সব ক্রাইমেই অপরাধী ভিকটিমের উপর ক্ষমতা দেখাতে চায়, রেইপও তাই। এমন অপরাধ শুধু পুরুষ-মহিলার মধ্যে নয়; ছেলে-ছেলের, মেয়ে-মেয়ের উপরও এই আগ্রাসন চলে। রোমান যুগে প্রতিদ্বন্দ্বী সিনেটর ও যুদ্ধবন্দীদের বলৎকারের নজির আছে। মহাবীর আলেকজান্ডার দ্য গ্রেটের বাবা রাজা ফিলিপ (২) তরুণ বয়সে বন্দী হয়ে এমন হ্যারাসমেন্টের শিকার হয়েছিলেন বলে জনশ্রুতি আছে। পরে তার সেনাবাহিনীও পরাজিত শত্রুদের উপর একইভাবে চড়াও হতো। প্রতিপত্তি দেখাতে ছেলেদের উপর চড়াও হওয়ার নজির এই যুগে বাংলাদেশেও আছে। দুয়েকটা কমেন্ট এ দিচ্ছি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে স্তালিনের রেড আর্মি বার্লিনে লক্ষাধিক নারীকে ধর্ষণ করেছিল। সুলতান সুলেমানের স্ত্রী হুররাম তার প্রতিদ্বন্দ্বী কনকিউবিনদের দাসীপল্লীতে গুম করতেন বলে বলা হয়।

রেপিস্টরা নিজেদের ভিকটিমের থেকে উচ্চ জাতের, ক্ষমতাবান মনে করে। তাই পরিবারের পুরুষ সদস্যদের অপরাধ জানলেও ঘরের মহিলাদের প্রায়ই কোনো বিকার দেখা যায় না। বাংলাদেশের মুনিয়া হত্যার পর যেমন হয়েছিল। যেমন, রোহিঙ্গা নারীদের উপর নির্যাতনের প্রতিক্রিয়ায় নোবেলজয়ী সূচী বলেছিলেন, তার সেনারা নোংরা রোহিঙ্গাদের ছোঁবে না। বাংলাদেশে—২০০১ সালে পূর্ণিমা রাণী শীল থেকে ২০১৮-তে সুবর্ণচরের চল্লিশ বছরের মা সবই ক্ষমতা দেখানোর জন্যই অপরাধ হয়েছে। আর ২০২৫ এর আছিয়া যেন এক সাইকোপ্যাথ পরিবারের এক অদ্ভুত বিকৃতির শিকার। এই গল্প কেমন যেন অসম্পূর্ন। এই পরিবারের আরো কোন কাহিনী বের হবে সামনে।

ভিকটিমের উপর প্রতিপত্তি দেখানোর এই অপরাধ সাধারনত রেপিস্ট একা করে না। তার সাথে থাকে তার সমমনা দলের ছেলে এবং মেয়ে উভয়েই। এক-একটা স্ক্যান্ডাল যখন চাউর হয়, তখন তাই গড়পরতা মানুষ গোষ্ঠী নির্ণয়ে নামে। এক পক্ষ খোঁজে, "মেয়েটার পোশাক ঠিক ছিল না?" আরেক পক্ষ ভাবে, "সে কি রাত করে বাইরে ছিল?" বা "একা গণ্ডির বাইরে ঘুরতে গিয়েছিল?" "মেয়েটার সাথে কে ছিলো?" এর যেকোনোটা মিলে গেলেই এই দল বুঝে যে "এই ভিকটিম তার মতের বিপক্ষ দলের।" যেটা তাকে এক ধরনের মানসিক আরাম দেয়, দায়মুক্তি দেয়। তাদের বয়ান থাকে -"এই ভাবে চললে তো এইসব হবেই, আগেই বলে আসতেছি।" —এভাবে রেপিস্ট নৈতিক সমর্থন পায়। সে সাহস পায়। সে ক্রাইম এর গল্প করে, মিষ্টি বিলোয়, ভিডিও করে। সে প্রচার করে নিজের প্রতিপত্তি, অহম। সে প্রতিপক্ষকে হুমকি দেয় একই ক্রাইম আবার করার। আরেক গোষ্ঠী আছে উদাম বাহিনী। তারাও হুবহু একই জিনিস খোঁজে। মেয়েটার বোরকা ছিল কিনা, বয়স অতি কম কিনা, ক্রাইমটা ঘরের ভেতরেই ঘটলো কিনা! কোন বিচার আচার নয়, তারা যেন উদম চলার লাইসেন্স খোঁজে। আর এর মাঝেই দাপটের সাথে চলতে থাকে একটার পর একটা অপরাধ।
সব গোষ্ঠীর জন্য এক আইন হলেই এসব বন্ধ হবে। নিজ দলের প্রমাণিত খুনিকে সাধারণ ক্ষমা দিয়ে যে দেশের প্রেসিডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের কনভোকেশনে স্ট্যান্ডআপ কমেডি করতে যান, সেখানে বিচার কঠিনই ছিল। কিন্তু এখন সময় ঝুলানোর। Women and Children Repression Prevention (Amendment) Bill, 2020 এ ঝুলানোর সুযোগ আছে। সুবর্ণচরের ছয় ধর্ষকের ফাঁসির রায় দ্রুত কার্যকর করা হোক। বাকি অপরাধেরও বিচার হোক। মব জাস্টিস কঠোরভাবে দমন করা হোক। এখন তো কোনো বৈষম্য নেই।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই মার্চ, ২০২৫ রাত ৯:৫৫

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


