somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"ধর্ম " -কি ও কেন এবং জীবনের সর্বক্ষেত্রে কি ধর্ম প্রযোজ্য ? এই ব্যাপারে ধর্মের (ইসলামের) দৃষ্টিভংগী বা নির্দেশনা কি ?- (মানব জীবন - ১৩ )।

০২ রা আগস্ট, ২০২১ বিকাল ৪:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ছবি - kalerkantho.com

সাধারণতঃ ধর্ম বলতে বোঝায় কোনো প্রাণী বা বস্তুর বৈশিষ্ট্য। মহাবিশ্বের প্রতিটি প্রাণী এবং বস্তুর স্ব স্ব ধর্ম অর্থাৎ বৈশিষ্ট্য রয়েছে ।ঠিক তদ্রুপ বিশ্বের প্রতিটি মানুষেরও কোন কোন ধর্মমত রয়েছে বা ধর্ম মেনে চলে। মানব সমাজে প্রচলিত ধর্মের ইতিহাস পর্যালোচনায় দেখা যায়, পৃথিবীতে প্রচলিত বিভিন্ন ধর্মমতে ভিন্ন ভিন্ন নিয়ম-নীতি পালনীয় তবে বর্তমান পৃথিবীর সবচেয়ে বড় তিনটি ধর্ম অর্থ্যাৎ ইসলাম, খ্রিস্টান ও ইহুদি ধর্মমতে পৃথিবীর সকল মানুষ একজন পিতা ও একজন মাতা থেকে জন্ম গ্রহণ করেছে। এই দুইজন আদি পিতা আদম (Adam) ও মাতা হাওয়া (Eve) এর মাধ্যমে পৃথিবীর সকল মানুষের জন্ম। এই তিন ধর্মের পবিত্র গ্রন্থ যথাক্রমে কুরআন মাজিদ, বাইবেল ও তাওরাত থেকে এই ঘটনার সুত্র পাওয়া যায়। মানবজাতির সৃষ্টির পর থেকেই মুলত মানুষের মাঝে ধর্মের সুত্রপাত।

ধর্ম কি ?


ছবি - wikipedia.org

মানুষের জীবনে ধর্মকে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসাবে বিবেচনা করা হয় ।ধর্মের সুনির্দিষ্ঠ সংজ্ঞা প্রদানের চেষ্টা সুদীর্ঘকাল থেকেই মানুষের মাঝে চলে আসছে তবে এখন পর্যন্ত মানুষ ধর্মের সর্বজনগ্রাহ্য সংজ্ঞা দিতে সফল হয়নি। সমাজবিজ্ঞানী এমিল দুরক্যাঁ'র সংজ্ঞানুযায়ী, "ধর্ম হচছে পবিত্র বস্তুর সাথে যুক্ত বিশ্বাস এবং অনুশীলনের সামগ্রিক ব্যবস্থা যা বিশ্বাসীদের নিয়ে একটি নৈতিক সম্প্রদায় সৃষ্টি করে"।মানুষের বিশ্বাস,আচার আচরণ,পারস্পরিক সম্পর্ক প্রভৃতিতে রয়েছে ধর্মের প্রভাব।সমাজ ও ব্যক্তিজীবন - এ দুটি ক্ষেত্রেই ধর্মের ভূমিকা লক্ষণীয়।ধর্ম মানুষকে মুক্তি দেয় শংকা ও দুশ্চিন্তা থেকে আর জীবন জগতকে করে তোলে সুন্দর ও আনন্দময়।সমাজের সংহতিতে ধর্মের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাকে অস্বীকার করা যায়না ।তাছাড়া সামজিকীকরণ ও সমাজ নিয়ন্ত্রণের বাহন হিসাবেও ধর্মের রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব।

ধর্ম হলো কিছু সংবিধিবদ্ধ নিয়ম-নীতি ও পালনীয় বিষয়ের এক দিকনির্দেশিকার সমষ্ঠি।যাতে ভাল কাজের আদেশ এবং খারাপ কাজের নিষেধ করার সাথে সাথে ভাল কাজের জন্য দুনিয়া এবং পরকালে পুরষ্কার আর খারাপ কাজের জন্য শাস্তির কথা বলা হয়ে থাকে।অর্থ্যাৎ নিয়ম-নীতি মেনে চলাই ধর্ম ।পৃথিবী, ব্রহ্মাণ্ড (সৌরজগত )যে শৃঙ্খলা রক্ষা করে চলছে, তাও ধর্মেরই অংশ । সুতরাং কোনও মানুষ সেই শৃঙ্খলা ভেঙে বের হয়ে যেতে পারে না এবং সমাজের মানুষের প্রাত্যহিক জীবনে তা সম্ভবও না । কারণ মানুষের জীবনের প্রাত্যহিকতার অংশই ধর্ম। ব্যক্তিগতভাবে মানুষ ধর্ম অনুশীলন করে। মানুষের অধিকার ও স্বাধীনতা আছে যেকোনও ধর্মীয় মতবাদ গ্রহণ , ধর্মগ্রন্থের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন তথা মেনে চলা বা না চলার। এর মধ্য দিয়ে যদি ব্যক্তি মানুষ প্রশান্ত জলাশয়ে(শান্তি)'র দেখা পান, তাহলে অন্যের ক্ষতি কী? মানুষ কোন ধর্মে আস্থা রাখবে সেই বিষয়ে অন্য ব্যক্তির প্রভাব বা জোর করারও কোনও সুযোগ নেই।এ যার যার নিজের সিদ্ধান্ত। আর দুনিয়ায় প্রচলিত সকল ধর্মই সুন্দর।


ছবি - vectorstock.com

পৃথিবীতে প্রচলিত ধর্মের সংখ্যা প্রায় ৪,৩০০টি,প্রধান ধর্ম ১০টি।

১। খ্রিস্টান ধর্ম - ধর্মের অনুসারীদের দিক দিয়ে খ্রিস্টান ধর্ম এবং এর অনুসারী প্রায় ২৪০ কোট। সবচেয়ে বড় ধর্ম।খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীরা বিশ্বাস করে, যিশুখ্রিস্ট ঈশ্বরের পুত্র এবং তিনি মানবজাতির ত্রাণকর্তা।বাইবেল তাদের প্রধান ধর্মগ্রন্থ। বাইবেলের দুটি সংস্করণ রয়েছে—ওল্ড টেস্টামেন্ট ও নিউ টেস্টামেন্ট। খ্রিস্টানদের উপাসনালয়কে চার্চ বা গির্জা বলা হয়।

২। ইসলাম ধর্ম - দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্ম ইসলামের অনুসারীদের মুসলিম বলা হয় এবং এর অনুসারী প্রায় ২০০ কোটি। কোরআন ইসলামের মূল ধর্মগ্রন্থ। ইসলামের মূল স্তম্ভ পাঁচটি—ঈমান, নামাজ, রোজা, হজ ও জাকাত। মুসলমানের উপাসনালয়ের নাম মসজিদ। মক্কা-মদিনা মুসলিমদের পবিত্র তীর্থ। মুসলমানরা বিশ্বাস করে, ইসলাম আল্লাহর মনোনীত চূড়ান্ত ধর্ম, কোরআন সর্বশেষ ধর্মগ্রন্থ এবং মুহাম্মদ (সাঃ) সর্বশেষ নবী।

৩। হিন্দু বা সনাতন ধর্ম - পৃথিবীর তৃতীয় বৃহৎ ধর্ম হিন্দু বা সনাতন ধর্ম এবং এর অনুসারী প্রায় ১৩০ কোটি । বেদ, পুরাণ, উপনিষদ, গীতা হলো এই ধর্মের প্রধান ধর্মগ্রন্থ। মন্দির হিন্দু ধর্মের উপাসনালয়। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের প্রধান অংশ বহু-ঈশ্বরবাদে বিশ্বাসী। তবে তাদের মধ্যে কেউ কেউ একেশ্বরবাদে বিশ্বাস করে। প্রচলিত আছে, হিন্দু ধর্মে দেব-দেবীর সংখ্যা ৩৩ কোটি। হিন্দুদের প্রধান তিনজন দেবতা হলেন ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও শিব।

৪। বৌদ্ধ ধর্ম - পৃথিবীর চতুর্থ বৃহৎ ধর্ম বৌদ্ধ এবং এর অনুসারী প্রায় ৬০ কোটি।ভারতবর্ষের একজন সাধক পুরুষ গৌতম বুদ্ধ এই ধর্মের প্রবর্তক। তাঁর প্রচারিত বিশ্বাস ও জীবনদর্শনই বৌদ্ধ ধর্মের ভিত্তি। এই ধর্মের উপাসনালয় মঠ নামে পরিচিত আর প্রধান ধর্মগ্রন্থ ত্রিপিটক। পৃথিবীর সবচেয়ে বেশিসংখ্যক বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী মানুষের বসবাস চীনে।

৫। হান ধর্ম - জনসংখ্যায় পৃথিবীর সবচেয়ে বড় দেশ চীনের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় সম্প্রদায় হলো হানজু বা হান সম্প্রদায়। তারা চীনা লোকধর্ম বা হান ধর্মে বিশ্বাসী এবং এর অনুসারী প্রায় ৪০ কোটি । এই ধর্মকে অনেকে হান জাতি-গোষ্ঠীর ঐতিহ্যের পরিবর্তিত সংস্করণ বলে থাকে।

৬। শিখ ধর্ম - শিখ ধর্মের অবস্থান ষষ্ঠ এবং এর অনুসারী প্রায় ৩ কোটি।একেশ্বরবাদে বিশ্বাসী এই ধর্মানুসারীদের নেতাকে বলা হয় গুরু। শিখ শব্দটির অর্থই শিষ্য। শিখরা বিশ্বাস করে, পৃথিবীতে প্রচলিত কোনো ধর্মই পরম সত্য নয়, কিংবা কোনো ধর্মই পূর্ণাঙ্গ মিথ্যা নয়।

৭। ইহুদি ধর্ম - অনুসারীর সংখ্যা বিবেচনায় বিশ্বের সপ্তম বৃহৎ ধর্ম ইহুদি এবং এর অনুসারী প্রায় ২ কোটি ।এই ধর্মের অনুসারীর বেশির ভাগই ইসরায়েলে বসবাস করে।এই ধর্মের ইতিহাস তিন হাজার বছরেরও পুরনো। ব্রোঞ্জ যুগে মধ্যপ্রাচ্যে এই ধর্মের আবির্ভাব হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়। তাদের ধর্মগ্রন্থ তাওরাত, যাকে হিব্রু বাইবেল ও তানাখও বলা হয়।

৮। বাহাই ধর্ম - বাহাই ধর্মাবলম্বীরা পৃথিবীর অষ্টম বৃহৎ ধর্মীয় জনগোষ্ঠী এবং এর অনুসারী প্রায় ৭০ লাখের মত । ঊনবিংশ শতাব্দীতে মির্জা হুসাইন আলী তথা বাহাউল্লাহ তৎকালীন পারস্যে (বর্তমান ইরান) এই ধর্মের প্রচার করেন। অনেকেই একে ধর্ম না বলে একটি বিশেষ বিশ্বাস হিসেবেও উল্লেখ করেন। ‘কিতাবুল আকদাস’ এই ধর্মের পবিত্র গ্রন্থ। মানবজাতির ঐক্য ও মেলবন্ধনই এই ধর্মের মূল লক্ষ্য।

৯। জৈন ধর্ম - জৈন ধর্মের মূল বিশ্বাস হলো, পৃথিবীতে ২৪ জন ‘তীর্থঙ্কর’ বা বিজয়ী মহাপুরুষের আগমন ঘটেছিল, যাঁরা নিজ নিজ সময়ে মানবজাতির ত্রাণকর্তা ও শিক্ষক ছিলেন। এই ২৪ জনের মধ্যে সর্বপ্রথম পৃথিবীতে এসেছিলেন ঋষভ, যাঁর আগমন ঘটেছিল লাখ লাখ বছর আগে। সর্বশেষ ২৪তম তীর্থঙ্কর মহাবীরের আগমন ঘটে খ্রিস্টীয় পঞ্চম শতকে। এটি একটি ভারতীয় ধর্ম। অহিংসা ও আত্মসংযমের মাধ্যমে জন্ম-মৃত্যু-জন্মের চক্র থেকে মোক্ষ তথা মুক্তিলাভই জৈন ধর্মের মূল সাধনা এবং এর অনুসারী প্রায় ৪০ লাখের মত যাদের বেশীরভাগের বসবাস ভারতে।

১০। শিন্তো ধর্ম - জাপানের স্থানীয় এবং অনানুষ্ঠানিক একটি রাষ্ট্রীয় ধর্ম শিন্তো এবং এর অনুসারী প্রায় ৪০ লাখের মত।এটা এমন একটি ধর্ম, যার কোনো ঈশ্বর নেই, প্রচারক নেই, ধর্মগ্রন্থ নেই, পরকাল নেই, নেই কোনো বিধিবদ্ধ রীতিনীতি। শিন্তো ধর্মের মূলকথা হলো, সৃষ্টিকর্তা বলতে কেউ নেই, তবে কিছু স্বাধীন আত্মা বা স্বর্গীয় সত্তা আছেন, যাঁদের নাম ‘কামি’। এই কামিরা পৃথিবীর মানুষের কল্যাণকামী। যেকোনো ধর্মের মানুষই শিন্তো মন্দিরে যাতায়াতের অধিকার রাখে।


ছবি - religiousrecovery.org

ধর্ম বিশ্বাস প্রত্যেক মানুষের ব্যক্তিগত বিষয় এবং ধর্ম মানার ব্যাপারে কাউকে জোর করা পৃথিবীতে প্রচলিত কোন ধর্মেই স্বীকৃত নয়। তাই ধর্মের ব্যাপারে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো পরধর্ম-সহিষ্ণুতা ৷অর্থাৎ প্রত্যেকের নিজের যে ধর্মের প্রতিই বিশ্বাস অথবা অবিশ্বাস থাকুক না কেন, অন্যের ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া চাই,থাকা চাই অর্থাৎ মানুষে মানুষে শান্তি বজায় রাখা ৷ইসলাম শব্দের অর্থও কিন্তু শান্তি ৷তাই আপনি-আমি হিন্দু, মুসলিম, খ্রিষ্টান অথবা নাস্তিক,যে যা-ই হই না কেন, অন্যের ধর্মে আঘাত করা বা অন্যের ব্যক্তিস্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা এর কোনোটাই একটি আধুনিক, গণতান্ত্রিক সমাজে যেমন কাম্য নয় ঠিক তেমনি কোন ধর্মেও তা সমর্থন করেনা।আর পৃথিবীতে নাস্তিক (যারা কোন ধর্মে বিশ্বাস করেনা) জনসংখ্যাও কম নয় । তারাও পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার প্রায় ৩ শতাংশ ।

পৃথিবীতে মোট ২০৬টি রাষ্ট্রের প্রত্যেকটি যেমন চলে প্রত্যেকের বা নিজ নিজ রাষ্ট্রের তৈরী সংবিধান বা নিয়ম কানুন ও স্থানীয় সংস্কৃতি কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত-প্রণীত নিয়ম-নীতি দ্বারা এবং রাষ্ট্রের নাগরিক মাত্রই সেই সব আইন-কানুন,নিয়ম-নীতি মেনে চলার বাধ্যবাধকতা যেমন থাকে ঠিক তেমনি প্রত্যেকটি ধর্মের অনুসারীদের বাধ্যবাধকতা রয়েছে ধর্মের বিধিনিষেধ তথা আইন কানুন মেনে চলার।এক্ষেত্রে কিছুটা মানা বা কিছুটা ছেড়ে দেয়ার অবকাশ নেই যদি সে প্রকৃতই ধর্মের অনুসারী হয়।

এখন এখানে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসে,যেহেতু ধর্ম মেনে চলার বাধ্যবাধকতা রয়েছে তাহলে কি ধর্ম স্পর্শকাতর বিষয় এবং তা যদি হয় তাহলে ধর্মকে স্পর্শকাতরের কাতারে নিয়ে গেলো কে?

এর জবাবে বলা যায় - মানুষের লোভ,শাসকদের ব্যক্তিগত স্বার্থ এবং রাজনীতি।যখন থেকে ধর্মের মাঝে মানুষের লোভ, শাসকদের ব্যক্তিগত স্বার্থ এবং রাজনীতি প্রবেশ করেছে তখন থেকেই ধর্ম স্পর্শকাতর বিষয়ে পরিণত হয়েছে। আমরা যদি পৃথিবীর (প্রাচীন গ্রিস, রোমান সাম্রাজ্য, প্রাচীন চীন ও ভারতের) ইতিহাস পর্যালোচনা করি তাহলে দেখতে পাবো, রাজা-বাদশাহরা, ক্ষমতাসীনরা তাদের ক্ষমতা দখলের হাতিয়ার হিসেবে এবং স্বার্থে তুলে নিয়েছিলেন ধর্মকে।স্বার্থ এবং রাজনীতির এই ব্যবহারই রাষ্ট্র পর্যায় থেকে একদম পরিবার পর্যন্ত ধর্মকে স্পর্শকাতরের কাতারে পৌঁছে দেয় এবং দিয়েছে। অসাম্প্রদায়িক সহজ সরল মানুষ এই স্বার্থ এবং রাজনীতির প্রভাবেই হয়ে উঠে হয়ে ওঠে সাম্প্রদায়িক এবং অসহিষ্ণু।অথচ মানুষের মানবতা-মানবিকতার প্রতি আস্থাই পরম ধর্ম হওয়ার কথা ছিল ৷

ধর্ম সম্পর্কে ইসলাম কি বলে -


ছবি - islamreligion.com

ইসলামী ধর্ম গ্রন্থানুযায়ী (আল কোরআন) এটি আল্লাহর নিকট একমাত্র গ্রহণযোগ্য পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা। ইসলাম সর্বজনীন ধর্ম। ইসলাম শুধুমাত্র মক্কা-মদিনা বা আরব দেশগুলোর জন্য নয় বরং ইসলাম পৃথিবীর সকল বর্ণ, গোত্র, জাতি এবং ধনী-গরীব, সাদা-কালো ও আরব-অনারব সকল মানুষের জন্যই প্রেরিত।ইসলামের বিশ্বাস অনুযায়ী ইসলাম কোন নতুন ধর্ম নয়, বরং সৃষ্টির শুরু থেকেই ইসলামের উৎপত্তি। আদম (আঃ) ছিলেন এই পৃথিবীর প্রথম মানব এবং ইসলামের প্রথম নবী। আর শেষ নবি হলেন হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)।হিন্দু ধর্মের গবেষকদের দাবিমতে, তাদের ঋগ্বেদ ধর্মগ্রন্থ সবচেয়ে বেশি প্রাচীন, যার বয়স সাড়ে তিন হাজার বছর। সুতরাং, তাদের ধর্মই পৃথিবীতে প্রথম ও প্রাচীন। আর সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, মানবসভ্যতার বয়স ১ লাখ ৯৬ হাজার বছর। আর এ সভ্যতার প্রথম কারিগর আদম (আঃ) আর তিনি ছিলেন মুসলিম। এ মুসলিমের হাত ধরেই পৃথিবীতে সভ্যতা নির্মাণ শুরু হয় অতঃপর কালক্রমিক বিবর্তনের মধ্য দিয়ে সে সভ্যতা আজ একবিংশ শতাব্দীতে মহিরুহ আকার লাভ করেছে। সুতরাং ইসলামই হচ্ছে প্রাচীন ধর্ম। এ ধর্ম প্রচলিত অন্যান্য ধর্মের মতো কতিপয় আচারসর্বস্ব ধর্ম নয়। এটির আচার, বিধান, সব হুকুম এমনকি অভিবাদন প্রক্রিয়াটিও আল্লাহর শেখানো।

ইসলাম মানুষের চলার পথের সন্ধানদাতা, উন্নত, সুখী ও সমৃদ্ধশালী জীবন এবং আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের সন্তুষ্টি অর্জন তথা মানবজীবনের চরম লক্ষ্য হাসিলের একমাত্র পন্থা। এর ব্যাপ্তি জীবনের সর্বক্ষেত্রে। ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক জীবনের সব ক্ষেত্রেই ইসলামের নিয়ন্ত্রণাধীকার বা সীমারেখা। ইসলাম মানুষের সঠিক পথের দিশারী, দুনিয়া ও আখেরাতের সর্বাঙ্গীন ও পূর্ণাঙ্গ একমাত্র জীবন ব্যবস্থা।এ প্রসংগে আল্লাহপাক আল কুরআনে কারিমে বলেন,"নিশ্চয় ইসলামই আল্লাহর নিকট একমাত্র দ্বীন। আর যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছিল তারা কেবলমাত্র পরস্পর বিদ্বেষবশতঃ তাদের নিকট জ্ঞান আসার মতানৈক্য ঘটিয়েছিল। আর কেউ আল্লাহ্‌র আয়াতসমূহে কুফরী করে, তবে নিশ্চয় আল্লাহ্‌ দ্রুত হিসাব গ্রহনকারী"। (সুরা আল-ইমরান,আয়াত - ১৯)।

এ প্রসংগে আল্লাহপাক আরো বলেন,"তোমাদের জন্যে হারাম করা হয়েছে মৃত জীব, রক্ত, শুকরের মাংস, যেসব জন্তু আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে উৎসর্গকৃত হয়, যা কন্ঠরোধে মারা যায়, যা আঘাত লেগে মারা যায়, যা উচ্চ স্থান থেকে পতনের ফলে মারা যা, যা শিং এর আঘাতে মারা যায় এবং যাকে হিংস্র জন্তু ভক্ষণ করেছে, কিন্তু যাকে তোমরা যবেহ করেছ। যে জন্তু যজ্ঞবেদীতে যবেহ করা হয় এবং যা ভাগ্য নির্ধারক শর দ্বারা বন্টন করা হয়। এসব গোনাহর কাজ। আজ কাফেররা তোমাদের দ্বীন থেকে নিরাশ হয়ে গেছে। অতএব তাদেরকে ভয় করো না বরং আমাকে ভয় কর। আজ আমি তোমাদের জন্যে তোমাদের দ্বীনকে পূর্নাঙ্গ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার অবদান সম্পূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্যে দ্বীন হিসেবে পছন্দ করলাম। অতএব যে ব্যাক্তি তীব্র ক্ষুধায় কাতর হয়ে পড়ে,কিন্তু কোন গোনাহর প্রতি প্রবণতা না থাকে, তবে নিশ্চয়ই আল্লাহ তা'আলা ক্ষমাশীল।(সুরা মায়েদা,আয়াত - ৩)।

কুরআনের এ আয়াত থেকে এ বিষয়টি সুস্পষ্ট যে, আল্লাহ তাআলা ইসলামকে মানবতার জন্য নেয়ামত হিসেবে পাঠিয়েছেন, যাতে রয়েছে মানুষের জীবনের সব সমস্যার সমাধান।

এখানে মানুষের-আমাদের মনে প্রশ্ন আসতে পারে যে না দেখা আল্লাহতে বিশ্বাস করে ইসলাম গ্রহণ করলে আমাদের কী লাভ?


ছবি - shadow.com.bd

প্রকৃত পক্ষে কেউ যদি ইসলাম গ্রহণ করার সৌভাগ্য লাভ করে তবে সে মূলত নিজেকেই অনুগ্রহীত করে। প্রসংগে আল্লাহপাক পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেছেন,"তারা ইসলাম গ্রহণের মাধ্যমে (মুসলমান হয়ে) আপনাকে ধন্য করেছে মনে করে। (হে রাসুল! আপনি) বলুন, তোমরা মুসলমান হয়ে আমাকে ধন্য করেছ মনে করো না। বরং আল্লাহ ঈমানের পথে পরিচালিত করে তোমাদের ধন্য করেছেন, যদি তোমরা সত্যনিষ্ঠ হয়ে থাক "। (সুরা হুজাত , আয়াত - ১৭)।

ধর্ম যারা অনুশীলন করেন তারা অত্যন্ত ভদ্র, বিনয়ী আর কালচারড হয়ে থাকেন। তাই ধার্মিকরা একে অপরের সাক্ষাতের সময় নিজ ধর্মবিশ্বাস অনুযায়ী বিভিন্ন বিশুদ্ধ শব্দ ও ভাষা ব্যবহার করে অভিবাদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে থাকেন। মুসলিমরাও তার বাইরে নয়।তারা তাদের রব ও নবী (সাঃ) এর শেখানো সুস্পষ্ট ও বিশুদ্ধ রীতি অনুযায়ী তাদের অভিবাদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে থাকেন। যেমন কোরআনে উল্লেখ আছে,"যেদিন তারা আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করবে, সেদিন তাদের প্রতি অভিবাদন হবে সালাম (শান্তি)। আর তিনি তাদের জন্য সম্মানজনক প্রতিদান প্রস্তুত রেখেছেন"। (সুরা আহজাব,আয়াত - ৪৪)। এ ছাড়া আরো বলা হয়েছে,"জান্নাতে পরম দয়ালু আল্লাহর পক্ষ থেকে তাদের বলা হবে সালাম "। (সুরা ইয়াসিন,আয়াত - ৫৮)। এ সালামের অর্থ হল সুস্বাগতম, ওয়েলকাম, তোমাদের আগমন শুভ হোক, তোমরা সুখী থাক ইত্যাদি কামনা করা। হিন্দু ও খ্রিস্টান ধর্মবিশ্বাসীরাও তাদের নিজ ধর্ম বিশ্বাস অনুযায়ী নমস্কার, গুড মর্নিং ইত্যাদি বিশুদ্ধ শব্দ ব্যবহার করে তাদের অভিবাদন প্রক্রিয়া প্রকাশ করে থাকেন।

ইসলামের অনুসারীদের জীবনের সর্বক্ষেত্রে কি ধর্ম (ইসলাম) প্রযোজ্য -

ধর্ম সম্পর্কে অনুসন্ধানে নামলে এর পেছনে কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বেরিয়ে আসবে। পৃথিবীর সব ধর্মই তার নিজ নিজ বিধানমতে চলতে বললেও কিছু কিছু মানুষ যুগ যুগ ধরে ধর্মের বিধানমতে না চলে ধর্মকে নিজের স্বার্থে ও মতে ব্যবহার করেছে।ঠিক এ অবস্থায় পৃথিবীতে তিন শ্রেণির মানুষ গড়ে উড়েছে। আর তারা হল -

১। ধর্মপালনে সর্বোচ্চ চেষ্টাকারী আস্তিক।
২। ধর্মবিহীন আস্তিক ।
৩। ধর্মহীন নাস্তিক। আর গোটা পৃথিবীতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা ক্ষুদ্রসংখ্যক (প্রায় ৩ শতাংশ ) নাস্তিক ধর্ম মানেন না বলে ঘোষণা দিলেও তারা মানবতাবাদের কথা বলেন। অথচ এ মানবতাবাদটা মূলত ধর্মেরই কথা।


ধর্মবিহীন আস্তিক আর ধর্মহীন নাস্তিকদের প্র্যাকটিকাল জীবনদর্শন অনেকটা কাছাকাছি। এ দুই শ্রেণির মানুষের পরিবারে, সামাজিক আচার-আচরণে, সাহিত্যে, সংস্কৃতিতে, অর্থনীতি ও রাজনৈতিক দর্শনে প্রায় একই সুর প্রতিধ্বনিত হতে দেখা যায়। নাস্তিকতার স্লোগান যেহেতু ধর্মীয় সমাজে অচল, তাই তারা ধর্মবিহীন প্রভাবশালী ও ক্ষমতাধর আস্তিকদের সহায়ক ও নেয়ামক শক্তি হিসেবে কাজ করে থাকে।আর তারাই হীন স্বার্থ উদ্ধারে নিজ নিজ আদর্শ মাটিচাপা দিয়ে ক্ষমতাসীনদের পদলেহন, চামচামি আর নির্লজ্জ দলবাজিতে লিপ্ত হয়ে পড়েন।এদের নিজেদের কোনো ধর্ম,কালচার বা সংস্কৃতি নেই।এরা নিজেদের স্বার্থে এবং প্রয়োজনে যখন তখন দল-মত পরিবর্তন করেন এবং ধর্মকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহারের সর্বোচ্চ চেষ্টা করেন । আর এর ফলেই সমাজে ধর্মের নামে সবচেয়ে বেশী বিশৃংখলা তৈরী হয়।


ছবি - britannica.co

বর্তমানে এবং আধুনিক মনস্ক মানুষের মুখে প্রায়ই যে কথাটি প্রায়ই শোনা যায় তা হলো , "জীবনের সব জায়গায় ইসলামকে টেনে আনেন কেন "? কয়েক ধরনের মানুষ এ ধরনের প্রশ্ন তোলেন। তারা হলেন -

১। অমুসলিম (ইসলাম ছাড়া অন্য ধর্মে বিশ্বাসী)।
২। নাস্তিক (ধর্মে যারা বিশ্বাসী না)।
৩। শুধু নামে বা জন্মগতভাবে মুসলিম (যারা ধর্ম-কর্মের ধার ধারে না)।
৪। ছদ্মবেশী মুসলিম (সুবিধা বুঝে ইসলাম পালন, নয়তো গোপনে বিরোধিতা)।
৫। ইসলাম বিদ্বেষী।


ইসলাম হচ্ছে আত্মসমর্পণ করা এবং বাধ্যতা, অস্বীকৃতি ও হটকারিতা ত্যাগ করা।এখানে আত্মসমর্পণ করার অর্থ হচ্ছে, এক আল্লাহর কাছে নিজেকে সমর্পণ করা।সব কিছুই সাবেক হবে একমাত্র আল্লাহ থাকবে এবং যা কিছুই হবে সবই আল্লাহর জন্য এই বিশ্বাস দৃঢ়ভাবে অন্তরে ধারণ করতে হবে এবং বাধ্যবাধকতা হচ্ছে আল্লাহ পবিত্র কোরআনে যে পদ্ধতিতে জীবন যাপন করতে বলেছেন সেই সীমানার মধ্যে থেকে জীবন যাপন করা। পাঁচটি মৌলিক বিষয়ের ওপর ইসলাম ধর্মের ভিত্তি স্থাপিত। তার মধ্যে সর্বপ্রধান হচ্ছে ঈমান। মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে ও তাঁর রাসুল (সাঃ) হাদিসের মাধ্যমে যা কিছু মানবজাতির জন্য প্রেরণ করেছেন তা মনে প্রাণে বিশ্বাস করা এবং মৌখিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়াকে ঈমান বলে। আরবীতে ঈমান শব্দের অর্থ বিশ্বাস। আল্লাহ পবিত্র কোরআনে সুরা নিসার ৮০ নম্বর আয়াতে বলেছেন,"যে লোক রসুলের হুকুম মান্য করবে সে আল্লাহরই হুকুম মান্য করলো। আর যে লোক বিমুখতা অবলম্বন করলো, আমি আপনাকে (হে মুহাম্মদ), তাদের জন্য রক্ষণাবেক্ষণকারী নিযুক্ত করে পাঠাইনি"।যারা আল কোরআন ও হাদিসের নির্দেশমত চলবে তাদের প্রতিদান হিসেবে দেওয়া হবে জান্নাতের সুউচ্চ স্থান, যেহেতু তারা ছিল ধৈর্যশীল। তাদের সেখানে অভ্যর্থনা জানানো হবে অভিবাদন ও সালাম সম্ভাষণসহকারে,সেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে। আর যারা ঈমান এনেছে তাদের তা মেনে চলার জন্য বাধ্যকতাও রয়েছে।কোরআন মজিদে বলা হয়েছে,"হে ঈমানদার গন! তোমরা পরিপূর্ণভাবে ইসলামের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাও এবং শয়তানের পদাংক অনুসরণ কর না। নিশ্চিত রূপে সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু"। (সুরা বাকারা, আয়াত - ২০৮)

যে কোনো নীতি-নির্ধারণী বিষয়ে তর্কে জড়ানোর আগে নিজের পরিচয় এবং অনুসরণীয় মূলনীতি নির্ণয় করা জরুরি। আমি-আপনি কে এবং আপনি-আমি কী চাই এটা শুরুতে নির্ধারণ করা গেলে যুক্তির আলোকে কথা বলা সহজ।সব জায়গায় ইসলাম টেনে আনেন কেন বা জীবনের সর্বক্ষেত্রে ইসলাম কেন দরকার? এ প্রশ্নের সহজ-সরল জবাব হলো, প্রথমে " সব জায়গা " কথাটির পরিধি নির্ধারণ করতে হবে। আমি আপনি বা আপনার আমার জীবন কি "সব জায়গা"র ভেতরে আছে ? যদি না থাকে, তাহলে এ প্রশ্ন করার অধিকার আপনার-আমার নেই।আর হ্যাঁ, একজন মুসলমান, যিনি আমৃত্যু আল্লাহর আনুগত্য পালনে অঙ্গীকারবদ্ধ, তার সব জায়গায় ইসলাম থাকবে - এটিই স্বাভাবিক। ইসলামের বিধান কোনো অমুসলিমের জন্য নয়। ইসলামের বিধান কোনো নাস্তিকের জন্য নয়। ইসলামের বিধান কোনো নামধারী মুসলিমের জন্য নয়। ইসলামের বিধান কোনো ছদ্মবেশী কিংবা ইসলামবিদ্বেষীর জন্য নয়। যে ইসলাম মানে না, তার জন্য ও ইসলাম নয়।

ইসলামের বিধান শুধু ওই ব্যক্তির জন্য, যে আল্লাহকে রব হিসেবে ও মুহাম্মদ (সাঃ) কে নবী ও রাসুল হিসেবে মেনে নিয়েছে। আমৃত্যু আল্লাহর ইবাদত করার অঙ্গীকার করেছে। শয়নে-স্বপনে, গোপনে-প্রকাশ্যে, আলোকে-আঁধারে, ছোট থেকে বৃহৎ সব কাজে যে আল্লাহকে স্মরণ করে, ইসলাম তার জন্য। যে নিজেকে আল্লাহর কাছে সঁপে দিয়েছে, ইসলাম তার জন্য। যে দুনিয়ার জীবন থেকে পরকালের জীবনকে প্রাধান্য দেয়, ইসলাম তার জন্য।ইসলাম ওই ব্যক্তির জন্য, যে দ্ব্যর্থহীনভাবে এই ঘোষণা দেয় যে, "বলুন, নিশ্চয়ই আমার নামায, আমার উপাসনা (কুরবানী), আমার জীবন ও আমার মরণ, বিশ্ব-জগতের প্রতিপালক আল্লাহরই জন্য"। (সুরা আনআম, আয়াত -১৬২)।

তাই প্রত্যেক মুসলমানের করণীয় হলো, যে কাজই সে করুক না কেন, তা কোরআন-সুন্নাহর সঙ্গে মিলিয়ে দেখা এবং সে অনুসারে করা। সুতরাং "সব জায়গায় ইসলাম টেনে আনেন কেন"? এ প্রশ্ন সঠিক নয়।


ছবি - ncronline.org

আসলে ইসলামকে টেনে আনার কিছু নেই, বরং ইসলাম সব ক্ষেত্রে স্বমহিমায় উপস্থিত। ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ ধর্ম। সব কিছুতে ইসলাম - এ কথার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হলো ইসলামে সব কিছু আছে।এ প্রসংগে আল কোরআনে বলা হয়েছে, "সেদিন প্রত্যেক উম্মতের মধ্যে আমি একজন বর্ণনাকারী দাঁড় করাব তাদের বিপক্ষে তাদের মধ্য থেকেই এবং তাদের বিষয়ে আপনাকে সাক্ষী স্বরূপ উপস্থাপন করব। আমি আপনার প্রতি গ্রন্থ নাযিল করেছি যেটি এমন যে তা প্রত্যেক বস্তুর সুস্পষ্ট বর্ণনা, হেদায়েত, রহমত এবং মুসলমানদের জন্যে সুসংবাদ"। (সুরা নাহল, আয়াত - ৮৯)।

ইসলাম আরবি শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ অনুগত হওয়া, আনুগত্য করা, আত্মসমর্পণ করা। আল্লাহর কাছে সর্বতোভাবে আত্মসমর্পণকারীকে মুসলিম বা মুসলমান বলা হয়। ইসলামের বাণী সবার জন্য অবারিত হলেও ইসলামের বিধান মুসলমানদের জন্যই প্রযোজ্য। একজন মুসলমানকে দোলনা (জন্ম) থেকে কবর পর্যন্ত জীবনের সব ক্ষেত্রে ইসলাম মোতাবেক জীবন যাপন করতে হয় এবং
মুসলমান মাত্রই এ কথা বিশ্বাস করতে হবে। এ প্রসংগে আল কোরআনে বলা হয়েছে,"নিশ্চয় ইসলাম আল্লাহর নিকট (একমাত্র মনোনীত) ধর্ম। যাদেরকে কিতাব দেওয়া হয়েছিল তারা পরস্পর বিদ্বেষবশতঃ তাদের নিকট জ্ঞান আসার পরও তাদের মধ্যে মতানৈক্য ঘটিয়েছিল! আর যে আল্লাহর নিদর্শনসমূহকে অস্বীকার করে (সে জেনে রাখুক যে), নিশ্চয় আল্লাহ সত্বর হিসাব গ্রহণকারী"। (সুরা আলে ইমরান, আয়াত - ১৯)।


ইসলাম একমাত্র ও সর্বোত্তম জীবনব্যবস্থা। একজন মুসলমান ঘুম থেকে উঠা নিয়ে আবার ঘুমাতে যাওয়া পর্যন্ত ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক জীবনে যা কিছু করা দরকার বা করে সে সব কিছুর ওপর ইসলামের বিধান আরোপিত। ইসলামের রীতি-নীতিতে আংশিক ধারণ করা এবং বিশেষ ক্ষেত্রে কিছু পালনীয় রীতি-নীতি বর্জন করার সুযোগ ইসলামে নেই। এ প্রসংগে আল কোরআনে বলা হয়েছে, "হে মুমিনগণ! তোমরা পুর্ণাঙ্গভাবে ইসলামে প্রবেশ কর এবং শয়তানের পদাঙ্কসমূহ অনুসরণ করো না। নিশ্চয়ই সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু"। (সুরা বাকারা, আয়াত - ২০৮) ।

মুসলমান হতে হলে এ কথায় বিশ্বাসী হতে হয় যে,আল্লাহ তাআলা সৃষ্টিজগতের স্রষ্টা, মালিক, প্রতিপালক ও একচ্ছত্র কর্তৃত্বের অধিকারী। সুতরাং তাঁর বান্দাদের জীবনযাত্রার নিয়ম-কানুন নির্ধারণের নিরঙ্কুশ ক্ষমতাও তাঁর। আর এ বিষয়ে পবিত্র কোরআনে এসেছে,"আপনি কি জানেন না যে, আসমান ও যমীনের সার্বভৌমত্ব একমাত্র আল্লাহর? আর আল্লাহ ছাড়া তোমাদের কোন অভিভাবকও নেই, নেই সাহায্যকারীও"।(সুরা বাকারা, আয়াত - ১০৭)।


ছবি - mybangla24.com

কোনো মুসলমানের জন্য ইসলামকে কাটছাঁট করা ,কিছু মানা-কিছু ছেড়ে দেয়া কিংবা এর সহজায়ন করা সম্ভব নয়। এ প্রসংগে আল কোরআনে বলা হয়েছে,"তারপর তোমরাই তারা, যারা নিজদেরকে হত্যা করছ এবং তোমাদের একদলকে তাদের দেশ থেকে বহিস্কার করছ। তোমরা একে অন্যের সহযোগিতা করছ তাদের উপর অন্যায় ও সীমালঙ্ঘন দ্বারা। আর তারা যখন বন্দীরূপে তোমাদের কাছে উপস্থিত হয় তখন তোমরা মুক্তিপণ দাও অথচ তাদেরকে বহিষ্কার করাই তোমাদের উপর হারাম ছিল। তবে কি তোমরা কিতাবের কিছু অংশে ঈমান আন এবং কিছু অংশে কুফরী কর? তাহলে তোমাদের যারা এরূপ করে তাদের একমাত্র প্রতিফল দুনিয়ার জীবনে লাঞ্ছনা ও অপমান এবং কেয়ামতের দিন তাদেরকে ফিরিয়ে নেয়া হবে কঠিনতম শাস্তির দিকে।আর তারা যা করে আল্লাহ সে সম্পর্কে গাফিল নন "।(সুরা বাকারা, আয়াত - ৮৫)

ইসলামে কোনো রিজার্ভেশন বা সংরক্ষণ নেই। এতটুকু আমার, এতটুকু আপনার (আমি এ বিষয় মানব বা ঐ বিষয়ে আমি মানিনা বা একমত না ) এরকম কোন নিয়ম - বিভাজন ইসলামে নেই। এতটুকু আরব দেশের, এতটুকু আমার দেশের এই পার্থক্য ইসলাম করে না।এই বিষয় ব্যক্তির,ঐ বিষয় সমাজের বা এতটুকু রাষ্ট্রের, এতটুকু ধর্মের এই সব বিভাজন বা দূরত্বও ইসলাম মেনে নেয় না। এতটুকু রাজনৈতিক সুবিধার, এতটুকু অসুবিধার এই ধরনের আপসকামিতাও ইসলাম সমর্থন করে না।প্রকৃত মুসলিম হলে জীবনের সর্বক্ষেত্রে এবং সবজায়গায় ইসলাম তথা তার আদেশ-নিষেধ এবং করণীয় বিষয় মেনে চলার-করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। মাঝামাঝি বলে কোন বিষয় ইসলামে নেই।

অন্য ধর্মের বিষয়ে ইসলামের নির্দেশনা


ছবি - dreamstime.com

ইসলামে ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ির কোন বিষয় নেই।ইসলামের মূল উৎস কোরআনে কারিম এবং হাদিসে পরধর্মের মানুষকে আপনের চেয়েও বেশি শ্রদ্ধা ও সম্মান করার কথা বলেছে। এ প্রসংগে নবী হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন, "যারা মানুষকে সাম্প্রদায়িকতার দিকে ডাকে, সাম্প্রদায়িকতার জন্য যুদ্ধ করে, সংগ্রাম করে এবং জীবন উৎসর্গ করে তারা আমাদের দলভুক্ত নয়"। (সুনানে আবু দাউদ,হাদীস নং - ৫১২৩)।

সাম্প্রদায়িকতার ব্যাপারে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়েছে পবিত্র কোরআনে।এ প্রসংগে আল্লাহতায়ালা বলেন, "দ্বীনের (ধর্মের) ব্যাপারে কোন জবরদস্তি বা বাধ্যবাধকতা নেই। নিঃসন্দেহে হেদায়াত গোমরাহী থেকে পৃথক হয়ে গেছে। এখন যারা গোমরাহকারী `তাগুত'দেরকে মানবে না এবং আল্লাহতে বিশ্বাস স্থাপন করবে, সে ধারণ করে নিয়েছে সুদৃঢ় হাতল যা ভাংবার নয়। আর আল্লাহ সবই শুনেন এবং জানেন"।(সূরা বাকারা,আয়াত - ২৫৬)। এ প্রসংগে আরো বলা হয়েছে,"বলুন, হে কাফেরগণ, আমি এবাদত করিনা, তোমরা যার এবাদত কর। এবং তোমরাও তার এবাদতকারী নও, যার এবাদত আমি করি এবং আমি তার এবাদতকারী নই, যার এবাদত তোমরা করে আসছ। তোমরা তার এবাদতকারী হবেনা, যার এবাদত আমি করি। তোমাদের দ্বীন (ধর্ম ) তোমাদের জন্যে এবং আমার দ্বীন (ধর্ম) আমার জন্যে"।(সূরা কাফিরুন,আয়াত -১ - ৬)।


ছবি - asianews.it

ধর্ম পালন করতে গিয়ে কেউ কোনোরূপ সীমা লঙ্ঘন কিংবা বাড়াবাড়ি করবে না।অন্য কেউ যদি ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করেও ফেলে তবে ভুলেও যেন কোনো ইমানদার এ ধরনের হীন ও জঘন্য কাজের সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত না করে। এ বিষয়টিই নসিহতস্বরূপ মুমিনদের উদ্দেশে আল্লাহতায়ালা বলছেন,"আর আল্লাহকে ছেড়ে যাদেরকে তারা ডাকে তাদেরকে তোমরা গালি দিও না।কেননা তারা সীমলংঘন করে অজ্ঞানতাবশতঃ আল্লাহকেও গালি দেবে।এভাবে আমরা প্রত্যেক জাতির দৃষ্টিতে তাদের কার্যকলাপ শোভিত করেছি,তারপর তাদের রব-এর কাছেই তাদের প্রত্যাবর্তন।এরপর তিনি তাদেরকে তাদের করা কাজগুলো সম্বন্ধে জানিয়ে দেবেন"।(সূরা আনআম,আয়াত - ১০৮)।


ছবি - i-c-d.de

প্রকৃত মুসলমান কখনোই ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের অনুভূতিতে আঘাত আসে এমন কোনো কাজ করতে পারে না ।এ প্রসংগে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন,"কোনো মুসলমান যদি ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের অধিকার ক্ষুন্ন করে কিংবা তাদের ওপর জুলুম করে, তবে কেয়ামতের দিন আমি মুহাম্মদ ওই মুসলমানের বিরুদ্ধে আল্লাহর আদালতে লড়াই করব"। (সুনানে আবু দাউদ,হাদীস নং - ৩০৫২)।রাসুল (সাঃ) আরও বলেছেন, "অন্যায়ভাবে কোনো অমুসলিমকে হত্যাকারী জান্নাতের সুঘ্রাণও পাবে না। অথচ চল্লিশ বছরের রাস্তার দূরত্ব থেকেই ওই ঘ্রাণ পাওয়া যাবে"। (সহিহ বোখারি,হাদীস নং - ৩১৬৬)।

মহান আল্লাহপাক আমাদের সবাইকে যথাযথ এবং সঠিক ভাবে ধর্মের সকল বিধিবিধান এবং হুকুম আহকাম মেনে চলার তওফিক দান করুন।

চলবে -

উৎসর্গ - "ব্লগার নতুন এবং ব্লগার সাসুম " ভাইকে, যাদের আগ্রহে এবং অনেক প্রশ্নের জবাবে এই পোস্ট।


তথ্যসূত্র - আল কোরআন,হাদীস ও উইকিপিডিয়া
=========================================
পূর্ববর্তী পোস্ট -

মানব জীবন - ১২ " সহ শিক্ষা " Click This Link
মানব জীবন - ১১ " শিক্ষা " - Click This Link
মানব জীবন - ১০ "পরিবার " - Click This Link
মানব জীবন - ৯ "বিবাহের পরে" - Click This Link
মানব জীবন - ৮ " মানব জীবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য " - Click This Link
মানব জীবন - ৭ " তালাক " - Click This Link
মানব জীবন - ৬ "দেনমোহর - স্ত্রীর হক" - Click This Link
মানব জীবন - ৫ "বিবাহ" - Click This Link
মানব জীবন - ৪ " মাতৃত্ব " - Click This Link
মানব জীবন - ৩ Click This Link
"নারী স্বাধীনতা বনাম নারী(জরায়ু)'র পবিত্রতা "
মানব জীবন - ২ " মাতৃগর্ভ (জরায়ু)"- Click This Link
মানব জীবন - ১ "মানুষের জন্ম প্রক্রিয়ার ইতিকথা"- Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই অক্টোবর, ২০২১ বিকাল ৫:২৫
২৪টি মন্তব্য ২৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

একুশ বছর

লিখেছেন আজব লিংকন, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৪ ভোর ৪:৩৬



একুশ বছর—
সাত হাজার ছয়শত পঁয়ষট্টি রাত
আমি নির্ঘুম— চোখের নিচে কালো দাগ সাক্ষী।
আজও ভেসে ওঠে তোমার প্রিয় হাসিমুখ
আর কাজল কালো এণাক্ষী।

প্রথম যেদিন আমি, তোমার পানে চেয়েছি
তোমার দুচোখে আমি, আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

"বিনা যুদ্ধে নাহি দিব সূচ্যগ্র মেদিনী".....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২২

"বিনা যুদ্ধে নাহি দিব সূচ্যগ্র মেদিনী".....

ভারতীয় উপমহাদেশ প্রায় ২০০ বছর বৃটিশদের অধীনে ছিলো। দীর্ঘ বৃটিশবিরোধী আন্দোলনে ১৯৪৭ সালে বৃটিশ শাসনের অবসান হলে আমরা পরাধীনতা থেকে মুক্তি পেলাম। আবার দুই যুগ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশী হিন্দুরা কেন শক্তভাবে কথা বলতে পারছেনা?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:২১


বাংলাদেশের হিন্দুরা বলতে গেলে ৯৫ পার্সেন্ট আম্লিগকে ভোটি দেয় ইহা ধ্রুবসত্য। অনেকেই হয়তো দ্বিমত পোষণ করতে পারে সেটা তার নিতান্তই ব্যক্তিগত ব্যাপার। তারা সবসময়ই ভাবে আম্লিগ তাদের রক্ষাকর্তা কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। শেখ হাসিনাকে হস্তান্তরে বাধ্য হবে ভারত: ড. ইউনূস

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:২৮





অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার শেষে রায় হলে হাসিনার প্রত্যাবর্তনের ব্যাপারে ভারতকে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুরোধ জানাবে বাংলাদেশ। এক্ষেত্রে দু’দেশের স্বাক্ষরিত একটি আন্তর্জাতিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিশ্বে ভুয়া তথ্য ছড়ানোয় শীর্ষে ভারত

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:২৪




বিশ্বে সবচেয়ে বেশি ভুয়া তথ্য ছড়ানো দেশের তালিকার শীর্ষস্থানে রয়েছে ভারত। মাইক্রোসফটের সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় এমন তথ্য উঠে এসেছে। সমীক্ষার ফলাফলে দেখা গেছে, বিশ্বে সবচেয়ে বেশি ভুয়া খবর ছড়ায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×