somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমি কলেজ জীবন যেরকম আশা করেছিলাম, সেটা ঠিক সে রকম হল না ! [প্রথম সমস্যা এবং সেটা বড় সমস্যা: অধ্যায়-২]

১৯ শে জুন, ২০১৪ সকাল ৮:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আগের পর্ব

আক্কাস স্যার নিজের চেয়ারে বসে পা নাচাচ্ছেন।বারবার তার সামনে বসে থাকা মোটাসোটা লোকটা দিকে তাকাচ্ছেন।লোকটার নাম জালাল আহমেদ।পাশের স্কুলের এক মেয়ের বাবা তিনি।জালাল সাহাবের দাবী, এই কলেজে এক ছেলে নাম তার রানা সে তার মেয়েকে কিসের যেন কু বুদ্ধি দিয়েছে সেই কারনে তিনি রেগে আগুন হয়ে আছেন। তিনি রানা নামের ছেলেটার বিরুদ্ধে একটা ব্যাবস্থা নিতে চান।

প্রথম প্রথম জালাল সাহেব যেভাবে আচরন শুরু করেছিলেন তখন মনে হয়েছিল তার মেয়ে এই কলেজের এক ছেলের সাথে ভেগে গিয়েছে।এখনকার ছেলে-মেয়েদের মধ্যে ঘর পালানোটা এক ধরনের ফ্যাশন হয়ে দাঁড়িয়ে গেছে, কিছু হল তো ঘর ছেড়ে চলে যাও আবার দুই তিনদিন পর ফিরে আসো।আক্কাস নিজের গাল চুলকাতে চুলকাতে ভাবলেন, দুইজনে পালিয়ে গেলেই মনে হয় ভাল ছিল, তখন নাহয় একটা ব্যাবস্থা করা যেত কিন্তু সমস্যা এখানেই, দুজনই এখন উপস্থিত আছে একজন তো তার নাকের ডগার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।

আক্কাস স্যার রানা নামের ছেলেটা দিকে তাকালেন, নির্বিকার ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে।জালাল আহমেদ নামের লোকটা তাকে নিয়ে এত লাফালাফি করছে সেটা নিয়ে তেমন ভ্রুক্ষেপ নেই।তিনি জালাল আহমেদ নামের লোকটার দিকে তাকিয়ে বললেন, “ছেলে তো হাজির, তখন কি করবেন।”

জালাল সাহেব হাত তুলে থামানো ভঙ্গিতে তুলে বললেন, “আগে আমার মেয়ে আসুক তারপর,” এই বলে উনি রানার দিকে তাকালেন, বললেন, “দেখেতো মনে হচ্ছে ভাজা মাছ উল্টে খেতে জানে না।তোমার বাবা কি করেন ?”

“ব্যাবসা।”

“কিসের ব্যাবসা?”

“ঘর-বাড়ি তৈরীর।”

জালাল সাহেব ভ্রু কুচকে আক্কাস স্যারের দিকে তাকালেন, উনার চেহারা বলে দিচ্ছে, দেখলেন ছেলেটা কেমন বেয়াদব।

এবার আক্কাস স্যার বলে উঠল, “তোমার বাবা কি বিল্ডার্স কম্পানি আছে নাকি?”

“না, স্যার, আমার বাবার ছোট খাট অ্যাপার্টমেন্ট তৈরীর কাজ নেন,” রানা বলল।

“ওই কন্টাকদার আরকি,” জালাল আহমেদ বলল, “সরকারি চাকরি করি তো তাই ভালভাবেই চিনি তাদের, ঘুষখোরের দল।”

“অন্তত সরকারী চাকুরেদের চেয়ে ভাল।”

রানার এই কথা যেন জালালা আহমেদের শরীরে আগুন দিল, সে গরম চোখ করে রানাকে কিছু বলতে যাবে তখনই দপ্তরী একটা মেয়েকে নিয়ে ঢুকল।আক্কাস স্যার বুঝে গেলেন এ জালাল আহমেদের মেয়ে।



*

সুমনা টিচারস রুম থেকে একটু দূরে দাঁড়িয়ে আছে।কি হচ্ছে সে এখনো ঠিক মত বুঝে উঠতে পারছে না। সকালে এসে কোন এক লোক এসে রানার খোজ নেয় শুরু করল, শেষে দেখা গেল সেই লোকটা ইশরাতের বাবা হন। ইশরাতের বাবার কথা হল, রানা নাকি তার মেয়েকে কিছু করেছে এবং সেটা মনে হয় খারাপ কিছুই মনে করেছিল সে। টিচারস রুমের সামনে একজন মহিলা দাঁড়িয়ে আছে, ভাবসাব দেখে মনে হচ্ছে উনি ইশরাতের মা।

ইশরাতকে বহাল যখন তবিয়তে কলেজ দপ্তরীর সাথে টিচারস রুমে ঢুকতে দেখল তখন আরো অবাক হল সে। কি হচ্ছে এখানে ?, মনে মনে বলল সুমনা।

নুশরাত সুমনা পাশে দাঁড়ানো ছিল, সে সুমনাকে জিজ্ঞেস করল, “কিরে রানা আবার কি করা শুরু করল, তুই কি এ ব্যাপারে কিছু জানিস?”

সুমনা মাথা নাড়ালো। তার পাশে রুপাও এসে দাড়িয়েছে। সে ভ্রু কুচকে টিচারস রুমের দিকে তাকিয়ে আছে। তাদের আশেপাশে অনেকেই দাঁড়িয়ে আছে। সবার চোখেই কৌতুহল।

“বান্দরটাকে ঢাকা উচিত।”

রুপার এই কথা শুনে সুমনা কিছুক্ষন চুপ করে রইল। রুপা ঠিকই বলেছে, রাতুল মনে হয় কিছু জানে, গতকাল যখন রানার খোজে তারা বের হয় তখন রহস্যজনক ভাবে রাতুলও উধাও হয়ে যায়। তারমানে রাতুলও মনে হয় এরসাথে জড়িত।

“কিন্তু এখনতো তার ক্লাস শুরু হয়ে গেছে,” সুমনা বলে উঠল।

“সেটা আমার উপর ছেড়ে দে,” নুশরাত বলে উঠল, “বান্দরকে কিভাবে গাছ থেকে নামাতে হয় সেটা আমার জানা আছে।”

“তাহলে আমি তোর সাথে যাই,” রুপা বলে উঠল।

নুশরাত প্রথমে ভেবেছিল না বলবে কিন্তু একজনের জায়গায় দুইজন গেলে সুবিধা আরো বেশী পাওয়া যাবে এই মনে করে সে রাজী হল এরপর সে সুমনার দিকে তাকিয়ে বলল, “তুই এখানে থাক, দেখ কি হয়।”

সুমনা কিছু না বলে এবার মাথা ঝাকালো। সে রুপা আর নুশরাতের গমন পথের দিকে তাকিয়ে রইল। সুমনা তার পিছনে তাকাতেই দেখল সজল আর নির্জন আস্তে আস্তে কি কথাযেন বলছে। নির্জনের কথা শোনার পর সজলের মুখে রাগ দেখা গেল, চিবিয়ে চিবিয়ে বলল, “সেলফিশ বাস্টার্ড।”

সুমনা মনে মনে বলল, কাকে গালি দিল সজল?



ওইদিকে নুশরাত আর রুপা হাটছে। দুজনের মধ্যে তেমন কোনো কথা হচ্ছে না। একসাথে হাটলেও দুইজনকে দুই মেরুর মানুষ মনে হচ্ছে।

“আচ্ছা রানা কি করল যে ইশরাতে বাবা ক্ষেপে গেল?” রুপা জিজ্ঞেশ করল নিরবতা ভেঙ্গে।

আমি কি জানি! জানলে কি এখন বলসে থাকতাম, নুশরাত এটা মনে মনে বললেও, সে রুপার দিকে তাকিয়ে বলল, “ও কোনদিকে চিন্তা করে সেটা আমি এখনো ধরতে পারিনি।”

“কেন, কি কারনে?”

“তুমি কখন অতি চালাক বা অতি বোকার চিন্তাধারা কখনও ধরতে পারবি না।”

“তোর কি মনে হয় রানা, চালাক না বোকা ?”

“আচ্ছা আমি কি রিমান্ডে এসেছি ?” নুশরাত জিজ্ঞেশ করে উঠল।

“না,” রুপা বলল, “এমনি রানা সম্পর্কে তোর ধারনা নিলাম আরকি, ও কি নাচে না নাচায় সেটা নিয়ে আমি এখনো কনফিউজড।”

রুপার কথা শোনার পর নুশরাতও মাথা ঝাকালো। তারা এখন রাতুলের ক্লাসের সামনে এসে পড়ল। তার যার খোজে এসেছিল সে এখন নীল ডাউন হয়ে আছে। ক্লাসে অনেকেই তার দিকে তাকিয়ে ফিক ফিক করে হাসছে। রাতুলের সেদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই।

রুপা আর নুশরাত দুজনই দাঁড়িয়ে গেল। তারা এখন কি করবে সেটা ঠিক বুঝতে পারছে না। রাতুলকে এখন কিভাবে ডাকা যায় সেটা নিয়ে এখন দুজনই মাথা ঘামাচ্ছে। তবে তাদের অস্বস্তি ক্লাসের ভিতর বসে থাকা এক স্যার দূর করলেন।তিনি নুশরাত আর রুপার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেশ করলেন, “কি ব্যাপার? তোমরা এখানে কি করছ?”

“স্যার আমরা রাতুলের খোজে এসেছিলাম,” রুপা বলে উঠল।

“কানে ধরে দাঁড়িয়ে আছে সেতো?”

“জ্বী স্যার।”

“কেন, কি হয়েছে?”

“স্যার, ওর মামার হঠাৎ শরীর খারাপ হয়ে গেছে তাই সে রাতুলকে ডাক দিয়েছে,” রুপা নির্দ্ধিয়ায় মিথ্যা কথাটা বলে বলে ফেলল।

স্যার রুপার দিকে তাকিয়ে রইল, তারপর জিজ্ঞেশ করল, “তার মামার খবর দিবে দপ্তরীর লোক, বাসা থেকে ফোন আসলে তারপর না দপ্তরী পাঠাবে।”

“রাতুলের মামা আমাদের সাথে পড়ে, কলেজে ফার্ষ্ট ইয়ারে,” রুপা একটু জোর গলায় বলল।

নুশরাত রুপার অবলীলায় মিথ্যে কথা বলে দেখে কিছুটা অবাক হচ্ছিল। সে এই জায়গায় থাকলে অন্তত দশবার আটকে যেত কথা বলতে গেলে। সে রাতুলে দিকে তাকাল, রাতুল কিছুটা অবাক হয়ে গেছে নিজের মামার শরীর খারাপের কথা শুনে।

স্যার নুশরাত আর রুপার কিছুক্ষন তাকিয়ে বলল, “আচ্ছা ঠিক আছে নিয়ে যাও।”



তারা তিনজন এখন করিডোরের সামনে দিয়ে হেটে যাচ্ছে।রাতুলের মাথায় এখন অনেক প্রশ্ন খেলে যাচ্ছে।গতকালই তো তার মামা ভাল ছিল।আচ্ছা গতকালের কথা বাদ দিই, আজকে সকালেই তো দেখলাম ভালো আছে, অল্প কিছুক্ষনের মধ্যেই কি মামার শরীর খারাপ হয়ে গেল?

আচ্ছা তারা কি তাকে মিথ্যে বলে নিয়ে এসেছে নাকি? কিন্তু কি কারনে নিয়ে আসবে? এর সাথে কি মামা জড়িত?

আরো প্রশ্ন রাতুলের মাথায় টোকা মেরে যাচ্ছে।নুশরাতের কথায় তার হুশ ফিরল।

“তোর মামা কি শুরু করেছে?”

কি ব্যাপার আজকে তুই তোকারি দিয়ে শুরু করেছে, মনে মনে বলল রাতুল, তারমানে অবস্থা বেগতিক!

“মানে কি বলতে চাও?” নুশরাতের দিকে তাকিয়ে বলল রাতুল।

“তুই কি জানিস না তোর মামা কি প্ল্যান করে রেখেছে?”

“মামা আবার কিসের প্ল্যান করল?”

“শোন ভালভাবে সব বল, নাইলে মুদি যেভবে পিপড়ে টিপে গুড় বের করে ঠিক সেভাবে আমরাও তোর পেট টিপে গুড়… না সরি কথা বের করব।”

অবস্থা বেগতিক! একটু এদিক ওদিক হলেই বারোটা বাজিয়ে দিবে তারা আমাকে, মনে মনে বললেও রাতুল ফ্যাচ ফ্যাচ করে কেদে উঠে বলল, “আমি কিভাবে জানব যে মামা কি সব প্ল্যান করে রেখেছে, কালকে এসে আমাকে একটা চিঠি দিয়ে বলল, এটা ইশরাত আপুর কাছে দিয়ে আসতে, এটা নাকি সুমনা আপুর আদেশ।”

“অ্যা, সুমনা ইশরাতকে চিঠি পাঠিয়েছে ?” রুপা জিজ্ঞেশ করল, “কিন্তু সুমনাতো কালকে সারাদিন আমাদের সাথে ছিল ও কিছু করলেই তো আমরা জানতে পারতাম।”

রাতুল তার চোখ মুছতে মুছতে ভাবল, যাক বাচা গেছে, তার ন্যাকামি কান্না এখনো ধরতে পারে নি তারা।সে আরো যোগ করল, “আমার ধারনা মামা ইশরাত আপুকে পছন্দ করে ফেলেছে।”

“কি কারনে মনে হল?” নুশরাত বলে উঠল।

“আমার রাডার অনেক বড়।”

রাতুলের এইকথা শোনার পর নুশরাতের মনে হল ওর মাথার উপর একটা চাটি বসিয়ে দিতে কিন্তু কিছু বলল না।

“সত্যিই তুই কিছু জানিস না,” রুপা বলল।

“না, তবে কালকে বিকাল থেকে মামা কার সাথে জানি মোবাইলে কথা বলছিল, খালা আসার পর সে কথা বন্ধ করে দেয়।”

“এই ?” নুশরাত এবার জিজ্ঞেশ করল।

“হ্যা, আমি শুধু দেখেছি কার সাথে মোবাইলে কথা বলতে, কি কথা বলছে তা জানি না কারন সে বাসার নিচে কথা বলছিল।”

“তুই কি সত্যিই জানিস না ?”

“না, আর মামার স্বভাবই এটা কাউকে না জানিয়ে সব কিছু করে। করার পর আস্তে আস্তে সব বলে,” এই বলে রাতুল বড়সড় একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। সে এখনো সব কিছু বলে নি। আসলে বলা উচিত নাকি? না, সে মনে মনে বলে উঠল মামা তাকে একটা গুরু দায়িত্ব দিয়েছেন সেটাতো না মেনে পারা যায় না।

আচ্ছা তারা যদি জেনে যায় তাহলে কি বলব? বলব তোমরা কালকের কথা জানতে চেয়েছ আজকের টা না, মনে মনে বলে উঠে সে মাথা ঝাকালো। আজকে সকালে সে নিজের টেবিলে একটা চিঠি পেয়েছে। রানা দিয়েছে তাকে, সেখানে কিছু নির্দেশ দিয়ে রেখেছে সে।

“এই মাথা ঝাকাচ্ছিস কেন?” রুপা জিজ্ঞেশ করল।

রাতুল রুপার প্রশ্ন উপেক্ষা করে তার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেশ করল, “আচ্ছা মামার কি হয়েছে?”

রাতুলের প্রশ্ন শুনে রুপা আর নুশরাত একে অপরের দিকে তাকাল। তারপর তারা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল, রুপা রাতুলকে সকালে ঘটনা বলতে লাগল। মাঝখান দিয়ে নুশরাতও মাথা ঝাকাতে লাগল।

সব কথা শোনার পর রাতুল গতকাল থেকে আজকের সব ঘটনা জোড়া লাগাতে শুরু করল। তারপর আজকে সকালে রানার চিঠি। সে এখনো চিঠির নির্দেশের আগামাথা বুঝে উঠতে পারেনি। সে আবার পুরো ঘটনা মনে করার চেষ্টা করতে লাগল, প্রতিটি কথা মনে করার চেষ্টা করতে লাগল। ঠিক তখনই ইওশাতের একটা কথা তার মাথায় ধাক্কা খেল।

তাহলে মামা এই প্ল্যান করেছে, মনে মনে বলে উঠল রাতুল। বড়সড় এক জুয়ায় নেমে গেছে তার মামা। আর সে সাহায্য না করলে মামার হারের সম্ভাবনা অনেক বেশী।



*

ইশরাত যখন টিচারস রুমে ঢুকল, তখন সবাই চুপ হয়ে গেল। কারো মুখ থেকে কোনো কথা বের হচ্ছিল না, একমাত্র ইশরাতের বাবা ছাড়া, উনি রাগে ফোস ফোস শব্দ করছিলেন। একবার তিনি আমার দিকে তাকিয়ে তারপর ইশরাতের দিকে তাকালেন। ইশরাতের বাবাকে দেখে মনে হচ্ছিল, পারলে তিনি আমাকে চোখে দৃষ্টিতে জ্বালিয়ে দিতে পারলে তিনি অনেক শান্তি পেতেন।

ইশরাত টিচারস রুমে ঢুকার পর আমাকে দেখে আমার পাশে এসে দাড়ালো। এই দৃশ্য দেখার পর রাগে একদম বাকহারা হয়ে গেল ইশরাতে বাবা।

আমি লোকটার দিকে তাকিয়ে অবাক হচ্ছিলাম। মানুষ এত রাগ করে থাকে কিভাবে? উনি একবার আমার দিকে আর একবার ইশরাতের দিকে তাকালেন। তারপর তিনি আক্কাস স্যারের দিকে তাকিয়ে বললেন, “স্যার আপনিই বিচার করেন এদের। রাগে আমার মাথা গরম হয়ে আছে কি হতে কই করে ফেলি ঠিক ঠিকানা নেই।”

আক্কাস স্যার ইশরাতের বাবা দিক থেকে চোখ সরিয়ে আমাদের দিকে তাকিয়ে রইলেন। কিভাবে শুরু করবেন সেটা তিনি নিজেও মনে ঠিক করতে পারছেন না। উনাকে উদ্ধার করে দিল আমাদের মিজান স্যার, তিনি আমাদে দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেশ করলেন, “তোমারা দুইজন কি প্রেমিক-প্রেমিকা?”

মিজান স্যারের এই প্রশ্ন শুনে ইশরাতের বাবা একটা বিষম খেলেন, তার চেহারা দেখে বোঝা গেল তিনি এই ধারনা মাথাই আনেন নি। তিনি আমার দিকে কড়া চোখে তাকিয়ে থাকলেন।

আমি মাথা নাড়ালাম, আমার সাথে সাথে ইশরাতও মাথা নাড়ালো।

“তাহলে কি সম্পর্ক তোমাদের মাঝে ?” মিজান স্যার জিজ্ঞেশ করলেন।

আমি বলে উঠলাম, “আমার ভাগ্নে ক্লাস সিক্সে পড়ে, তার ক্লাসমেটের বড়বোন লাইজুর বান্ধবী হচ্ছে ইশরাত।”

ইশরাতের বাবাসহ আর সব স্যার আমার দিকে কড়া দৃষ্টিতে তাকালেন, আজিব ব্যাপার আমাকে যা জিজ্ঞেশ করা হয়েছে তাই তো বলেছি আমি।

“স্যার আমি সব বলছি,” এবার ইশরাত বলে উঠল, “স্যার উনি আমার বড়ভাইয়ের মত। উনি আমাকে কিছু পরামর্শ দিয়েছেন, কারন আমি একটা সমস্যার মধ্যে ছিলাম।”

“কি সমস্যা?” আক্কাস স্যার জিজ্ঞেশ করলেন।

“আমার বাবা আমার বিয়ে ঠিক করেছেন, কিন্তু আমি এখন বিয়ে জন্য প্রস্তুত না।”

“আমি তোর বিয়ে ঠিক করেছি এটা তোর জন্য সমস্যা হয়ে গেল?” ইশরাতের বাবা খেকিয়ে উঠলেন।

“ভাই, শুনেন এটা কলেজ আপনার অফিস না যে যখন তখন চেচাবেন,” আক্কাস স্যার ঠান্ডা গলায় বলে উঠলেন।

আক্কাস স্যারের গলার এমন কিছু ছিল যে ইশরাতের বাবা এর প্রতিবাদ করতে পারলেন না। আক্কাস স্যার এবার ইশরাতের দিকে তাইয়ে বললেন, “তোমার কথা শেষ কর।”

“জ্বী স্যার,” এটা বলার পর সে বড়সড় একটা নিশ্বাস ফেলে বলতে লাগল, “আমি এই বিয়ের জন্য প্রস্তুত না।আর আমার বাবা আমার মতামতের কোনো তোয়াক্কা করেনি এমনি আমার আম্মার সাথে সেটা নিয়ে আলোচনা পর্যন্ত করেনি।

“এক দিন এসে হুট করে বলল বলল, একজন ডাক্তারের সাথে আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে।সে নাকি আমাকে কোন বিয়ের অনুষ্ঠানে দেখেছে, দেখেই পছন্দ করে ফেলেছে।”

“ডাক্তার ছেলে, সেটাতো ভালো প্রস্তাব,” আক্কাস স্যার বললেন।

“স্যার, পাত্রের বয়স ত্রিশ বা তার উপর, আর আমি মাত্র পনেরতে পা দিলাম। আমার ইচ্ছা নাই যে ওই লোককে বিয়ে করার।”

“তাহলে কি করবি তুই? বড় হয়ে আঙ্গুল চুষবি?” ইশরাতের বাবা খেকিয়ে উঠলেন।

“না, আমার বড় হয়ে কি করব তা ঠিক করে রেখেছি,” ইশরাত দৃড় গলায় বলল।

“দেখেছেন স্যার, দেড় বড়ি মেয়ের কি কথা।”

“তুমিই তো তাহলে এই দেড় বড়ি মেয়ের বিয়ে দিতে চাচ্ছ।”

“তোর ভাল জন্য আমি এটাই করেছি।”

“আমি আমার ভালো-মন্দ বুঝি।”

আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বাপ-মেয়ের তর্ক দেখছিলাম। তখন নির্জন স্যার আমার দিকে আঙ্গুল তাক করে ইশরাতের বাবাকে জিজ্ঞেশ করলেন, “তা, জালাল সাহেব আপনাদের পরিবারের সাথে এই ছেলের ভুমিকা কি?”

ইশরাতের বাবা আমার দিকে তাকিয়ে আবার জ্বলে উঠলেন, আমার দিকে তিনিও আঙ্গুল তাক করে বললেন, “এইতো নষ্টের গোড়া, আমার মেয়েকে কি বুদ্ধি দিয়েছে তার কারনেই তো আমার মেয়ে বেকে গেল।”

“তুমি কি বুদ্ধি দিয়েছ এই মেয়েটাকে,” আরেকজন স্যার জিজ্ঞশ করলেন, ইনি আমাদের ইংরেজী ক্লাস নেন, উনার নাম ভুলে গেছি আমি।

আমি যখন বলতে যাব তখন ইশরাত আমার কথার মাঝে বাধা দিয়ে বলল, “এই বড় ভাই আমাকে সাহস দিয়েছেন। ইনি না থাকলে হয়তো বা…”

ইশরাত আর কথা শেষ করল না। এই মেয়ে দেখছি সব কৃতিত্ব নিজের ঘাড়ে নিতে যাচ্ছে।

“এই ছেলে আমাকে পুলিশের ভয় দেখিয়েছে,” ইশরাতের বাবা বলে উঠলেন।

কখন বললাম আমি!

“মিথ্যে কথা,” ইশরাত বলে উঠল, “রানা ভাইয়া কখনো বলে নি, আমি বলেছি আমাকে জোর করে বিয়ে দিতে চাইলে আমি নারী নির্যাতন মামলায় কেস করব।”

“বুদ্ধি দিয়েছে কে?” ইশারাতে বাবা জিজ্ঞেশ করল।

“রানা ভাইয়া।”

“ওই ছোকরাই তো তোকে বুদ্ধি দিয়েছে।”

“খারাপ বুদ্ধি তো দেয় নাই,” ইশরাত বিড়বিড় করে বলল।

“কি বললি, জোরে বল, বেয়াদব মেয়ে।”

রাগে ইশরাতে বাবা একদম লাল হয়ে গেছে। তিনি আমার দিকে একবার আর তার মেয়ের দিকে একবার তাকাচ্ছেন, আমি উনার চোখের দৃষ্টি এড়াতে জানালার দিকে চাইলাম, দেখলাম রাতুল দাঁড়িয়ে আছে। সে ইশারা দিয়ে জিজ্ঞেশ করল, কি শুরু করব?

আমি আলতো ভাবে মাথা ঝাকালাম।

*

সুমনার কাছে এখন পরিষ্কার হল সব ঘটনা। রাতুলের মাধ্যমে সব কিছু শোনার পর রাগে তার গা রি রি করতে লাগল। মনে হচ্ছে রানাকে পেলে সে ওকে মেরেই ফেলবে কিন্তু আগে ওকে উদ্ধার করার দরকার। প্রায় আধাঘন্টার মত হয়ে গেছে রানা টিচারস রুমের ভিতরে আছে। টিচারস রুমের জানালা দিয়ে রানার শার্টের কিছু অংশ দেখা যাচ্ছে।

“কিছু হয়েছে কি ?” রুপা জিজ্ঞেশ করে উঠল।

“না,” সুমনা মাথা নাড়িয়ে বলল, “শুধু ইশরাত টিচাস রুমে ঢুকল।”

“তার মানে রানা নাক গলাবে গলাবে না করে ঠিকই নাকটা গলিয়ে দিল ইশরাতের ব্যাপারে,” সজল এবার বলে উঠল, “তবে একা এই কাজ করা উচিত হয় নাই তার।”

“হুম ঠিক কথা,” রুপা মাথা ঝাকাল, “আমাদের জানালে কি হত?”

“আমার ধারনা মামা এমন কোনো এক কাজ করবে যেটাতে তোমরা কেউ রাজী হবে না,” রাতুল তাদের মাঝে কথা বলে উঠল।

“তুই কিভাবে বুঝলি ?” রুপা জিজ্ঞেস করল।

“আরে আমি পিচ্চিকাল থেকে মামার সাথে আছি, তাকে আমি আমি চিনব না তো কে চিনবে,” রাতুল এই বলে জানালার দিকে তাকাল। মামা এখনো কোনো ইশারা দেয়না কেন? চিন্তায় আমার মাথা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে তো, রাতুল মনে মনে বলল।

“আচ্ছা উনিই বোধহয় ইশরাতের মা,” নির্জন এতক্ষন চুপ করে থাকার পর বলে উঠল।

“হুম তাই,” সজল সায় দিল, “কিন্তু উনি টিচারস রুমে ঢুকলেন না কেন?”

সজলের এই প্রশ্নের জবাব কেউ দিল না, তবে সবাই মোটামুটি বুঝতে পারল কেন ইশরাতের মা ভিতরে ঢুকেনি।

আচ্ছা মামা কি সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে নাকি, রাতুলের মনে আরেকবার এই প্রশ্ন খেলে গেল। একটু উল্টা-পাল্টা হলেতো কিছুই হবে না, উল্টো মামা ফেসে যাবে।

রাতুল এবার ভাল করে ইশরাতের মায়ের দিকে তাকাল দেখল মহিলার দুহাত মুঠি করে দাঁড়িয়ে আছে। বোঝা যাচ্ছে কিছু একটা আটকে রাখার চেষ্টা করছেন তিনি। কেউ মনে হয় এই ব্যাপার খেয়াল করে নি। ঠিক তখনই সে রানার চেহার দেখতে পেল, রাতুল ইশারা করে জিজ্ঞেশ করল কাজ শুরু করবে নাকি। রানা তখন মাথা ঝাকালো। রাতুল তখন তার কাজ শুরু করতে যাবে তখনই সে থমকে পাথর হয়ে গেল, লায়লা খালা টিচারস রুমে ঢুকছে।

লায়লা খালা এখানে কেন রাতুলের মাথায় এটা আসল না, তবে সে তার কাজ করে যাবে। সে সামনে এগোতে থাকল।

সুমনার দলের আর কেউ না এইসব খেয়াল না করলেও একজন খেয়াল করল, সে মনে মনে বলে উঠল, ‘রানা তুমি এই প্ল্যান করে রেখেছিলে!’



*

রাতুলের দিকে মাথা ঝাকানোর পর আমি ভিতরের দিকে মনোযোগ দিলাম। ইশরাতের বাবা এখনো গরম আছেন আর আক্কাস স্যার এখনো তার সীমার মধ্যে। মিজান স্যারকে দেখে মনে হচ্ছিল তিনি এই ঘটনা খুব উপভোগ করছেন, যদিও সেটা চেহারার মধ্যে তেমন ভাবে ফুটিয়ে উঠতে দিচ্ছেন না। অন্যান্য স্যারেরা কিছুটা হলেও বিরক্তবোধ হচ্ছেন। তখনই আরেকজনের প্রবেশ, আমাদের লায়লা ম্যাডাম।

লায়লা ম্যাডাম ভিতরে ঢোকার পরে অনেক স্যারই একটু সোজা হয়ে বসলেন। একটা সুন্দরী মহিলার সামনে তো ‘আন স্মার্ট’ হয়ে বসে থাকা যায় না!

“ম্যাডাম আপনি এখনে কিসের জন্য?” মিজান স্যার জিজ্ঞেশ করে উঠলেন।

“না শুনলাম আমাদের কলেজের কোন এক ছেলে এক মেয়েকে নিয়ে ভেগে গেছে বলে?”

“আরে, না না ম্যাডাম সেটা না এটা অন্য কাহিনী।”

“কি সেটা ? জানতে পারি?”

“সেটাই এখন বের হচ্ছে,” মিজান স্যার আমাদের দিকে আঙ্গুল তাক করলেন।

লায়লা ম্যাডাম এবার আমার দিকে তাকালেন, তার চেহারাই বলে দিল, তুই আবার ঝামেলা লাগিয়েছিস!

“ছেলেতো আস্ত বেয়াদব, আমাকে জেলের ভাত খাবার হুমকি দেয়,” ইশরাতে বাবা হালকা হুমকি দিয়ে বলল।

“মানে?” লায়লা ম্যাডাম ভ্রু কুচকে ইশরাতে বাবার দিকে তাকালেন।

কাহিনী অনেক দূর গিয়েছে আমার কাছে। এটা এখন শেষ করার পর্যায়ে এসে গেছে।

“ম্যাডাম, আমি সব বলছি,” আমি এবার বলে উঠলাম, “আমিতো আগেই বলেছি, আমার ভাগ্নে ক্লাসমেটের বড় বোনের বান্ধবী সে।”

“তা তোমার সাথে ওর পরিচয় হল কিভাবে ?”

“আসলে দোষ রাতুলের মানে আমার ভাগ্নের,” আমি বলে উঠলাম, অবশ্য আমি মনে মনে বেশ কয়েকবার তার কাছে মাফ চেয়ে নিলাম। আমি বলতে লাগলাম, “ তার মাধ্যমে জানতে পারে আমি নাকি সব সমস্যা চুটকি দিয়ে শেষ করতে পারি। তখন ইশরাতের বান্ধবী আমাকে বলে দেয় ইশরাতে সমস্যার কথা। আমিও বলে দিই সরাসরি বলে দাও তোমার কথা তোবার বাবার কাছে। ইশরাত বলল, তার কথা নাকি তার বাবা শুনবে না। আমি তখন বললাম, সোজা আঙ্গুলে কজা না করলে আঙ্গুল বাকা কর।”

“মানে?” লায়লা ম্যাডাম বলে উঠল।

“আমি বলেছিলাম, তোমার বাবা তাতেও যদি তোমার মতামত না শুনেন তাহলে তাহলে নারী নির্যাতন মামলার ভয় দেখাও।”

“সেকি রাজী হয়েছিল?”

“একটু ইতস্তত করছিল, বলেছিল সে ধাপ্পা দিয়ে কি হবে, আমি বলেছিলাম যে এটা ধাপ্পা নয়, আমি একজন মহিলা আইজীবিকে চিনি সে সাহায্য করবে।”

“দেখেছেন ম্যাডাম কত বড় সাহস তার, মেয়েকে বলে তার বাপকে হুমকি দিতে,” ইশরাতের বাবা বলে উঠল।

“আচ্ছা আপনার সমস্যাটা কি? মেয়ে রাজী হচ্ছে না তারপরেও মেয়ের বিয়ে দিতে চাচ্ছেন?”

“সেটা আমার ব্যাপার, তো… তোমাকে নাক গলাতে হবে না।”

“মেয়ের কি বিয়ের বয়স হয়েছে?”

আমার এই প্রশ্ন শুনে ইশরাতে বাবা থমকে গেল। আমার দিকে কড়া চোখে তাকাল কিছু বলল না চুপ মেরে গেল। আমি ইশরাতের দিকে তাকিয়ে বললাম, “আমার কাছে থেকে ওই মহিলা আইনজীবির মোবাইল নাম্বার নিয়ে যেও। আর কোনো সমস্যা হলে জানাবে।”

“ঠিক আছে ভাইয়া,” ইশরাত মাথা ঝাকিয়ে বলল।

“তাহলে তো সমস্যার সমাধান হয়ে গেল,” মিজান স্যার বলে উঠল।

স্যারের এই কথা শুনের টিচারস রুমের অনেকেই স্বস্তির নিশ্বাস ফেলল। আসলে কেউই অন্যের পারিবারিক ব্যাপার নিয়ে নাক গলাতে চায় না। তবে লায়লা ম্যাডাম কি যেন বলি বলি করে করেও বলছে না।

“এখনো সব সমস্যার সমাধান হয় নি,” আমি বলে উঠলাম, “আমি এখনো ইশরাতের বাবার কাছে কোনো জবাব পাইনি তিনি কি মেয়ের বিয়ে দিবেন কি দিবেন না সেটা বলেন নি।”

“হ্যা, তা ঠিক, আমিও শুনতে চাই, বাচ্চা একটা মেয়েকে বিয়ে দিতে চাচ্ছেন উনি! এখন উনি কি বলেন,” লায়লা ম্যাডাম আমার পক্ষ নিয়ে কথা বললেন।

আক্কাস স্যার দেখলাম নিজের ঠোট কামড়ে ধরলেন, মানে তিনি তার সীমার চরম মাত্রায় চলে যাচ্ছেন। শুনেছি তিনি একবার রেগে গেলে সেটা হুলস্থুল কাণ্ড হয়ে যায়।

আমি ইশরাতের বাবার কাছে গিয়ে বললাম, “কি বলেন আপনি, মেয়ের বিয়ে দিবেন নাকি আপনি?”

ইশরাতে বাবা চুপ করে রইল।

“আপনার পরাজয় মেনে নেয়া উচিত, এটা আপনার মেয়ের ভালো…”

আমার কথা শেষ হল না ইশরাতে বাবা আমার উপর ঝাপিয়ে পড়ল।

“শুয়োরের বাচ্চা আমাকে হার মানতে বলিস! আমি আমার মেয়ের বিয়ে দিব তাতে তোর কি,” এই বলে তিনি আমার দিকে একটা ঘুষি হাকিয়ে দিলেন। তার ঘুষিটা আমার থুতনি বরাবার এসে লাগল। যতটা জোরে লাগবে আশা করেছিলাম ততটা জোরে লাগল না। আক্কাস স্যার আর মিজান স্যার তড়াক করে উঠে দাড়াল। উনারা দুজন ইশরাতের বাবাকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে।

“আরে জালাল সাহেব করছেন কি, মেরে ফেলবেন নাকি ছেলেটাকে।”

“মেরেই ফেলব আমি ওকে, কত বড় সাহস তার।”

আমি ইশরাতের বাবার কাছ থেকে ছাড়া পাবার চেষ্টা করছি কিন্তু লোকটা ভালভাবেই আমার উপর চেপে বসেছেন। টিচারস রুমে বলতে গেলে ভালই একটা হাউকাউ অবস্থা।

হঠাৎ করেই ‘ঠাস’ করে একটা শব্দ হল। আমার উপর ইশরাতের বাবা লাফিয়ে উঠে গেলেন। কি ব্যাপার আক্কাস স্যার ইশরাতের বাবাকে বাড়ি মারলেন নাকি?

না, আক্কাস স্যার না। বাড়িটা মেরেছে ইশরাতের মা। হাতে দুইটা মোটা বেত নিয়ে অগ্নিমূর্তি হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বেত দুইটা মিজান স্যারের টেবিলে ছিল।

সবাই আবারো থতমত খেয়ে গেল। এমনকি আমাদের আক্কাস স্যারও। ইশরাতের মা এবার আরেকটা বাড়ি হাকালেন ইশরাতে বাবার উদ্দ্যেশে, বলে উঠলেন, “বাসায় এইসব মানা যায় কিন্তু স্কুল কলেজে না,” এই বলে আরেকটা বাড়ি হাকালেন।

ইশরাতের বাবা এখনো হতবাক হয়ে আছেন। তবে বেতের বাড়ি উনার দিকে আসতে দেখে তিনি হাত দিয়ে ঠেকাতে গেলেন।

“আমি আমার মেয়ের বিয়ে দিব না,” ইশরাতের মা বলে উঠলেন, “বেশী বাড়বাড়ি করলে, আমি হাত পা ভেঙ্গে দিব।”

আমি তখনো বসা অবস্থায় আছি।

“হয়েছে, তুমি আমার কথা শোনো, কলেজে এইসব নাটক করতে হয় না,” ইশরাতে বাবা এবার মুখে মধু এনে বলল।

“এতক্ষন নিজে যেটা করল সেটা বুঝি নাটক না,” এই বলে আরেকটা বাড়ি মারলেন।

বাড়ি খেয়ে ককিয়ে উঠলেন ইশরাতের বাবা। এবার ইশরাত ছুটে এসে তার মায়ের হাত চেপে ধরল, “হয়েছে আম্মা আরনা।”

“না, তোর আব্বাকে জন্মের শিক্ষা না দিলেই না, অনেক বেশি তেড়িবেড়ি করা শুরু করছে সে।”

“হয়েছে আম্মা, আর না সবাই খারাপ বলবে তোমাকে, স্বামীর গায়ে হাত তোলা।”

“না, তোর বাপ আমাকে অনেক জ্বালিয়েছে আমাকে, হাড় কালি করে ফেলেছে আমার, যাই করুক আমাকে কিন্তু আমার মেয়ের জীবন আমি নষ্ট করতে দিব না।”

“আচ্ছা, চাচী ছেড়ে দিন,” এবার আমি উঠে দাড়ালাম। ইশরাতের মায়ের সামনে দাঁড়িয়ে বললাম, “অনেক হয়েছে চাচী আমার মনে হয় উনি ভালই শিক্ষা পেয়েছেন।”

হুম, তিনি ভাল শিক্ষা পেয়েছেন। পাথরের মত দাঁড়িয়ে আছেন তিনি।

আমার এই কথা শোনার পর ইশরাতের মা বেত দুটো ছুড়ে ফেললেন। এরপর লায়লা ম্যাডাম ইশরাতের মায়ের কাছে আসলেন, উনার কাধে হাত রেখে বললেন, “আসুন আমার সাথে,” তারপর ইশরাতের দিকে তাকিয়ে বলল, “তুমিও আসো আর তোমার বাবাকেও নিয়ে আসো।”

এবার লায়লা ম্যাডাম মনে হয় কিছু ‘ডোজ’ দিবেন।

লায়লা ম্যডামের সাথে ইশরাতের মা গেলেন তার পিছে পিছে ইশরাত আর ইশরাতে বাবাও গেলেন। তিনটা বেতের বাড়ি খেয়ে তিনি একদম নিশ্চুপ মেরে গেলেন।

উনারা চলে যাবার পর আমারো মনে হল চলে যাওয়া উচিত। সসার ক্লাবের সবাই এখন আমার জন্য অপেক্ষা করছে। অবশ্যই ফুলের মালা নিয়ে নয়!

আমি বের হতে যাব তখনই আক্কাস স্যার বলেন উঠল, “দাঁড়াও, তোমার সাথে এখনো লেনদেন শেষ হয়নি।”

তারমানে এখনো সব কিছু শেষ হয়নি!
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাফসান দ্য ছোট ভাই এর এক আউডি গাড়ি আপনাদের হৃদয় অশান্ত কইরা ফেলল!

লিখেছেন ব্রাত্য রাইসু, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫২

রাফসান দ্য ছোট ভাইয়ের প্রতি আপনাদের ঈর্ষার কোনো কারণ দেখি না।

আউডি গাড়ি কিনছে ইনফ্লুয়েন্সার হইয়া, তো তার বাবা ঋণখেলাপী কিনা এই লইয়া এখন আপনারা নিজেদের অক্ষমতারে জাস্টিফাই করতে নামছেন!

এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×