somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

" বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন " - তুমি কার ? (আমজনতার সমসাময়িক ভাবনা - ৪)।

২২ শে আগস্ট, ২০২২ দুপুর ২:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ছবি- tbsnews.net

গত কয়েকদিন যাবত সারাদেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক মাধ্যমে যে নাম সবচেয়ে বেশী আলোচিত হচছে তার নাম হলো হলো আব্দুল মোমেন । সেই ব্যক্তি যেই সেই বা পাড়া-মহল্লার কেউ নন, তিনি হলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের টিকেটে সিলেট - ১ আসনের নির্বাচিত এম পি এবং বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। সাম্প্রতিক তার কিছু কথা বা মন্তব্য ঘিরে সারা দেশে যে বিতর্ক শুরু হয়েছে তা এখনো থামেনি বরং সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমসহ দেশ-বিদেশে এ বিতর্ক ডালপালা ছড়াচ্ছে । এদিকে তার বিতর্কিত মন্তব্যের দায় কোনভাবেই তার দল নিতে রাজী নয়। দল থেকে বলা হচছে ," তার বক্তব্য দলের বক্তব্য নয় ,এ তার নিজের বক্তব্য। আর কোন ব্যক্তির কাজের দায় দল বহন করবেনা"। এর মাঝে তার দলের কেউ কেউ তাকে দলের সদস্য হিসাবেও মানতে অস্বীকার করছে। তারা বলছে মোমেন আওয়ামী লীগের কেউ নয়। এসব দেখে শুনে আমাদের সকলকে দেশে প্রচলিত " ভাগের মায়ের" কথাই মনে করিয়ে দেয়। আর এসবের ফলেই আরো বেশী বেশী বিতর্ক তৈরী হচছে দেশ-বিদেশে, রাজনৈতিক ও সামজিক অঙ্গনে।

কে নিয়োগ করেন মন্ত্রী এবং কাকে - কিভাবে নিয়োগ করা হয় মন্ত্রীবর্গ -

সংসদীয় সরকার কিংবা রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার - যে কোন শাসন ব্যবস্থায় সরকার গঠন করে জনগণের ভোটে বিজয়ী দল এবং রাষ্ট্রপ্রধান (রাষ্ট্র) কিংবা সরকার প্রধান হন বিজয়ী দলের নেতা কিংবা সভাপতি। আর তাই যখন বিজয়ী দল সরকার গঠন করে তখন তাতে দলীয় লোকদেরই প্রাধান্য দেখা যায়।নূন্যতম সেই দলের নীতি-আদর্শের বাইরের কাউকে সরকারের মন্ত্রীসভায় কিংবা সাংবিধানিক কোন দায়িত্বশীল পদে কিংবা গুরুত্বপূর্ণ পদে কাউকে নিয়োগ দেয়া হয়না । এর পিছনে মূল যে কারন বিরাজ করে তা হলো , যে কোন সরকারের আমলে তার সরকারের দায়িত্বশীল পদের মন্ত্রী কিংবা আমলাদের যে কোন ভাল-খারাপ কাজের দায় সেই দলের উপরই বর্তায়। এসব কারনে সরকার কিংবা রাষ্ট্রপ্রধান খুব সর্তকতার সাথে এমন লোকদের বাছাই / নিয়োগ করেন যারা দল ও সরকারের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং তারা সরকার ও দলের প্রতি পূর্ণ আনুগত্যশীল থাকে। আর তাই এসব পদে নিয়োগের জন্য তার বা তাদের ব্যক্তিগত জীবন (শিক্ষা -রাজনৈতিক মতাদর্শ-দলের প্রতি তার অবদান ) যেমন দেখা হয় ঠিক তেমনি দেখা হয় তার অতীত পারিবারিক ( তার দাদা-বাবাদের রাজনৈতিক মতাদর্শ ও দেশের প্রতি তাদের ভূমিকা) ইতিহাসও। আর এসব কিছুর বিচারে সব গুলি মানদণ্ড যারা পূরণ করতে পারেন তারাই হন মন্ত্রী কিংবা পায় সাংবিধানিক কোন পদে নিয়োগ।

সেই নিয়োগ হবার পর সবাই যে দলের / সরকারের চাওয়া-পাওয়া পূরণ করতে পারে এমনও নয়। এদের মাঝে দক্ষতা ও যোগ্যতার কারনে কেউ কেউ হয় সফল যার ফলে দল তাদের নিয়ে গর্ব করতে পারে এবং দেশ - জাতিও উপকৃত হয় তাদের কার্যকলাপে। আবার কেউ কেউ আছেন যারা তাদের অযোগ্যতা কিংবা আরো নানা কারনে সফল হতে পারেনা এবং তারা তাদের কার্যকলাপের দ্বারা নিজেরা যেমন সমালোচিত হয় ঠিক তেমনি সরকার কিংবা দলকেও মুখোমুখি করে নানা অনভিপ্রেত ঘটনার । আর এসব যখন ঘটে তখনই, হয় তারা নিজ ইচ্ছায় পদত্যাগ করে ( যদিও আমাদের উপমহাদেশে নিজ ইচছায় ক্ষমতা ত্যাগের নজীর খুবই কম) কিংবা সরকার প্রধান তাদেরকে তাদের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে যোগ্য ও নতুন কাউকে সে দায়িত্ব দেন এবং এ জাতীয় ভূলের আর পূনরাবৃত্তি যাতে না হয় সে ব্যাপারে সচেষ্ট থাকেন । তবে যার বা যাদের দ্বারাই সে ভুল হউক না কেন সেই দায় সরকার বা ক্ষমতাসীন দল অস্বীকার করতে পারেন না।

এরই ধারাবাহিকতায় আমরা দেখি নানা সময় সরকারের নানা পদে ও দায়িত্বে পরিবর্তন হয়ে থাকে যা সরকার প্রধান করে থাকেন। দায়িত্বশীলের ইচছা কিংবা অনিচছায় যে কোন ঘটনা / দূর্ঘটনা ( ভাল খারাপ যাই হোক না কেন) যাই ঘটুক না কেন যদি ঘটনার পর নিজ থেকেই তার দায় স্বীকার করা হয় এবং দায়ী ব্যক্তির বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া হয় (ব্যক্তিগত-দলীয়-বিচারিক কিংবা সরকারী সিদ্ধান্ত ) তাহলে তাতে করে সেই ব্যক্তির সাথে সাথে দলের ও সরকারের ভাবমূর্তি জনগনের সামনে উজ্জ্বল হয়ে উঠে। কারন, তখন জনগন এটা বুঝতে পারে যে, কাজ করলে অন্যায় কিংবা দূর্ঘটনা ঘটতেই পারে। আর কোন অন্যায় করলেও তা সে যেই হোক ছাড় পাবেনা। তাতে জনগনের সরকারের প্রতি বিশ্বাসযোগ্যতা বেড়ে যায়। আর যদি কোন ঘটনা ঘটার পর সে দায় দায়িত্বশীল ব্যক্তি ও সরকার এড়িয়ে যেতে চায় এবং নানা রকম অজুহাত দেয় তাহলে সরকারের প্রতি জনগনের বিশ্বাসযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে। এসব কাজ যে কোন সরকারকে তার নিজের প্রয়োজনেই এড়িয়ে চলা উচিত । আর এটাই গণতন্ত্রের মূল কথা। কারন, গণতন্ত্র মানেই জনগণ ও জনগনের মংগল।

আব্দুল মোমেনের বির্তকিত বক্তব্য ও সরকারী দলের প্রতিক্রিয়া -

আমাদের দেশে প্রায় সময়ই দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের কারো কারো বির্তকিত বক্তব্য কিংবা অতি কথনে সরকারকে বেকাদায় পড়তে দেখা যায়। এ তাদের জন্য যেমন বিপর্যয় ডেকে আনে ঠিক তেমনি সরকারকেও ফেলে নানা রকম বেকায়দায়। এসব জানা-বুঝার পরেও এসব ছিল আছে ও থাকবে। যেমন - অতি সম্প্রতি বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন "বাংলাদেশের মানুষ বেহেশতে আছে"- এমন বক্তব্য দিয়ে তুমুল আলোচনায় এসেছিলেন। যেখানে দেশের সাধারন মানুষ গত প্রায় ৩ বছর কোভিডের কারনে চাকুরী-ব্যবসা হারিয়ে বহু কষ্টে দিন যাপন করছে এবং সাম্প্রতিক রাশিয়া- ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে অস্বাভাবিক দ্রব্যমূল্য নিয়ে জীবন যাপনে হিমশীম খাচছে সেখানে উনার মত দায়িত্বশীল পদে থেকে এরকম বক্তব্যকে শুধু দেশের সাধারন মানুষ কিংবা সুশীল সমাজ নয় ,এমনকি তার নিজ ক্ষমতাশীন দলও ভালভাবে নেয়নি।

আর তার সেই মন্তব্যের রেশ কাটতে না কাটতেই সেই রকম আবারো এক বির্তকিত মন্তব্য করে তিনি এখন তুমুল আলোচনায় এবং সরকারকে ফেলেছেন বেকায়দায়।পর পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেনের এই দুই মন্তব্যে এখন যেমন বিরোধী রাজনীতির বড় খোরাক তেমনি মোমেনের অতি কথনে বিব্রত দলের নেতাকর্মীরাও। সম্প্রতি চট্টগ্রাম এক সভায় তিনি বলেছেন, "আমি ভারতে গিয়ে বলেছি, শেখ হাসিনাকে টিকিয়ে রাখতে হব। শেখ হাসিনার সরকার টিকিয়ে রাখার জন্য যা যা করা দরকার, আমি ভারতবর্ষের সরকারকে সেটা করতে অনুরোধ করেছি "।

যদিও সাধারনভাবে আমরা জানি,গণতন্ত্রে একটি দেশের সরকার গঠিত হয় সে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগনের ভোটে এবং যে কোন দেশের সরকার টিকিয়ে রাখে সে দেশের জনগন। বাহিরের কোন দেশ বা শক্তি নয়।

- - ড. মোমেনের এমন বক্তব্যে বিব্রত আওয়ামী লীগের নেতারাও এখন তার সমালোচনা করছেন। শুক্রবার দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের মন্ত্রী মোমেনের বক্তব্যকে একান্তই তার নিজের বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, "ড. মোমেন যে বক্তব্য দিয়েছেন তা আওয়ামী লীগ বা সরকারের বক্তব্য নয়"।

প্রকৃত সত্য - একটা দেশের সরকারের নীতি ও কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হয় মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে। আর যাকে মন্ত্রণালয়ের প্রধান হিসাবে সরকার প্রধান মন্ত্রী পদমর্যাদায় নিয়োগ করেন, তারা মন্ত্রণালয়ের প্রধান হিসাবে সরকারের নীতি ও কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে থাকেন। এদিকে যে কয়টি মন্ত্রণালয় সরকারের নীতি ও কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন অগ্রণী ভূমিকা পালন করে বা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, তার মধ্যে স্বরাষ্ট্র-পররাষ্ট্র-অর্থ-শিক্ষা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ । আর এসব মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব হিসাবে তাদেরই দেয়া হয় যাদের আনুগত্য নিয়ে দলে ও সরকারের অভ্যন্তরে কোন প্রশ্ন নেই বা যারা দলের প্রতি নিবেদিত প্রাণ এবং যারা সরকারের খুব কাছের বলে বিবেচিত হন। আর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সরকারের বিদেশ নীতি ও কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন মূল ভূমিকা পালন করে এবং তাদের কাজকর্মের উপরই বর্হিঃবিশ্বে সরকার ও দেশের ভাবমূর্তি নির্ভর করে বা গড়ে উঠে। এরকম একটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তির বক্তব্য কখনো ব্যক্তিগত হতে পারেনা এবং সে ব্যক্তির কাজের দায় দল ও সরকার কখনো এড়িয়ে যেতে পারেনা।আর এজন্যই এ পদে সারা দুনিয়ায় কুটনীতিতে পারদর্শী, দলের প্রতি নিবেদিতপ্রান লোকদের নিয়োগ দেয়া হয় । কারন , তাদের যে কোন ছোট-খাট ভুলও দেশে-বিদেশে সরকারকে গুরুতর বিপদে ফেলে দিতে পারে।

- - এদিকে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুর রহমান গতকাল আরও কড়া প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, "পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন আওয়ামী লীগের কেউ নন। তার বক্তব্যের দায়ভার আওয়ামী লীগ নেবে না"। ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন। আবদুর রহমান আরও বলেন, "ভারত নিয়ে আব্দুল মোমেনের বক্তব্য আওয়ামী লীগের দলীয় বক্তব্য নয়। কোনো দেশের সমর্থনে আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় আসা নির্ভর করে না"। আওয়ামী লীগের এই প্রেসিডিয়াম সদস্যের এমন বক্তব্যে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

প্রকৃত সত্য - আবদুর রহমানের বক্তব্যের প্রেক্ষাপটে আসুন দেখি কে এই আব্দুল মোমেন -

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুর রহমান ড. আব্দুল মোমেনকে দলের লোক হিসেবে অস্বীকার করলেও তা প্রকৃতপক্ষে সত্য নয়। কারণ কূটনীতিক থেকে রাজনীতিতে আসা আব্দুল মোমেন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্য হিসেবে যাত্রা শুরু করেছিলেন। পরে তিনি সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটির প্রথম সদস্য হন। নগর আওয়ামী লীগের এই কমিটি কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের অনুমোদনেই হয়েছে। জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধির দায়িত্বে থাকা কালেই সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের ১৫ নং ওয়ার্ডের কার্যকরী কমিটির সদস্য হয়েছিলেন ড. একে আব্দুল মোমেন। তিনি কুটনীতিক অব্যাহতির পরবর্তীতে আওয়ামী রাজনীতিতে আসবেন এমন হিসাব মাথায় রেখেই সে সময়ে সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের ওই ওয়ার্ড কমিটিতে তাকে সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে বলে মনে করা হয়।

২০১৫ সালের ২৬শে অক্টোবর ঘোষিত ওই কমিটির সভাপতি ছিলেন মকসুদ বখত ও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন হাজী এম এ মতিন। স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা জানিয়েছেন, ওই সময়ে সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন সাবেক মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরান ও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন আসাদ উদ্দিন আহমেদ। তাদের অনুমোদন দেয়া কমিটিতে প্রথম সদস্য ছিলেন সাবেক অর্থমন্ত্রী ও প্রয়াত ড. আবুল মাল আবদুল মুহিত। এ ছাড়া কমিটির তৃতীয় সদস্য ছিলেন তাদের আরেক ভাই ড. একে আব্দুল মুমিন। ওই কমিটিতে অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে সিলেটের আওয়ামী লীগ রাজনীতিতে পা বাড়ান ড. একে আব্দুল মোমেন। বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রায় দুই বছর আগে জাতিসংঘের চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়ে সিলেটে ফিরেন ড. মোমেন। আর এটি ছিল ড. একে আব্দুল মোমেনের আওয়ামী লীগের প্রথম পরিচয় এবং আওয়ামী লিগের নেতারা তাকে সাদরে বরণ করে নেন।

মাননীয়া প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় সিলেট আওয়ামী লীগকে নতুন করে গড়ে তুলতে ২০১৯ সালের ৫ই ডিসেম্বর সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন হয়। সেই সম্মেলনের ধারাবাহিকতায় সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয় ২০২১ সালের ৮ই জানুয়ারি। কেন্দ্র অনুমোদিত ওই কমিটির প্রথম সদস্য হচ্ছেন ড. একে আব্দুল মোমেন। এখনো তিনি মহানগর আওয়ামী লীগের প্রথম সদস্য হিসেবে বহাল রয়েছেন ।ফলে সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের একজন প্রভাবশালী নেতা হিসেবে ড. একে আব্দুল মোমেনের অবস্থান সুসংহত রয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী হওয়ার পর সিলেট আওয়ামী লীগের অভিভাবকের ভূমিকায়ও রয়েছেন তিনি। তাকে ঘিরেই এখন আবর্তিত হচ্ছে সিলেট আওয়ামী লীগের রাজনীতি। সিলেট আওয়ামী লীগের দলীয় কর্মকাণ্ডেও সক্রিয় ভূমিকা রাখেন ড. একে আব্দুল মোমেন। সিলেট সফরে এলে তিনি দলের কর্মকাণ্ডেও শরিক হন। আওয়ামী লীগ ছাড়াও বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন। তাছাড়াও ড. একে আব্দুল মোমেনের বড় ভাই আবুল মাল আবদুল মুহিত এই আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই ছিলেন বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী।

দেশ বিদেশে তাকে নিয়ে নানা বিতর্ক ডালপালা ছড়াচ্ছে। আর এসব বিতর্ক থেকে ক্ষমতাসীন দল ও সরকারকে রক্ষা করতে দল ও সরকারের নানা ব্যক্তি নানা রকম বক্তব্য দিয়ে আরো বেশী বিতর্ক তৈরী করছেন।

-- আবার, মাননীয় তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, "পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন দলীয় সংসদ সদস্য হলেও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির কেউ নন" । গতকাল রোববার (২১/০৮/২০২২) সচিবালয়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন। তথ্যমন্ত্রী আরো বলেন," তিনি (পররাষ্ট্রমন্ত্রী) আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য, সেটা ঠিক আছে। কিন্তু যেহেতু আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির কেউ নন, সুতরাং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষে বিদেশে গিয়ে কিছু বলা, সে দায়িত্ব বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কাউকে দেয়নি, তাকে দেয়নি"।

এখানে মাননীয় মন্ত্রী তাকে দলের সদস্য হিসাবে মেনে নিলেও তার দেয়া বক্তব্য কিংবা তার বক্তব্যের দায় নিতে চাচছেন না।

মোমেন কে নিয়ে এত সব বক্তব্য দেশবাসীকে একটা কথাই মনে করিয়ে দিচছে, যা আমাদের গ্রাম বাংলায় প্রচলিত। গ্রাম বাংলায় " ভাগের মা" - বলে একটা কথা প্রচলিত আছে। তার মানে হলো, " যখন নিজের প্রয়োজন হয় বা নিজ নিজ প্রয়োজনে মা আমার বা সবার এবং তখন মায়ের আদর যত্নের জন্য সবারই আগ্রহ থাকে । আবার যখন নিজেদের প্রয়োজন ফুরিয়ে যায় বা মা যখন বিপদে পড়ে তখন কেউ আর সেই মায়ের দায়িত্ব নিতে চায়না। সবাই তাদের জীবনে মায়ের অবদান ভূলে গিয়ে তাকে বা তার দায়িত্ব নিতে অস্বীকার করে।মোমেন যেন এখন অনেকটা গ্রামের ভাগের মায়ের মত হয়ে গেছে । দল বা সরকার কেউ তার বা তার বক্তব্যের দায়িত্ব নিতে চাচছেনা।

এখন মূল যেই প্রশ্ন -

১। আওয়ামী লীগের মত বড় একটি একটি দল ও সরকারের স্থানীয় (কমিটির প্রথম সদস্য) ও জাতীয়ভাবে এত গুরুত্বপূর্ণ (এমপি/মন্ত্রী) পদ-দায়িত্বে থেকেও যদি ড. মোমেন আওয়ামী লীগের কেউ না হন তাহলে তিনি কার বা কোন দলের?
২। ড. মোমেন আওয়ামী লীগ সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পেলেন কীভাবে বা কে তাকে এ দায়িত্ব দিয়েছে ?
৩। ড. মোমেন আওয়ামী লীগের কেউ না হলে, আওয়ামী লিগের মত এত বড় একটি দল থেকে তাকে কেন গুরুত্বপূর্ণ পদ / দায়িত্ব (টেকনোক্র্যাট কোঠা হলে ভিন্ন কথা ছিল) দেয়া হলো?

জবাব দিহীতা -
আমার এ লেখার উদ্দেশ্য সরকারের সমালোচনা কিংবা নীতি নির্ধারনী বিষয় নিয়ে আলোচনাও নয়। এ পোস্ট শুধু আমার ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণ বা অভিমত। রাষ্ট্রের একজন নাগরিক হিসাবে এবং একজন মানুষ হিসাবে এ আমার ভাবনা । কারন , আমি খুবই সাধারন একজন মানুষ ,যাকে বলে আমজনতা। এ লেখার সাথে রাজনীতির কোন সম্পর্ক বা সরকারের কোন নীতির সমালোচনার সংযোগ খুজবেনা না দয়া করে। আর সরকারের বা তার নীতির সমালোচনা আমার সীমার বাইরে। তবে দেশের একজন সচেতন ও সাধারন নাগরিক হিসাবে দেশের ভাল-মন্দ বিষয় সম্পর্কে জানতে চাই। দেশের-সরকারের ভাল খবর যেমন আমাকে আনন্দ দেয় ঠিক তেমনি তাদের খারাপ খবরে মনকে ব্যথিতও করে। কাউকে ছোট করতে বা কাউকে আঘাত করতেও এ পোস্ট লেখার উদ্দেশ্য নয় । সাধারন মানুষ ও একজন সচেতন নাগরিক হিসাবে সব সময় এটাই চাওয়া, দায়িত্বশীল পদে যারা আছেন তারা তাদের কথা বলা কিংবা বক্তব্যে সতর্ক থাকবেন ও বিতর্ক এড়িয়ে চলবেন। তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব-কর্তব্য যথাযথ ভাবে পালন করবেন এবং কাজ করতে গিয়ে কোন ভুল-ত্রুটি হয়ে গেলে স্বেচ্ছায় তার দায়িত্ব বহন করবেন এবং ভবিষ্যতে আর এ জাতীয় ভূলের পূনরাবৃতি হবেনা সে বিষয়ে জনগণকে আশ্বস্ত করবেন। কারন, অযুহাত বা দায়িত্ব এড়ানোর প্রবণতা পরিস্তিতিকে আরো জটিল করে তোলে সহজ নয়। আর যা সত্য তাই সুন্দর। আর এতে করে মানুষের নিকট দল ও সরকারের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে ।

তথ্যসূত্র

** উইকিপিডিয়া
** মানব জমিন(২১ আগস্ট ২০২২, রবিবার)
- পররাষ্ট্রমন্ত্রী তাহলে কার? - Click This Link
** দৈনিক ইনকিলাব, ২২ আগস্ট, ২০২২, সোমবার
- পররাষ্ট্রমন্ত্রী দলীয় এমপি, কিন্তু কেন্দ্রীয় কমিটির কেউ নন - https://m.dailyinqilab.com/article/511038/
** দৈনিক যুগান্তর , ২২ আগস্ট ২০২২,
-পররাষ্ট্রমন্ত্রী দলের কেউ না’ বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিলেন আবদুর রহমান Click This Link
============================================ ===================
পূর্ববর্তী পোস্ট -

সামাজিক রীতি-নীতি-শিষ্ঠাচার এখন যাদুঘরে - আপনি কি একমত ?(আমজনতার সমসাময়িক ভাবনা -৩)
Click This Link
বর্তমান সময়ে আমরা কি একটি বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ও দৃষ্টিশক্তি হীন জাতি বা প্রজন্মে পরিণত হচছি বা হতে যাচছি?(আমজনতার সমসাময়িক ভাবনা - ২) - Click This Link
আমাদের সমাজের সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা কি ভেঙে পড়ছে ? (আমজনতার সমসাময়িক ভাবনা -১) Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জুন, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:১০
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছায়ানটের ‘বটমূল’ নামকরণ নিয়ে মৌলবাদীদের ব্যঙ্গোক্তি

লিখেছেন মিশু মিলন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



পহেলা বৈশাখ পালনের বিরোধীতাকারী কূপমণ্ডুক মৌলবাদীগোষ্ঠী তাদের ফেইসবুক পেইজগুলোতে এই ফটোকার্ডটি পোস্ট করে ব্যঙ্গোক্তি, হাসাহাসি করছে। কেন করছে? এতদিনে তারা উদঘাটন করতে পেরেছে রমনার যে বৃক্ষতলায় ছায়ানটের বর্ষবরণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বয়কটের সাথে ধর্মের সম্পর্কে নাই, আছে সম্পর্ক ব্যবসার।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৫০


ভারতীয় প্রোডাক্ট বয়কটটা আসলে মুখ্য না, তারা চায় সব প্রোডাক্ট বয়কট করে শুধু তাদের নতুন প্রোডাক্ট দিয়ে বাজার দখলে নিতে। তাই তারা দেশীয় প্রতিষ্ঠিত ড্রিংককেও বয়কট করছে। কোকাকোলা, সেভেন আপ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানুষের জন্য নিয়ম নয়, নিয়মের জন্য মানুষ?

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৫:৪৭



কুমিল্লা থেকে বাসযোগে (রূপান্তর পরিবহণ) ঢাকায় আসছিলাম। সাইনবোর্ড এলাকায় আসার পর ট্রাফিক পুলিশ গাড়ি আটকালেন। ঘটনা কী জানতে চাইলে বললেন, আপনাদের অন্য গাড়িতে তুলে দেওয়া হবে। আপনারা নামুন।

এটা তো... ...বাকিটুকু পড়ুন

একজন খাঁটি ব্যবসায়ী ও তার গ্রাহক ভিক্ষুকের গল্প!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৪


ভারতের রাজস্থানী ও মাড়ওয়ার সম্প্রদায়ের লোকজনকে মূলত মাড়ওয়ারি বলে আমরা জানি। এরা মূলত ভারতবর্ষের সবচাইতে সফল ব্যবসায়িক সম্প্রদায়- মাড়ওয়ারি ব্যবসায়ীরা ঐতিহাসিকভাবে অভ্যাসগতভাবে পরিযায়ী। বাংলাদেশ-ভারত নেপাল পাকিস্তান থেকে শুরু করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×