somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দুঃসময়

১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১১:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাইরে ঝুম বৃষ্টি। পানিপতনের টুপটাপ নেশাতুর শব্দ। ঘুম ঘুম চোখ। সুখের চর্বি জমা দেহটাকে কাঁথা দিয়ে মুড়িয়ে সুখের উষ্ণতা উৎপাদন এই বৃষ্টির দিনে একটু বেশিই শোভা পায়।
দরজায় কে যেন কড়া নাড়ছে।
- কাকে চান?
- আপনাকে।
- আপনাকে তো ঠিক চিনলাম না।
- আমি দুঃসময়।
- আমার কাছে আপনার কি প্রয়োজন?
- আপনাকে দাওয়াত করতে এসেছি।
- ও তাই। কোথায়?
- দুঃসময়ের রাজ্যে।
- এত লোক থাকতে আমি কেন?
- সব লোকের মত আপনিও। চলুন। দেরি হয়ে যাচ্ছে।
- বাইরে তো বেজায় বৃষ্টি। একটু অপেক্ষা করুন, আমি ছাতা নিয়ে আসছি।
- দুঃসময়ের যাত্রীদের সঙ্গে ছাতা থাকে না। বাতাশে উড়ে যায়।
- আপনি বলছেন ছাতা না নিতে। আচ্ছা, নিলাম না। ভাল জামা-জুতো তো পড়ে আসি?
- খুব একটা প্রয়োজন নেই। দুঃসময়ের রাজ্যে কেউ আপনাকে বরণ করে নিতে আসবে না। খালি পায়েই চলুন।
- আপনি খুব অদ্ভুত।
- তাই? এটাই আমার বৈশিষ্ট্য।
- হুম। কদিনের জন্য যাচ্ছি আমরা?
- আপনার ফিরে আসার আকাঙ্খা যেদিন তীব্রতর হবে।
- চলুন তাহলে। অনেক দিন বৃষ্টিতে ভেজা হয়না। একসাথে দুই কাজ হয়ে যাবে।
- বিষয়টা কিন্তু ওতো সহজ না।
পথ হাঁটা শুরু হল দুজনের। নুড়ি পাথরের পথ। হাঁটতে ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। তার ওপর বাতাসের প্রচণ্ড ঝাঁপটা। পানির ফোটার তীব্র আঘাতে গায়ের চামড়া ফেটে যাওয়ার মত অবস্থা।
• ওরে বাবা, এটা কোন বৃষ্টির ধরন হল? পানি খুব ঠাণ্ডা। আর মনে হচ্ছে শরীরে কে যেন চাবুক পেটাচ্ছে। তাই না?
• দুঃসময়ের বৃষ্টি এরকমই।
• এই বৃষ্টিতে বেশিক্ষণ ভেজা যাবে না, সর্দি জর লেগে যেতে পারে। চলুন একটা রিকশা নেই।
• দুঃসময়ের রাজ্যে কোন যানবাহন নেই। শুধুমাত্র পা-ই হল যানবাহন।
• মানে এতখানি পথ পুরটাই হেঁটে যেতে হবে? হায় খোদা !!!!!!!
• দুঃসময়ের পথিকদের প্রতি আপনার খোদা একটু বেশিই উদাসিন। এতো সহজে আপনার ডাক তিনি শুনবেন না। তাই, কথা না বাড়িয়ে আগে চলুন।
চারিদিক আলোকিত করে বিকট আওয়াজে বাজ পড়লো, অদুরেই।
• সর্বনাশ। এতো দেখি বাজ পড়া শুরু হল। কি ভয়ঙ্কর। চলুন চলুন, ঐ ছাউনিটার নীচে দাড়াই। বৃষ্টি না থামা পর্যন্ত অপেক্ষা করি।
• হা হা হা। আপনি কি ভেবেছেন ঐ হালকা ছাউনিটা এই শক্তিশালী বাজ আটকাতে পারবে? আর, অপেক্ষা করেই বা কি করবেন??? আপনারই তো দেরি হয়ে যাবে। চলুন আমরা হাঁটতে থাকি।
• উহহহ!!!!! আপনি কিন্তু খুব রসিকতা করছেন। এই রকম পরিস্থিতিতে কিভাবে পথ চলব? আর একটু হলেই তো বাজটা মাথার ওপর পড়ত।
• দুঃসময় এরকম দুঃসহ রসিকতা নিয়েই হাজির হয়। চলুন, পথ হাঁটি।
• আপনি বিশাল পেইন দিচ্ছেন। চলুন।
• পেইনটা হয়ত আপনার প্রাপ্যই ছিল।
চুপচাপ দুইজন পথ হাঁটছে, পৈচাশিক বৃষ্টিতে।
• আর কতদূর আপনার সেই রাজ্য? অনেক তো হাঁটলাম।
• কথা না বলে হাঁটতে থাকুন।
• আচ্ছা, আপনাদের এই রাজ্যের আয়তন কত?
• এ রাজ্যের আয়তন আপেক্ষিক। কারো কাছে ছোট সসীম, আবার কারো কাছে বড় অসীম।
• এ রাজ্যের রাজধানী কোথায়? আমরা কি সেখানেই যাচ্ছি?
• রাজধানী নেই। পুরো রাজ্যটাই রাজধানী।
• কি আজব!!!!!!! লোকসংখ্যা কত এখানকার?
• এ রাজ্যের কোন স্থায়ী বাসিন্দা নেই। এখানে সবাই অতিথি হয়ে আসে।
• আমি যদি এখানে আজীবন থাকতে চাই?
• আপনি পারবেন না।
• কেন????
• বুঝবেন ধিরে ধিরে। হাঁটতে থাকুন।
• ও। আশেপাশে কি কোন রেস্তোরা নেই? আমার না খুব খিদে পেয়েছে।
• এ রাজ্যের মাটি অনুর্বর। এ রাজ্যে কোন বাণিজ্যও হয় না। খাবার পাবেন না এখানে কোথাও।
• এটা কিন্তু বেশ বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে। দাওয়াত করে এনেছেন, আর বলছেন খাবার নেই।
• নুড়ি পাথর খান। অতিথিরা এটাই খায় এখানে।
• আমার কিন্তু ভীষণ রাগ হচ্ছে।
• যদি রেগে যান, রাজ্যের আয়তন বেড়ে যাবে।
• ধুর, আপনি লোকটা ফাউল।
• আপনার চিন্তাধারার পরিবর্তন হচ্ছে। বিষয়টা ইতিবাচক।
• অযথা আপনার সাথে না এসে আমার প্রিয়তমার সাথে দেখা করলে ভাল হত। ও কথা দিয়েছিল আজ আমার সাথে দেখা করবে। ও বোধয় অপেক্ষা করছে আমার জন্য। ওকে ফোন করে জানিয়ে দেই আমার আসতে একটু দেরি হবে............ও মা, ফোনটা পানিতে ভিজে নষ্ট হয়ে গেল যে??? আপনার ফোনটা দিন তো।
• হা হা হা। আপনার ফোনটা ঠিক থাকলেও আপনি তার সাথে কথা বলতে পারবেন না। এই রাজ্যে টেলিফোন নেটওয়ার্ক নেই। আর, আপনার প্রিয়তমা আপনার জন্য অপেক্ষা করছে না।
• আমি বিশ্বাস করি না। সে কখনই কথা ভাঙতে পারে না।
• এই দুঃসময়ের রাজ্যের অতিথিরা যা বিশ্বাস করে তার ঠিক উল্টোটাই সুখের রাজ্যে ঘটতে থাকে। আপনার প্রিয়তমা আর আপনার অপেক্ষায় নেই।
• আলতু ফালতু কথা বলবেন না। আমি ওর জন্য জীবন বাজি ধরতে পারি।
• শুধু শুধু বাজিতে হেরে জীবনটা খোয়াবেন কেন??? আপনার জীবনের মূল্য আর তার কাছে নেই।
• কেন নেই?
• কারন আপনি এখন দুঃসময়ের রাজ্যের অতিথি, এটা সে জানে।
• কিভাবে জানবে সে? আমি তো তাকে বলে আসিনি।
• দুঃসময় যে বলে কয়ে আসেনা।
• আমরা পৌছব কখন? আমি আর আপনার সাথে হাঁটতে পারছি না। আমি ফিরে যেতে চাই।
• আপনি যখন আপনার ঘরের দরজার চৌকাঠ পেরোলেন, তখনই আমরা দুঃসময়ের রাজ্যে পৌঁছে গিয়েছি।
• তাহলে এতখন হাঁটালেন কেন শুধু শুধু????? আপনি লোকটা ফাজিল। আমাকে ফেরার পথ বাতলে দিন।
• এতো তাড়াতাড়ি বিরক্ত হয়ে গেলেন?
• তাড়াতাড়ি মানে?? সেই কখন থেকে হাঁটছি।
• দুঃসময়ের রাজ্যে সময় ধির গতিতে চলে।
কিছুটা পথ আবার এগোলো দুজন।
• এখানে কেন নিয়ে আসলেন আমাকে? সামনে তো নদী।
• হুম। এটাই আপনার প্রস্থান পথ। নদীর ওপাড়ে সুখের রাজ্য।
• নদীতে তো প্রবল স্রোত। এ নদীর গভীরতা কত?
• সুসময়ে আপনি যতটা সময় অপব্যয় করেছেন, তত।
• ঘাটে তো কোন নৌকা দেখছি না। কিভাবে যাব ওপাড়? কাউকে ডাকুন।
• আপনি তো জানেন এ রাজ্যে কোন যানবাহন নেই। সাঁতরে পাড় হতে হবে।
• আপনার কি মাথা খারাপ?? এ নদী কি সাঁতরে পাড় হওয়া যায়? আর আমিও সাঁতার ওত ভাল জানিনা।
• অতিথিরা অবচেতনেই দুঃসময়ের রাজ্যে আসেন। কিন্তু সুখের রাজ্যে ফিরে যেতে যে কষ্ট করতে হয়। আপনি চেষ্টা করুন। আপনি পারবেন। আমার যাবার সময় হয়ে এসেছে। চলি তাহলে। বিদায়।
• আপনি আমাকে এখানে একা ফেলে রেখে কোথায় যাবেন। এটা কিন্তু ঠিক না।
হাওয়ায় মিলিয়ে গেল সেই দুঃসময়ের দূত, চোখের পলকেই।অবাক অতিথি ভয়ঙ্কর বিস্ময়ে দেখতে লাগল খরস্রোতা সেই নদী। নদীর ওপারে তার নতুন করে গড়ে উঠবে পুরনো সুখের রাজ্য। যেতে যে হবেই হবে।

০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×