“অতি দর্পে হত লঙ্কা”। অর্থাৎ রাবণের মাত্রাতিরিক্ত অহংকারে স্বর্ণখচিত লঙ্কাভূমি পুড়ে ছারখার করেছিল রামের বাহিনী। সোজা কথায়--অতিরিক্ত দম্ভ কতটা ভয়ঙ্কররূপে ব্যাকফায়ার করতে পারে তা দেখল জেন-এক্স, বুমার, মিলেনিয়াল, জি ও আলফারা। নিশ্চয় দলান্ধ আওয়ামীলীগাররা এখন টের পাচ্ছে ‘চোরের দশদিন, গেরস্তের একদিন’। তাদের রং হেডেড নেত্রীর মতোই এই মাথামোটা দলকানারা বাস্তবতা বুঝতে পারে নি কিংবা বুঝেও দম্ভের চূড়ায় বসে জনগণকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে গেছে অবিরত।
অথচ কী সুযোগটাই না ছিল বঙ্গবন্ধু কন্যার জন্য। নিজেকে অমরত্ব দিতে পারতেন। দিলেন। তবে বাংলাদেশের ইতিহাসে, বঙ্গের ইতিহাসে এক ঘৃণিত ও নিকৃষ্ট স্বৈরশাসকের আসন গ্রহণ করে। এর চেয়ে লজ্জাজনক আর কী-ই-বা হতে পারে। উনি শুধু নিজেই ডুবলেন না, সাথে বঙ্গবন্ধু ও ঐতিহ্যবাহী দলটিকেও আস্তাকুঁড়ে নিয়ে ফেললেন। হার্ভার্ড পিএইচডি বল্টু ভাইয়েরা এখন হয়ত আর আকাশ থেকে সিঙ্গাপুর দেখবেন না।
২
বাটারফ্লাই ইফেক্ট। আবু সাঈদের নৃশংস হত্যা ছিল সেই ইফেক্টের ‘ইগনিশন কি’। এরপর ভাইয়ের রক্তের বদলা নিতে ছোট্ট কয়েকটা বাচ্চা ছেলের আহবানে জনতা যেভাবে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল স্বৈরাচার বিতাড়নে তা দেখাও ছিল এক অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতা। আমরা যারা পুঁটি স্বৈরাচার এরশাদের পতনে সাক্ষী ছিলাম না, তারা সাক্ষী হলাম কাতল স্বৈরাচারের পতনে। শুধু আপসোস এতে কয়েকশ তাজা বুকের রক্ত প্রত্যক্ষ করতে হলো। যা দেখা ছিল অবর্ণনীয়, ভীষণ বেদনাদায়ক। এই কষ্টকর স্মৃতি হয়ত মৃত্যু পর্যন্ত বয়ে বেড়াতে হবে। এখন যত দিন যাবে এই কাতল স্বৈরাচারকে নিয়ে কবিতা হবে, গান হবে, নাটক লেখা হবে। চিন্তা করুন। যে মানুষটা অমরত্ব পাওয়ার সম্ভাবনা ছিল, সেই এখন নর্দমার কীটের মতো ইতিহাসের পাতায় বন্দী হয়ে গেল।
তবে এখন বিপদ অন্যদিকে। যেহেতু বাঙ্গালীর নৈতিকতা প্রশ্নবিদ্ধ। আবার যে নয়া কোনো স্বৈরাচার জন্ম নিবে না তা বলা মুশকিল। তাই এখন এটা নিশ্চিত করা দরকার যে পরবর্তীতে যেই জনগণের ভোটে ক্ষমতাপ্রাপ্ত হোক, তাদেরকে চরম জবাবদিহিমূলক ব্যবস্থার মধ্যে দিয়েই যেন শাসন কাজ পরিচালনা করতে হয়।
প্রথমেই সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের বিলোপ দরকার। এই এক অনুচ্ছেদ দেশের শীর্ষ নির্বাহীকে ডিকটেটর বানিয়ে দিচ্ছে। দ্বিতীয়ত, পরপর সর্বোচ্চ দুই টার্মের বেশি প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবেন না। এছাড়া মাথামোটা কোনো যুবরাজ যেন ক্ষমতায় না বসতে পারে সেদিকেও লক্ষ্য রাখা দরকার। নয়ত যে লাউ সেই কদু হবে। ধর্মের ঠিকাদাররা যেন ছড়ি ঘোরাতে না পারে। ক্ষমতার হস্তান্তর হতে হবে স্বচ্ছ ও নির্ঝঞ্জাট। আর সবচেয়ে আগে যে জিনিসটি দরকার তা হচ্ছে ‘ছাত্র-শিক্ষক রাজনীতি’ নামক ইতরামীপনা চিরতরে কবর দিতে হবে।
আশা করি নতুন এক বাংলাদেশ রচিত হবে সামনের দিনগুলোই। আশা করতে তো আর দোষ নেই।
বাংলাদেশ দীর্ঘজীবী হোক।
পুনশ্চঃ সামনের কয়েকদিন দেশে অরাজকতা যেন না হয় দেশবাসীকে সেদিকে সজাগ থাকতে হবে। মানুষের কিছু পুঞ্জিভূত ক্ষোভ হয়ত আগ্নেয়গিরির মতো উদগীরণ হবে। তবে তা অবশ্যই নিয়ন্ত্রিত হতে হবে। রগকাটা বাহিনী যেন ত্রাসের রাজত্ব পুনরায় কায়েম করতে না পারে সেটাও নিশ্চিত করা দরকার বলে মনে করি।
*********************************************
@আখেনাটেন-৩৬শে জুলাই/২০২৪
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই আগস্ট, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০৩