somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমি এবং ... (১ম পর্ব)

০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০২৩ রাত ১১:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

[একুশে বইমেলা, বাংলা একাডেমী, শাহবাগ, ঢাকা]

- ওহ নো নো, সরি সরি আমি খুবই দুঃখিত, সরি ম্যান। (ইংরেজিতে)
মেয়েটি আমার দিকে হাত বাড়িয়ে দিল, একটু আগে যার সাথে হতচকিতে ধাক্কা খেয়ে আমি বইয়ের দোকানের প্রবেশ মুখে পড়ে যাই। আমি বের হচ্ছিলাম আর সে ঢুকছিল। আমার সাথে আমার এবং মেয়েটির হাতে থাকা বইগুলোও মেঝেতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। আমি কি অন্যমনস্ক ছিলাম?
- কাম অন ম্যান। (ইংরেজিতে)
উঠে আসার জন্য মেয়েটি আবারো তাগাদা দিল। তার হাত বাড়ানোই ছিল। মেয়েটির পরনে সাদা টপস’র উপর কালো ব্লেজার আর প্যান্ট। সম্ভবত অষ্টাদশী। বাচন ভঙ্গি আর গায়ের রং বলে দিচ্ছে মেয়েটি পশ্চিমা দেশের। সোনালী কেশ আর কালো মাস্কে তাকে অপূর্ব লাগছিল। আমি কি মেয়েটির সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে যাচ্ছি? না পাঠক, আমি বরঞ্চ অবাক হয়েছি একটি গ্রন্থ দেখে। যা মেয়েটির হাতেই ছিল। মেয়েটির বেশভূষার সাথে বইটি যায় না। যায় না বলার আমি কে? বাহ্যিক অবস্থা দেখে কাউকে বিচার করা কি ঠিক? ধবধবে ফর্সা হাতের স্পর্শ এড়িয়ে বইগুলো সমেত আমি উঠে দাঁড়ালাম। কাপড়ে লেগে থাকা ধুলোবালি পরিষ্কার করছিলাম।
- তুমি কি আমার উপর রাগ করেছ? হাত বাড়ালাম, ধরলে না। আমি আসলে তোমায় দেখিনি। (ইংরেজিতে)
- না না, তোমার কোন দোষ নেই। আমি একটু অন্যমনস্ক ছিলাম। তোমার একটি বই অল্প ছিঁড়ে গেছে। দুঃখিত। বইগুলো নাও। (ইংরেজিতে)
- কোন সমস্যা নেই। তোমার নাম? (ইংরেজিতে)
মেয়েটি আমার হাত থেকে তার বইগুলো নিল। আমি নাম বললাম। ভাগ্যিস বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজির ছাত্র ছিলাম, নইলে ইতালীয়দের মতো নিজ মাতৃভাষার ঔদ্ধত্য দেখিয়ে সটকে পড়তে হত। বর্তমানে যে বেকার জীবন কাটাচ্ছি সেটাও মজা করে তাকে জানালাম। আমাদের কথোপকথন ইংরেজিতেই চলতে লাগল।
- গুড। আমি মেরি আরইয়া মিম ফ্রম এ্যমেরিকা।
এ বলে মেয়েটি আবারো হাত বাড়িয়ে দিল। মহা ঝামেলায় পড়া গেল দেখছি। আমি ইতস্তত হয়ে বললাম,
- আমাদের ধর্মে প্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদের বিবাহবহির্ভূত স্পর্শ করা নিষেধ।
- দেখ, আমি তোমাকে শুরুতেই একজন মানুষ হিসেবে সম্বোধন করেছি। বালক কিংবা পুরুষ বলিনি। তুমি আমাকে মেয়ে হিসেবে দেখছ কেন? প্রথমত, আমি তো একজন মানুষই। লিঙ্গ পরিচয় তো পরের বিষয়।
- তোমার যুক্তি ঠিক আছে, কিন্তু ..
- আমি তোমার দেশে একজন অতিথি। প্রত্যেক ধর্মেই অতিথিকে স্বাগত জানানো আর সমাদর করার কথা বলা আছে। আর তুমি এখানে ধর্মকে টেনে আনছো কেন? সবার আগে তো মানুষ, পরে অন্য কিছু। পৃথিবীতে কে আগে এসেছে, ধর্ম না মানুষ?
আমি হাসিমুখে হাত বাড়িয়ে দিলাম।
- আমার দেশে তোমায় স্বাগত মিম।
মুখ হতে মাস্ক খুলে মিমও হাসিমুখে আমার সাথে করমর্দন করল। আমার সম্মুখে অসম্ভব সুন্দরী একজন তরুণী যার হাতে আমি এখন কার্যত বন্দি। আমি কি রোমাঞ্চিত? জীবনে এই প্রথম বিবাহবহির্ভূত নারীর সাথে স্পর্শ। আমি কি আবারো নারী-পুরুষের বৃত্তে আটকে যাচ্ছি? পরিচিত কেউ যদি দেখে ফেলে তবে তো সর্বনাশ। কিন্তু নিজের কাছে আমি তো সৎ। আমি কি কোন অন্যায় করছি? দূর থেকে অনেকে আড়চোখে আমাদের কান্ড দেখছে।
- তোমার ধর্ম নিশ্চয় ইসলাম। দেখ, আমি একটি খ্রিস্ট্রিয় পরিবারে বড় হয়েছি। ছোটবেলায় ধর্মের সবক দেয়া হলেও প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর আমাদের দেশে কারো উপর ধর্ম চাপিয়ে দেয়া হয় না। আর ব্যক্তিগত ভাবে বর্তমানে আমি কোন ধর্মে নেই। আমার কাছে মানবধর্ম আর মানবপ্রেমই প্রধান।
- এখানে তোমার সাথে কিছুটা দ্বিমত আছে আমার। সেটা পরে হবে। কিন্তু তোমার হাতে এই বইটি কেন?
আমরা কথা বলতে বলতে কখন যে বইমেলার বের হবার ফটকে চলে এসেছি টের পাইনি।
(চলবে)

সর্বশেষ এডিট : ০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০২৩ রাত ১১:০৮
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার ১৫ বছর

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ২৯ শে নভেম্বর, ২০২৩ বিকাল ৫:১৭

১৫ বছর পূর্তির এই পোস্টটা যখন লিখছি, তখন আমি একটা বড় পারিবারিক দূর্বিপাকের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি। আমার ছোটভাইয়ের কনিষ্ঠ পুত্র, যার বয়স ১১ মাস, সে দগ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

জিম্মি বিনিময়ের সুনামে হামাস দেশ ত্যাগ করলে, ফিলিস্তিনের জন্য ভালো হতো!

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৯ শে নভেম্বর, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:৫৬



হামাস জিম্মি/বন্দি বিমিয়মে বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়েছে: তারা নেতানিয়াহুর সামরিক নিষ্ঠুরতা ও গণহত্যা, অসফলতা ও বিশ্বের চাপকে কাজে লাগিয়ে, জিম্মি বিনিময়ের কন্ট্রোল নিজের হাতে রেখেছিলো। তারা জিম্মিদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিব্যক্তি

লিখেছেন আরোগ্য, ২৯ শে নভেম্বর, ২০২৩ রাত ৯:০০





১. অদ্ভুত মোহ মায়ার জগৎ এটা। সবকিছু ছেড়ে চলে যেতে হবে জেনেও বারবার আঁকড়ে ধরার ব্যর্থ চেষ্টায় রত থাকি। শ্বাস প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে গেলে কেউ আর বেশি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কবিতা কিংবা বচন-২

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ৩০ শে নভেম্বর, ২০২৩ রাত ১২:২৪

আগের বচনগুলোর লিংক :

১। অম্লতিক্ত অপ্রিয় সত্যাবলি

২। অম্লবচন-১

৩। অম্লবচন-২

৪। অম্লবচন-৩

৫। রম্যমধুর অম্লবচন

৬। অম্লবচন মধুরবচন - আমাদের মন ও মানবতা

৭। কবিতা কিংবা বচন

নিঠুর পৃথিবী

আমি এক আলাভোলা ঘরকুনো প্রেমখোর বাঁদর
ভালো লাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

একদিন প্রেম খুলবে স্বর্গ দ্বার।

লিখেছেন সামরিন হক, ৩০ শে নভেম্বর, ২০২৩ রাত ২:০৪

একদিন অভিমানি সব চোখ,জলে ভরে উঠবে ।
একদিন তোমারআমার ক্ষোভ ওপারে ফিরবে ।

২৫শে জুলাই ২০২০

একদিন আধাঁর ,আলোকিত করবে সব বোধ।
একদিন তোমারআমার হাসি ,আকাশের নেবে কোল।

২৮শে জুলাই ২০২০

একদিন ধু ধু মরুভূমি ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×