somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"সভ্যতা" নিয়া হাবিজাবি ক্যাঁচাল

২০ শে ডিসেম্বর, ২০১০ রাত ১১:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



সমাজ সভ্যতর হচ্ছে, মানবজাতি উন্নততর হচ্ছে।

মানুষে মানুষে হৃদ্যতা বাড়ছে, এক ক্লিকেই বন্ধুত্ব হয়ে যাচ্ছে এই গোলার্ধের রাম-রহিম আর ওই গোলার্ধের জেসিকা-মনিকাদের মধ্যে। ভালোবাসা-বাসিও আর বোধহয় বিরল না, রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস সিঙ্গেল আর ইন্টারেস্টেড ইন-এ বিপরীত লিংগ বসিয়ে দিলেই ডিজিটাল সংস্করণের ভালোবাসা পাওয়া যায় ভূরি-ভূরি। একই বাড়ির তিনতলার আর চারতলার দুই বন্ধু... পুরোমাস জুড়ে সামনাসামনি দেখা না হলেও সমস্যা নাই, ফেসবুকে দুইজনের বন্ধুত্ব আর ভালোবাসা একেবারে প্রগাঢ়... একেবারে যাকে বলা যায় গড়িয়ে গড়িয়ে পড়ে। ভালোবাসার উল্টোটাও যে নেই, তা বলা যাবেনা। রাজিবের মত মডার্ণ দেবদাসেরা প্রেমে ব্যর্থ হয়ে ডিজিটালীয় প্রেমের অমর(!!!) সাক্ষ্য ছড়িয়ে দেয় অন্যদের মাঝে, আর অন্যেরাও সেই গোপন ডিজিটাল ভালোবাসার রস আস্বাদন করে। হোকনা... পরোক্ষ, তাতে কি??!! দর্শনে অর্ধভোজন না???!!! (নাকি অর্ধধর্ষণ ?)।

সভ্যতার উত্তরণের আরো একটা প্রমাণ হইলো সিনেমা। সিনেমায় আগডুম-বাগডুম যাই থাকুক, কাহিনী যাই হোক, সিনেমায় যদি একটা-দুইটা আইটেম সং থাকে তাইলে সিনেমা বাইর হইবার আগেই হিট!!! আর অবাক হওয়ার কিছু নাই যদি শোনেন যে আইটেম নায়িকার ইনকাম মেইন নায়িকার চেয়ে বেশি। আর ড্রেস-আপের কথা নাইবা বললাম, মাশাল্লাহ... পরিবারের সবাই মিলেতো আমরা সভ্যযুগের মানুষরা এইটা পানি ছাড়াই গিলা খাই। মডার্ণ যুগে একটু আধটু পেট-নাভি দেখা না গেলে হয়??!! এইগুলাতো এখন একেবারেই স্বাভাবিক। আর ঈদের সময় এসব ড্রেস কিনতে আমরা আবার হুমড়ি খাইয়াই পড়ি, এইগুলা না পড়লে একটু ব্যাকডেটেড লাগবোনা???!!! আর মোবাইলের রিংটোনে বা রাস্তা দিয়া যাওয়ার সময় ফুল ভলিঊমে এইসব চালাইলেইতো মানুষ বাহবা দিবো।

দেশপ্রেম প্রদর্শনওতো এখন একটা ইস্টাইল। প্রোফাইল পিকচারে দেশের পতাকা/মানচিত্র দিন, দু’একটা ঝাঁঝাঁলো কথা লিখুন... পাড়া-পড়শি বা বন্ধু-বান্ধব আপনাকে অবধারিতভাবেই “লাইক” করবে (না করলে যে “রাজাকার” বলবে!!)। বছরের ৩টা দিন(২১শে ফেব্রু,২৬ শে মার্চ, ১৬ ই ডিসে) বাদে বাকি দিনগুলাতে ইচ্ছামত বিদেশি হাবিজাবি দেখেন, বিদেশি “হিরু”র বান্দরনাচ লাখটাকা দিয়া দেখেন। কিন্তু এইদিনগুলাতে লেবাছ লাগাইবেন, অন্যেরা জানলেও কারো কওয়ার হিম্মত নাই যে আপনে দেশের জন্যে কিছু করেননা। মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানী-র কাছে নিজের দেশ বেইচ্চা দেন, ঘরের গ্যাসের চুলা ইচ্ছামত জ্বালাইয়া রাখেন, বিয়া-র অনুষ্টানে পুরা এলাকা লাইটিং করেন...কোনো সমস্যা নাই। শুধু একটা কাজ করলেই হইবো... ফেসবুকে বা ব্লগে দেশ-দেশ কইরা ফাডাইয়া দেন, গন্ডায় গন্ডায় প্লাস-মাইনাস আর লাইক অইবো, কমেন্টের পর কমেন্ট অইবো “ভাই, আপনার-আমার মত যদি সবাই দেশকে নিয়া একটু ভাবতো!!” । আমি আর কি বুদ্ধি দিমু, পেপারে-তো পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা ফিচার আসে “পতাকা ধরার কেতাব” কিংবা “অমুক ফ্যাশন হাউজ নিয়ে এলো স্বাধীনতার পোষাক”।

মডার্ণ যুগে মহাজনদের এখন আর লাঠিয়াল বা গুন্ডা পুষতে হয়না, মূর্খ চাষীর হাতের টিপসই নিতে হয়না কোনো কাগজে। বরং মডার্ণ যুগের মহাজনরা কাস্টমার কেয়ার (!!!) নামক সেবামূলক অফিস নিয়ে বসে থাকে,দেশের শীর্ষ সংবাদ(!!!)পত্রের পুরো পাতাজুড়ে থাকে তাদের বিজ্ঞাপন। ওই বড় বিজ্ঞাপনের একেবারে কিনার ঘেষেঁ মাইক্রোস্কপিক একটা লিখা থাকে- “শর্ত প্রযোজ্য”। এই প্রযোজ্য ছোট্ট শর্তের জোর আদ্যিকালের টিপসই থেকে অপেক্ষাকৃত দুর্বল হইতে পারে, কিন্তু স্বর্বস্বান্ত না করুক, অন্তত স্বর্বস্বান্ত হওয়ার পথ দেখাইয়া দিবো।

শিক্ষা নাকি জাতির মেরুদন্ড। শিক্ষা দেন কে? শিক্ষক। আর শিক্ষক যদি নিজেই মেরুদন্ড সোজা করে দাঁড়াইতে না পারেন? আরে... শিক্ষকের মাসিক বেতন যদি হয় ৩০০-৪০০০ টাকা, আর তিনি যদি কোনো টিঊশনি বা কোচিং সেন্টার না খুলে নিবিষ্ট মনে বিদ্যালয়েই শিক্ষার্থীদের সমস্ত পড়া গিলিয়ে দেন, তাহলে নিজ সন্তান-পরিবার নিয়ে খাবার গিলতেতো তাঁর কষ্ট হবেই!!! আর এতদাবস্থায় জাতির মেরুদন্ড??? সেই বিবেচনা করার চেয়ে বরং চিন্তা করা যাক- কাদামাটির উপর একটা ১০তলা বাড়ি, সেই বাড়ির বাইরের কালার প্লাস্টিক পেইন্ট, ওই বাড়ি কয় বছর টিকবে? তাও ভালো এই ভেবে যে, সদ্য পাশ করা ইঞ্জিনিয়ারকে এইচ.আর কিংবা এডমিনের জ্ঞানীরা ইন্টারভিউয়ের পর ৮০০০ টাকা বেতন সাধে!!! আর এতেও অবাক হওয়ার কিছু নেই যদি ফ্লুইড মেকানিক্সের মত সাবজেক্ট পড়ে আসা ইঞ্জিনিয়ারকে কোনো এডমিনের লোক বলে “আপনিতো মোটর-ও চিনেননা!!! You don’t deserve more than 8000TK.” আরে... যে দেশে ইঞ্জিনিয়ার আর শিক্ষকের সারাজীবনের ইনকাম একটা পান-বিড়ির দোকান্দারের সমান, সে দেশরে অগণতান্ত্রিক কয় সেই দুঃসাহস কারো আছে??!!

আমরা বড়বড় রেস্তরায় যাই, খাইতে নাকি বিদেশি খাবার দেখতে সেইটা নিয়া আমি সন্দিহান। কাটাঁচামচ দিয়া অল্পকিছু খাবার জিহবা দিয়া গিলা খাই, অর্ধেকের বেশী কিন্তু ফালাইয়া দেই। নাহ... পেট ভইরা গ্যাছে এইজন্যনা, বরং কিছু খাবার ফালাইয়া না দিলে যে মানুষ অসভ্য কইবো!!! আর আমরা যদি না ফালাই তাইলে রাস্তাঘাটের অসভ্য ফকির-মিসকিনরা খাইবো কি? আমগো উছিলায়ইতো তাগোর জন্যে ডাস্টবিনে এইসব উচ্ছিষ্ট পরিবেশিত হয়। আমরা যদি তাদের দিকে না তাকাই তাইলে হইবো??!!

আমরাতো সভ্য হচ্ছি, আধুনিক হচ্ছি......তাইনা???!!!
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই আগস্ট, ২০১৩ রাত ১:৩৬
৯টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:১৩

ফেসবুকে বাঙালিদের মধ্যে ইদানিং নতুন এক ফতোয়া চালু হয়েছে, এবং তা হচ্ছে "দাওয়াতের নিয়্যত ছাড়া কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।"
সমস্যা হচ্ছে বাঙালি ফতোয়া শুনেই লাফাতে শুরু করে, এবং কোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×