করোনার হালফিল আপডেট সকলেই কমবেশি অবহিত। তাই আর পরিসংখ্যানে লেখা ভারী করবো না। চলে যাই মূল কথায়। করোনা মোকাবেলায় অল্প কিছু সফল দেশের মাঝে অন্যতম ভিয়েতনাম নামটি অগ্রগণ্য। আর আছে পাশের দেশের এক রাজ্য কেরালা।দুটোর মোকাবেলার পদ্ধতি এবং সক্ষমতা আজ উদাহরন হিসেবে উল্লেখ হচ্ছে। কি আছে বা ছিল তাদের যা আমাদের নেই?
করোনা মোকাবেলায় আমাদের দায়িত্বপ্রাপ্তদের গালভরা কথার বিপরীতে বাস্তবতা এখন অনেকটাই দিবালোকের মতো খোলাসা। প্রথমত যেখানে জরুরী প্রতিরোধক স্থাপন করার কথা সেই বন্দর সমূহ ছিল অরক্ষিত। প্রধান বিমান বন্দর ছিল কাগুজে বাঘের মতো। স্ক্যানারগুলো ছিল সাজের নাও তাজের বৈঠা। থার্মাল স্ক্যানারের মাঝে ১/২ টি ছিল সচল। যার অব্যবহিত ফল হিসেবে বেড়ে যাচ্ছিল কিউ। বাড়ছিল প্রতিবাদ। আর বাড়ছিল আত্মঘাতি ফাঁকি দেবার প্রবণতা। কিছু টাকা নিয়ে স্ক্যানিং না করেই ছেড়ে দেবার বিষয় ছিল বিস্ময়ের সাথে টক অব দা টাউন। ফল যা হবার তাই হল। ব্যাপক ভাবে প্রবাসীদের মাধ্যমে প্রথম ট্রান্সমিশনটা সফল ভাবে হয়ে গেল।
অন্যান্য দেশে যখন জানুয়ারীর শেষ দিকে বা ফেব্রুয়ারীর শুরু থেকেই ছিল সদা সতর্ক আমাদের ঘোষনা আসতে আসতে চলে গেল ১৮ মার্চ। দীর্ঘ দুই মাসের অবহেলায় আরেকদফা স্যালাইন ঘুটার মতো ভাইরাস মিশে গেল কমিউনিটি ট্রান্সমিট লেভেলে। সতর্কতা, সচেতনতা, লক ডাউন, কোয়েরনটাইন নতুন নতুন টার্ম গুলও আত্মস্থ হবার আগেই মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে গেল।
যেখানে হু এর প্রধান শ্লোগান ছিল টেষ্ট, টেষ্ট এবং টেষ্ট। সেখানে আমাদের টেষ্ট কেন্দ্র দীর্ঘদিন রইল সবেধন নীলমনি আইইডিসিআর। লাখো লাখো প্রবাসী এবং সম্ভাব্য সংক্রমনের আশংকার মাঝে মাত্র দুই তিনশ টেষ্ট হচ্ছিল দিনে। কিউ লম্বা হচ্ছিল, বাড়ছিল সংক্রমন। সরকারী হিসেবের বাইরে ঠান্ডা সর্দিজ্বরের মৃত্যুর হার আশংকাজনক বেড়ে গেল। অতপর ধীরে ধীরে টেস্টের অনুমোদিত কেন্দ্র বাড়লেও টেস্টের পরিমান হাজার বারশ’র মধ্যে উঠানাম করতে লাগলো। রোগী বেড়ে গেল জ্যামিতিক হারে। টেস্ট হচ্ছিল গানিতিক হারে! এরই মাঝে পোষাক শ্রমিক নিয়ে হযবরল দিয়ে কমি্উনিটি ট্রান্সমিশনের শংকাকে কাঁচকলা দেখিয়ে লেজেগোবরে করা হলো।
সংক্ষেপে এই বাস্তবতাটুকুকে সামনে রেখেই আমরা সমাধানের পথ সন্ধান করি। খাদ্য, ত্রান বা চালচুরির বিষয়গুলো না হয় তোলাই থাক।
অনেকেই বলতে পারেন খোদ আমেরিকা, ফ্রান্স বা ইটালী জার্মানীর মতো দেশ যেখানে ব্যার্থ সেখানে আমাদের এই ব্যার্থতা এড়ানো যেতেই পারে! না । বিষয়টি মোটেও অত সরল নয়। তারা তাদের পুরো সিস্টেমকে কাজে লাগিয়েছে। প্রতিদিন লাখের উপরে টেষ্ট করছে। হোটেল, স্টেডিয়ামকে হাসপাতাল বানিয়েছে। মানুষকে নূন্যতম চিকিৎসা সুবিধা দিয়েছে সর্বোচ্চ আন্তরিকতায়। তারপর মৃত্যুর হারের কাছে হার মেনেছে।
কিন্তু আমাদের কি হচ্ছে? একজন সাধারন রোগীও ভর্তি হতে পারছে না। সর্দি জ্বর শুনলেই হাসপাতালের পর হাসপাতাল এম্বুলেন্স ঘুরছে। কেউ ভর্তি নিচ্ছে না? কি জঘন্য। কি অমানবিক! স্বাস্থ্য সেবা নীতিমালার কতটা বহির্ভুত কান্ড!!
একদম কাছের দেখা, আমাদের এক শ্রদ্ধেয় ভাই- একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা আলমাস উদ্দিন। সারা রাত এম্বুলেন্স নিয়ে নূন্য ৬টি হাসপাতালে ঘুরেছেন ১৬ ঘন্টা। কেউ ভর্তি করেনি। পরদিন ভোর সাড়ে সাতটার দিকে তিনি ইন্তেকাল করেন। ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস একজন মুক্তিযোদ্ধা যার নূন্যতম চিকিৎসা দিতে পারলোনা রাষ্ট্র উনাকেই বিকেলে রাষ্ট্রীয় গার্ড অফ অনার দিয়ে বিদায় দিল।
এরকম অসংখ্য ঘটনা যারা অনেক অনেক টাকার মালিক হবার পরো স্বাভাবিক চিকিৎসা সেবা না পেয়ে হইলোক ত্যাগ করেছেন। পত্রিকার পাতায় নিত্যই যা হৃদয়বিদারক ঘটনা হিসেবে প্রকাশিত হচেছ। সেই ক্ষেত্রে দরিদ্র, সাধারন মানুষের অবস্থান কোথায় সহজেই অনুমেয়।
আমাদের স্বাস্থ্যখাতে বড় বড় নাম, পদবি আর প্রতিষ্ঠান থাকলেও কার্যকর অবকাঠামো নেই, নীতি নেই প্রমানীত হলো। অলিতে গলি ব্যাঙের ছাতার মতো ক্লিনিক, হাসপাতাল গজিয়ে উঠলেও আপদকালীন তা উপকারী না হয়ে বোঝায় পরিণত হলো। অথবা সরকার তাদেরকে ব্যবহার করার মতো যথাযথ পরিকল্পনা করতে ব্যার্থ হলো।
এই পরম বাস্তবতাকে অস্বীকার না করে সামনে রেখে মুক্তির পথ খুঁজতে হবে।
এক নজরে দেখে নেই স্বাস্থ্য খাতের বর্তমান অবস্থা -
“বাংলাদেশের প্রতিটি বাসিন্দার ন্যায়সঙ্গত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে, বাংলাদেশের প্রশাসনিক ওয়েবের বিস্তৃত নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের অবকাঠামো তিন স্তরে ভাগ করা যায়: মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটি, মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বিশেষায়িত হাসপাতাল তৃতীয় স্তরে রয়েছে। জেলা হাসপাতাল, মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র মাধ্যমিক স্তর হিসেবে বিবেচিত। উপজেলা (সাব জেলা) স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র, কমিউনিটি ক্লিনিক (সর্বনিম্ন স্তর স্বাস্থ্য সুবিধা) হচ্ছে প্রাথমিক স্তরের স্বাস্থ্য প্রদানকারী। বিভিন্ন এনজিও (বেসরকারি সংগঠন) ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানও এই জটিল স্বাস্থ্য নেটওয়ার্কে অবদান রাখে।
২০১৭-১৮ বাংলাদেশ সংসদীয় বাজেটে কেবল স্বাস্থ্যখাতে বাজেট নির্ধারন করা হয়েছে ১৬ হাজার ২০৩ কোটি ৩৬ লাখ টাকা।
মোট (হাসপাতাল) 127 29973 উত্স: স্বাস্থ্য পরিষেবা, স্বাস্থ্য ব্যুরো, 2017 এর ডিজি
২০১১ সালে বিশ্বব্যাংকের একটি ডাটা অনুযায়ী বাংলাদেশে প্রতি ৩০০০ জনের জন্য একটি হাসপাতাল বেড রয়েছে।স্বাস্থ্যসেবার উপর ২০০৯-এ সরকারের সাধারন ব্যয় ছিল মোট ৭.৯%, জনগন তাদের স্বাস্থ্যসেবায় নিজেদের থেকে খরচ করেছে ৯৬.৫%। চিকিৎসক অনুপাত জনসংখ্যা – ১:২,০০০, নার্স অনুপাত জনসংখ্যা – ১:৫,০০০” প্রতি দুই হাজার জনে একজন চিকিৎসক এবং পাঁচ হাজার জনে একজন নার্স!
বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) সর্বশেষ (৫ জুলাই) তথ্যানুসারে রেজিস্টার্ডভুক্ত ৮৮ হাজার ৩০ জন এমবিবিএস ও ৮ হাজার ৫২৪ জন ডেন্টালসহ মোট ৯৬ হাজার চিকিৎসক রয়েছেন। জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশসহ ৪৪ শতাংশ দেশে এখনও জনসংখ্যার তুলনায় প্রয়োজনীয় সংখ্যক ডাক্তারের ঘাটতি রয়েছে। বাংলাদেশে বর্তমানে ২ হাজার ৫শ’ মানুষের জন্য একজন ডাক্তার রয়েছে, যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম।
এছাড়াও ডাক্তারী চর্চার গতানুগতিক পদ্ধতি পরিবর্তন করে উন্নত বিশ্বের মতো রেফারেল সিস্টেম চালু করতে হবে।যেখানে ইমার্জেন্সি বা জরুরি অবস্থা ছাড়া যে কোনো অসুখের জন্য রোগীকে প্রথমে একজন সাধারণ এমবিবিএস পাস করা বা সমমানের কোনো ডাক্তারের কাছে যেতে হয়। এই ডাক্তারদের সাধারণত “জেনারেল প্রাক্টিশনার” বা “ফ্যামিলি ফিজিশিয়ান” বলা হয়। এরা প্রাথমিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর যদি মনে করেন রোগীর উন্নত মানের চিকিৎসা লাগবে, তাহলেই কেবল তারা রোগীকে প্রয়োজনীয় বিষয়ের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে পাঠান বা রেফার করেন। আমাদের দেশের মতো সামান্য সর্দি-কাশি বা ঠাণ্ডাজ্বর হলেই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে সরাসরি চলে যাওয়ার সুযোগ সেখানে নেই।
এর ফলে জেনারেল প্রাক্টিশনাররা যেমন সাধারণ রোগীদের দেখার সুযোগ পাচ্ছেন, তেমনি বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররাও অপ্রয়োজনীয় রোগী দেখে সময় নষ্ট না করে জটিল রোগীদের অধিক মনোযোগ সহকারে দেখতে পারেন। এর ফলে ডাক্তারদের ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ার গড়ার ব্যাপ্তিও বাড়ে। আমাদের দেশেও এ ধরনের সংস্কৃতি গড়ে তোলা দরকার। তাহলে এখন যেমন ডাক্তারদের মধ্যে এফসিপিএস, এমডি, এমএসসহ বিভিন্ন ধরনের স্নাতকোত্তর ডিগ্রি করার জন্য এক ধরনের অসুস্থ উন্মাদনার সৃষ্টি হয়েছে, সেটি তখন অনেকাংশে হ্রাস পাবে। গুরুত্ব বাড়বে এমবিবিএস ডিগ্রিরও। বর্তমানের মতো তখন আর এমবিবিএস ডিগ্রিকে গুরুত্বহীন মনে করার অবকাশ কমে যাবে। এমবিবিএস পাস করার পর সবাইকেই স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিতে হবে এমন কোনো কথা নেই। তাহলেই অসাধু ক্লিনিক ব্যবসায়ী, ঔষুধ কোম্পানীর লাগামহীন অনৈতিক প্রতিযোগীতার্ও লাগম টেনে ধরা যাবে।
দেশেরে স্বাস্থ্য খাতের আরো বেহাল অবস্থা উঠে আসে প্রথম আলোর এক প্রতিবেদনে।
খবরে বলা হয় দেশের স্বাস্থ্য খাতের বেহাল চিত্র উঠে আসা তিনটি জরিপ প্রতিবেদন প্রকাশ করছে না সরকার। গত বছর মাতৃমৃত্যু ও স্বাস্থ্যসেবা জরিপের প্রাথমিক ফলাফল প্রকাশ করার দেড় সপ্তাহ পর ওয়েবসাইট থেকে তা সরিয়ে নেওয়া হয়। প্রতিবেদনটি পর্যালোচনার জন্য এখনো আটকে আছে। বাংলাদেশ জনমিতি ও স্বাস্থ্য জরিপের তথ্য ৯ মাস আগে সংগ্রহ শেষ হলেও তা প্রকাশিত হয়নি। আর বাংলাদেশ স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান জরিপের কাজ শেষ হয়েছে গত বছর।
তাতে সার সংক্ষে হিসেবে যে সমস্যা গুলো উঠে আসে তা হলো :
• চিকিৎসাসেবা পরিস্থিতি
• সব ধরনের সেবার ক্ষেত্রে সমন্বিত প্রস্তুতির মান নিম্নপর্যায়ের
• গত তিন বছরে উন্নতি হয়নি বলে খসড়া প্রতিবেদনে মন্তব্য করা হয়েছে
• মাতৃস্বাস্থ্য ও শিশুস্বাস্থ্যে অর্জন ধরে রাখতে পারছে না বাংলাদেশ
• সেবা দিতে প্রতিষ্ঠানগুলো প্রস্তুত থাকে না
এই বাস্তবতা দিয়ে বৈশ্বিক পেনডেমিক মহামারী প্রতিরোধ কি সম্ভব? কোনভাবেই নয়। সাধারন মানের চিকিৎসাই যেখানে অপ্রতুল। তাই সমাধানের পথ বৈশ্বিকভাবে স্বীকৃত সফল উদাহরন গুলো অনুসরন করা। স্বাস্থ্যসেবাকে বানিজ্যের বদলে “সেবার স্থান” দেয়া। এবং কল্যান রাস্ট্রের আদলে সবার জন্য স্বাস্থ্য সুনিশ্চিত করার যুগোপযুগি পরিকল্পনাকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাস্তবায়ন।
লক ডাউন সিনড্রোম কাটাতেই এই ভাবনাতে জল দিতে শুরু করি। কিভাবে তা সম্ভব। প্রচলিত সরকারী উপর থেকে নীচ ফর্মূলায় তা এখনো সম্ভব হয়নি। নীচ থেকে উপরে গেলে কেমন হয়? এবং এক পর্যায়ের বিস্ময়ের সাথে আবিস্কার করি আমাদের দেশেও সেই সেবা দেয়া খুবই সম্ভব। “ন্যাশনাল হেলথ কেয়ার” প্রকল্পের (প্রস্তাবিত) মাধ্যমে কোন বিদেশী অনুদান বা ঋণ সাহায্য গ্রহণ ব্যাতিরেকেই প্রতি একশত জনের জন্য একজন ডাক্তার, একজন প্যারামেডিক, দুইজন নার্স এবং একজন স্বাস্থ্য সহকারী নিশ্চিত করা সম্ভব।
দেশটাকে ১৮ কোটি জনসংখ্যা ধরে (প্রয়োজনে আনুপাতিক হারে বাড়বে) “ন্যাশনাল হেলথ কেয়ার” প্রকল্পে দেশকে জনসংখ্যানুপাতে ১ লাখ ৮০ হাজার ক্ষুদ্র কোরে (ইউনিটে) ভাগ করতে হবে। প্রতিটি কোরে উল্লেখিত অনুপাতে একজন ডাক্তার, একজন প্যারামেডিক, দুইজন নার্স এবং একজন স্বাস্থ্য সহকারী সমন্বয়ে টিম গঠিত হবে। প্রতিটি কোর নির্ধারিত এলাকায় দিনে মাত্র ১৪ জন রোগীকে কাভার করলে রাউন্ড দা উইক ১০০ জন কাভারেজের আওতায় চলে আসবে। এভাবে চলতেই থাকবে রাউন্ড দা মান্থ, রাউন্ড দা ইয়ার।
এবং চেকাপের পর প্রতি সপ্তাহে তারা তথ্যপ্রযুক্তির সাহায্যে জাতীয় স্বাস্থ্যসেবার কেন্দ্রীয় সার্ভারে তথ্য আপলোড করবে। কল্যান রাস্ট্রের আদলে সকল নাগরিকের “হেলথ কার্ড” থাকবে এনআইডির অনুরুপ। সে জন্যে আদম শুমারীর মতো “স্বাস্থ্য শুমারী” করতে হবে একবার। পরবর্তীতে জন্ম মৃত্যু সনদের আবশ্যিকতা নির্ধারনের মাধ্যমে ডিজিটালী তথ্য বিনিময় এবং প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত আপডেট হতে থাকবে। সরকারী বেসরকারী সকল হাসপাতালগুলো একই সার্ভারে যুক্ত থাকবে। এবং সকল নাগরিক স্বাস্থ্য পরিষেবার তথ্য নিয়মিত হালনাগাদ করবে।
“ন্যাশনাল হেলথ কেয়ার” প্রকল্পের জন্যে প্রয়োজন নূন্যতম ১ লাখ আশি হাজার ডাক্তার, সমানুপাতিক প্যারামেডিক, ৩ লাখ ৬০ হাজার নার্স, এবং ১ লাখ ৮০ হাজার স্বাস্থ্য সহকারী। এত বিপুল সংখ্যক জনবলতো রাতারাতি তৈরী করা সম্ভব নয়। তাই নূন্যতম ১০ বছর মেয়াদী উদ্যোগ নিতে হবে। প্রতিটি মেডিক্যাল কলেজে, সরকারী এবং বেসরকারী সবগুলোতে দুই শিফট চালু করতে হবে। এমবিবিএসকে মাথাভারী কোর্স না করে জনস্বাস্থ্য সম্পৃক্ত মৌলিক আধুনিক চিকিৎসা শিক্ষায় আপগ্রেড করে উন্নত শিক্ষাকে পৃথক কোর্সে যারা আগ্রহী কেবল তাদের জন্য রাখা যেতে পারে। প্রয়োজনে কোর্স কারিকুলাম যুগোপযুগি করে সমসাময়িক বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে নিয়ে আপগ্রেড করতে হবে। প্যারামেডিক, স্বাস্থ্য সহকারী এবং নার্সের ক্ষেত্রেও নতুন প্রতিষ্ঠানের সাথে সাথে পুরানো প্রতিষ্ঠানগুলোতে দুই শিফটে শিক্ষাক্রম চালু রাখতে হবে।
এবং “ন্যাশনাল হেলথ কেয়ার” প্রকল্পের এই কার্যক্রমকে সাধারন আটপৌড়ে ঢিমতেতলা প্রকল্প হিসেবে না দেখে জাতীয় জরুরী প্রয়োজনে জাতীয় সেবা এবং জরুরী ভিত্তিতে বাস্তবায়নে দেশ গঠন এবং দেশ সুরক্ষার দেশপ্রেমিক চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে একটা মিশন হিসেবে বাস্তবায়ন করতে হবে।
সাধারণ শিক্ষা ব্যবস্থায়্ও এর অনুকুলে পাঠক্রমে পরিবর্তন আনতে হবে। যাতে দ্বাদশ শ্রেণী শেষ করার পর একজন দেশসেবায় স্বাস্থ্য খাতে কাজ করতে চাইলে যেন সহজেই তাতে অংশ নিতে পারে। এবং স্কুল লেভেল থেকে স্বাস্থ্য সচেতনতা বিষয়ক পাঠক্রম যুক্ত করতে হবে। প্রাথমিক চিকিৎসার সাধারন বিষয়গুলো যেন সকলেই অবহিত থাকে। এবং স্কাউট বিএনসিসির মতো “ন্যাশনাল হেলথ কোরের” কার্যক্রম যুক্ত করা যেতে পারে। যাতে অংশ নেয়া শিক্ষার্থীরা স্বাস্থ্যসেবা সেক্টরে যোগদানের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবে।
সবশেষে প্রশ্ন আসে অর্থনৈতিক। বিপুল পরিমান অর্থ এবং ব্যায় নির্বাহ কিভাবে হবে। আমি হলফ করে বলতে পারি এরচে সহজ প্রশ্ন বুঝি দ্বিতীয়টি নেই। সঙ্গত কারণেই বিস্তারিত এখানে দেয়া হলো না। খাতটি হলো সামাজিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় কল্যান রাষ্ট্রে যেভাবে “হেলথ ইন্সুরেন্স” “মেডিকেয়ার” ব্যবস্থা রয়েছে, রাস্ট্র যদি সেই দায়িত্ব নেয় তবে অর্থ যেমন সমস্যা নয়, নাগরিকগণ্ও চিন্তামুক্ত স্বাস্থ্যসেবা পেতে পারে। সাথে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের প্রণোদনার দায়তো রয়েই গেল। জাতীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের বাজেট ও “ন্যাশনাল হেলথ কেয়ার” বাজেট সু সমন্বয়ের মাধ্যমে খূব সহজেই নাগরিকদের স্বাস্থ্যসেবার নিশ্চয়তা দেয়া যায়।
আর দূর্নীতি বা অন্য অসদুপায়ের কথা যদি এসেই যায়- তার জন্যে খুব সহজ নিরাময় আছে সঠিক সিস্টেম ডেভেলপ করা। তা হতে পারে যেমন প্রযুক্তির সাহায্যে, তেমনি নৈতিকতার শিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে, এবং যথাযথ কর্মপদ্ধতি নির্ধারণ ও সঠিক অনুসরনের মাধ্যমে। বেসরকারী বা কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো যেভাবে পদ্ধতি উন্নয়ন করে নিশ্চিন্তে প্রতিষ্ঠান চালায়, তেমনি পদ্ধতি উন্নয়ন এবং তার যথাযথ অনুসরণ নিশ্চিত করা বা স্বায়ত্তশাসিত যা প্রযোজ্য হয়; এবং সিস্টেমের কল্যানেই চাইলেও কেউ দূর্ণীতি করতে পারবে না। বা করলে ধরা পড়বে এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা তো থাকবেই।
“ন্যাশনাল হেলথ কেয়ার” প্রকল্প ইউটোপিয়া থেকে বাস্তব হয়ে ধরা দিক। প্রতিটি নাগরিক আসুক স্বাস্থ্য সেবা ও সুরক্ষার আওতায়। স্বাধীনতার সার্ধশতবর্ষের কাছাকাছি দাড়িয়ে এই স্বপ্নটুকু তো দেখতেই পারি।
তথ্যসূত্র ও কৃতজ্ঞতা:
গুগল (ছবি)
বাংলাদেশ স্বাস্থ্য উইকি
ইউএস ন্যাশনাল হেলথ কেয়ার উইকি
প্রথম আলো ,পুন্ড্রকথা.কম,ডয়েচে ভেলে, জাগো নিউজ সহ অর্ন্তজাল
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ১:৩১