৩১ মে ২০২৪ প্রেসিডেন্ট বাইডেন গাজায় স্থায়ী যুদ্ধ বিরতির জন্য তিন পর্বে বাস্তবায়ন যোগ্য একটি শান্তি প্রস্তাব পেশ করেছেন।
প্রস্তাবিত শান্তি পরিকল্পনার ধাপগুলি যথাক্রমে --
প্রথম পর্ব:
প্রথম পর্বটি ছয় সপ্তাহ ধরে চলবে।
এই পর্বে অন্তর্ভুক্ত থাকবে:
(ক) একটি সম্পূর্ণ যুদ্ধবিরতি;
(খ) গাজার সব জনবহুল এলাকা থেকে ইসরায়েলি বাহিনী প্রত্যাহার;
(গ) শতাধিক ফিলিস্তিনি বন্দীদের মুক্তির বিনিময়ে হামাসের কাছে থাকা নারী, বয়স্ক এবং আহতসহ বেশ কিছু জিম্মিকে মুক্তি দান। এই জিম্মিদের সাথে কিছু আমেরিকান জিম্মিকে এই পর্যায়ে মুক্তি দিতে হবে;
(ঘ) নিহত জিম্মিদের দেহ বা দেহাবশেষ তাদের পরিবারের কাছে ফেরত দিতে হবে;
(ঙ) ফিলিস্তিনিরা উত্তর অঞ্চল সহ গাজার সমস্ত অঞ্চলে তাদের বাড়িঘরে ফিরে যাবে;
(চ) গাজায় প্রতিদিন ৬০০ ট্রাক মানবিক ত্রাণসামগ্রী নিয়ে প্রবেশ করবে;
(ছ) আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের জন্য আবাসন ইউনিট সহ কয়েক হাজার অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র সরবরাহ করবে;
(জ) অবিলম্বে এই কার্যক্রম শুরু হবে।
প্রথম পর্ব চলার সময় অর্থাৎ ছয় সপ্তাহের মধ্যে ইসরায়েল এবং হামাস দ্বিতীয় পর্বে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা করবে। এই আলোচনৰ মূল লক্ষ্য হবে শত্রুতার স্থায়ী সমাধান বের করা। প্রথম পর্যায়ে আলোচনার জন্য যদি ছয় সপ্তাহের বেশি সময় লাগে, তাহলে যতক্ষণ আলোচনা চলবে ততক্ষণ যুদ্ধবিরতি অব্যাহত থাকবে। আমেরিকা, মিশর এবং কাতার আলোচনা চালিয়ে যাওয়া নিশ্চিত করার জন্য কাজ করবে।
দ্বিতীয় পর্ব:
দ্বিতীয় পর্বে অন্তর্ভুক্ত থাকবে:
(ক) ফিলিস্তিনি বন্দিদের সাথে ইসরায়েলি সৈন্যসহ অবশিষ্ট জীবিত জিম্মিদের মুক্তির বিনিময় হবে;
(খ) ইসরায়েলি বাহিনী গাজা থেকে সম্পূর্ণ ভাবে প্রত্যাহার করবে;
(গ) যতক্ষণ পর্যন্ত হামাস তার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করবে, ততক্ষণ পর্যন্ত যুদ্ধবিরতি কার্যকর থাকবে;
(ঘ) স্থায়ীভাবে শত্রুতা বন্ধ করা।
তৃতীয় বা চূড়ান্ত পর্ব:
(ক) গাজার পুনর্গঠন পরিকল্পনা শুরু হবে;
(খ) নিহত জিম্মিদের যে কোন দেহাবশেষ তাদের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হবে।
বাইডেনের এই শান্তি প্রস্তাবের আলোকে আমেরিকা জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে গাজায় যুদ্ধ বিরতির জন্য একটি প্রস্তাব পেশ করে। ১০ জুন, ২০২৪ সালে প্রায় সর্বসম্মতি ক্রমে এই প্রস্তাবটি পাশ হয়। রাশিয়া এই প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট না দিলেও ভোট দানে বিরত ছিল। চীন সহ বাকি স্থায়ী সদস্যরা প্রস্তাবের পক্ষে ভোট প্রদান করে।
নেতানিয়াহু কূটনৈতিক ভাষায় এই প্রস্তাব সম্পর্কে নেতিবাচক মন্তব্য করলেও প্রকৃতপক্ষে প্রস্তাবটি মেনে নেয়। বিশ্বের প্রায় সব দেশ প্রস্তাবটিকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে স্বাগত জানায়। অন্তত পক্ষে এখন পর্যন্ত কোন দেশ প্রস্তাবটির বিরোধিতা করে কোন মন্তব্য করে নাই।
পক্ষান্তরে, এই প্রস্তাবের পর হামাস একেবারে নিশ্চুপ হয়ে যায়। দীর্ঘ ১২ দিন এই প্রস্তাবের পক্ষে বা বিপক্ষে তারা কিছুই বলে নাই। এখানে উল্লেখ্য যে বাইডেনের প্রস্তাবটি কাতারের মাধ্যমে ঐদিন অর্থাৎ ৩১ মে হামাস নেতৃবৃন্দের কাছে পাঠানো হয়। দীর্ঘ ১২ দিন নীরব থাকার পর এবং নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবটি পাশ হওয়ার পর গত ১১ জুন হামাস এই শান্তি প্রস্তাব সরাসরি প্রত্যাখ্যান বা গ্রহণ না করে পাল্টা অসংখ্য সংশোধনী প্রস্তাব পেশ করে। এই সংশোধনীগুলি পেশের মাধ্যমে হামাস একটি যুদ্ধ বিরতিতে যাওয়ার আগে আলোচনা করতে চায় বলে ইঙ্গিত দিচ্ছে।
বাইডেনের প্রস্তাবিত শান্তি প্রস্তাবের প্রথম পর্বেই আলোচনার জন্য ৬ সপ্তাহ সময় রাখা হয়েছে। আলোচনার প্রয়োজনে এই সময় আরো বাড়ানোর প্রস্তাবও রাখা হয়েছে। যেখানে ফিলিস্তিনি জনগণের দুঃখ-দুর্দশা নিরসনের জন্য এমুহূর্তে প্রথমই দরকার যুদ্ধ বিরতি, সেখানে হামাস প্রথমেই যুদ্ধ বিরতিতে না যেয়ে শুরুতেই আলোচনা করতে চাইছে যা ইসরাইলের জন্য সুবিধাজনক। এতে যুদ্ধ বিরতি বিলম্বিত হওয়ার ফলে ফিলিস্তিনিদের দুঃখ-দুর্দশা আরো প্রকট হবে।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জুন, ২০২৪ রাত ৯:৫২

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



