somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শিশুতোষ গল্পঃ মিতুলের জন্মদিন

২৩ শে মার্চ, ২০১৫ রাত ১০:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মিতুল তার আব্বু এবং আম্মুর সাথে বসুন্ধরা মার্কেট এসেছে। সামনের শুক্রবার তার ষষ্ঠ জন্মবার্ষিকী। তার জন্য নতুন কাপড় চোপড় কেনার জন্যই মুলত এই মার্কেটে আসা। ছোট চাচ্চু ইতিমধ্যেই জন্মদিন উপলক্ষ্যে বড় একটা কেকের অর্ডার দিয়েছে। ওপরে সুন্দর করে নাম লেখা থাকবে। এটা ছোট চাচ্চু তাকে নিশ্চিত করেছে। সব কাপড় চোপড় কেনা হল আব্বু আর আম্মুর পছন্দে। শুধু এক সেট কাপড় কেনা হল তার পছন্দ অনুযায়ী। ইতিমধ্যে আত্মীয়স্বজন এবং ঘনিষ্ঠজনদের দাওয়াত দেয়া হয়ে গেছে। মিতুল স্কুলের বন্ধুবান্ধবদের নিজেই কার্ড দিয়ে দাওয়াত করেছে।

আজ শুক্রবার। মিতুলের জন্মদিন। সন্ধ্যার পর পার্টি। এখন বাজে সকাল দশটা। দূরের আত্মীয়স্বজনের কয়েকজন গতরাত্রেই এসে পড়ায় বাড়িতে সকাল থেকেই আনন্দের জোয়ার বইছে। ছোট চাচ্চু তার বন্ধুদের নিয়ে পুরো বাড়ি সাজানো নিয়ে ব্যস্ত। মিতুলের প্রতিবেশী কিছু বন্ধু তার কথামতো সাত সকালেই এসে হাজির। তাদের নিয়ে সে ছোট চাচ্চুকে যতটা পারছে সাহায্য করছে। যদিও সেগুলো আসলে কোন কাজেই দিচ্ছে না। বরং কাজের আরো ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে। কিন্তু আজ তার জন্মদিন। তাই সবাই উপরোন্ত তার কাজের প্রশংসা করছে। মিতুল আর তার বন্ধুরাও তাই দ্বিগুণ উৎসাহে কাজের ব্যাঘাত ঘটিয়ে চলছে। তারপরও কাজ এগিয়ে চলছে বেশ তোরে জোড়ে। কিছুক্ষণ পর পর মিতুল তার বন্ধুদের খোঁজ খবর নিচ্ছে। কে এলো। কে এলো না। কে কে বাকী আছে। যারা এখনো আসে নাই, কেন এখনো দেরি করছে। আব্বুকে বলে, আম্মুকে বলে ফোনে খোঁজ নিচ্ছে ইত্যাদি ইত্যাদি আরও অনেক কিছু। দেখতে দেখতে সকাল গড়িয়ে, দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে গেলো। আরও ঘণ্টা দুই বাকী। বাড়িঘর মোটামুটি সাজানো গোছানো শেষ। মিতুল মহাখুশি।

মাগরেবের নামাজের এক ঘণ্টা পর কেক কাটা হবে। ড্রয়িং রুমের টেবিলের ওপর কেকটা রাখা হল। বিশাল আকারের একটা কেক। মিতুলের খুব পছন্দ হয়েছে। ঠিক যেমনটি সে চেয়েছিল, ছোট চাচ্চু ঠিক তেমন কেকই অর্ডার দিয়েছে। তার নামটাও কেকের ওপর খুব সুন্দর করে লেখা আছে। কেকের ওপর ছয়টা মোমবাতি জ্বালছে। সবাই এসে টেবিলের চারপাশটা ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু মিতুলকে হঠাৎ পাওয়া যাচ্ছে না। সংবাদটা মুহূর্তের মধ্যে সবার মাঝে ছড়িয়ে পড়লো। ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকজন এখানে সেখানে খোঁজতে লাগলো। ছোট চাচ্চু তাকে দোতালায় বারান্দায় খুঁজে পেল। সেখান থেকে সামনের রাস্তাটা অনেক দূর পর্যন্ত দেখা যায়। মিতুল সেদিকেই এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
-কিরে মামুনি তুই এখানে একা একা দাঁড়িয়ে কি করছিস? সবাই ড্রয়িং রুমে কেক নিয়ে তোর জন্য অপেক্ষা করছে।
-চাচ্চু আমার একজন বন্ধু এখনো আসেনি। আমি তার জন্য অপেক্ষা করছি।
-তোর সব বন্ধুরাই তো এসে পড়েছে। তুই আবার তোর কোন বন্ধুর জন্য অপেক্ষা করছিস?
-আমার আরও একজন বন্ধু আছে চাচ্চু। তার সাথে রোজ আমার টিফিন ভাগাভাগি করে খাই। আমাদের স্কুলের কাছাকাছি যে রেল ষ্টেশন আছে, ঐখানে ওর বাবা কুলির কাজ করে। তাকে দাওয়াত করেছি। আমি তাকে বলেছি, সে যদি না আসে আমি তাহলে কেক কাটবো না। কিন্তু সেতো এখনো এলো না চাচ্চু? কথাগুলো বলতে বলতে মিতুল কেঁদে ফেললো।
ছোট চাচ্চু মিতুলকে বুকে জড়িয়ে নিল। তার কপালে একটা চুমো খেলো। এমন সময়ে মিতুলের আব্বু আম্মুও সেখানে এসে উপস্থিত হল। ছোট চাচ্চু মিতুলের এখানে দাঁড়িয়ে থাকার কারণ তাদের খুলে বলল। আব্বু আম্মু দু’জনেই মিতুলকে জড়িয়ে ধরে অনেক আদর করলো। ‘আমি আসছি’ বলে ছোট চাচ্চু চোখ মুছতে মুছতে মুহূর্তের মধ্যে ঘর থেকে বের হয়ে গেলো। ঘণ্টাখানেক পর সে মিতুলের বন্ধুকে নিয়ে এসে হাজির হল। মিতুলের পছন্দে যে কাপড় সেট কেনা হয়েছিল, সেটা পড়িয়ে তাকে ড্রয়িং রুমে নিয়ে আসা হল। তারপর সবাই মিলে মহা আনন্দে কেক কাটলো।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে মার্চ, ২০১৫ রাত ১০:১২
৪৬টি মন্তব্য ২৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×