somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জেমস- বাংলার কন্ঠ শ্রমিক।

০৫ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৮:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

খুব সম্ভবত ২০০৬ সালের কথা। আমার তখন চরম দুঃসময়। আলো নাই, আলো নাই। তীব্র মন খারাপ ভাব নিয়ে ধানমন্ডি লেকের পেছন দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে কলা বাগান মাঠের সামনে এসে দাঁড়ালাম। মাঠের ভেতর তুমুল হৈ চৈ, ড্রামসের সাউন্ড। কিভাবে কিভাবে যেন ভেতরে ঢুকে পড়লাম। একটু পরেই দেখলাম পোলাপাইন স্রেফ পাগল হয়ে গেলো। ঘটনা তেমন কিছু না, চারোদিকে একই রোল 'গুরু আইছে রে!!' তিনি মঞ্চে উঠেই গলার গামছাটা মাইক্রোফোনের সাথে বেঁধে দরাজ গলায় বললেন। "আমি এসে গেছি, তোরা সব শান্ত হয়ে যা!" তিমি যেন হ্যামিলিওনের বাঁশিওয়ালা, মূহুর্তেই সব ঠান্ডা হয়ে গেলো। ততক্ষণে মঞ্চের বাতি নিভে গেছে। গিটারের ব্লুজে মাতাল তারুন্য। জগতের সব মমতা নিয়ে তিনি গাইছেন... না না গাইছেন শুধু মাত্র এই আমার জন্য...
"চেয়ে দেখো... চেয়ে দেখো
উঠেছে নতুন সূর্য
পথে পথে রাজপথে
চেয়ে দেখ রঙের খেলা
ঘরে বসে থেকে লাভ কি বলো
এসো চুল খুলে পথে নামি
এসো উল্লাস করি…
দুঃখিনী দু:খ করোনা... দুঃখিনী.. দুঃখিনী... "
এই প্রথম আমার বিশ্বাস হলো, জনতার মাঝেও নির্জনতা আছে। আমার কি যেন হয়ে গেলো। আমাকে আবার উঠে দাঁড়াতে হবে, যেতে হবে অনেকটা পথ। গুরু... গুরু তোমায় লাল সালাম।

হ্যাঁ বলছিলাম মাহফুজ আনাম জেমসের কথা। বাংলা ব্যান্ডের প্রবাদ পুরুষ এই মানুষটার জন্ম নওগাঁর পত্নীতলায় তবে তাঁর বেড়ে ওঠা চট্রগ্রামে। কৈশোরেই জেমসের মধ্যে ঢুকে গেলো গানের নেশা ফলে বাবার সাথে সম্পর্কের অবনতি কিন্তু গুরুকে ঠেকায় কে? তাই গানের টানে ঘর ছাড়লেন। চট্রগ্রামের আজিজ বোর্ডিংয়ে শুরু হলো আমাদের জেমস ও তাঁর ব্যান্ড ফিলিংসের ষ্ট্রাগল লাইফ। ব্যান্ডের প্রথম এ্যালবাম 'ষ্টেশন রোড' প্রকাশ হলো ১৯৮৭ সালে। জন্ম হলো এক রকস্টারের। ১৯৮৮ সালে গুরুর 'অনন্যা' এ্যালবাম ঝড় তুললো। ১৯৯০ সাল, আবার জেমস! তবে এবারেরটা টর্নেডো। এ্যালবামের নাম 'জেল থেকে বলছি।' তারপর একটু বিরতি দিয়ে দুটি এ্যালবাম নিয়ে গুরু হাজির 'পালাবি কোথায়' ও 'নগর বাউল'... এই দুটো এ্যালবাম দিয়ে গুরু যেন জানান দিলেন 'রেডী থাক সাইক্লোন আসছে।' সত্যি সত্যি সাইক্লোনই আসলো... ১৯৯৭ সাল 'দুঃখিনী দুঃখ করো না' ১৯৯৮ সাল 'লেইস ফিতা লেইস' ১৯৯৯ সাল 'ঠিক আছে বন্ধু'... বাংলার পথে- ঘাটে-মাঠে তখন একটাই নাম 'গুরু জেমস'। ৯০-এর দশকে ঢাকার পাড়া-মহল্লায় গড়ে উঠেছিলো জেমস ফ্যান ক্লাব। কনসার্টে জেমস মানেই- আজ কিছু হতে চলেছে। আজো মৃদুভাষী জেমস সমান জনপ্রিয়। লাইভ কনসার্টে আজো জেমস মানেই পাগলা হাওয়া। জেমস মানেই তুফান।

প্রায় ২৫ বছর ধরে নগর বাউল জেমস কেন সমান জনপ্রিয়- এর কারন তাঁর অসাধারন ভয়েস যা আমাদের মনে করিয়ে দেয় বব মার্লে কিংবা জীম মরিসনের কথা। যারা প্রবলভাবে জেমস বিদ্বেষী তারাও স্বীকার করতে বাধ্য হবেন যে কেবল জেমসই নিত্য নতুন ইন্সট্রুম্যান্ট দিয়ে পপ মিউজিককে বাংলার আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে দিয়েছেন কেবল একক প্রচেষ্টায়। এখানেই জেমস অনন্য, আলাদা, অসাধারন। তাছাড়া গুরু জেমসের প্রতিটি গানের কথাই যেন এক একটি অমৃতসম কবিতা।

গুরু জেমসের অসংখ্য জনপ্রিয় গানের মধ্যে আমার প্রিয় কিছু গান...
বাংলাদেশ, মা, বিজলী, দুঃখিনী দুঃখ করো না, ফুল নেবে না অশ্রু নেবে, নদী, দূর পাহাড়ে, অনন্যা, কবিতা, বাবা, তুমি জানলে না, ঠিক আছে বন্ধু, মনে পড়ে সুধাংশু, এমনো নিশীরাতে, দিল, সুলতানা বিবিয়ানা, পাখী উড়ে যা, এফিটাফ, পত্র দিও, বিবাগী, পথ, দেয়াল, শারাব, ঈশ্বর আছে, স্যার, পিয়ানো, কথা নয় মুখে মুখে, সারথী, বেদের মেয়ে জোছনা, সাদাকালো...

জেমসদাকে ভীষন ভালোবাসি। আমার ফিরে আসার গল্পে গুরুর প্রভাব আমার চিরটাকাল মনে থাকবে। ২০০৬ সাল থেকে আজ পর্যন্ত গুরুর অসংখ্য লাইভ দেখেছি... প্রতিবারেই পেয়েছি সেই প্রথম দিনের ফিল। গুরু তুমি শত বছর বাঁচো। আমি আরো হাজার-লক্ষবার তোমার গিটারের ব্লুজে, তোমার মাতাল সূরে নেশাগ্রস্থ হতে চাই। জয় গুরু।

পুনশ্চঃ ২ অক্টোবর গুরুর জন্মদিন ছিলো। লেখাটা ঐ দিনই পোস্ট করবো ভেবেছিলাম কিন্তু ঢাকার বাইরে থাকায় পারিনি।

সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৮:০৩
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে এসো রাফসান দি ছোট ভাই

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৮

রাফসানের বাবার ঋণ খেলাপির পোস্ট আমিও শেয়ার করেছি । কথা হলো এমন শত ঋণ খেলাপির কথা আমরা জানি না । ভাইরাল হয় না । হয়েছে মূলতো রাফসানের কারণে । কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুমীরের কাছে শিয়ালের আলু ও ধান চাষের গল্প।

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৪০



ইহা নিউইয়র্কের ১জন মোটামুটি বড় বাংগালী ব্যবসায়ীর নিজমুখে বলা কাহিনী। আমি উনাকে ঘনিষ্টভাবে জানতাম; উনি ইমোশানেল হয়ে মাঝেমাঝে নিজকে নিয়ে ও নিজের পরিবারকে নিয়ে রূপকথা বলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×