ছোট বেলা থেকেই জেনে এসেছি আমাকে ডাক্তার হতে হবে। আব্বুর ইচ্ছে ছিল আমাকে ডাক্তার বানানোর ,সে ভাবেই নিজেকে তৈরি করে আসছিলাম। খুব একটা ভালো ছাত্রী ছিলাম তাও না। তারপর ও ইচ্ছেটা নিজের ভেতর ভালো ভাবেই বেড়ে উঠছিল। খুব ভালো ভাবেই ম্যাট্রিক পাশ করলাম,ইন্টার ও ।শুরু হল আমার ডাক্তারি পড়ার পথে প্রথম পথ চলা। কোচিং করা, প্রাইভেট পড়া সবদিক নিজেকে গুছিয়ে নিচ্ছিলাম ।ভর্তি পরীক্ষা দেবার পর জানলাম প্রশ্ন আউট হবার খবর। চিন্তায় পড়ে গেলাম কি হবে। যথারীতি আমি সুযোগ পেলাম না। পাবার কথাও না। আমি টাকা দিয়ে তো প্রশ্নপত্র কিনি নাই। খুব ভেঙে পড়েছিলাম ,এতদিনের তিলেতিলে তৈরি স্বপ্নটাকে এভাবে নষ্ট হতে দেখে। তার থেকেও বেশি কষ্ট হচ্ছিল আব্বুর স্বপ্ন ভাঙার কষ্টে। ডাক্তার হবার ইচ্ছেটা শেষ হয়ে যাচ্ছিলো । আব্বুর জোরাজোরিতে প্রাইভেট মেডিক্যালে পরীক্ষা দিলাম,আল্লাহ্র রহমতে সুযোগ পেয়ে গেলাম ডাক্তার হবার। কিন্তু যে যোগ্যতা শুধুমাত্র নিজের বিবেক বেঁচে না করতে পারার কারণে অর্জন করতে পারিনি তা খুব সহজে ভুলতে পারছিলাম না। মানুষ তো তাই হয়তো ধীরে ধীরে এই জীবনে অভ্যস্ত হয়ে গেলাম।ভালই কাটছিল আমার মেডিক্যাল জীবন। আমার পরিশ্রমের ফলাফল ভালোই পাচ্ছিলাম ফার্স্ট প্রফ, সেকেন্ড প্রফ খুব ভালো ভাবেই পাশ করলাম। কিন্তু আমি তখনও সেই অন্ধকারেই ছিলাম।আমার জন্য সামনে কি অপেক্ষা করছে আমি জানতাম না। অনেক কিছু শুনতাম ... মেডিক্যালে পড়তে গেলে ডাক্তার বাবা মা থাকা জরুরী ,মাথার উপর ক্ষমতাওয়ালা কেউ থাকা জরুরী ।আমার কখনো এসবের প্রয়োজন হয়নি। ফাইনাল প্রফও আমি নিজের সেই পরিশ্রম নিয়েই দিয়ে আসলাম ,ভালো দিয়ে আসলাম। জানতাম ডাক্তার হয়েই গেছি। রেজাল্টে দেখলাম এক বিষয়ে খারাপ করেছি। এমন টা হবার কথা না। কেন হল? হল এজন্যই যে আমার ডাক্তার বাবা ,মা ছিলনা, কোনও শক্তিশালি লিঙ্ক ছিলনা ।হল এজন্যই যে উপর থেকে নির্দেশ ছিল এমনটাই করার। শুধু আমি না,আমার কিছু বন্ধুও এর শিকার হয়। মাঝখান দিয়ে সব কিছুর বলি হলাম আমরা।
মেডিক্যালে পড়তে হলে কঠোর পরিশ্রমী হতে হবে, নিজেকে পড়ালেখাই ব্যস্ত রাখতে হবে। আমরা যারা এখানে পড়তে আসি তারা এটা জেনেই আসি। সারা বছর কষ্ট করে আমরা পড়ালেখা করব আর এর ফলাফল নিবে আর কেউ??? কেন??? শুধু মাথার উপরে শক্তিশালী কেউ নেই বলে? আমাদের বাবা ,মা ডাক্তার নয় বলে?? কেন??? মেডিক্যালে ভর্তি পরীক্ষা থেকে শুরু করে ,প্রতিটা ক্ষেত্রেই এই সবের জন্য কতো ছেলে মেয়ে যে ভুগছে তার কোন হিসাব নেই। কেন এসব বন্ধ হয়না? কেন এতো দুর্নীতি? যে পেশায় থেকে একজন মানুষের জীবনের ভার হাতে নিয়ে প্রতিটা সময় থাকতে হবে সেখানে কেন এই অরাজকতা???
এসব তো কম ছিলনা, এখন ডাক্তারি পড়ার জন্য এ প্লাস পেলেই চলবে ।এত হাস্যকর সিদ্ধান্ত নিতে পারে শুধু মোটা মস্তিষ্কেরই কেউ। দু বছরের পড়ালেখা দিয়ে কারো মেধা যাচাই করা সম্ভব না।এইটা যদি আমাদের মতো ছেলেমেয়েরা বোঝে তাহলে যারা দেশ চালানোর মতো কঠিন দায়িত্ব নিয়েছেন তারা কেন বোঝেন না? কেন ছোট ছোট ছেলেমেয়ে গুলোকে লড়াই করতে হল?? এই কোমলমতি ছেলেমেয়ে গুলোর উপরে কি প্রভাব পড়েছে এইটা কি কেউ একবার ও ভেবেছে?? বুয়েটের মতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রছাত্রিরা নিজেদের রক্ত দিয়ে প্রতিবাদ জানাচ্ছে,আর কত কি করলে আমাদের শিক্ষার্থী দের মানুষ হিসেবে গণ্য করা হবে??? দুইদিন পরপর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতে মারামারি, কাটাকাটি আর কতদিন আমাদের দেখতে হবে? কবে আমরা একটা শান্তিময় পরিবেশ পাবো নিজেদের মানুষ করে গড়ে তোলার ??? কবে???
[আমার লেখার উদ্দেশ্য কাউকে কষ্ট দেবার জন্য না, প্রতিনিয়ত সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা যা ভুগে চলেছে তার কিছু সবার সামনে তুলে ধরা]

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



