মানুষ আর শুয়োরের মধ্যে কি কোনো পার্থক্য আছে? আমরা শুয়োর খাই, মানুষ খাই না। আর কিছু? হিমেলের ইচ্ছে করে ক্যাফের সবগুলো ছাত্রছাত্রীকে শুয়োরের শিরদাঁড়ার মতো চিবিয়ে খেয়ে ফেলতে। ওই যে সামনে খিলখিল করে হাসছে কিছু এশিয়ান ছেলেমেয়ে। কোন দেশী? কোরিয়ান সম্ভবত। এত হাসি কিসের শুয়োরের বাচ্চাগুলোর? ইচ্ছে করে প্রত্যেকের মাথা ধড় থেকে ছিড়ে নেই। চুলের মুঠি ধরে একটা হ্যাঁচকা টান। গলা ছিঁড়ে যাবে। ফোয়ারার মতো রক্ত ছিটাবে সারা ক্যাফে জুড়ে। আর ওই দিকে ওই কালোগুলো? প্রকান্ড দেহ জুড়ে বসে গর্দভগুলো। হাতির মতো নিনাদ করছে, আর চেয়ার ধাপাচ্ছে। ক্যানো শুনি? চেয়ারগুলো কি তোর বাপের? প্রতিটি জিনিস স্কুলের পাওয়া ট্যুইশন থেকে কেনা। প্রতিটি চেয়ারে হিমেলেরও সমান ভাগ। ওই হারামজাদারা এভাবে ধাপাচ্ছে কেনো ওর চেয়ারগুলো? প্রত্যেকটার মাথা মেঝেতে ফেলে মাড়িয়ে পিষে দেয়া যায় না? টুকরো টুকরো করে দেয়া যায় না খুলি? সেই খুলির সাদা সাদা টুকরোর সাথে মিশে যাবে শুয়োরগুলোর হলুদ ঘিলু। লেপ্টে দেবে মেঝের সাথে। আর সাদা ছেলেমেয়েগুলো সাদা স্রাবের মতো বসে আছে। আরে মাতারীর বাচ্চারা, তোদেরকেও ছাড়বো না। তোদের পাট ছিবড়ে পাট-পাট করবো। ভেজা গামছা যেভাবে ঝাড়ে, ঠিক সেভাবে তোদের মোচড়াবো। পটপট শব্দে হাড় ভাঙবে। ভাঙা হাড় বেরিয়ে আসবে এখানে সেখানে চামড়া ভেদ করে। গামলা গামলা রক্ত পড়বে চুঁইয়ে চুঁইয়ে। আরব, ল্যাটিন আমেরিকান হারামীগুলোকে বানাবো কাবাব। কুত্তাগুলোকে কুচিকুচি কাটবো করাত দিয়ে। শুরু করবো পা দিয়ে। অল্প অল্প করে মাথার দিকে যাবো। দেখ শালারা ব্যাথা কাকে বলে! আর ওইদিকে ওই শালারা কী বাংলাদেশী নাকি? নাকি ইন্ডিয়ান? পাকি? তোদেরও রেহাই নাইরে। যেই দাঁত বের করে হাসছিস সেই দাঁতগুলো একটা একটা করে তুলে নেবো প্লায়ার্স দিয়ে। এরপর প্রতিটি নোখ, চোখ, কান। এরপর আঙ্গুল, এরপর হাত, এরপর...
নাকি আগুন ধরিয়ে দেবো এই ক্যাফেতে? এই স্কুলে? এই শহরে? এই দেশে? সারা পৃথিবীতে? তোদের আনন্দের শেষ আমি দেখবো। কুত্তার বাচ্চারা। শুয়োরের বাচ্চারা। হারামজাদার দল। জ্যান্ত পোড়াবো তোদেরকে। চামড়া খসে পড়বে। চর্বি গলে গলে পড়বে। পটপট করে পপকর্নের মতো ফাটবে তোদের সুখী মাংস। এক লাথিতে ভেঙে ফেলবো পুরো দালান। সব দালান। মুচড়ে ফেলবো সব গাড়ি। সব স্থাপত্য।
নাহ! তোরা সবাই ভালো রে। খারাপ এই আমি। আমিই খাবাপ। আর নষ্ট। আমি নিজেকেই ধ্বংস করবো। নিজেকেই জ্বালাবো। নিজেকেই কুচিকুচি করবো কেটে। এরপর...
‘জনাব তাহলে এইখানে? লাইব্রেরিতে দেখা করার কথা ছিলো না?’
মরার মতো গ্যাবির দিকে তাকায় হিমেল। সোনালী চুল, আর সবুজ চোখ। তাই না? এই সব চুরমার হবে। আমিই সব চুরমার করবো। তোর চুল ছিঁড়ে নেবো। চোখ উপড়ে ফেলবো। তোর...
হিমেলকে দেখে কেমন ভয় পেয়ে যায় গ্যাবি। ওর গা ঘেঁষে বসে কেমন আকুলকা নিয়ে জিজ্ঞেস করে, ‘কি হয়েছে হিমেল?’
হিমেল হয়তো এই মমতার অপেক্ষাতেই ছিলো। কিংবা এই মমতাই ওর অপেক্ষায় ছিলো। পাজল বোর্ডের বিচ্ছিন্ন টুকরোর মতো হিমেলের চারপাশে খসে পড়তে থাকে ওর এতক্ষণের পৃথিবী। সব হিংসা বদলে কেমন ঝাপসা হয়ে যায়। হিমেল ফুঁপিয়ে উঠে বলে, ‘আমার মা মারা গেছে।’ গ্যাবি সঙ্গে সঙ্গে হিমেলকে জড়িয়ে ধরে।
***
ক্যাফেতে ওইদিন মোট সাতাশজন ছাত্রছাত্রী ছিলো। সেদিনের পর থেকে ওদের প্রত্যেকের মনে শ্যামলা একটি ছেলের চিৎকার করে কান্নার ছবি সারা জীবনের জন্য বাঁধা পড়ে যায়!
© অমিত আহমেদ
ব্যবহৃত ছবি © "
The Edge of Sorrow" by
Tony Hamilton.
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই আগস্ট, ২০০৮ বিকাল ৩:৫৪