somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

১৫-ই আগস্ট, ইতিহাস কথা কয়।

১৬ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ১২:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সয়ংক্রিয় অস্ত্র হাতে আচমকাই দৌড়ে এলেন মেজর নূর। সঙ্গে সঙ্গে ব্রাশ ফায়ার। রক্তাক্ত বুক-পাঁজর নিয়ে এক মহাপুরুষ লুটিয়ে পড়লেন ধূলোমাখা সিঁড়িতে। তখনও তাঁর হাতে ছিলো প্রিয় পাইপ। কে বলবে এই মানুষটা তাঁর জীবনের দীর্ঘবছর একটা স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় সংগ্রাম করে গেছেন, সয়েছেন শত অন্যায়, প্রবঞ্চনা। একটু দূরে দাঁড়িয়ে রক্তাক্ত লাশটার দিকে চেয়ে মেজর নূর জগতের সবচেয়ে কুৎসিত হাসিটা হেসেছিলেন। মেজর মহিউদ্দিন এতোক্ষন ভয় পেলেও এখন তার মুখেও ফুটে উঠলো বর্বর হাসি। আরো একবার পৃথিবী অবাক বিস্ময়ে দেখলো মানুষ কতটা অকৃতজ্ঞ হতে পারে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিতান্তই কোন নাম নয়। ইতিহাস নির্লজ্জ রাজনীতিবিদ নয়। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, শেখ মুজিব এক বিদ্রোহের নাম, সংগ্রামের নাম যার বজ্র কন্ঠের যাদুতে রচিত হয়েছে ৭১-এর আগুন ঝরা সেই সময়। ১৯৭৫ সালের ১৫-ই আগস্ট শেষ রাতে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়ীতে স্বপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছিলো এই মহানয়ায়ককে। আমি তো আমার বিবেককে কোন বানিজ্যিক ব্যাংকে সস্তা সূদে বন্ধক রাখিনী, সুতরাং ১৫-ই আগস্টের কথা আমি কিভাবে ভূলি?

বঙ্গবন্ধুকে দেশী-বিদেশী অনেক গোয়েন্দা সংস্থাই সাবধান করেছিলো, বিশেষ করে খন্দকার মোশতাকের ব্যাপারে। বঙ্গবন্ধু বিরক্ত গলায় বলেছিলেন, "ফালতু কথা রাখেন। মোশতাকরে আমি চিনি। আমি যদি ওরে এক মাস ঘাস খেতে বলি ও দুই মাস ঘাস খাবে।' এর নাম বিশ্বাস। এই বিশ্বাসটাই হয়তো বঙ্গবন্ধুর ভূল ছিলো।

১৫-ই আগস্ট, ১৯৭৫। শেষ রাত। চারোদিকে ফজরের আজান হচ্ছে। এই আজানের ভেতরই মেজর মহিউদ্দিন যা বলছিলেন বঙ্গবন্ধুর কাছে তা বড় বেমানান লেগেছিলো।
বঙ্গবন্ধু বললেন, -তোমরা কি চাও?
নার্ভাস মেজর মহিউদ্দিন বললেন, -স্যার একটু আসেন।
-কোথায় আসবো? তোমরা কি আমাকে খুন করতে চাও? পাকিস্তান সেনাবাহিনী যে কাজ করতে পারে নি, সে কাজ তোমরা করবে?
এই সময় সয়ংক্রিয় অস্ত্র হাতে আচমকাই দৌড়ে এলেন মেজর নূর। সঙ্গে সঙ্গে ব্রাশ ফায়ার। বত্রিশ নম্বর বাড়ীতে শুরু হলো জগতের সবচেয়ে ঘৃণিত, বর্বরোচিত ও অমানবিক হত্যাযজ্ঞ যেখানে রেহায় পায়নি ১০ বছরের শিশু রাসেলও। বঙ্গবন্ধুর বাড়ীর কাজের লোক রমার জবান বন্দী থেকে জানা যায়, হত্যাকান্ডের শেষে আরো একটি ট্যাঙ্ক বঙ্গবন্ধুর বাড়ীর সামনে এসে দাঁড়ায়। ট্যাংক থেকে কয়েক জন আর্মি জানতে চায়, ভেতরে কে আছে? উত্তরে ভেতরের আর্মিরা জানায়, all are finished.

বেদনাদায়ক হলেও সত্য, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর এই দেশে বলার মত কোন প্রতিবাদ হয় নি। এমন কি বঙ্গভবনে মিষ্টি বিতরন করা হয়েছিলো! লাশটা দীর্ঘ সময় বড় অনাদরে ধূলোমাখা সিঁড়িতেই পড়ে ছিলো। আহারে! ইতিহাস কি নির্মম। এর একটা কারন ছিলো বঙ্গবন্ধুর নামে গড়ে ওঠা রক্ষীবাহিনী। এই ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুর কতটা দোষ ছিলো তা নিয়ে প্রশ্ন থাকতে পারে কিন্তু জাতি হিসেবে আমরা যা করেছি বা আজো করছি তা বড় বেশী অকৃতজ্ঞতার পরিচয় দেয়। আবার আজকে তথা কথিত কিছু বুদ্ধিজীবি মিডিয়ার সামনে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে অতি কথন করে প্রকাশ্যে পেটের ধান্দা করছেন যা সত্যিই হাস্যকর। বঙ্গবন্ধুরা হাজার বছরে একবার জন্মান তাদের তেলের প্রয়োজন হয় না, প্রয়োজন হয় না রঙ চং চঙ্গে ব্যানার- ফ্যাষ্টুন কিংবা লাখ টাকা খরচ করে নির্মান করা তোরণের। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার রাজনীতি নিয়ে কিছু বলার নাই। রক্তে রক্তে যে প্রার্থক্য কথা কয় তা বড্ড বেশী দুঃখজনক, মাত্রাতিরিক্ত বেদনাদায়ক।

[email protected]
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ১২:১৪
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাঙ্গু এনালিস্ট কাম ইন্টারন্যাশনাল সাংবাদিক জুলকার নায়েরের মাস্টারক্লাস অবজারবেশন !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২৬

বাংলাদেশের দক্ষিণপন্থীদের দম আছে বলতে হয়! নির্বাচন ঠেকানোর প্রকল্পের গতি কিছুটা পিছিয়ে পড়তেই নতুন টার্গেট শনাক্ত করতে দেরি করেনি তারা। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ ঘিরে নতুন কর্মসূচি সাজাতে শুরু করেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিবাদ: দিল্লির ছায়া থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৫:৫৭

একটা সত্য আজ স্পষ্ট করে বলা দরকার—
শেখ হাসিনার আর কোনো ক্ষমতা নেই।
বাংলাদেশের মাটিতে সে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত।

কিন্তু বিপদ এখানেই শেষ হয়নি।

ক্ষমতা হারিয়ে শেখ হাসিনা এখন ভারতে আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

Grameen Phone স্পষ্ট ভাবেই ভারত প্রেমী হয়ে উঠেছে

লিখেছেন অপলক , ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৯



গত কয়েক মাসে GP বহু বাংলাদেশী অভিজ্ঞ কর্মীদের ছাটায় করেছে। GP র মেইন ব্রাঞ্চে প্রায় ১১৮০জন কর্মচারী আছেন যার ভেতরে ৭১৯ জন ভারতীয়। বলা যায়, GP এখন পুরোদস্তুর ভারতীয়।

কারনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কম্বলটা যেনো উষ্ণ হায়

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৭


এখন কবিতার সময় কঠিন মুহূর্ত-
এতো কবিতা এসে ছুঁয়ে যায় যায় ভাব
তবু কবির অনুরাগ বড়- কঠিন চোখ;
কলম খাতাতে আলিঙ্গন শোকাহত-
জল শূন্য উঠন বরাবর স্মৃতির রাস্তায়
বাঁধ ভেঙ্গে হেসে ওঠে, আলোকিত সূর্য;
অথচ শীতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×