জীবনে কখনো কখনো এমন সময় আসে, যখন আমরা বুঝতে পারি, সব কিছু আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। আমার জীবনেও এমন একটা সময় এসেছিল।
একদিন হঠাৎই টের পেলাম, শরীরটা কেমন যেন কাজ করছে না। আমি পড়েও গেলাম। উঠতে পারলাম না। মা ভয় পেয়ে গেলেন, আমাকে নিয়ে গেলেন ডাক্তারের কাছে। বার্টস হাসপাতালের বিছানায় কতদিন কাটালাম! কতরকমের পরীক্ষা হলো। কিন্তু কেউই ঠিকমতো বলতে পারলো না, আমার আসলে কী হয়েছে। কিন্তু আমি নিজেই বুঝতে পেরেছিলাম, ব্যাপারটা মোটেও ভালো নয়। যে ডাক্তার আমার রোগ নির্ণয় করেছিলেন, তিনি নিজেই হাল ছেড়ে দিয়েছিলেন। তাকে আর কোনোদিন দেখিনি।
মনে হলো, আমার জীবনের পথটা কেমন অন্ধকার হয়ে আসছে। আমি বুঝতে পারলাম, ব্যাপারটা খারাপ। যে ডাক্তার আমার রোগ নির্ণয় করেছিল, সে নিজেই হাত ধুয়ে নিলো।আমার অবস্থা যেন খুব দ্রুত খারাপের দিকে যাচ্ছিল। মনে হচ্ছিল, পিএইচডি করার আর কোনো মানে নেই, কারণ আমি জানতাম না আদৌ কতদিন বাঁচবো। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তী হয়েছিলাম কসমোলজি পড়তে আর মহাবিশ্বের রহস্য বোঝার জন্য, । কিন্তু সেই স্বপ্নটাই যেন অধরা হতে চলেছে।
তারপর দেখলাম, আমার অবস্থা একটু একটু করে ভালো হচ্ছে। আর তখনই বুঝলাম, প্রত্যাশাগুলোকে যদি শূন্যে নামিয়ে আনি, তাহলে প্রতিটি নতুন দিন যেন একটা উপহার হয়ে দাঁড়ায়। কাজের দিকে মন দিতে শুরু করলাম আবার। জীবনটাকে নতুন করে অনুভব করতে শুরু করলাম। মনে হলো, ছোট ছোট জিনিসের মাঝেও কত বড় আনন্দ লুকিয়ে আছে!
আর সেই সময়ের মধ্যে, একদিন এক পার্টিতে আমার দেখা হলো জেন নামের এক তরুণীর সাথে। তার হাসিতে যেন একরকমের স্নিগ্ধতা ছিল। তার সাথে কথা বলেই যেন বুঝতে পারলাম, জীবনটা আবারও সুন্দর হতে পারে। আমাদের কথায় কথায় বন্ধুত্ব হলো, আর সেই বন্ধুত্বের হাত ধরেই আমাদের বাগদান হলো। যেন জীবনে নতুন এক আশার আলো পেলাম। বুঝলাম, যতক্ষণ জীবন আছে, ততক্ষণ আশা আছে।
আমরা মানুষ, আমাদের স্বপ্ন অনেক অনেক বড়। আমরা লক্ষ লক্ষ গ্যালাক্সির মানচিত্র আঁকতে চাই, মহাবিশ্বের রহস্য উন্মোচন করতে চাই। কিন্তু এটা তো শুধু বইয়ের পাতা নয়, আমাদের যেতে হবে আরও দূরে, মহাকাশে, গ্রহ থেকে গ্রহান্তরে, মানবতার ভবিষ্যতের জন্য।
আমার মনে হয়, আমাদের এই পৃথিবীর বাইরে যেতে হবে নতুন বসতি গড়তে হবে নাহয় আমরা মানুষ জাতি এই ভঙ্গুর পৃথিবীতে আরো এক হাজার বছর টিকে থাকতে পারবো কিনা জানি না। কিন্তু আমি জানি, যতদিন আমরা কৌতূহলী থাকব, যতদিন আমরা আকাশের দিকে তাকিয়ে সেই তারাদের রহস্য বোঝার চেষ্টা করব, ততদিন আশা বেঁচে থাকবে।
আমাদের মানুষ হিসেবে অর্জন অনেক বড়। আমরা যারা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণার সমষ্টি, আমরা্ এই মহাবিশ্বকে নিয়ন্ত্রণকারী নিয়মগুলোকে কিছুটা বুঝতে পেরেছি—এটা আমাদের জন্য এক বিশাল সাফল্য। আমি যদি তাতে ছোট্ট একটা অবদান রাখতে পারি, তবেই আমি খুশি।
তোমাদের সবার কাছে আমার একটাই শেষ অনুরোধ, তোমরা যেন সবসময় পায়ের নিচে না তাকিয়ে, আকাশের মহাশুন্যের দিকে তাকাও। ভাবো, কেমন করে এই মহাবিশ্বের সৃষ্টি হলো। তোমাদের আশেপাশে যা দেখছো তার মানে খোঁজার চেষ্টা করো। সবসময় কৌতূহলী থাকো।
আর মনে রেখো, যতক্ষণ জীবন আছে, ততক্ষণ আশা আছে।
বাংলায় অনুবাদ: বন্ধু তুহিন।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৭