একটি প্রজাপতি রোজ ভোরে একটি বাগানে ফুলে ফুলে মধু নিতে আসতো । একদিন ভোরে প্রজাপতিটি যখন ফুলের মধু নিতে বাগানে আসলো , সে দেখল বাগানের এক কোণে ঘাসের উপরে ছোট্ট একটা শিশির কণা ।সে উড়ে শিশির কণাটির কাছে আসলো, কিছুক্ষণ কণাটির আশেপাশে উড়াউড়ি করে সে মধু নিতে চলে গেলো। পরদিন ভোরে প্রজাপতিটি বাগানে আবারও মধু নিতে আসলো ,সে দেখল শিশির কণাটি তখনও ঘাসের উপরে। শিশির কণাটিকে আজ অনেক সুন্দর লাগছিলো ।প্রজাপতিটি তার কাছে এসে কিছুক্ষণ উড়ে চলে গেলো ।পরদিন ভোরে প্রজাপতিটি মধু নিতে এসে দেখে শিশির কণাটি চুপচাপ সেভাবেই বসে আছে ঘাসের উপর। প্রজাপতিটি উড়ে কণার কাছে আসলো।
প্রজাপতিটি বললঃ শিশির কণা ,শিশির কণা , তুমি সবসময় এভাবে চুপটি করে বসে থাকো কেন? তোমার কি মন খারাপ?
শিশির কণাটি বলেঃ না ভাই ।
প্রজাপতি বলেঃ তাহলে তুমি কেন প্রতিদিন এখানেই চুপটি করে বসে থাক? আমি রোজ তোমায় এখানে বসে থাকতে দেখি।
শিশির কণাটি বলেঃ আমিও রোজ তোমায় বাগানে উড়তে দেখি। আমার খুব ভালো লাগে।
প্রজাপতি বলেঃ তুমি অনেক সুন্দর শিশির কণা।
শিশির কণা বলেঃ তুমিও অনেক সুন্দর।
প্রজাপতি বলেঃ তুমি উড়তে পারোনা ?
শিশির কণা বলেঃ না , আমার তো পাখা নাই ভাই ।
প্রজাপতি বলেঃ তুমি তাহলে কোথাও যেতে পারোনা ?
শিশির কণা বলেঃ না , আমাকে সবসময় এখানেই থাকতে হয়। বেলা হলে আমি আর এখানে থাকতে পারিনা।
প্রজাপতি প্রশ্ন করেঃ কেন?
শিশির কণা বলেঃ আমি খুব ভোরে এখানে আসি, যখন সূর্য মামা ঘুমিয়ে থাকে। সূর্য মামা ঘুম থেকে উঠে গেলে আমাকে চলে যেতে হয় , নয়ত আমি মারা যাবো ।
প্রজাপতি বলেঃ তুমি আমার বন্ধু হবা শিশির কণা ?
শিশির কণা বলেঃ হবো ।
প্রজাপতি বলেঃ আমি রোজ ভোরে তোমার কাছে আসবো ...
এভাবে প্রতিদিন প্রজাপতি খুব ভোরে শিশির কণার কাছে আসে, দুজনে গল্প করে। প্রজাপতি শিশির কণাকে রোজ গল্প শোনায় । দূর দূরান্তের খবর, ফুলের খবর,ফলের খবর,পাখির খবর আরও কতো কি... এইসব শুনে শিশির কণার খুব ইচ্ছে হয় , তার যদি পাখা থাকতো !! সে যদি এভাবে উড়ে বেড়াতে পারতো !! কতই না মজা হতো !!
একদিন শিশির কণা প্রজাপতিকে বলেঃ ভাই প্রজাপতি, আমার তোমার মতো উড়ে উড়ে অনেক দূরে যেতে ইচ্ছে করে, তুমি আমায় তোমার পিঠে করে দূরে নিয়ে যাবে???
প্রজাপতি বলেঃ এ আর এমন কি?? আমি কাল তোমাকে আমার পাখায় নিয়ে উড়ে বেড়াবো ।
শিশির কণা সারাদিন খুব উত্তেজিত হয়ে থাকে, সে ভাবতে থাকে সে যখন প্রজাপতির পাখায় করে উড়ে বেড়াবে তখন কতো মজা হবে !!! সে আর প্রজাপতি একসাথে উড়ে উড়ে ফুলে বসবে, মধু খাবে,দূরে যাবে, আরও কতো কিছু !!!
পরদিন খুব ভোরে শিশির কণা প্রজাপতির জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। কিন্তু কই প্রজাপতি?? আজ এতো দেরি করছে কেন সে আসতে? অন্যদিন তো কত্ত আগে আসে। শিশির কণার আর দেরি সহ্য হয়না। সে অস্থির হয়ে যায় । পথের দিকে চেয়ে থাকে অধীর আগ্রহে। কিছুক্ষণ পর দেখে প্রজাপতি উড়ে আসছে।
সে অস্থির হয়ে প্রশ্ন করে প্রজাপতিকেঃতুমি এতো দেরি করলে কেন প্রজাপতি?? আমি সেই কখন থেকে তোমার জন্য অপেক্ষা করছি।
প্রজাপতি হাসে, বলেঃ আমি ঠিক সময়ে এসেছি বন্ধু, তুমিই আজ অনেক আগে চলে এসেছ ।
শিশির কণা লজ্জা পায়।
প্রজাপতি শিশির কণাকে তার পাখায় তুলে নেয় আলতো করে। ধীরে ধীরে তারা উপরে উড়তে থাকে। প্রজাপতি শিশির কণাকে নিয়ে এ ফুলে যায়,ও ফুলে যায়।পাখির কাছে যায় ,গাছের উপরে বসে। শিশির কণার তো আনন্দ আর ধরেনা। সে অবাক চোখে সব দেখে। পৃথিবীটা কত্ত সুন্দর!! কত্ত বড় !! আর সে এসবের কিছুই জানতোনা । সে প্রজাপতিকে বলে আমাকে আরও উপরে উড়িয়ে নিয়ে চলো প্রজাপতি ।প্রজাপতি উপরে উড়ে চলে। শিশির কণা মুগ্ধ হতেই থাকে। তার বিস্ময়ের সীমা থাকেনা। সে প্রজাপতিকে বলে আরও উপরে উড়তে ।প্রজাপতি উড়ে চলে। শিশির কণা দেখে আরও কতো প্রজাপতি উড়ে বেড়াচ্ছে ,ছোট বড় ,কত সুন্দর তারা দেখতে। উড়তে উড়তে কখন বেলা উঠে আসে প্রজাপতি, শিশির কণা জানতেই পারেনা। তারা উড়তেই থাকে। এক সময় যখন শিশির কণার গায়ে সূর্যের আঁচ লাগে সে চমকে ওঠে।
প্রজাপতিকে বলেঃ ভাই আমাকে এখনি নিচে নিয়ে চলো ।সূর্য মামা ঘুম থেকে উঠে গেছে, আমাকে এখনি নিচে যেতে হবে। প্রজাপতি দেখে উড়তে উড়তে তারা অনেক উপরে চলে এসেছে। প্রাণপণে সে নিচে নামতে থাকে। শিশির কণা সূর্যের আঁচে ধীরে ধীরে শুকিয়ে যেতে থাকে। একসময় শিশির কণা হারিয়ে যায় ।প্রজাপতি নিচে নেমে দেখে শিশির কণা হারিয়ে গেছে। প্রজাপতি খুব কাঁদে ।খুঁজে বেড়ায় শিশির কণাকে । কিন্তু তাকে কোথাও পায়না। কোথাও না......

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



