সয়ংক্রিয় অস্ত্র হাতে আচমকাই দৌড়ে এলেন মেজর নূর। সঙ্গে সঙ্গে ব্রাশ ফায়ার। রক্তাক্ত বুক-পাঁজর নিয়ে এক মহাপুরুষ লুটিয়ে পড়লেন ধূলোমাখা সিঁড়িতে। তখনও তাঁর হাতে ছিলো প্রিয় পাইপ। কে বলবে এই মানুষটা তাঁর জীবনের দীর্ঘবছর একটা স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় সংগ্রাম করে গেছেন, সয়েছেন শত অন্যায়, প্রবঞ্চনা। একটু দূরে দাঁড়িয়ে রক্তাক্ত লাশটার দিকে চেয়ে মেজর নূর জগতের সবচেয়ে কুৎসিত হাসিটা হেসেছিলেন। মেজর মহিউদ্দিন এতোক্ষন ভয় পেলেও এখন তার মুখেও ফুটে উঠলো বর্বর হাসি। আরো একবার পৃথিবী অবাক বিস্ময়ে দেখলো মানুষ কতটা অকৃতজ্ঞ হতে পারে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিতান্তই কোন নাম নয়। ইতিহাস নির্লজ্জ রাজনীতিবিদ নয়। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, শেখ মুজিব এক বিদ্রোহের নাম, সংগ্রামের নাম যার বজ্র কন্ঠের যাদুতে রচিত হয়েছে ৭১-এর আগুন ঝরা সেই সময়। ১৯৭৫ সালের ১৫-ই আগস্ট শেষ রাতে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়ীতে স্বপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছিলো এই মহানয়ায়ককে। আমি তো আমার বিবেককে কোন বানিজ্যিক ব্যাংকে সস্তা সূদে বন্ধক রাখিনী, সুতরাং ১৫-ই আগস্টের কথা আমি কিভাবে ভূলি?
বঙ্গবন্ধুকে দেশী-বিদেশী অনেক গোয়েন্দা সংস্থাই সাবধান করেছিলো, বিশেষ করে খন্দকার মোশতাকের ব্যাপারে। বঙ্গবন্ধু বিরক্ত গলায় বলেছিলেন, "ফালতু কথা রাখেন। মোশতাকরে আমি চিনি। আমি যদি ওরে এক মাস ঘাস খেতে বলি ও দুই মাস ঘাস খাবে।' এর নাম বিশ্বাস। এই বিশ্বাসটাই হয়তো বঙ্গবন্ধুর ভূল ছিলো।
১৫-ই আগস্ট, ১৯৭৫। শেষ রাত। চারোদিকে ফজরের আজান হচ্ছে। এই আজানের ভেতরই মেজর মহিউদ্দিন যা বলছিলেন বঙ্গবন্ধুর কাছে তা বড় বেমানান লেগেছিলো।
বঙ্গবন্ধু বললেন, -তোমরা কি চাও?
নার্ভাস মেজর মহিউদ্দিন বললেন, -স্যার একটু আসেন।
-কোথায় আসবো? তোমরা কি আমাকে খুন করতে চাও? পাকিস্তান সেনাবাহিনী যে কাজ করতে পারে নি, সে কাজ তোমরা করবে?
এই সময় সয়ংক্রিয় অস্ত্র হাতে আচমকাই দৌড়ে এলেন মেজর নূর। সঙ্গে সঙ্গে ব্রাশ ফায়ার। বত্রিশ নম্বর বাড়ীতে শুরু হলো জগতের সবচেয়ে ঘৃণিত, বর্বরোচিত ও অমানবিক হত্যাযজ্ঞ যেখানে রেহায় পায়নি ১০ বছরের শিশু রাসেলও। বঙ্গবন্ধুর বাড়ীর কাজের লোক রমার জবান বন্দী থেকে জানা যায়, হত্যাকান্ডের শেষে আরো একটি ট্যাঙ্ক বঙ্গবন্ধুর বাড়ীর সামনে এসে দাঁড়ায়। ট্যাংক থেকে কয়েক জন আর্মি জানতে চায়, ভেতরে কে আছে? উত্তরে ভেতরের আর্মিরা জানায়, all are finished.
বেদনাদায়ক হলেও সত্য, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর এই দেশে বলার মত কোন প্রতিবাদ হয় নি। এমন কি বঙ্গভবনে মিষ্টি বিতরন করা হয়েছিলো! লাশটা দীর্ঘ সময় বড় অনাদরে ধূলোমাখা সিঁড়িতেই পড়ে ছিলো। আহারে! ইতিহাস কি নির্মম। এর একটা কারন ছিলো বঙ্গবন্ধুর নামে গড়ে ওঠা রক্ষীবাহিনী। এই ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুর কতটা দোষ ছিলো তা নিয়ে প্রশ্ন থাকতে পারে কিন্তু জাতি হিসেবে আমরা যা করেছি বা আজো করছি তা বড় বেশী অকৃতজ্ঞতার পরিচয় দেয়। আবার আজকে তথা কথিত কিছু বুদ্ধিজীবি মিডিয়ার সামনে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে অতি কথন করে প্রকাশ্যে পেটের ধান্দা করছেন যা সত্যিই হাস্যকর। বঙ্গবন্ধুরা হাজার বছরে একবার জন্মান তাদের তেলের প্রয়োজন হয় না, প্রয়োজন হয় না রঙ চং চঙ্গে ব্যানার- ফ্যাষ্টুন কিংবা লাখ টাকা খরচ করে নির্মান করা তোরণের। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার রাজনীতি নিয়ে কিছু বলার নাই। রক্তে রক্তে যে প্রার্থক্য কথা কয় তা বড্ড বেশী দুঃখজনক, মাত্রাতিরিক্ত বেদনাদায়ক।
[email protected]
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ১২:১৪