সন্মানিত ব্লগার “নূর আলম হিরণ” ভাইয়ের লিখা আমাদের নবীকে ব্যঙ্গ করার সঠিক শাস্তি সে ফরাসি শিক্ষক কি পেয়েছে? পড়লাম।
আমি ওনাকে ব্যক্তিগতভাবে চিনি না, ব্লগে ওনার এই লিখাটা ছাড়া আর কোন লিখা পড়েছি কি না মনে নেই।
তবে ওনার লিখাটা পড়ে ওখানেই কমেন্ট করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু দেখলাম আমার কমেন্ট মূল লিখার চাইতেও বড় হয়ে যাচ্ছে, তাই আলাদা করে পোস্ট আকারেই তার কিছুটা পর্যালোচনা দিলাম।
ওনার পোস্টের কিছু অংশের ভাবার্থটা এরকম… ফ্রান্স ইউরোপের সবচাইতে বেশি বাকস্বাধীনতার দেশ… সেখানে নবীর কার্টুন আঁকারও স্বাধীনতা আছে…
আর তাই নবীর কার্টুন আঁকা নিয়ে ওই যুবকের শিক্ষক খুন আপনার ভাষায় কেবলই ওই যুবক বা ধর্মীয় এক্সট্রিমিস্টদের অন্যায়।
১। আমি নিজেও মনে করি না যে নবীর কার্টুন আঁকলেই কাউকে হত্যা করে ফেলতে হবে এবং তা কোনভাবেই ন্যায়সঙ্গত।
২। তবে ঘটনার সূত্রপাত যেভাবে হলো এমন অহেতুক উষ্কানিদাতাদের নির্দোষ মানতে পারি না।
আপনার লিখার ধরন পর্যালোচনা করে আমি নিশ্চিত যে ১ নম্বার পয়েন্টের সাথে আপনার কোন দ্বিমত নাই।
সত্যি বলতে যৌক্তিক যে কোন মানুষ এমনটাই ভাববেন।
কিন্তু যেহেতু ২ নম্বর পয়েন্টের সাথে রিলেভেন্ট কোনরুপ কোন ইঙ্গিত আপনার লিখায় পেলাম না, সেহেতু আমি ধরে নিতেই পারি আপনি ফ্রান্সের খৃষ্টান-ইহুদি-নাসারা-মুসলিম ধর্মিয় সংঘাতে মুসলিমদের প্রতিপক্ষের পক্ষে কথা বলছেন।
(একটা কথা না বললেই না। আমি ধর্মিয় বিভেদকারি বা ওইরকম বিভেদ যারা মনে পোষন করে, আমি তাদের মতো অযৌক্তিক পাবলিকদের ভালো মানুষ বলে মনে করি না। সকাল বিকাল অন্য ধর্মের লোকদেরকে গালিগালাজ বা অপমান করার মধ্যে কোনরুপ কোন উপকার থাকতে পারে না। তারা নিজেদেরকে নিজেদের কমিউনিটির রিপ্রেজেন্টিটিভ দাবি করলেও তারা তার নিজের এবং তার বিরুদ্ধ কমিউনিটি তথা গোটা সমাজ, রাষ্ট্র এমনকি পৃথীবির শত্রু। তাছাড়া সেই বিভেদকারি যে কমিউনিটির রিপ্রেজেন্টিটিভ দাবি করছে, সেউ কমিউনিটির মেজরিটিই তার ধারনা বা মতামতের সাথে একমত নয়)।
ফ্রান্সের বাক স্বধীনতায় আপনার আপনার পূর্ণ সমর্থন এবং তা নিয়ে গর্বিত হওয়া প্রতিয়মান হওয়ায় আপনার কাছে আমার কিছু প্রশ্ন…
১। ফ্রান্সে কি ব্ল্যাক-হোয়াইট রেসিজমের পক্ষ নিয়ে পত্রিকায় লিখালিখি করতে পাবেন?
২। LGBTQ দের বিরুদ্ধে পত্রিকায় কলাম ছাপতে পারবেন?
৩। শ্রেণীকক্ষে শিক্ষার্থিদের ব্লাক পিপলদের বিরুদ্ধে কিংবা LGBT রা সন্মান পেতে পারে না, এই শিক্ষা দিতে পারবেন?
৪। চাইলেই কারও বাপ মা তুলা গালিগালাজ করে দিতে পারবেন?
৫। ফ্রান্সে মার্কিন দূতাবাসের সামনে গিয়ে ট্রাম্পের কুশপুত্তুলিকা দাহ করতে পারবেন?
যদি বলেন তা কেন করবেন বা পারবেন না, তবে বিনা কারনে কেন নবীর কার্টুন ছাপাবেন যেখানে আপনি যানেন তাতে বহু মানুষ অপমানিত বোধ করবে বা কষ্ট পাবে?
যা ইচ্ছা তা বলা, যা ইচ্ছা তা করার নামই যদি বাক স্বাধিনতা হয়, তবে আগের জঙ্গলযুগই ছিলো সবচাইতে বেশি বাকস্বাধীনতার যুগ।
ট্রাম্পের ছবি পোড়ালেতো সত্যি সত্যি ট্রাম্পের কিছুই হয়ে যাবে না!
কিন্তু তাতে ট্রাম্পের প্রতি তথা আমেরিকার প্রতি অসন্মান প্রদর্শন হয়, তাই বিনা কারনে যেমন তা গ্রহনযোগ্য নয়, ঠিক একইভাবে নবীর ছবি নিয়ে ব্যাঙ্গাত্বক কার্টুন ছাপানোও কোনভাবে গ্রহনযোগ্য হতে পারে না যেখানে ওইরকম এক্টিভিটি মুসলিমরা অপমানিত বোধ করবে তা আগে থেকেই জানা।
ফ্রান্সের সরকার যদি এই গেঞ্জাম নিয়ে মুসলিম কমিউনিটির উপর বিরক্তি প্রকাশ করে, তার পাশাপাশি শার্লি হেবদো কিংবা ওই শিক্ষকদের কর্মকান্ডেরও সমালোচনা করা উচিৎ ছিলো এবং ভবিষ্যতে যাতে এধরনের ঘটনা আর না ঘটে সেই ব্যপারে নির্দেশনা দেয়া উচিৎ ছিলো।
হয়তে বলবেন: কার্টুন ছাপলে বা দেখালে কি হয়! এটা কেন এত বড় তুলকালাম কান্ড ঘটাতে হবে!
আমি নিজেও মনে করি না এমনটা ঘটানোর কোন মানে আছে বা এমনটা ঘটানো উচিৎ, কিন্তু আপনি মানুষের আবেগকে নিয়ে খেলতে পারেন না। নিজেদের বুদ্ধিমান মানলে অন্তত এই জ্ঞানটুকু তাদের থাকা উচিৎ।
আরও বলেছেন: “…এগুলোর লজিক্যাল উত্তর হলো আমাদের মধ্যে গোড়ামী বেশি, কোন সভ্য জাতির সাথে বসবাস করতে আমরা অভ্যস্ত নয়…”
আমি জানি না আপনার কাছে “সভ্য” এর ডেফিনেশনটা ঠিক কেমন।
আমি অন্তত বইয়ে পড়া “সভ্য” এর ডেফিনেশন গ্রহন করিনি।
আমার মতে পৃথীবির কোথাও কেউ জাতীগতভাবে “সভ্য” হতে পারে না, তা কেবল কঠিনই নয়, প্রায় অসম্ভব।
মানুষ ব্যক্তিগতভাবে “সভ্য” হতে পারে।
আপনি “সভ্য” হতে পারেন, আমিও হতে পারি, এই ব্লগের সবাই “সভ্য” হতে পারে।
কিন্তু পুরো জাতির কথা যখন বলবেন, সবাই সভ্য নয়।
যদি সবাই সভ্য হতো, তবে এখানে চুরি-ডাকাতি-দুর্নিতি বা খুনের ঘটনা ঘটতো না।
যদি সবাই সভ্য হতো, তবে ধর্ষনের ঘটনা ঘটতো না।
এখন আপনার/আপনাদের ভাষায় কথিত ইউরোপিয় দেশগুলোতে চুরি-ডাকাতি-খুন-ধর্ষন… এগুলোর কিছুই হয় না???
পরিষ্কার রাস্তা, উচু উচু বিল্ডং আর বড় বড় ইউনিভার্সিটি পাস দিলেও জামাকাপড়ের দিক দিয়ে যারা আবার জঙ্গলযুগে প্রবেশ করেছে, তাদের সবাইকে আমি আমার চেয়ে ধনি মানলেও জামাকাপড়ের দিক দিয়ে তাদের সবাইকে পাইকারিভাবে “সভ্য” মানতে নারাজ।
ঠিক একইভাবে মুখ থাকলেই যে মুখ দিয়ে যে সব বলা যায়না, লিখতে পারলেই যে সব লিখা যায়না, আঁকতে পারলেই যে সব আঁকা উচিৎ না, আর কিছু করতে পারলেই যে সব করে দেয়া যায় না, এইটা বোঝার জ্ঞান যার/যাদের নাই, সে/তারাও কোনভাবে “সভ্য” হতে পারে না।
আর আমি যদি ভবিষ্যতে ওইসব দেশে আশ্রয় বা জব নিতে যাইও, সেটা সেখানকার ওই পরিষ্কার রাস্তা, সুন্দর পরিবেশ, ভালো আইন শৃঙ্খলা, বড় বড় বিল্ডিং আর ভালো পেইং জবের জন্যই যাবো।
অর্থাৎ তাদের যা আমাদের চেয়ে ভালো, তা যদি আমার জন্য লাভজনক মনে হয় কেবল তা গ্রহন করতেই যাবো, কোনভাবেই তাদের সব গ্রহন করতে নয়।
আমি মনে করি বাকিরাও তার জন্যই যায়।
ফাইনালি বলেছেন:
“…আমেরিকা বসেও সেখানে শরীয়া আইন কায়েম করার স্বপ্ন দেখি।...“
সেই দেশ যদি গনতান্ত্রিক দেশ হয় এবং জনগনের মেজরিটি যদি প্রচলিত আইন থেকে ভিন্ন কোন আইনকে গ্রহন করেই ফেলে, সেটা সত্যিকারের গনতন্ত্রের মানে ঠিক রাখতেই তা করবে!
যদিও আমরা সবাই জানি তা অসম্ভব, আর এই অসম্ভব কাজকেও যদি কেউ সম্ভব ভেবে চেষ্টা করে, কেউ যদি ওখানে শরিয়া আইন প্রতিষ্ঠার সপ্ন দেখে এবং সেটা যদি প্রপার ওয়েতে হয় এবং ওই দেশের সাধারন মানুষ যদি তা গ্রহন করে, তাতে কারও কোন আপত্তি থাকার কথা নয়।
তবে যারা জিহাদের নামে গলাবাজি বা জোর-জবরদস্তি করে, খুনাখুনি করে তা প্রতিষ্ঠা করতে যায় বা সেই চেষ্টা করে থাকে, তবে তারাও কেউ সামাজিকভাবে “সভ্য” নয়।
আর এরকম প্রচেষ্টা যে কেবল মুসলিমরাই করে তা তো আর না!
ইউরোপ আমেরিকাও বিভিন্ন বিষয়ে বিভিন্ন দেশে তাদের মতামত বা তাদের মতো করে বিভিন্ন বিষয় চাপাতে চেষ্টা করে, এটাতো নতুন কিছু নয়!
নাকি আমরা তাদের “সভ্য” সার্টিফিকেট আছে মানি বলে তাদের সকল কর্মকান্ডই মিষ্টি???
আমি মনে করি আমেরিকা-ইউরোপ-ফ্রান্স বা আমাদের বেশিরভাগ মানুষই এই সমস্ত বিভেদকারীদের পক্ষে নেই।
টোটাল জনগনের মধ্যে গুটিকয়েক বিকৃত মস্তিষ্কের মানুষ হাতে 'মাইক/কলম/ক্যামেরা' পেয়ে আবোলতাবোল 'বলছে/লিখছে/দেখাচ্ছে' এবং অন্য সকলকে অস্থির করে তুলছে।
----------------------------------------------
কারও সাথে আমার ব্যাক্তিগত বিরোধ নেই।
সকল পাঠক এবং ব্লাগারের প্রতি আমি যথাযথ সন্মান প্রদর্শন করছি।
আমার লিখায় কোনভাবেই আমার কোন আবেগের বিহ:প্রকাশ ঘটেনি বা ঘটাইনি।
আমার কথাগুলো কেবলই আমার লজ্যিক্যাল মতামাত।
আর আমার লিখায় লজ্যিকে ভুল থাকতেও পারে, আমি নির্ভুল নই।
(বানান ভুলের জন্য ক্ষমাপ্রার্থি)
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে অক্টোবর, ২০২০ দুপুর ১২:৩১

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




