্ড ক্লান্ত। পেছনে তাকালে আমি শুধু হতাশ হই!

কি আশ্চর্য, আমাদের এত টাকা-পয়সা তবু আমাদের মনে সুখ নেই, কখনো ছিলো না। টাকায় যে সুখ হয়না, এই শিক্ষাটি আমি সমস্ত জীবন অপচয় করার পর পেয়েছি।

আমার চিঠি শেষ হয়ে আসছে। আমার মৃত্যু দিয়ে এই চিঠি শুরু হয়েছিলো, মৃত্যু দিয়েই শেষ হোক।
আমার সামনে মৃত্যুর কোন বিকল্প নেই। একজন নিঃসঙ্গ মানুষ এতো দুঃখ কষ্ট বেদনা নিয়ে বেঁচে থাকতে পারে না। তবে, তারচেয়েও বড় কারণ হলে তুমি। আমি বেচেঁ থাকলে তোমার বড় হওয়াটা সুন্দর হবে না।
আমি জানি না, ক্যান্সার সংক্রামক কিনা, তবে পাপ সংক্রামক।
তুমি অভিমান কোরো না, আমি সব ভেবে চিন্তে এসব লিখেছি।
ঈশ্বর অনেক দয়ালু।
তুমি দীর্ঘজীবি হও।
সুবিবেচক, বুদ্ধিমান, আদর্শ মানুষ হও।
মনে রেখো, পৃথিবীতে দুঃখই সত্য, আদর্শই শান্তি।

ইতি,
তোমার বাবা
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

লেখক: আশরাফুল আলম প্রান্ত
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই মে, ২০২০ সকাল ৮:৩০
১৪টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×