বাংলাদেশের প্রায় বিলুপ্তপ্রায় একটি সবজি ডুমুর। বহুবিধ ওষধি গুণ ও পুষ্টি সমৃদ্ধ এই সবজি বিলুপ্ত প্রায় হলেও এখনো গ্রাম বাংলায় এটি খাওয়ার প্রচলন লক্ষ্য করা যায় । আমার রান্না করা ডুমুরের প্রচলিত দুইটি এবং নিরীক্ষাধর্মী দুইটি রেসিপি শেয়ার করছি সবার সাথে।
১) ডুমুর চিংড়ির ভর্তা
উপকরণ – ডুমুর ২৫০ গ্রাম, চিংড়ি ১৫০ গ্রাম, হলুদ গুঁড়া ১ চিমটি, পেঁয়াজ কুঁচি ৩ টেবিল চামচ, কাঁচামরিচ কুঁচি ২ চা চামচ, সরিষার তেল ২ টেবিল চামচ, লবণ স্বাদমত।
প্রণালী – ডুমুর মাঝখান থেকে কেটে এর ভেতরের বীজ বের করে ধুয়ে সেদ্ধ করে নিন। সেদ্ধ হয়ে এলে পানি ঝরিয়ে বেটে নিন। চিংড়ির মাথা ও শিরা ফেলে কুঁচি করে নিন। হলুদ ও সামান্য লবণ দিয়ে মাখিয়ে অল্প তেলে ২ মিনিট ভেজে নিন। পেঁয়াজ ও কাঁচা মরিচ হালকা ভাজুন। এবার ডুমুর ও চিংড়ি এক সাথে মিশিয়ে পেঁয়াজ, কাঁচামরিচ, লবণ ও সরিষার তেল মিশিয়ে ভর্তা তৈরি করুন।
২) ডুমুরের কোফতা ভুনা
উপকরণ – ডুমুর ৫০০ গ্রাম, ময়দা আধা কাপ, মরিচ গুঁড়া ১ চা চামচ, হলুদ গুঁড়া আধা চা চামচ, গরম মশলা গুঁড়া ১ চা চামচ, জিরা গুঁড়া ১ চা চামচ, ধনিয়া গুঁড়া ১ চা চামচ, পেঁয়াজ কুঁচি আধা কাপ, কাঁচামরিচ কুঁচি ১ টেবিল চামচ, রসুন বাটা ১ টেবিল চামচ, টক দই ১ কাপ, লবণ স্বাদ মত, তেল ২ কাপ।
প্রণালি - ডুমুর মাঝখান থেকে কেটে ভেতরের বিচি বের করে গরম পানিতে সেদ্ধ করে পানি ঝরিয়ে মিহি করে বেটে নিতে হবে। ডুমুরের সাথে ময়দা এবং আধা চা চামচ করে জিরা গুঁড়া, ধনিয়া গুঁড়া, গরম মশলা গুঁড়া, মরিচ গুঁড়া, মরিচ কুঁচি এবং লবণ দিয়ে সামান্য পানি নিয়ে মাখিয়ে গোল করে তেলে ভাজতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে যেন বেশী ভাজা না হয়। কারণ এতে গ্রেভির সময় ভেতরে মশলা ঢুকবে না। অন্য একটি পাত্রে তেল গরম করে একে একে পেঁয়াজ কুঁচি এবং বাকি মরিচ গুঁড়া, হলুদ গুঁড়া, কাঁচামরিচ কুঁচি, গরম মশলা গুঁড়া, জিরা গুঁড়া এবং ধনিয়া গুঁড়া দিয়ে ভুনে নিতে হবে। এবার এতে টক দই দিয়ে একটু নেড়েচেড়ে ডুমুরের কোফতাগুলো দিয়ে দিতে হবে। মশলা মাখা মাখা হলে চুলা বন্ধ করে ভাত অথবা পরোটার সাথে পরিবেশন করতে হবে।
৩) ডুমুরের নাগেটস
উপকরণ - ডুমুর ৫০০ গ্রাম, আলু মাঝারি আকারের ১ টি, শুকনা মরিচ বাটা ১ টেবিল চামচ, হলুদ গুঁড়া আধা চা চামচ, গরম মশলা আধা চা চামচ, জিরা বাটা আধা চা চামচ, ধনিয়া বাটা আধা চা চামচ, লবণ স্বাদ মত, ডিম ১ টা, ব্রেডক্রাম্ব ২ কাপ, তেল ভাজার জন্য।
প্রণালি – ডুমুর এবং আলু সেদ্ধ করে হাত দিয়ে চটকে নিতে হবে। এবার এতে ডিম ছাড়া বাকি সব উপকরণ মিশিয়ে নাগেটসের আকার করতে হবে। ডিম ফেটিয়ে নাগেটসগুলো ডিমে চুবিয়ে ব্রেডক্রাম্বে গড়িয়ে ডুবো তেলে বাদামী করে ভাজলেই তৈরি হয়ে যাবে ডুমুরের নাগেটস। সসের সাথে গরম গরম পরিবেশন করতে হবে।
৪) ডুমুরের লাড্ডু
উপকরণ – ডুমুর ৫০০ গ্রাম, মিষ্টি আলু সেদ্ধ মাঝারি আকারের ২ টা, ঘি ১ কাপ, গুঁড়া দুধ ১ কাপ, কনডেন্সড মিল্ক ১.৫ টেবিল চামচ, কাজুবাদাম কুঁচি ২ টেবিল চামচ, মোরব্বা কুঁচি ১ টেবিল চামচ, চেরি কুঁচি সাজাবার জন্য।
প্রনালি – ডুমুর মাঝখান থেকে কেটে ভেতরের বিচি বের করে নিতে হবে। পানি গরম করে ডুমুর সেদ্ধ করে নিতে হবে। সেদ্ধ হয়ে গেলে পানি ঝরিয়ে মিহি করে নিতে হবে। এক্ষেত্রে পাটায় বেটে অথবা ব্লেন্ডারে মিহি করে নেওয়া যেতে পারে কারণ হাত দিয়ে চটকে নিলে পুরোপুরি মিহি হবে না। ডুমুরের সাথে সেদ্ধ মিষ্টি আলু চটকে মিশিয়ে নিতে হবে। প্যানে ঘি গরম করে ডুমুরের মিশ্রণটি দিয়ে ভালো ভাবে নাড়তে হবে। এবার এতে চিনি মেশাতে হবে। চিনি গলে পানি বের হলে এতে গুঁড়া দুধ এবং কনডেন্সড মিল্ক দিতে হবে। ঘন ঘন নাড়তে হবে। মিশ্রণটি আঠালো হয়ে এলে কাজুবাদাম এবং মোরব্বা কুঁচি মিশিয়ে চুলা বন্ধ করতে হবে। এবার একটি ছড়ানো ডিশে মিশ্রণটি ঢেলে ঠাণ্ডা করতে হবে। দুই হাতে ঘি মেখে মিশ্রণটি অল্প অল্প করে হাতের তালুতে নিয়ে গোল গোল করে লাড্ডু বানাতে হবে। গুঁড়া দুধে লাড্ডুগুলো গড়িয়ে চেরি কুঁচি দিয়ে সাজিয়ে পরিবেশন করতে হবে ভিন্ন স্বাদের ডুমুরের লাড্ডু।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই মে, ২০১৮ সকাল ১১:১৫