২০১৫ সালে ষোল বছরের একটা মেয়েকে রাস্তায় জীবন্ত পুড়িয়ে মারার ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল। গায়ে আগুন নিয়ে ঘিরে থাকা মানুষের জটলায় কিছুক্ষণ ছুটোছুটি করে কাকুতি মিনতি করতে থাকে মেয়েটা। পরে হতাশ হয়ে বসে পড়ে আর পুড়তে থাকে। এই বিভৎস ঘটনাটা ঘটায় গুয়াতেমালার মানুষ। মেয়েটাকে একটা গ্যাংয়ের সদস্য ভাবা হয়, যে গ্যাং একজন ট্যাক্সি ড্রাইভারকে মেরে ফেলে। পরে বের হয় যে মেয়েটা নির্দোষ ছিল। খুনি অন্যজন। বাংলাদেশে ২০১৯ এ একজন মা-কে মেরে ফেলে মানুষ, ছেলে ধরা সন্দেহে। বাংলাদেশে আর ভারতে এমন ঘটনা বহু ঘটেছে। যেখানে সাধারণত আইন-কানুন দুর্বল থাকে, সেখানেই এসব ঘটে। আবার মব জাস্টিস চলতে দিলে সেখানে আইন-কানুন দুর্বল হতে বাধ্য
‘আমি ছেলে ধরা না, আমি ছেলে ধরা না’, মৃত্যুর আগে তাসলিমার আকুতি।

"Deindividuation Theory" অনুসারে, যখন মানুষ বিশাল একদল জনতার অংশ হয়ে যায়, তখন তার ব্যক্তিসত্তা ও নৈতিকতা কমে যায়। ভিড়ের মধ্যে থাকলে ব্যক্তিগত দায়বদ্ধতা নাই হয়ে যায়। তখন তারা আইন ভেঙে নৃশংসতা করতে দ্বিধাবোধ করে না। দেশে ক্রাইম ভাইরাল হলে মব তৈরি হয়। তারা আসামির বিচারিক অধিকারের বিরুদ্ধে থাকে। "এত ভয়ঙ্কর অপরাধীর আবার বিচার কী! সোজা ঝুলিয়ে দাও"—এই চিন্তা ভয়ঙ্কর। সব ঘটনারই বিভিন্ন বয়ান থাকে। একজনের বয়ান শুনেই আসামিকে বিনা বিচারে ঝুলানোর পরই আরেকজনের বয়ানে বেরিয়ে আসতে পারে যে আসামি আসলে অন্যজন। বিচার প্রক্রিয়ার কাজই হলো মূল আসামিকে খুঁজে বের করা। স্পষ্ট প্রমাণ থাকলে বিচারও স্পষ্ট হবে, দ্রুত হবে। দাবি-দাওয়া এই দিকেই থাকতে হবে। আসামিকে হিয়ারিং না দেওয়া, তার আইনজীবীকে হেনস্তা করা দেশটাকে জঙ্গল বানিয়ে ফেলবে। জঙ্গলে মব হয় বিচারক। ইমোশন যে দিকে, সেই দিকে মাইর দিতে থাকবে তারা।
উন্মত্ত জনতার সাথে বাংলাদেশে আছে নৃশংস ধর্ষকামী পলাতক জঙ্গি গোষ্ঠী, যারা সদ্য ক্ষমতা হারিয়েছে। মানুষের যে কোনো ক্ষোভ, ইমোশন গুলোর মধ্যে তারা অনলাইনে-অফলাইনে হাওয়া দিতে থাকবে। —শুধু বিচার নয়, সব ব্যবস্থাকেই বানচাল করতে। সকল ঘটনাতেই মবিং না করে সাধুদের সাবধান থাকা উচিত।
কীভাবে মব জাস্টিস রোধ করা যায়?
দ্রুত ও কার্যকর বিচারব্যবস্থা: যদি অপরাধীদের দ্রুত ও ন্যায়সঙ্গত বিচার হয়, তবে মানুষ আইন নিজের হাতে তুলে নিতে চাইবে না।
কঠোর আইন থাকলেও বিচার দীর্ঘসূত্রতায় পড়লে জনতা অধৈর্য হয়ে পড়ে।
জনসচেতনতা ও গণমাধ্যমের দায়িত্ব: মানুষকে বোঝাতে হবে যে মব জাস্টিসে নিরীহ লোকেরও মৃত্যু হতে পারে। সংবাদমাধ্যমকে দায়িত্বশীল হতে হবে, যাতে তারা গুজব না ছড়ায়।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের গুজব নিয়ন্ত্রণ: WhatsApp বা Facebook-এর মতো প্ল্যাটফর্মে ভুয়া খবরের প্রসার কমাতে কড়া ব্যবস্থা নিতে হবে।
আইন প্রয়োগকারী সংস্থার দক্ষতা বৃদ্ধি: পুলিশের কার্যকর উপস্থিতি এবং দ্রুত হস্তক্ষেপ করলে মব জাস্টিস কমে। জনগণের আস্থার জন্য স্বচ্ছ ও শক্তিশালী তদন্ত দরকার।
মব জাস্টিস এক ভয়ঙ্কর সামাজিক ব্যাধি, যা বিচারহীনতা এবং ভুল সিদ্ধান্তের কারণে জন্ম নেয়। এর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা বলছে, এটা মানুষের সহজাত প্রবৃত্তির অংশ, তবে সঠিক নীতির মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। তাই ন্যায়বিচারের দাবি তোলা জরুরি, কিন্তু আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া আরও ভয়াবহ অপরাধের জন্ম দেয়। বিচারহীনতার সংস্কৃতি বন্ধ না হলে, আজকের মব একদিন আপনাকেও নিশানা বানাতে পারে।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই মার্চ, ২০২৫ বিকাল ৪:৩৮

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


