somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

 ব্লগার_প্রান্ত
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগে পড়ি এবং নিজের ক্ষুদ্রতা ও জ্ঞানের স্বল্পতা স্বীকার করি। নিজেকে বুদ্ধিজীবী ভাবি না। ঐ বয়সটা পার করে এসেছি।

পহেলা বৈশাখ চৌদ্দশ একত্রিশ

১৫ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

'আমি আদর্শ পুরুষ নই। আদর্শ পুরুষের জীবন থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সবটুকুই এক নিরবচ্ছিন্ন সূত্রে গাঁথা। সবটাই চির পরিচিত রেলগাড়ির লাইন; কোন স্টেশনে গাড়ি কতক্ষণ দাঁড়াবে তাও আগে থেকেই জানা। কোথাও অপ্রত্যাশিত বিস্ময় বা অজ্ঞতার চমক নেই। সুতরাং আমি আদর্শ পুরুষ নই। চরিত্র যথেষ্ট বলীয়ান নয় বলেও বটে, মনের স্বাভাবিক প্রবণতাও কিছুটা অন্যদিকে প্রবহমান বলেও বটে।' [ রশীদ করিম / উত্তম পুরুষ, ১৯৬১]

বিমল করের কিকিরা সমগ্রে একটা পরিচিত নাম দেখলাম। মোহন। দীর্ঘদিন আমাদের ভোজন রসিক পরিবারে রুই কাতল সরবরাহের কাজটি করেছিলেন মোহন আংকেল। টুকরিতে করে মাছ নিয়ে ফেরি করে বিক্রি করতেন তিনি। সে বছর দশেক আগের কথা। আমাদের বাসার নিচে এসে কলিংবেল দিতেন। আমি আমাদের বটিটা নিয়ে নামতাম। উনি মাছ কেটে নিজের সাথে ময়লাও নিয়ে যেতেন। ব্যাপারটা আমার দারুণ লাগতো। তাছাড়া, ওনার সাথে আমাদের ঐ যাকে বলে 'টাকার সম্পর্ক', সেটা ছিলো না। আমরা (মূলত আমি আর মা) ওনার পরিবারের বিষয়ে জানতাম। ওনার ছেলে তখন পড়াশোনা করছিলো। আংকেল প্রায়ই বলতেন, ছেলে পড়াশোনা শেষ করে সংসারের হাল ধরলে মাছ বিক্রি ছেড়ে দিয়ে গ্রামে চলে যাবেন। চাষবাস করবেন। তখনই দুটো গরু ছিলো তাদের। একবার ওনার চাষের তরিতরকারিও নিয়ে এসেছিলেন আমাদের জন্য। আংকেলের গ্রামে যাওয়ার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। মোহন নামটা আমার তাই খুবই পরিচিত। তবে আমার মনে হয়না তিনি আমার নামটা মনে রেখেছেন। তিনি তখনও আমার নাম জানতেন কিনা আমার সন্দেহ আছে। আংকেলের ছোট ভাইকে কিছুদিন আগে দেখলাম এলাকায়। তিনিও মাছ ব্যবসায় আছেন। অনেকদিন পরপর কোথা থেকে যেনো এসে কদিন মাছ বিক্রি করে চলে যান। এবার ঈদের আগে এসেছিলেন। কথা হয়েছিলো ওনার সাথে। মোহন আংকেলরা সবাই ভালো আছেন বাড়িতে। আমার ইচ্ছা করছে একদিন চলে যাই আংকেলকে দেখতে। নওগাঁয়।

কিকিরা সমগ্র থেকে দুইটা উপন্যাস পড়লাম। আর পড়বোনা। কিকিরা একজন পঞ্চাশ পেরোনো সাবেক স্টেজ ম্যাজিশিয়ান, এবং বর্তমানে গোয়েন্দা এমন একজন চরিত্র। তার সাথে ছানবিন করতে সাথে যায় তারাপদ আর চন্দন নামের দুই যুবক। অত্যন্ত লাইট রিড। পড়লে পড়ে ফেলা যায়। কিন্তু জীবনে সময় কম। সবকিছু পড়ে শেষ করতে পারবো না। তার উপর আমার যোগ হচ্ছে মনে না থাকার অসুখ।

ঈদের আগে রশীদ করিমের 'উত্তম পুরুষ' উপন্যাসটা শেষ করলাম। এক দিনে একশো ষাট পৃষ্ঠা। রশীদ করিমের ব্যাপারে গত বছরও কিছু জানতাম না। তবে আমাদের লাইব্রেরিতে আগামী বছর রশীদ করিম আর সর্দার ফজলুল করিমের জন্ম শতবর্ষ পালন করা হবে দেখে কিনা একটু গরজ নিয়ে পড়া শুরু করলাম। ওনার লেখা বই পড়ার আগে বাংলা একাডেমী থেকে বের হওয়া ওনার জীবনীটা পড়ে নিয়েছিলাম। অনেকে বলেন উত্তম পুরুষ লেখার পর আর কোনোদিন কিছু না লিখলেও রশীদ করিম বাংলা সাহিত্যে মর্যাদার আসনে থাকতেন। কাজটির জন্য তিনি পেয়েছিলেন আদমজী সাহিত্য পুরস্কার। আমার দারুণ লেগেছে বইটা। রশীদ করিমের বাকি কাজগুলো পড়ে একটা প্রবন্ধ লেখাই যেতে পারে।

তবে ভবিষ্যতে কি হবে কি করবো, এই বিষয়ে আমি আর খুব একটা মাথা ঘামাই না। ভবিষ্যতটা খুবই অনিশ্চিত। এই যেমন ইসরাইলে ইরানের হামলা। যুদ্ধ, বিগ্রহ, বাণিজ্য, মহামারী, সফটওয়্যার। পৃথিবীর বড় বড় ঘটনাগুলোইতো খুব অনিশ্চিত। সেখানে মানুষের জীবনটাই আর কতটুকু নিশ্চিত। জীবনের সব অনিশ্চয়তার মাঝে নিশ্চিত হওয়া যায় শুধু এই বিষয়টায় যে, পৃথিবীতে কেউ অমর নয়। কিছু কিছু জীবন দর্শনে মানুষের মৃত্যুকে খুব তাৎপর্য দেওয়া হয়। এমনও নজির আছে যে, মৃত্যুর চূড়ান্ত পরিণতির কথা মনে রাখতে বিশেষ লকেট ও আংটি ব্যবহার করা হতো একসময়। প্রতিদিন মৃত্যুকে স্মরণ করে বিনয়ী এবং সাদামাটা জীবন যাপন করতে উৎসাহ দেবার প্রবণতা থাকে এই দর্শনধারায়। খ্রিস্ট ও ইসলাম ধর্মে সরাসরি এমন চিন্তাভাবনা পাওয়া যায়। মৃত্যুর সাথে বিনয়ের সম্পর্কটা কি প্রধানত ধর্মীয় এবং পরলৌকিক? আমি যখন থাকবো না তখন মানুষ আমাকে নিয়ে কি ভাবলো সেটা কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ?

হয়তো গুরুত্বপূর্ণ। পরিচিত সব নশ্বরতার মাঝে মৃত্যু একটা বড় ঘটনা। আপনজনের মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে অনেকে যুদ্ধে যায়। যুদ্ধে যাওয়ার পেছনে তখন দেশপ্রেমের বোধ কাজ করেনা। পরিবারের উপার্জনকারী ব্যক্তির মৃত্যু অনেক সময়ই বাকি সদস্যদের জীবনে বাজে ফলাফল নিয়ে আসে। পৃথিবীর অনেক বিখ্যাত ব্যক্তিদের চরিত্রহানী হয়েছে মৃত্যুর পরে তাদের গোপন করে যাওয়া তথ্য টথ্য ফাঁস হওয়ার মধ্যে দিয়ে। তাই মরেও যে খুব শান্তি আছে সেটাও নির্ধারিত ভাবে বলা মুশকিল। অন্তত সমাজ সংস্কৃতির দিক দিয়ে।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:১৯
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×