somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তামাক কোম্পানী কি আইনে উর্দ্ধে ?

৩০ শে ডিসেম্বর, ২০০৮ সন্ধ্যা ৬:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

লেখাটি অামার এক বন্ধুর

তামাক কোম্পানী কি আইনে উর্দ্ধে ?
ইমন রহমান , প্রত্যাশা মাদক বিরোধী সংগঠন, ঢাকা।

জনস্বাস্থ্যের কল্যাণে সরকার দেশে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০০৫ এবং বিধিমালা ২০০৬ প্রণয়ন করেছেন। এই আইন প্রণয়নের প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে তামাকজাত দ্রব্যের নিয়ন্ত্রণ, জনসচেতনতা সৃষ্টি এবং এর ক্ষতিকর প্রভাব থেকে দেশের আপামর জনসাধারনের স্বাস্থ্য রক্ষা করা। ধূমপানের ফলে মানুষ প্রত্যক্ষ ক্ষতির পাশাপাশি পরোক্ষভাবেও স্বাস্থ্যগত ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। এটি শুধু স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর তাই নয় দেশের অর্থনীতি ও পরিবেশগত দিক হতে এটি মারাত্বক ক্ষতিকর । এছাড়া ধূমপান এমন একটি বিষয় যে বিষয়ের কোন ভালদিক খুজে পাওয়া যাবেনা। দেশ ও জাতির কল্যাণে, পরিবেশ সংরক্ষণ এবং অধূমপায়ীদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের বাসত্দবায়ন তাছাড়া দেশের যুবশক্তিকে তামাকজাত দ্রব্যের ক্ষতিকর প্রভাব হতে রক্ষা করা সম্ভব নয়।

সাধারনত একটি দেশে আইন প্রণয়নের উদ্দেশ্য জনগণের কল্যান সাধন। সে কারণে আইনের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা দেশের প্রতিটি সুনাগরিকের কর্তব্য। কোন কোন ক্ষেত্রে যে আইন মানা হচ্ছেনা সে কথা বলা যাবেনা। তামাক নিয়ন্ত্রণে কার্যরত কতিপয় বেসরকারী সংগঠনের উদ্যোগে পরিচালিত জরিপে জানা যায়, আইনটি প্রণয়নের পর পাবলিক পরিবহনে ধূমপানের হার অনেকাংশে হ্রাস পেয়েছে এবং প্রচার মাধ্যমগুলোতে তামাক কোম্পানীর বিজ্ঞাপন প্রদর্শন বন্ধ হয়েছে কিন্তু কতিপয় তামাক কোম্পানী তামাকজাত দ্রব্য বিপণনের লক্ষ্যে ধূমপান ও তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের প্রতি অশ্রদ্ধা প্রর্দশন করে সারাদেশে বিভিন্ন উপায়ে সিগারেটের প্রচারনা করছে।

ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ আইন এর ধারা ৫. অনুযায়ী তামাকজাত পন্যের বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ- (১) ্ ধারায় বলা হয়েছে কোন ব্যাক্তি-
(ক) কোন প্রেক্ষাগৃহে বা সরকারী ও বেসরকারী রেডিও এবং টেলিভিশন চ্যানেলে তামাকজাতদ্রব্যের বিজ্ঞাপন প্রচার, আলোকচিত্র প্রদর্শন বা শ্রুতিগোচর করিবেনা বা করাইবেনা।

(খ) তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন রহিয়াছে এমন কোন ফিল্ম বা টেপ বা অনুরূপ অন্য কিছু বিক্রয় করিবেনা বা করাইবেনা।
(গ) বাংলাদেশে প্রকাশিত কোন বই, ম্যাগাজিন, লিফলেট, হ্যান্ডবিল, বিলবোর্ড, খবরের কাগজ বা ছাপানো কাগজে তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন মুদ্রন বা প্রকাশ করিবেনা বা করাইবেনা।

(ঘ) জনগনের নিকট এমন কোন লিফলেট, হ্যান্ডবিল বা দলিল বিতরন বা সরবরাহ করিবেনা যাহাতে তামাকজাতদ্রব্যের বিজ্ঞাপন দ্রব্যের ব্রা্রন্ডের নাম, রং, লোগো,ট্রেডমার্ক, চিহৃ, প্রতীক বা বিজ্ঞাপন রহিয়াছে।

ব্যাখ্যা- এই ধারায় বিজ্ঞাপন অর্থ যে কোন প্রকার প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া ,ই মেইল, ইন্টারনেট,টেলিকাষ্ট বা অন্যান্য মাধ্যমে লিখিত, ছাপানো বা কথিত শব্দের দ্বারা প্রচার।

অথচ ধূমপান ও তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাসত্দবায়ন কার্যক্রম পরিচালনার বর্তমান অবস্থা পর্যবেক্ষনের লক্ষ্যে গত জুলাই-আগষ্ট ২০০৭ "প্রত্যাশা" মাদক বিরোধী সংগঠন ঢাকা শহর এর বিভিন্ন এলাকা পরির্দশণ করে তামাক কোম্পানীর বর্তমান কার্যক্রমের উপর তথ্য সংগ্রহ করে।

প্রত্যাশার প্রদত্ত তথ্যানুযায়ী জনস্বাস্থ্যের উন্নয়নে তামাক নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে আইন প্রণয়ন এবং ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকায় মোবাইল কোট পরিচালনা করা হলেও কিছু অসাধূ তামাক কোম্পানী আইন অমান্য করে তামাকজাত সামগ্রীর বিজ্ঞাপন প্রদান করে চলছে। যে সকল কোম্পাণী এ ধরনের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে তাদের মধ্যে নেভি, মেরিস, ক্যাসল, প্রভৃতি ব্যান্ডের সিগারেটে এর বিজ্ঞাপন উল্লেখযোগ্য। এ সকল কোম্পানী সিগারেটের বিজ্ঞাপন সম্বলিত সাইনবোর্ড ঢাকা শহরের বিভিন্ন দোকানের উপর প্রদর্শন করছে।

তাছাড়া আইনের ধারা ১০ এর (১) এ প্যাকেটের গায়ে স্বাস্থ্য সমর্্পকিত ধারায় বলা হয়েছে যে, - তামাকজাত দ্রব্য উৎপাদনকারী প্রত্যেক প্রতিষ্ঠান তামাকজাতদ্রব্যের প্যাকেট বা মোড়কে বড় অক্ষরে স্পষ্টত দৃশ্যমানভাবে ও বড়মাপে (মোট জায়গার অনু্যন ৩০% শতাংশ পরিমান) নিম্নবর্ণিত যে কোন সর্তকবানী মুদ্রন করিবে।

এবং ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা ২০০৬ এ বলা হয়েছে, বাংলাদেশে উৎপাদিত বা আমদানীকৃত তামাকজাত দ্রব্যের প্রতিটি প্যাকেট বা মোড়কে আইনের ধারা ১০ এর উপধারা (১) এ বর্ণিত প্রতিটি সর্তকবানী উক্তধারায় বিধান অনুসরনক্রমে মুদ্রণ করিতে হবে।

যথাঃ-
(ক) ধূমপান মৃতু্য ঘটায়।
(খ) ধূমপানের কারনে মৃতু্য হয়।
(গ) ধূমপান হৃদরোগের কারণ।
(ঘ) ধূমপান ফুসফুসের কারণ।
(ঙ) ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।

(২) উপ- ধারা-(১) এর বিধান অনুসরন করা হয় নাই এমন কোন তামাকজাতদ্রব্যের প্যাকেট বা মোড়ক কোন ব্যাক্তি ক্রয় বা বিক্রয় করিতে পারিবেনা।

(৩) কোন ব্যাক্তি উপ-ধারা (১) এর বিধান লংঘন করিলে তিনি অনুধর্্ব তিনমাস বিনাশ্রম কারাদণ্ড বা অনধিক এক হাজার টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয়দন্ডে দণ্ডনীয় হইবেন।

প্যাকেট এ স্বাস্থ্য সর্তকীকরণ বাণী প্রদানের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে যেয়ে দেখা যায়, কতিপয় তামাক কোম্পানী বিজ্ঞাপন প্রর্দশনের পাশাপাশি তাদের উৎপাদিত সিগারেটের প্যাকেটে আইন অনুসারে ৩০% জায়গা জুড়ে স্বাস্থ্যসর্তকীকরন বানী প্রদান করছেনা।

এবং চাহিদা বাড়ানোর লক্ষ্যে যুব সমাজের মাঝে তারা বিভিন্ন ধরনের সার্ভে পরিচালনার পাশাপাশি অবৈধভাবে নানা ধরনের পুরষ্কারের ঘোষনাও করছে। ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যকো কোম্পানী যুব সমাজকে ধূমপানের প্রতি আরও বেশী আগ্রহী করে তোলার লক্ষ্যে গানের সিডি প্রদান সহ লটারীর মধ্যমে বাছাইকৃত ধূমপায়ীদের ঢাকা শহরের বিভিন্ন উন্নতমানের হোটেলে খাবার অফার করছে। অথচ আইনে এ সংক্রানত্দ ধারা ৫এর উপধারা (৩) এ বলা রয়েছে যে, তামাকজাতদ্রব্য বিক্রয়ে উৎসাহ প্রদান বা প্রলুব্দকরনের উদ্দেশ্যে কোন ব্যাক্তি উক্ত দ্রব্যের কোন নমুনা বিনামূল্যে জনগনকে প্রদান বা প্রদানের প্রসত্দাব করিতে পারিবেননা।

ধারা ৫এর উপধারা (৪) এ বলা হয়েছে, কোন ব্যাক্তি তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার উৎসাহিত করার উদ্দেশ্যে কোন দান, পুরষ্কার, বৃত্তি বা স্কলারশীপ প্রদান কিংবা গ্রহণ কিংবা কোন টুর্নামেন্ট আয়োজনের জন্য অন্য কোন ব্যাক্তির সহিত কোন চুক্তি বা সমঝোতা করিতে পারিবেননা।

শাাসত্দি হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, কোন ব্যাক্তি এই ধারার বিধান লংঘন করিলে তিনি অনুধর্্ব তিনমাস বিনাশ্রম কারাদণ্ড বা অনধিক এক হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দন্ডে দণ্ডনীয় হইবেন।

তামাক নিয়ন্ত্রন আইন অনুসারে উপোরোক্ত কার্যক্রমগুলো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ হলেও তামাকজাত দ্রব্য উৎপাদনকারী কোম্পানীগুলো আইনের দিকে বৃদ্ধাঙ্গুলী প্রদর্শন করছে। কিন্তু আমরা আশাবাদী যেহেতু দেশের সাধারণ জনগন এবং সরকারের সম্বলিত প্রচেষ্টায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন এবং বিধিমালা প্রণীত হয়েছে সেহেতু দেশের অধিকাংশ জনগণের বিরুদ্ধে তামাক কোম্পানীর ধবংশাত্বক একক অপচেষ্টা সফলতা পাবেনা। তামাক কোম্পানীর অনৈতিক, অবৈধ কার্যক্রম বন্ধ এবং ধূমপান ও তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাসত্দবায়নে কার্যকর উদ্যোগ গগ্রহণের জন্য সংশ্লিস্ট প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×