somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

আলমগীর জনি
সূর্য থেকে অসম্ভব শক্তিশালী আলোকরশ্মি চাঁদের উপর পড়ে। সে চাঁদ কিছুদিন জোছনা বিলায় আমাদের মাঝে।অমাবস্যায় কেউ চাঁদকে ভুলে যায় না।অপেক্ষা করে জোছনা ফিরে আসার ।সূর্য না হই ,মাঝে মধ্যে জোছনা হতে চাই।অমাবস্যায় হাহাকার হতে চাই মানব মনে।

গল্পঃ স্বেচ্ছাচারিণী

৩০ শে মে, ২০২০ বিকাল ৫:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



সকাল বেলা চারদিকে চিৎকার চেঁচামেচিতে আমার ঘুম ভাংলো।আমার বাসার কলিংবেল বাজছে।আমি দরজা খুলে দেখি পুলিশ।

- আপনি বাড়িওয়ালা?
- জ্বী। কেন কি সমস্যা?
- কাল রাতে এই বাসার শ্রেয়া নামের একটা মেয়ে মারা গেছে।আপাতত আমরা ধারণা করছি ছাদ থেকে নিচে পড়ে গেছে।আপনি চিনেন তাকে?
- না মানে।কি বলছেন এসব?
- যা বলছি সত্যি বলছি।আপনাকে এখন থানায় যেতে হবে। আপনার বাবার সাথে আমার খুবই ভালো সম্পর্ক।উনার ছেলে হয়ে আপনি এমন একটা এই কাজটা কিভাবে করতে পারলেন?

আমি কিছু বলতে যাব এমন সময় দেখলাম এক লোক আমার দিকে তেড়ে আসছে।আমাকে শাসিয়ে বলছে, হারামজাদা আমি আগেই জানতাম আমার স্ত্রীর সাথে তোর সম্পর্ক আছে। তুই ছাদে কাউকে ঢুকতে দেস না শ্রেয়ারে দিস কেন?বুঝি না এগুলা আমি?

আমি বললাম, কি বলছেন আপনি এসব?
লোকটা এবার পুলিশের সামনেই আমার গায়ে প্রায় হাত তুলেই ফেলল।তারপর বলছে, শ্রেয়ার প্রতি তোর লোভ ছিল।তুই ওকে ধর্ষণ করে হত্যা করেছিস।

পুলিশ লোকটাকে থামাল।বলল, পোস্টমর্টেম রিপোর্ট আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করুন।আর আমাকে বলল, আপনি থানায় চলুন।

আমি কিছুই বুঝতে পারছিলাম না।কি থেকে কি হলো।আমি কাল রাতের ঘটনা মনে করতে চাইলাম।

রাত ২-৩ টার দিকে ছাদে উঠে সিগারেট টানা আমার নিত্য অভ্যাস।ছাদের মাঝখানে গোল হয়ে বসে একটানা আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকি।এভাবেই একটা রাত কেটে যায় আমার। সিগারেটের পর সিগারেট শেষ হয় আবার নতুন একটা মধ্যরাত শুরু হয় আবার একটা ভোর।

অন্য রাতের মত গতকাল রাতেও আমি এক প্যাকেট সিগারেট নিয়ে ছাদে উঠলাম।

এই বাড়ির মালিক আমার বাবা। সুতরাং ছাদের উপর যখন-তখন উঠায় আমার জন্য কোন বাঁধা নাই।বাঁধা দিবেই বা কে? বাবা থাকেন না বাসায়।মা চলে যান তার মায়ের বাসায়।আর আমি এদিকে একলা একলা দিন-রাত পার করি। কেন জানি মনে হয় মা'র বাবার সংসারে মনোযোগ নাই।মনোযোগটা কোথায় তা জানার আমার আগ্রহও এখন আর নাই।

মা আর বাবার কথা ভাবতে ভাবতেই হঠাত খেয়াল হলো ছাদের উপর অন্য কেউ একজনও আছে।দেখা যাচ্ছিল না।আমি একটু গলা মোটা করে বললাম, কে?

হঠাত একটা মেয়ের কন্ঠে বলে উঠল, আমি।

আমি লাইটারের আলোটাকে জ্বালিয়ে বুঝার চেষ্টা করলাম।আসলে কে। আমি কাছে গিয়ে বললাম, আপনি এখানে কি করেন? আর আপনি কে?
মেয়েটি বলল,পরিচয় দিয়ে কি করবেন?

আমি কথা বাড়াতে গেলাম না আর।মেয়েটিকে খুব বিমর্ষ মনে হচ্ছে। আমি কেন জানি হঠাত আমার হাতের সিগারেটটা মেয়েটির হাতে তুলে দিলাম।মেয়েটিও সিগারেটটা হাতে নিলো।তারপর সে যা করল তার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না।মেয়েটি জ্বলন্ত সিগারেট দিয়ে তার হাতে দিয়ে পুড়তে চাইলো। আমিও কি মনে করে ওর গালে বসিয়ে দিলাম একটা থাপ্পড়।

এরপর ছাদের উপর বেশ নিরবতা। আমি কথা শুরু করলাম।

- আমাকে চিনেন?
- হ্যাঁ। আপনি বাড়িওয়ালার ছেলে।
- আপনি কে?
- আমি তিনতলায় থাকি।
- আপনার নাম কি?
- শ্রেয়া।
- বাহ! সুন্দর নাম তো।
- ধন্যবাদ।
- আপনাকে আমি কোনদিন দেখি নি কেন?
- আপনি কখনো দেখতে চান নি বলেই দেখেন নি।
- আসলে ব্যাপারটা এমন না।
- আমি জানি।
- কি জানেন?
- আপনি প্রায় সবসময়ই বাসায় একা থাকেন।
- আর?
- বাসা আর ছাদ।এই দুইটা জায়গা আপনার খুব প্রিয়।
- আর কিছু?
- আচ্ছা আপনাদের ছাদে কাউকে আসতে দেয়া হয় না কেন?
- স্বেচ্ছাচারী বলে৷ হা হা হা।
- আচ্ছা সবাই কি স্বেচ্ছাচারী হতে চায়?
- হয়তো চায়।
- আমার কি মনে হয় জানেন?
- কি?
- প্রতিজন স্বপ্নচারীর মাঝে একজন স্বেচ্ছাচারী বাস করে।স্থান-কাল-পাত্রভেদে সেই স্বেচ্ছাচারী স্বাধীনতার ডাক দিয়ে বসে।স্বাধীনতা অর্জিত হলে "স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে, স্বাধীনতা রক্ষা করা কঠিন" এই বাক্য নিয়ে বেশ দুশ্চিন্তায় পড়ে যায় আর অর্জিত না হলে দ্রোহের অপরাধে ঝুলতে হয় হরেক রকমের কাষ্ঠে। স্থান-কাল-পাত্রভেদে সেই স্বেচ্ছাচারীই আবার স্বাধীনতার জন্য কুঁকড়ে মরে।নিজেই নিজের আদালতে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করে ফেলে অবলীলায়।

আমি এবার চুপ করে বসে আছি। মেয়েটির কথায় বেশ রহস্য। এত সুন্দর করে কোন মেয়েকে কথা বলতে আমি দেখি নি। আমার ওর সম্পর্কে জানার বেশ আগ্রহ হলো কেন জানি।

- আপনার বাসায় কে কে আছে?
- আমি, বাবা আর মা।
- উনারা কোথায় এখন?
- বাসায়।
- আপনি এখানে কেন?
- আমি আপনাকে জিজ্ঞেস করেছি আপনি এখানে কেন?
- সরি।
- সরি বলছেন কেন?
- ইচ্ছে হলো তাই।
- হা হা হা।
- হাসছেন কেন?
- ইচ্ছে হলো তাই।
- হা হা হা।

হঠাৎই কেন জানি মেয়েটিকে বেশ আপন মনে হওয়া শুরু হলো।আমি কখনো কোন মেয়ের সাথে এতটুকুও মিশি নি। আমি সারাদিন বাসায় থাকি।কোন কিছু করি না।বাবার অঢেল টাকা আছে।সেগুলো খাচ্ছি বসে বসে।আমার তেমন কোন বন্ধ-বান্ধবীও নেই। বন্ধু বলতে সিগারেট। তবে মেয়েটির সাথে কথা বলা শুরু করার পর সিগারেট ধরানো ছাড়া আর একটিবারের জন্যও সিগারেটে টান দেই নি আমি। হাতের মধ্যেই শেষ হয়ে যাচ্ছে এক একটা সিগারেট। আমি আরেকটা ধরাই।এভাবে আরেকটা শেষ হয়। সিগারেট জ্বলতে দেখাও বেশ আনন্দের।

- আপনাদের ছাদে মোট কয়টা হাসনাহেনা গাছ আছে?
- কেন?
- অনেক সুগন্ধ আসছে।মনে হচ্ছে পুরা ছাদ ভর্তি হাসনাহেনা গাছ।
- অনেকগুলো।আমি আসলে জানি না কয়টা।
- আপনি একা একা সারারাত বসে থাকেন এখানে?
- হ্যাঁ।
- কেন?
- একা থাকতেই ভালো লাগে।
- এখন খারাপ লাগছে?
- না।
- আপনার বাবা-মা কই?
- বাবা দেশের বাহিরে আর মা তার মায়ের বাসায়।
- আপনি যান নি কেন?
- কেন যাব?
- কেন যাবেন মানে!
- আমার মা সেখানে কেন যায় জানো?

মেয়েটিকে আমি এবার তুমি বলে কথা শুরু করলাম।কেন জানি এই প্রথম কাউকে পেলাম যার কাছে নিজের দুঃখগুলোকে শেয়ার করার একটা জায়গা পেলাম।

মানুষের দুঃখগুলোকে শেয়ার করার জন্য একটা জায়গার প্রয়োজন হয়।সে জায়গা কবরের সাড়ে তিনহাত জায়গার মতই ধ্রুব। সবার লাগে। পার্থক্য শুধু এই কবরের জায়গাটা প্রায় সবাই পায় কিন্তু দুঃখ শেয়ার করার জন্য এক ইঞ্চি জায়গাও অনেক মানুষ পায় না।

আমি বলা শুরু করলাম। শ্রেয়া, ছোটবেলা থেকেই আমি একা একা বড় হয়েছি।ছোটবেলায় দেখতাম বাবা চলে গেলে অন্য কোন পুরুষ আমাদের বাসায় আসত।এই ব্যপারটি সবাই জানে।কেন জানি আমি কখনো মানতে পারি নি।ছোটবেলায় বুঝতাম না হয়তো।তবে বুঝতে পারতাম কোথাও একটা ভুল হচ্ছে।বড় যখন হলাম এরপর মা আমাকে এড়িয়ে সব কিছু করত।এখন তো মায়ের বাসায় চলে যান। সেখানে উনার ওপেন লাইসেন্স।কেউ কিছু বলে না।মায়ের এই বেপরোয়া চলাফেলা বাবা কোনদিনই মেনে নেন নি।বাবা আসলে ঝগড়া হয় আবার সব ঠিক হয়ে যায়।এভাবে চলছে।এসবের মধ্যেই আমার বেড়ে ওঠা। ঐ যে বললে না স্বেচ্ছাচারী? সবাই স্বেচ্ছাচারী হতে চায়। আমি এই ছাদের জন্য স্বেচ্ছাচারী।এখানে আমি কাউকে প্রবেশ করতে দেই না। হা হা হা।কিন্তু আজকে তুমি এসে পড়লে।

শ্রেয়া এবার কথা শুরু করল,

-অন্যের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপে করে একটা মজা আছে জানেন?
-হয়তো।
-আপনার ছাদটা আজকে রাতের জন্য আমাকে দিন।
-মানে?
-মানে আপনি এখন বাসায় চলে যাবেন। কাল সকালে দেখা হবে।
-আপনার গল্পটা?
-আমার কিসের গল্প?
-এই যে এত রাতে ছাদে কেন?
-কাল সকালে আপনার বাসায় যাব।তখন শোনাবো।

শ্রেয়ার গল্পটা আর শোনা হলো না।শ্রেয়ার জন্য আমার খুব খারাপ লাগছে।মেয়েটা আত্মহত্যা করতে গেল কেন? ও আমাকে বলেছিল ও বাবা মায়ের সাথে থাকে।কিন্তু? এখানে তো দেখা গেল তার স্বামী আর সে ছিল শুধু। শ্রেয়া আমাকে মিথ্যা বলল কেন? আমি শুধু এসব ভাবছি। সে কি তবে কোন কারণে নিজের আদালতে নিজের মৃত্যুদন্ড কার্যকর করে ফেলেছে?

এসব ভাবতে ভাবতেই পোস্টমর্টেম রিপোর্ট আসলো। রিপোর্টে লিখা আত্মহত্যা। রিপোর্ট নিয়ে পুলিশ শ্রেয়ার বাসায় গেলে দেখে দরজা বন্ধ।শ্রেয়ার স্বামী পালিয়ে গেছে কোথাও। তার ফোনও বন্ধ।

সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে মে, ২০২০ বিকাল ৫:২৩
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

×