somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভাস্কর্য - মূর্তি দ্বন্ধ : প্রকৃত সত্যের স্বরূপ সন্ধান

২৮ শে নভেম্বর, ২০২০ সকাল ১১:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভাস্কর্য না মূর্তি?
ভাস্কর্য বিরোধীতায় সরব এক পক্ষ। যাদের নেতৃেত্ব আছে হেফাজতে ইসলাম নামের এক দল। অতিসম্প্রতি হেফাজতের আমির বাবুনগরী সাহেব বললেন- যদি কোথাও কোনো ভাস্কর্য হয়, যে দলই করুক, টেনেহিঁচড়ে ফেলে দেব! এ প্রসংগে তিনি প্রধানমন্ত্রীর বলা মদীনা সনদ অনুযায়ী দেশ চলবে এই ঘোষনার কথাও মনে করিয়ে দেন। শুরুতেই তাই মদীনা সনদ সম্পর্কে পরিষ্কার ধারনা নেয়া প্রয়োজন।
মদীনা সনদ কি?
৬২২ খ্রিষ্টাব্দের ২৪শে সেপ্টেম্বর রাসুল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনা নগরীতে হিজরত করেন। এসময় সেখানে বসবাসরত বনু আওস এবং বনু খাজরাজ সম্প্রদায় দুটির মধ্যে ছিল গোষ্ঠীগত হিংসা-বিদ্বেষ।তাই কলহে লিপ্ত এ দুটি সম্প্রদায়ের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব ও সম্প্রীতি স্থাপন ও মদিনায় বসবাসরত সকল গোত্রের মধ্যে সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে নবী মুহাম্মাদ সা: একটি সনদ বা সংবিধান প্রণয়ন করেন যা ইতিহাসে মদিনার সনদ নামে পরিচিত।
কি আছে এতে?
মদিনা সনদের মূল বিষয়বস্তু সম্পর্কে উইকিপিডিয়াতে মোট ১৪টি ধারা দেয়া আছে।
সবচে মজার বিষয় এর কোনটিতে ভার্স্কয নিয়ে কোন কথা নেই!
মদীনা সনদের ধারার মূল বিষয়বস্তু সমূহ:
1. সনদপত্রে স্বাক্ষরকারী সম্প্রদায়সমূহ একটি জাতি গঠন করবে;
2. যুদ্ধ বা হানাহানি শুরু হবার মতো তীব্র বিরোধ তৈরি হলে বিষয়টি আল্লাহ এবং হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে ন্যস্ত হবে;
3. কোনো সম্প্রদায় গোপনে কুরাইশদের সাথে কোনো প্রকার সন্ধি করতে পারবে না কিংবা মদিনা বা মদিনাবাসীদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে কুরাইশদের কোনো রূপ সাহায্য-সহযোগিতা করতে পারবে না;
4. মুসলিম, খ্রিষ্টান, ইহুদি, পৌত্তলিক ও অন্যান্য সম্প্রদায় ধর্মীয় ব্যাপারে পূর্ণ স্বাধীনতা ভোগ করবে, কেউ কারো ধর্মীয় কাজে কোনো রকম হস্তক্ষেপ করতে পারবে না;[৬][৭][৮]
5. মদিনার উপর যে কোনো বহিরাক্রমণকে রাষ্ট্রের জন্য বিপদ বলে গণ্য করতে হবে এবং সেই আক্রমণকে প্রতিরোধ করার জন্য সকল সম্প্রদায়কে এক জোট হয়ে অগ্রসর হতে হবে;[৯]
6. অমুসলিমগণ মুসলিমদের ধর্মীয় যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে বাধ্য থাকবে না;[১০]
7. রাষ্ট্রের প্রতি নাগরিকের অধিকার ও নিরাপত্তা রক্ষার ব্যবস্থা থাকবে;
8. অসহায় ও দুর্বলকে সর্বাবস্থায় সাহায্য ও রক্ষা করতে হবে;
9. সকল প্রকার রক্তক্ষয়, হত্যা ও বলাৎকার নিষিদ্ধ করতে হবে এবং মদিনাকে পবিত্র নগরী বলে ঘোষণা করা হবে;
10. কোনো লোক ব্যক্তিগত অপরাধ করলে তা ব্যক্তিগত অপরাধ হিসেবেই বিচার করা হবে, তার কারণে অপরাধীর সম্প্রদায়কে দায়ী করা যাবে না;
11. মুসলমান, ইহুদি ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের লোকেরা পরস্পর বন্ধুসুলভ আচরণ করবে।
12. রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিরোধ নিষ্পত্তির অধিকার থাকবে রাষ্ট্রপ্রধানের এবং তিনি হবেন সর্বোচ্চ বিচারালয়ের সর্বোচ্চ বিচারক;
13. মুহাম্মদ-এর অনুমতি ব্যতীত মদিনাবাসীগণ কারও বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করতে পারবে না;
14. মুসলমানদের কেউ যদি অন্যায় কিংবা বিশ্বাসঘাতকতা করে তবে সবাই মিলে তার বিরুদ্ধে যথোচিত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে, নিজ সন্তান বা আত্নীয় হলেও এ ব্যাপারে তাকে ক্ষমা করা যাবে না।

এত বড় বড় মানুষ এত বড় বড় পদে বসেও কি তবে বিভ্রমে আছেন?
ইসলামের প্রথম কথা ইক্বরা। জ্ঞানাজর্নের সেই ধর্মে কি আজ তবে অজ্ঞানতার জয় জয়কার? চলুন জেনে নিই ভার্স্কয আর মূর্তির মৌলিক জ্ঞানে কি বলা হয়েছে।

সংগা:
ভাস্কর্য (ইংরেজি: Sculpture) যার আরবী প্রতিশব্দ হলো তামাসিলা (ভাস্কর্য) । ত্রি-মাত্রিক শিল্পকর্মকে ভাস্কর্য বলে।অর্থাৎ, জ্যামিতিশাস্ত্রের ঘণকের ন্যায় ভাস্কর্যকে দৈর্ঘ্য, প্রস্থ এবং গভীরতা সহ ত্রি-মাত্রিক হতে হবে। বিশ্বের সর্বত্র বিভিন্ন ধরনের, বহুমূখী আকৃতির ভাস্কর্য দেখতে পাওয়া যায়। রেনেসাঁ এবং আধুনিককালে এটি ব্যাপকভাবে প্রসারিত হয়েছে। পুতুল, মুখোশ, মাটির জিনিসপত্র ভাস্কর্যের উদাহরণ।

মূর্তি (ইংরেজি: idolate) মূর্তি (যা বিগ্রহ নামেও পরিচিত) বলতে দেবতার প্রতিমাকে বোঝায়। যার আরবী প্রতিশব্দ আসনাম।শব্দটির আক্ষরিক অর্থ হল “অবয়ব”। মূর্তি দেবতার প্রতিনিধি। সাধারণত পাথর, কাঠ, ধাতু অথবা মাটি দিয়ে মূর্তি নির্মাণ করা হয়।মুর্তি পূজকরা মূর্তির মাধ্যমে দেবতার/স্রস্টার পূজা করে থাকেন। মূর্তিতে দেবতার আবাহন ও প্রাণপ্রতিষ্ঠা করার পরই সেই মূর্তিকে পূজার যোগ্য মনে করেন। ধর্মীয় সংস্কার বা শাস্ত্রের নির্দেশ অনুযায়ী নির্দিষ্ট দেবতার মূর্তি নির্মিত হয়ে থাকে।অর্থাৎ প্রতিমা হল মানুষ যার প্রতিকীকে সামনে রেখে আরাধনা উপাসনা করে, ইহকালে-পরকালে মঙ্গল চায়, ধর্মীয় বিধি মেনে পূজা করে ইত্যাদি।

ভাস্কর্যর ইতিহাস:
খ্রীষ্ট-পূর্ব ৩৩০০-১৭০০ সালে প্রতিষ্ঠিত সিন্ধু সভ্যতায় প্রথম ভাস্কর্যের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। বর্তমান পাকিস্তানের মহেঞ্জোদাড়ো এবং হরপ্পায় দেখা গিয়েছিল। পরবর্তীতে হিন্দু, বৌদ্ধ এবং জৈন ধর্মের উত্তরণে ভারতে ব্রোঞ্জ ধাতু ও পাথরে খোদাই করে সৃষ্টি করা হয় ভাস্কর্যগুলো। সমধিক পরিচিত দেব-দেবীদের মূর্তি ভাস্কর্য আকারে তৈরী করে মন্দির কিংবা উপাসনালয়ে রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়। তন্মধ্যে ইলোরা এবং অজন্তা'য় পাথরের ভাস্কর্যগুলো বিশ্বের সবচেয়ে বড় এবং সর্বাধিক মর্যাদাপূর্ণ ভাস্কর্য শিল্পকলা হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আসছে।



মুসলিম দেশে ভাস্কর্য:
সবচেয়ে বেশি ভাস্কর্য রয়েছে ইসলামী প্রজাতন্ত্র খ্যাত পাকিস্তানে। সেখানে জিন্না মিউজিয়ামে জিন্নাহর একটি ভাস্কর্য রয়েছে। বেনজির ভুট্টো থেকে শুরু করে সম্প্রতি এরতুগ্রুলের ভাস্কর্যও স্থাপিত হয়েছে।


তুরস্কের কামাল আতাতুর্ক, মাওলানা রুমি সহ অনেকের ভাস্কর্য রয়েছে। ব্রিজম্যান আর্ট গ্যালারিতে ওসমানিয়া খেলাফতের সময়কার পেইন্টিং আছে যেখানে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর ছবি আঁকা হয়েছে। ইরান, ইরাক, মরক্কো ও তুরস্কে শতাধিক ভাস্কর্য রয়েছে। মানুষের ভাস্কর্য আছে কুয়েত, কাতার ও দুবাইয়েও । সৌদি আরবে স্ট্যাচু অব লিবার্টির রেপ্লিকা প্রদর্শন করা হয়েছে। জেদ্দা মিউজিয়ামে অনেকগুলো ভাস্কর্য রয়েছে। এছাড়া ইরানের শীর্ষ আলেমদের ফতোয়া মোতাবেক তাজিমের সঙ্গে কিছু আঁকা ও ভাস্কর্য নির্মাণ জায়েজ। সম্ভবত আফগানিস্তান ছাড়া সকল মুসলিম দেশেই ভাস্কর্য রয়েছে।


ভাস্কর্যের ক্ষেত্রে যে বিধিনিষেধ ছিল না তার ঐতিহাসিক দৃষ্টান্ত রয়েছে। আবু বকর (রাঃ) এর শাসনামলে আমর বিন আসের মিশর অভিযানে ফারাও ও স্ফিংস ভাস্কর্য অক্ষত ছিল। সাদ বিন আবি ওয়াক্কাসের ইরাকে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার সময়ও কোনো মূর্তি ভাঙ্গা হয় নি।

মুসলমানদের তীর্থস্থান খ্যাত সৌদি আরবের জেদ্দাতেই আছে দুই দুইটি মূর্তি! একটি উটের ‘মূর্তি’, আরেকটি মুষ্টিবদ্ধ হাত সদৃশ ‘মূর্তি’।
যুগল ভাস্কর্য -এসব নিয়ে কোনো সমস্যা নেই।


ইরান, মিসর, ইরাকের জাদুঘরে অসংখ্য ভাস্কর্য এবং প্রাচীন শাসক ও দেব-দেবীর মূর্তি তো রয়েছেই, সেসব দেশে উন্মুক্ত স্থানে রয়েছে অনেক ভাস্কর্য। ইরানে আছে একটি বিশাল স্বাধীনতাস্তম্ভ, যার নাম ‘আজাদী’।


এ স্থাপত্যটির ডিজাইনার হোসেন আমানত একজন মুসলমান। মাশহাদ নগরীতে ভাস্কর্য সংবলিত নাদির শাহ সমাধিসৌধটি পর্যটকদের কাছে খুবই আকর্ষণীয়।

পিরামিডের জন্য দুনিয়াজোড়া খ্যাতি মিসরের। পাথরের তৈরি মূর্তি সংবলিত গিজা পিরামিড সারা দুনিয়ার পর্যটকদের অতি প্রিয়। কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়ে আছে মাহমুদ মোখতারের বিখ্যাত ভাস্কর্য ‘মিসরের রেনেসাঁ’।

ইরাকেও আছে অনেক ভাস্কর্য। বাগদাদ বিমানবন্দরের সামনে ডানার ভাস্কর্যটি সবার নজর কাড়ে। বাগদাদের পাশে আল-মনসুর শহরে আছে মনসুরের একটি বিশাল ভাস্কর্য। আছে অনেক সাধারণ সৈনিকের ভাস্কর্য। সাদ্দাম হোসেনের বিশাল আকারের ভাস্কর্যটি মার্কিন আগ্রাসনের পর ভেঙে ফেলে সাদ্দামের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ, যারা মার্কিন বাহিনীর মদতপুষ্ট।

পারস্যের কবি শেখ সাদী। উনি হচ্ছেন সেই মানুষ যার ‘নাত’-এ দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানেরা মিলাদে সব সময় পাঠ করে থাকেন ‘বালাগাল উলা বি কামালিহি কাশাফাদ্দুজা বি জামালিহি’- এই শেখ সাদীর মাজারের সামনেই তার একটি মর্মর পাথরের ভাস্কর্য আছে।



ইসলামি রাষ্ট্র ইরানে অবস্থিত কবি ওমর খৈয়াম ও মহাকবি ফেরদৌসির ভাস্কর্য নিয়ে কারো সমস্যা নেই। তেহরানে অজস্র মানুষের প্রতিকৃতি সম্বলিত ‘মূর্তি’ নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। সমস্যা নেই সিরিয়ার ন্যাশনাল মিউজিয়ামের ‘মূর্তি’ নিয়েও। সব সমস্যা শুধু বাংলাদেশে।

গোটা ইসলামী শাসনের যুগে সারাবিশ্বে অগণিত ভাস্কর্য তৈরি হয়েছে। এটি নিষিদ্ধ হলে নির্মাণ হতো না। এবং ইসলামের যখন জয়জয়কার সেই খোলাফায়ে রাশেদার সময়েও বিজয়ের পর কোন ভাস্কর্য ভেঙ্গে ফেলার ইতিহাস পাওয়া যায় না। বরং এ বিষয় রাসূল সা: এর নির্দেশ খুব স্পষ্ট - রাসূলুল্লাহ (সা.) ও খোলাফায়ে রাশেদিনের চিরাচরিত নিয়ম ছিল, যখন কোনো সেনাবাহিনী প্রেরণ করার প্রয়োজন হতো, তখন যুদ্ধ সম্পর্কিত বিভিন্ন নসিহত, দিকনির্দেশনার পাশাপাশি একথা অবশ্যই বলে দিতেন যে, ‘যুদ্ধকালীন সময়ে বা যুদ্ধের পর কোনো মন্দির-গীর্জা-উপাসনালয় ভেঙে ফেলবে না। ’ -মুসান্নাফ আবি শায়বা : ৩৩৮০৪
যার প্রমাণ পাই সারা বিশ্বেই। মিশর জয়ের পর কোন পিরামিড বা ভাস্কর্য ভাঙ্গা হয়নি। আজো তারা সগর্বে দাড়িয়ে থেকে সেই সত্যেরই প্রত্যায়ন করছে।





মূর্তি এবং ভাস্কর্য নিয়ে খাজা সোহেল আরমান চিশতীর কবিতাটা খূব তাৎপর্যপূর্ণ:
মূর্তির কোন ক্ষমতা নেই পাপ ও পুণ্যের।
মূর্তির ক্ষমতা নেই মসজিদ, মন্দির, প্যাগোডা, গির্জায় অথবা শিক্ষালয়ে শিশু বলাৎকারের।
মূর্তির ক্ষমতা নেই স্বামীর কাছ থেকে স্ত্রীকে ছিনিয়ে নিয়ে ইজ্জত হননের।
মূর্তির ক্ষমতা নেই দুর্বলের মুখের অন্ন কেড়ে ভুরি ভোজনের।
মূর্তির ক্ষমতা নেই মৃত নারীর লাশের সহিত যৌন সঙ্গমের।

মূর্তি কি কখনো কাউকে দিয়েছে হাত ছানি?
পূজো কর আমায়, ঈশ্বর মানো আমায়
অথবা শুনিয়েছে কি ধর্ম বা অধর্মের কোনও বাণী?
করেনি আঘাত তোমার প্রতি,
তোমার ধর্মের প্রতি কেউ।

পূজারীর মূর্তি?
সে তো দেব-দেবী
অথবা ভগবানের কোনো কল্পিত ছবি।

ভাস্কর্য?
সে তো তুলে ধরে একটি জাতির ইতিহাস-
ঐতিহ্য, সংস্কৃতি সব-ই ।

ভাস্কর্যকে মূর্তি বলে
কেন জ্বালছো আগুন অবুঝ মনে?
সেতো নিষ্পাপ, নিষ্প্রাণ,
শিল্পী সত্ত্বার শিল্প কর্ম
কেন সেথায় বসাচ্ছো ফতোয়ার ছুরি
কলঙ্কিত করছো ধর্ম?

মূর্তি জ্ঞানে কেহ পুঁজিলে তারে
পাপ সে তো পূজারীর, মূর্তির নহে।
পূজিলে মূর্তি, যদি পাপে ভরে পূজারীর দেহ
সে পাপ একান্তই পূজারীর
যার বোঝা বইবে না অন্য কেহ।

তবে তোমার কেন জ্বলছে এতো?
কেন হানছো আঘাত অন্যের স্বাধীনতায়
সু-বুদ্ধি নেই কি একটুও মাথায়?

ভাস্কর্যকে মূর্তি বলা চলে না। ভাস্কর্য আর মূর্তি এক জিনিস নয়। শব্দগত ভাবেই নয়, ভাবগত ভাবেও নয়। মূর্তি হলো সেই উপাদান যাকে স্রষ্টার প্রতিরুপ বা সমতুল্য মনে করে পূজা করা হয়। যেমন ক্বাবাতে ছিল হোবল, উজ্জা, লাত, মানাত ইত্যাদি।
প্রতিমাকে পূজা করা হয়, তার কাছে প্রার্থনা করা হয়। এছাড়া প্রতিমাকে ভাগ্যবিধাতা, রিজিকদাতা, শক্তিদাতা, এমনকি হুকুমদাতার আসনেও বসানো হয়। এবং কোরআনেও দুটো আলাদা শব্দেই তামাসিলা (ভাস্কর্য) ও আসনাম (মূর্তি) বলেই সত্য প্রকাশ করা হয়েছে ।

ইসলাম ধর্ম ভাস্কর্য নির্মাণ বা প্রদর্শন নিষিদ্ধ করেছে, এমন কোনও বক্তব্য নেই। বরং আল কোরআনে মূর্তিপূজা নিয়ে যে আয়াতগুলো রয়েছে, সেখানে শুধু মূর্তি বা ভাস্কর্য অর্থে শব্দটি ব্যবহৃত হয়নি। ‘মূর্তিপূজা’ করার অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। অর্থাৎ আল কোরআনের অবস্থান মূর্তি বা ভাস্কর্য নয়, মূর্তিকে পূজা করার বিপক্ষে। অনেকে যেভাবএক কথায় বলছেন ‘ভাস্কর্য নিষিদ্ধ’। আল কোরআনে এভাবে কোথাও লেখা নেই ‘ভাস্কর্য নিষিদ্ধ’। বরং উল্টো অনুমোদন পাওয়া যায় - সুলাইমান আ: সর্ম্পকিত সূরা সাবাহর রানী বিলকিসের বৃত্তান্ত ময় সূরা সূরা সাবায়। সূরা সাবায় কি বলেছে?
يَعْمَلُونَ لَهُ مَا يَشَاء مِن مَّحَارِيبَ وَتَمَاثِيلَ وَجِفَانٍ كَالْجَوَابِ وَقُدُورٍ رَّاسِيَاتٍ اعْمَلُوا آلَ دَاوُودَ شُكْرًا وَقَلِيلٌ مِّنْ عِبَادِيَ الشَّكُورُ
“তারা সোলায়মানের ইচ্ছানুযায়ী দুর্গ, ভাস্কর্য, হাউযসদৃশ বৃহদাকার পাত্র এবং চুল্লির উপর স্থাপিত বিশাল ডেগ নির্মাণ করত। হে দাউদ পরিবার! কৃতজ্ঞতা সহকারে তোমরা কাজ করে যাও। আমার বান্দাদের মধ্যে অল্পসংখ্যকই কৃতজ্ঞ।”
They worked for him as he desired, (making) arches, images, basons as large as reservoirs, and (cooking) cauldrons fixed (in their places): "Work ye, sons of David, with thanks! but few of My servants are grateful!"
সূরা সাবা, আয়াত-১৩

সূরা সাবার ১৩ নম্বর আয়াতের তামাসিলা (ভাস্কর্য) এবং সূরা ইব্রাহিমের ৩৫ নম্বর আয়াতের আসনাম (প্রতিমা পূজা)—এই দুটি শব্দের অর্থকে বিকৃত করে যারা একই অর্থে মূর্তিকে ভাস্কর্য বানাতে চাচ্ছেন, তাদের বলবো অনুগ্রহ করে কোরআনের শব্দের অর্থকে ভুল ব্যাখ্যা করবেন না। বরং খেয়াল করুন এই আয়াতে দুর্গ, ভাস্কর্য, হাউযসদৃশ বৃহদাকার পাত্র এবং চুল্লির উপর স্থাপিত বিশাল ডেগ নির্মাণে উৎসাহ দেয়া হয়েছে আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতার শর্তে।

প্রকৃতপক্ষে আল কোরআনে কিছু ঘটনার মাধ্যমে মূর্তিপূজার বিপক্ষে বলা হয়েছে। যেমন, সুরা আল আম্বিয়া: “যখন সে তার পিতা ও তার সম্প্রদায়কে বললো, এই মূর্তিগুলো কী, যার পূজায় তোমরা রত রয়েছ!’ সে বললো: ‘তোমরা নিজেরা ও তোমাদের পিতৃপুরুষরাও রয়েছে স্পষ্ট বিভ্রান্তিতে।” (৫২-৫৪)। অথবা সুরা আল আরাফ: “তখন তারা এমন এক সম্প্রদায়ের কাছে গিয়ে পৌঁছাল, যারা স্বহস্ত নির্মিত মূর্তিপূজায় নিয়োজিত ছিল। তারা বলতে লাগলো, ‘হে মুসা, আমাদের উপাসনার জন্যও তাদের মূর্তির মতোই একটি মূর্তি নির্মাণ করে দিন।’ তিনি বললেন, ‘তোমাদের মধ্যে বড়ই অজ্ঞতা রয়েছে।” (১৩৮)।
এই সুরার ১৩৯ থেকে পরবর্তী আয়াতগুলো পড়লে স্পষ্টতই বোঝা যায়, হজরত মুসার (আ.) সম্প্রদায় গরুর মূর্তি তৈরি করে তার পূজা করলে ওই পূজার বিষয়ে আল্লাহ হজরত মুসার (আ.) সম্প্রদায়কে সতর্ক করেছেন। এখানে শুধু পূজা ছাড়া শুধু মূর্তি বা ভাস্কর্য নিষিদ্ধ তা বলা হয়নি।

তবে সুরা হজের ৩০নং আয়াতের অনেকের বাংলা অনুবাদ: ‘তোমরা মূর্তিদের অপবিত্রতা থেকে বেঁচে থাকো এবং মিথ্যা কথন থেকে দূরে সরে থাকো’ পড়লে মনে হতে পারে মূর্তিপূজা নয়, মূর্তিও বর্জনীয়। কিন্তু ওই আয়াতের পূর্বের ও পরের আয়াতগুলো পড়লে সুস্পষ্টভাবে বোঝা যাবে, মূর্তিদের বলতে এখানে সেই মূর্তিদের কথা বলা হয়েছে, যাদের পূজা করা হয় এবং আল্লাহ তার সঙ্গে ওই মূর্তিদের শরিক করতে নিষেধ করেছেন। ওই মূর্তিদের বলতে এখানে ভাস্কর্য বোঝানো হয়নি। আর সেই কারণে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি ও ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মুজীবুর রহমান ওই আয়াতের অনুবাদ করেছেন: ‘তোমরা বর্জন কর মূর্তিপূজার অপবিত্রতা’ [তাফসির ইবনে কাসীর, চতুর্দশ খণ্ড (ঢাকা : তাফসির পাবলিকেশন কমিটি, ২০০৫), ৪৫৩]।


উপর্যুক্ত আয়াত থেকে ভাস্কর্য ইসলামে বৈধ এবং মূর্তিপূজা অবৈধ তা স্পষ্ট। কারণ আল্লাহ পূর্বের আয়াতগুলোয় মূর্তিপূজা করতে নিষেধ করলেও সূরা সাবার তের নং আয়াতে নিজেই কৃতজ্ঞতা সহকারে দুর্গ, হাউজসদৃশ বৃহদাকার পাত্র এবং চুল্লির ওপর স্থাপিত বিশাল ডেগের পাশাপাশি ভাস্কর্য নির্মাণের কাজ অব্যাহত রাখতে বলেছেন। প্রশ্ন হতে পারে, আল্লাহ ভাস্কর্য নির্মাণ অব্যাহত রাখতে নির্দেশ দিচ্ছেন, সেখানে উলামারা ভাস্কর্য নিষিদ্ধ এ কথা বলার কে! এখানে ‘ওয়াতামাছিল’ শব্দটি পূজার জন্য নির্মিত নয় এমন ভাস্কর্য অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে (অবশ্যই এই বিষয়টি বোঝার জন্য পণ্ডিত হওয়ার দরকার নেই। সাধারণ জ্ঞান বলে নবী সুলাইমান (আ.) নিশ্চয় পূজা করার জন্য কোনও ভাস্কর্য নির্মাণ করবেন না। আর সেই ভাস্কর্যকে আল্লাহ স্বীকৃতি দেওয়ার প্রশ্নও আসে না। সুতরাং এই ভাস্কর্য যে পূজার জন্য নির্মিত হয়নি তা স্পষ্ট)। হজরত সুলাইমান (আ.) ভাস্কর্য নির্মাণ করেছিলেন, সেটি মহান আল্লাহ আল কোরআনে স্বীকৃতি দিয়েছেন। হজরত মুসা (আ.) অথবা ইব্রাহিম (আ.)-এর ক্ষেত্রে যে মূর্তি নির্মাণ করা হয়েছিল, তা উপাসনার জন্য নির্মাণ করা হয়েছিল বলে মহান আল্লাহ তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এবং ওইগুলো পরিত্যাগ করতে নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু হজরত সুলাইমান (আ.)-এর ভাস্কর্য পূজার জন্য নির্মিত হয়নি বলে আল্লাহ ওই ভাস্কর্য নির্মাণকে আল কোরআনে স্বীকৃতি দিয়েছেন। বস্তুত আল কোরআনে ভাস্কর্য বিষয়ে দুই ধরনের বক্তব্য থেকে স্পষ্ট হয় যে, যদি ভাস্কর্য উপাসনার জন্য নির্মিত হয় অথবা উপাসনার জন্য ব্যবহৃত হয়, তাহলে তা অবশ্য নিষিদ্ধ। কারণ তখন সেটি অবশ্যই আর ভাস্কর্য থাকে না। দেব-দেবীর মূর্তিতে পরিণত হয়। আর যদি হজরত সুলাইমান (আ.)-এর মতো সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য বা স্মৃতি রক্ষার্থে নির্মিত হয়, তাহলে সেটি মূর্তি নয়, ভাস্কর্য হিসেবে বিবেচিত হয়। অনেকে হয়তো খোঁড়া যুক্তি দিয়ে বলতে পারেন, হজরত সুলাইমান (আ.)-এর সময় ভাস্কর্য নির্মাণের অনুমতি ছিল; হজরত মোহাম্মদ (সা.) -এর সময় তা বৈধ নয়। তাদের এ ধরনের বক্তব্য আল কোরআনের অস্তিত্বকেই প্রশ্নবিদ্ধ করবে।

কারণ আল কোরআনের প্রায় অধিকাংশ অংশজুড়ে প্রাচীন ইতিহাস, নবীদের সময়ের দৃষ্টান্ত নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে এবং ওই আলোচনার মাধ্যমে মুসলিমদের জন্য করণীয় ও বর্জনীয় সম্পর্কে বলা হয়েছে। মুসলিমরা যদি এভাবে নিজেদের স্বার্থের প্রয়োজনে আল কোরআনে বর্ণিত নবীদের সময়ের ঘটনা তাদের জন্য প্রযোজ্য নয় বলতে থাকেন তাহলে ইসলামের অস্তিত্বই বিপন্ন হবে। কারণ ইসলাম ধর্ম মতে, ইসলাম হজরত মোহাম্মদ (সা.) প্রবর্তিত ধর্ম নয়। হজরত আদম (আ.) ইসলাম ধর্ম প্রবর্তন করেন এবং পরবর্তী সময়ে নানা জাতি-জনপথে আগমনকারী নবীদের মাধ্যমে তা বিকশিত হয়ে সর্বশেষ নবী হজরত মোহাম্মদ (সা.) -এর মাধ্যমে তা পরিপূর্ণতা পায়। তাই পূর্ববর্তী নবীদের সময়ের ঘটনাও মুসলিমদের জন্য অনুসরণীয়। আল্লাহ নিজেই মোহাম্মদ সা: কে ইব্রাহিমের ধর্ম অনুসরনের নির্দেশ দিয়েছেন। তাই এই আয়াত সুলাইমান আ: এর জন্য, আমাদের জন্য নয় এমন বলার সুয়োগ, অধিকার, বা সাহস কোনটাই থাকা উচিত নয়।

আল কোরআনে মূর্তিপূজার প্রেক্ষাপট বর্ণনা করে অনেকে বলেন, যদি ভাস্কর্য তৈরি করা হয় তাহলে মুসলিমরা মূর্তিপূজায় ফিরে যেতে পারে; যেমন গিয়েছিল হজরত মুসার (আ.) সম্প্রদায়, ইব্রাহিম আর এর পরের প্রজন্ম কাবায় তিনশত ষাটটি মূর্তি প্রতিষ্ঠা করেছিল। তাদের জন্য বলছি, সে সম্ভাবনা একেবারেই নেই। কারণ হজরত মোহাম্মদ (সা.) সর্বশেষ নবী। এরপর আর কোনও নবী আসবেন না। পূর্ববর্তী নবীর উম্মতরা মূর্তিপূজায় ফিরে যায়। কারণ পরবর্তী নবী প্রেরণের জন্য আল্লাহ ওই রকম প্রেক্ষাপট তৈরি করেছিলেন। কিন্তু আল কোরআনের ক্ষেত্রে সেই সম্ভাবনা নেই। কারণ সুরা হিজরে আল্লাহ নিজেই আল কোরআন তথা ইসলাম ধর্মের হেফাজত করবেন বলে ঘোষণা করেছেন। তাই কেয়ামত পর্যন্ত ইসলাম কখনও বিলুপ্ত হবে না এবং নতুন নবীও আর আসবে না।

আর ভাস্কর্য নির্মাণ করলে যদি মুসলিমরা মূর্তিপূজায় ফিরে যেতো, তাহলে ইরানে বছরের পর বছর বিদ্যমান থাকা ভাস্কর্যের প্রভাবে ইরানে একজনও মুসলিমের অস্তিত্ব থাকার কথা নয়। অন্যদিকে হজরত মোহাম্মদ (সা.) -এর অবস্থান শুধু মূর্তিপূজার বিপক্ষে ছিল না। তিনি আগুন, বাতাস, চন্দ্র, সূর্য, গ্রহ, নক্ষত্র, গাছ, কুয়া প্রভৃতির ইবাদত সম্ভব নয়–তাও বলেছেন। এবং কোন বিশ্বাসী বা মুসলমান সে সব করে না। যদি কেউ করে সে আর মুসলিমদের অর্ন্তভূক্ত থাকে না।
প্রসঙ্গক্রমে বলতে ইচ্ছে হচ্ছে যে, হযরত মোহাম্মদ (সা: )সহ ইসলাম ধর্মের আদি অনুসারীরাতো মূর্তির মধ্যেই ছোটবেলা থেকে বড় হয়েছিলেন। হযরত মোহাম্মদ (সা: ) কাবা ঘরে যেতেন যেখানে ছিল অনেক মূর্তি। সুখে-দুঃখে তখন কাবাই ছিল সেই অঞ্চলের লোকজনের একমাত্র ভরসার স্থান। অথচ বাল্যকালে তিনি কোনো মূর্তি ভাঙার চেষ্টা করেছিলেন বলে শোনা যায় না।

আরবের মুসলিম ইতিহাস পড়লে দেখা যায়, কাবা ঘরকে একাধিকবার পুনর্গঠন করতে হয়েছিল। একবার কাবা মেরামতের পর ‘হাজরে আসওয়াদ’ উঠিয়ে কে সেটাকে নির্ধারিত স্থানে পুনঃস্থাপন করবে এই নিয়ে যখন মুল গোত্রের নেতারা একমত হতে পারছিল না এবং প্রায় সংঘাত পর্যায়ে চলে এসেছিল তখন বলা হল, পরবর্তী যে ব্যক্তি কাবা ঘরে প্রবেশ করবে আমরা তার পরামর্শ মেনে নিব। সেই পরবর্তী ব্যক্তিটি হলেন তখনকার মোহাম্মদ (সা: )। তিনি বিচক্ষণতা দিয়ে বললেন, কালো পাথরটি একটি চাদরের মাঝখানে রাখা হোক এবং চার গোত্র প্রধান সেটা বহন করে নিয়ে যাক।তিনি নিজে পাথরটি স্ব-স্থানে বসিয়ে দিয়ে- এভাবেই তিনি রক্তাক্ত সংঘাতের শান্তিপূর্ণ সমাধান করে দিলেন।



তখন কি তিনি কাবার মূর্তিগুলো দেখে মুখ ফিরেয়ে নিয়েছিলেন কিংবা তিনি কি দাবি করেছিলেন যে, আমি সমাধান দিব, তোমরা যদি মূর্তি ভেঙে ফেল?

হিজরতের পর মদিনাতে গিয়ে হযরত মোহাম্মদ (সা: ) ‘মসজিদে নবুবী’ স্থাপন করেন। যেখানে ইহুদি-খ্রিস্টান ও পৌত্তলিক পূজকসহ সকলের প্রবেশের অধিকার ছিল এবং একই স্থানে মুসলমানেরা নামাজ পড়তেন। এই মসজিদে বসেই বিভিন্ন ঘটনা ও দ্বন্দ্বের বিচার-মীমাংসা করতেন নবী (সা: )। এটাই ছিল তাঁর দপ্তর। অন্য ধর্মে বিশ্বাসীদের নিজদের মধ্যে মীমাংসায় পৌঁছে দিতে তিনি সেই ধর্ম বা গোত্রের বিচক্ষণ ব্যক্তিদের মতামতও নিতেন।

এছাড়া সেই মদিনা মসজিদে বসে তিনিসহ অন্যান্য মুসলমানেরা জেরুজালেমে অবস্থিত বায়তুল মোকাদ্দাস মুখি হয়ে নামাজ পড়তেন। এরপর যখন তাঁর উপর নির্দেশ এল, (সূরা ২ / ১৪২-১৪৪) তিনি কেবলা ঘুরিয়ে মক্কায় অবস্থিত কাবা ঘরের দিকে মুখ করে নামাজ পড়তে শুরু করলেন। বাস্তবতা হল, তখনো কিন্তু কাবা ঘরের মধ্যে চন্দ্র দেবতা আল্লাহ সহ ৩৬০টি মূর্তি ছিল। মূর্তি থাকা অবস্থায় কেবলা কাবামুখী হয়েছিল এবং মক্কা বিজয়ের আগ পর্যন্ত প্রায় আট বছরেরও অধিক সময় মূর্তিসহ কাবামুখী হয়ে নামাজ পড়েছেন নবীর নেতৃত্বে সে সময়কার মুমিনেরা।

স্বভাবতই মনে হতে পারে, মূর্তির অবস্থান কাবাতে থাকলেও মনের চিন্তা ছিল আল্লাহ কিংবা আল্লাহর পবিত্র ঘর কাবার প্রতি। এখানেই প্রশ্ন এসে যায়, আজ কেন মূর্তি দেখে আমদের ধর্মীয় ইমান ও বিশ্বাস স্থির থাকতে পারে না। কীসের এত ভয়?

আমরা জানি একবার হযরত মোহাম্মদ (সা: ) একবার হজ্জ করার উদ্দেশ্য নিয়ে মক্কা অভিমুখে রওনা হন। কিন্তু কুরাইশদের বাধার কারণে হজ্জ না করে মদিনাতে ফিরে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন। ফিরে যাবার আগে ‘হুদাইবিয়ার সন্ধি’ নামে মক্কাবাসীদের সঙ্গে একটি সন্ধি করেছিলেন তিনি। সেই সন্ধি মোতাবেক পরের বছর তিন দিন মক্কায় অবস্থান করে মুসলমানেরা হজ পালন করেছিল। তখনও কিন্তু ৩৬০টা মূর্তি ছিল কাবা ঘরে। তারা কিন্তু মূর্তি পূজা করেন নি। বা তা সে হিসেবে গণ্যও হয় নি। খুব সহজ সমাধান আছে ইসলামে এই বিষয়ে- ইন্নামাল আমালু বিন নিয়াত। কর্মফল নিয়তের উপর নির্ভরশীল। তবে আর এক দ্বিধা কেন?

মূর্তি ও মূর্তিপূজা সম্পর্কে মহান আল্লাহর কিছু বাণী
মহান আল্লাহ বলেনঃ তোমরা তো আল্লাহকে বাদ দিয়ে মূর্তির পূজা করছো আর মিথ্যা বানাচ্ছো। নিশ্চয়ই আল্লাহ ছাড়া তোমরা যাদের উপাসনা করো, তারা তোমাদের জন্য রিযিক দানের কোন ক্ষমতা রাখে না। তাই আল্লাহর নিকট রিযিক তালাশ করো আর তাঁরই ইবাদাত করো এবং তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো। তাঁরই কাছে তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে। [সূরা আনকাবুত, আয়াত ১৭]

মহান আল্লাহ বলেনঃ আর ইব্রাহিম বলল, দুনিয়ার জীবনে তোমাদের মধ্যে পরস্পরিক ভালোবাসার জন্যই তো তোমরা আল্লাহকে ছাড়া মূর্তিদেরকে গ্রহণ করেছো। তারপর কিয়ামতের দিন তোমরা একে অপরকে অস্বীকার করবে এবং পরস্পর পরস্পরকে অভিশাপ দিবে, আর তোমাদের ঠিকানা হবে জাহান্নাম আর তোমাদের জন্য থাকবে না কোন সাহায্যকারী। [সূরা আনকাবুত, আয়াত ২৫]

মহান আল্লাহ বলেনঃ সে ব্যক্তি অপেক্ষা অধিক বিভ্রান্ত কে, যে আল্লাহর পরিবর্তে এমন কিছুকে ডাকে যা কিয়ামত দিবস পর্যন্তও তার ডাকে সাড়া দিবে না। আর তারা তাদের ডাক সম্বন্ধে অবহিতও নয়। যখন কিয়ামতের দিন মানুষকে একত্রিত করা হবে, তখন তারা তাদের শত্রু হয়ে দাঁড়াবে এবং তাদের উপাসনাকে অস্বীকার করবে। [সূরা আহকাফ, আয়াত ৫-৬]

এসকল আয়াতে পরিষ্কার বলা হচ্ছে উপাস্য হিসেবে নির্মিত মূর্তির কথা। ভাস্কর্যের কথা নয়। আরবী শব্দ তামাসিলা (ভাস্কর্য) এবং আসনাম (প্রতিমা পূজা)—এই দুটি শব্দের অর্থকে বিকৃত করে যারা একই অর্থে মূর্তিকে ভাস্কর্য বানাতে চাচ্ছেন, তাদের বলবো অনুগ্রহ করে কোরআনের শব্দের অর্থকে ভুল ব্যাখ্যা করবেন না।

সাম্প্রদায়িকতার ব্যাপারে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে পবিত্র কোরআন। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘ধর্মের ব্যাপারে জোরজবরদস্তি নেই। ভ্রান্ত মত ও পথকে সঠিক মত ও পথ থেকে ছাঁটাই করে আলাদা করে দেওয়া হয়েছে। ’ -সূরা বাকারা :২৫৬

সুতরাং ‘তোমাদের ধর্ম তোমাদের জন্য, আমাদের ধর্ম আমাদের জন্য। ’ -সূরা কাফিরুন : ৫

একে অন্যের ধর্ম পালন করতে গিয়ে কেউ কোনোরূপ সীমা লঙ্ঘন কিংবা বাড়াবাড়ি করবে না। অন্য কেউ যদি ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করেও ফেলে তবে ভুলেও যেন কোনো ইমানদার এ ধরনের হীন ও জঘন্য কাজের সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত না করে। এ বিষয়টিই নসিহতস্বরূপ মুমিনদের উদ্দেশে আল্লাহতায়ালা বলছেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে যেসব দেবদেবীর পূজা-উপাসনা করে, তোমরা তাদের গালি দিও না। যাতে করে তারা শিরক থেকে আরো অগ্রসর হয়ে অজ্ঞতাবশত আল্লাহকে গালি দিয়ে না বসে। ’ -সূরা আনআম: ১০৮

হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কোনো মুসলমান যদি ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের অধিকার ক্ষুন্ন করে কিংবা তাদের ওপর জুলুম করে, তবে কেয়ামতের দিন আমি মুহাম্মদ ওই মুসলমানের বিরুদ্ধে আল্লাহর আদালতে লড়াই করব। ’ –সুনানে আবু দাউদ : ৩০৫২

ইসলামের নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, ‘যারা মানুষকে সাম্প্রদায়িকতার দিকে ডাকে, সাম্প্রদায়িকতার জন্য যুদ্ধ করে, সংগ্রাম করে এবং জীবন উৎসর্গ করে তারা আমাদের দলভুক্ত নয়। ’ -সুনানে আবু দাউদ : ৫১২৩

তবে প্রকৃত আলেমরা আজো আছেন। তারা উলামায়ে ছু’ দের অন্যায় দাবীর প্রতিবাদে সমাবেশ ও করছেন। ভাস্কর্য স্থাপনকে মূর্তি স্থাপনের সঙ্গে তুলনা করে এটাকে শিরক সংস্কৃতি বা বিজাতীয় সংস্কৃতি বলে আখ্যা দেওয়াকে মামা বাড়ির আবদার বলে মনে করে বাংলাদেশ সম্মিলিত ইসলামী জোট।


গত ২২ নভেম্বর জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে এক সংবাদ সম্মেলনে জোটের পক্ষে এ কথা জানান সভাপতি হাফেজ মাওলানা জিয়াউল হাসান। তিনি বলেন, ‘মূর্তি বা ভাস্কর্য মানেই শিরকের উপকরণ নয়।’
হাফেজ মাওলানা জিয়াউল হাসান বলেন, ‘বাঙালি সংস্কৃতি বিজাতীয় সংস্কৃতি নয়, এটি আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতি। এ সংস্কৃতিতে যেসব জিনিস শিরক বা আল্লাহর সঙ্গে অংশীবাদিতার মিশ্রণ ছাড়াই পালিত হয়ে আসছে, সেটিকে হঠাৎ করে শিরক সংস্কৃতি বলা নোংরা রাজনীতি ছাড়া কিছুই নয়। বুখারি শরিফের শুরুতেই রয়েছে—বিখ্যাত হাদিস, “ইন্নামাল আমালু বিন্নিয়্যাত (নিয়তের উপর কাজ নির্ভরশীল)"।

মূর্তি বা ভাস্কর্য মানেই শিরকের উপকরণ নয়। হযরত আয়শা (রা.)-এর ঘরে ঘোড়ার ছোট মূর্তি রাখা ছিল (সূত্র: বুখারি শরিফ-কিতাবুল আদাব)। কই, রসূল (সা.) তাকে তো নিষেধ করেননি। এই ছোট পুতুল বা মূর্তি পূজার জন্য ছিল না; বরং খেলার জন্য ছিল। তাই রসূল (সা.) নিষেধ করেননি। একইভাবে যেসব ভাস্কর্য সৌন্দর্য্য চর্চা ও রুচিশীলতার পরিচয় বা ঐতিহাসিক কোনও ঘটনার স্মৃতিফলক হিসেবে স্থাপিত হয়, তা ইসলামি শিক্ষানুযায়ী নিষিদ্ধ নয়।’
তিনি বলেন, ‘ভাস্কর্য, প্রতিমা পূজা, মূর্তি—এক জিনিস নয়। পবিত্র কোরআনের সূরা সাবার ১৩ নম্বর আয়াতে ভাস্কর্য নির্মাণের উল্লেখ করে বলা হয়েছে—“উহারা সুলায়মানের ইচ্ছানুযায়ী প্রাসাদ, ভাস্কর্যসদৃশ বৃহদাকার পাত্র এবং সুদৃঢ়ভাবে স্থাপিত ডেগ নির্মাণ করিতো। আমি বলিয়াছিলাম, হে দাউদ-পরিবার, কৃতজ্ঞতার সঙ্গে তোমরা কাজ করিতে থাক। আমার বান্দাদের মধ্যে অল্পই কৃতজ্ঞ”।

প্রতিমা পূজার ব্যাপরে পবিত্র কুরআনের সূরা ইব্রামিমের ৩৫ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে—“স্মরণ কর, ইব্রাহিম বলিয়াছিলেন, হে আমার প্রতিপালক, এই নগরীকে নিরাপদ করিও এবং আমাকে ও আমার পুত্রগণকে প্রতিমা পূজা হইতে দূরে রাখিও।” সূরা সাবার ১৩ নম্বর আয়াতের তামাসিলা (ভাস্কর্য) এবং সূরা ইব্রাহিমের ৩৫ নম্বর আয়াতের আসনাম (প্রতিমা পূজা)—এই দুটি শব্দের অর্থকে বিকৃত করে যারা একই অর্থে মূর্তিকে ভাস্কর্য বানাতে চাচ্ছেন, তাদের বলবো অনুগ্রহ করে কোরআনের শব্দের অর্থকে ভুল ব্যাখ্যা করে মাঠ গরম করার চেষ্টা করবেন না। কারণ এ দেশের মানুষ আপনাদের ‘৭১ সালেও চিনতে ভুল করেনি, এখনও করবে না। ১৯৫২ সালের ভাষা শহীদদের স্মরণে নির্মিত শহীদ মিনার, একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্মরণে নির্মিত জাতীয় স্মৃতিসৌধ, শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে নির্মিত শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ এবং সাত জন বীরশ্রেষ্ঠের নামে স্থাপিত স্মৃতি ভাস্কর্যের সামনে গিয়ে যখন বাংলাদেশের মুসলমানরা ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন, তখন তারা কেউই সেখানে ইবাদতের নিয়তে বা প্রার্থনার নিয়তে যান না। সেখানে জাতীয় ইতিহাস, ঐতিহ্য ও শহীদদের ত্যাগের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা হয় মাত্র।’
মূতি বা ভাস্কর্য মাত্রই শিরকের উপকরণ নয় দাবি করে সম্মিলিত ইসলামী জোটের সভাপতি আরও বলেন, ‘যেটি যে উদ্দেশ্যে বানানো হয়, সেটিকে সেভাবে বিবেচনা করতে হবে। হযরত মা আয়েশা সিদ্দীকা (রা.) রাসুল (সা.) এর প্রিয় স্ত্রী ছিলেন। তার কয়েকটি পুতুল ছিল বলে হাদিসে স্পষ্ট উল্লেখ পাওয়া যায়। তিনি তার বান্ধবীদের সঙ্গে এসব পুতুল নিয়ে খেলা করতেন। কই, মহানবী (সা.) তো তাকে শিরক বলে এসব পুতুল নিয়ে খেলতে বারণ করেননি। আবার এসব পুতুল শিরকের উপরণ এমন কথাও কখনও বলেননি। রাসুল (সা.)-এর বাসগৃহে পুতুলের অবস্থান স্পষ্ট জানিয়ে দিচ্ছে, পুতুল বা ভাস্কর্য মাত্রই শিরকের উপকরণ নয়। কট্টর ওয়াহাবিপন্থী হুজুররাও এটি জানেন, প্রাণীর ভাস্কর্য মানেই শিরক নয়। সৌদি আরবের জেদ্দার মূল কেন্দ্রে “দি ফিস্ট” নামে একটি ভাস্কর্য আছে, এটি একটি মুষ্টিবদ্ধ হাতের ভাস্কর্য। আরও আছে ঘোড়ার ও মাছের ভাস্কর্য; একইভাবে মুসলিম অধ্যুষিত সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইরান, ইন্দোনেশিয়া ও মিশরে রয়েছে ঘোড়া ও অন্যান্য জীবের ভাস্কর্য। সুতরাং বলা যায়, ভাস্কর্য জীবের হোক বা জীব দেহের কোনও অংশের হোক, তা যদি শিরক বা পূজার উদ্দেশ্যে নির্মিত না হয়, তবে এতে দোষের কিছু নেই।’
চরমোনাই পীর মুফতি মুহাম্মদ ফয়জুল করীম এবং হেফাজতের নেতা মামুনুল হককে উদ্দেশ করে মাওলানা জিয়াউল হাসান বলেন, ‘আমরা বলবো, আপনাদের দেশবিরোধী এই সব আন্দোলন বাস্তবায়নের জন্য জনগণের মেনডেট নিয়ে সংসদে গিয়ে বিল উত্থাপন করে তা পাশ করুন।’
ইসলামী জোটের সভাপতি বলেন, ‘ধর্মের নাম নিয়ে সরল মানুষকে বিভ্রান্ত করা এবং গুজব রটিয়ে তাদের রাজপথে নামিয়ে অরাজকতা সৃষ্টি করা ধার্মিকতার লক্ষণ নয়। এ ধরনের নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে যেকোনও সরকার ব্যবস্থা নিতে পারে। তাছাড়া মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সা.) বলেছেন, “তোমরা ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করবে না, কারণ ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করে (ইতিপূর্বে) অনেক জাতি ধ্বংস হয়ে গেছে।”

আমরা আশা করবো প্রকৃত ইসলামী স্কলারগণ এগিয়ে আসবেন। এবং সত্য জ্ঞানের আলোয় জাতিকে আলোকিত করবেন। আর সরকার মহোদয় প্রয়োজনে এই বিষয়ে উন্মুক্ত বাহাসের আয়োজন করতে পারেন। যা প্রয়োজনে টিভিতে লাইভ হবে। এবং যুক্তি তর্ক তথ্য-উপাত্ত ‍উপস্থাপনের মাধ্যমে পক্ষ বিপক্ষ উভয়েই তাদের মত তুলে ধরবেন। এবং বিজয়ী পক্ষের মতই গ্রহণযোগ্য বলে উভয় পক্ষ এবং সরকার ও দেশবাসী মেনে নেবেন।

ছবি কৃতজ্ঞতা : গুগল
তথ্য সূত্র ও কৃতজ্ঞতা:
অন্তর্জাল সহ
https://bn.wikipedia.org/wiki/ভাস্কর্য
https://www.banglanews24.com/opinion/news/bd/577278.details
https://bn.wikipedia.org/wiki/মদিনার_সনদ



সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে নভেম্বর, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৩০
৭৭টি মন্তব্য ৭৪টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আপনি কি বেদ, উপনিষদ, পুরাণ, ঋগ্বেদ এর তত্ত্ব বিশ্বাস করেন?

লিখেছেন শেরজা তপন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫২


ব্লগে কেন বারবার কোরআন ও ইসলামকে টেনে আনা হয়? আর এই ধর্ম বিশ্বাসকে নিয়েই তর্ক বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে সবাই? অন্য ধর্ম কেন ব্লগে তেমন আলোচনা হয় না? আমাদের ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

দুলে উঠে

লিখেছেন সাইফুলসাইফসাই, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৫৬

দুলে উঠে
সাইফুল ইসলাম সাঈফ

মন খুশিতে দুলে দুলে ‍উঠে
যখনই শুনতে পাই ঈদ শীঘ্রই
আসছে সুখকর করতে দিন, মুহূর্ত
তা প্রায় সবাকে করে আনন্দিত!
নতুন রঙিন পোশাক আনে কিনে
তখন ঐশী বাণী সবাই শুনে।
যদি কারো মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তরে নিয়ে এ ভাবনা

লিখেছেন মৌন পাঠক, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩০

তরে নিয়ে এ ভাবনা,
এর শুরু ঠিক আজ না

সেই কৈশোরে পা দেয়ার দিন
যখন পুরো দুনিয়া রঙীন
দিকে দিকে ফোটে ফুল বসন্ত বিহীন
চেনা সব মানুষগুলো, হয়ে ওঠে অচিন
জীবনের আবর্তে, জীবন নবীন

তোকে দেখেছিলাম,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপনি কি পথখাবার খান? তাহলে এই লেখাটি আপনার জন্য

লিখেছেন মিশু মিলন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৪

আগে যখন মাঝে মাঝে বিকেল-সন্ধ্যায় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতাম, তখন খাবার নিয়ে আমার জন্য ওরা বেশ বিড়ম্বনায় পড়ত। আমি পথখাবার খাই না। ফলে সোরওয়ার্দী উদ্যানে আড্ডা দিতে দিতে ক্ষিধে পেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

×