somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জীবন থেকে নেয়া (পর্ব ২)

১২ ই অক্টোবর, ২০১৩ রাত ৮:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :





তিনটা কাহিনী বলছি। পড়তে পড়তে ব্যাপারগুলো একটু ভিজুয়ালাইজ করার চেষ্টা করুন। সম্ভব হলে নিজেকে সেই যায়গায় বসান।


আপনি সমস্যায় পড়েছেন, বিশাল সমস্যা...

মনে করুন, আপনার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। বিয়ের ডেট তিন দিন পরে। ছেলেটাকে আপনি অত্যাধিক পছন্দ করেন। বলতে গেলে প্রেমের বিয়ে। দীর্ঘদিনের প্রেমের স্বার্থক পরিনতি অপেক্ষা করছে।

আহা, কত স্বপ্ন...

এ অবস্থায় ছেলেটি এক্সিডেন্ট করে দুটো চোখ হারিয়ে অন্ধ হয়ে যায়। চোখে দেখেনা, উপরন্তু প্যারালাইসড হয়ে যাবার কারনে সে চলতে ফিরতে পারেনা। এ অবস্থায় আপনি কি করবেন ? আপনি প্রথমে হয়তো আবেগের বসে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। তবে শিওর থাকুন আপনার পরিবার ও সমাজ ছেলেটাকে মেনে নিতে পারবেনা। ধরুন বিয়ে হয়েও গেলো। কিন্ত তারপর ? কতদিন আপনি আবেগের মাঝে ডুবে থাকবেন ?

সাধারনত প্রেমের বিয়ে হোক, কিংবা এরেঞ্জ ম্যারেজ, একটা মেয়ে বা তার পরিবার স্বামীর কাছে একটা জিনিস ই চায়। সেটা হচ্ছে "সিকিউরিটি" , হতে পারে সেটা সোশ্যাল সিকিউরিটি, হতে পারে ইকোনমিক্যাল সিকিউরিটি, কিংবা হতে পারে মাতৃত্ব কিংবা
সন্তানের ভবিষ্যতের সিকিউরিটি। যখন আপনি দেখবেন, ছেলেটার কাছ থেক কোন ধরনের সিকিউরিটি পাওয়া তো সম্ভব নয়ই, বরং ছেলেটা আপনার জীবনে এক রকম বোঝার মত। কাজ কর্ম, এমন কি সন্তান জন্মদানে অক্ষম, তখন আপনি কতদিন ধরে
ব্যাপার টা মেনে নিতে পারবেন ? সেই সাথে পরিবার, আত্মীয় স্বজনের খোঁচা তো আছেই। এই অবস্থায় পূর্ববর্তি ভালোবাসা আসলে অতটা কার্যকর ?

এক দিকে ভালোবাসা, মানবিকতা, অন্যদিকে বাস্তবতা। কি করবেন আপনি ?


আবার মনে করুন, আপনার একমাত্র মেয়ে। দুটো সন্তান মারা যাবার পর এই মেয়ের জন্ম। মাতৃহারা এই মেয়ে অসম্ভব আদরে বড় হয়েছে । সে মুসলমান, শিক্ষিত, সুন্দরী। কিন্ত পছন্দ করেছে এমন একটা ছেলেকে, যে হিন্দু ধর্মের, প্রায় অশিক্ষিত এবং সন্ত্রাসী। আপনি মেয়েকে অনেক ভাবে বুঝানোর চেষ্টা করলেন, কিন্ত মেয়ে বুঝলো না। তার একটাই কথা, বিয়ে করলে এই ছেলেকেই করবে। না হলে সে মারা যাবে। এক দিকে আপনার নিজের সন্তান, অন্যদিকে সামাজিক ও ধর্মীয় ভাবে ছোট হয়ে যাবার ভয়। এমন কি মেয়ের জীবনে সুখি হবার কোন গ্যারান্টিও নেই এ ছেলের সাথে।

আপনি হয়তো ভাবতে পারেন, মেয়েকে বুঝাবেন। কিন্ত মেয়ে বুঝলো না। শাষন করলেন, সে শুনলো না। ভালোবাসার আবেগে সে অন্ধ। মেয়েকে হয়তো ছেড়ে দিবেন ভাবলেন, কিন্ত শত হলেও একমাত্র মেয়েতো। তাছাড়া আপনি স্পষ্ট বুঝতে পারছেন, এই ছেলেটা আপনার মেয়েকে সুখে রাখতে পারবে না। তাছাড়া ছেলেটাও মুসলমান হতে রাজী নয়। এ অবস্থায় আপনি কি করবেন ? ভেবে বলুন তো। নিশ্চিত অসুখী হবে জেনেও মেয়েকে ছেড়ে দিবেন কুলাঙ্গার ছেলেটার হাতে ? নাকি মেয়েকে সুইসাইডের জন্য সুযোগ করে দিবেন।

সন্তানের একেবারে মৃত্যু, নাকি ধুকে ধুকে মৃত্যু, পিতা হিসেবে আপনি কোনটা চাইবেন ??


আবার মনে করুন, আপনি একটা মেয়েকে প্রচন্ড ভালোবাসেন। কোন একারনে মেয়েটার অন্যত্র বিয়ে হয়ে যায়। আপনি নিজেও বিয়ে করেছেন, তবে আপনার স্ত্রী অসুস্থ বিধায় আপনি বৈবাহিক জীবনে সুখি নন। আপনার ঘরে দুটি সন্তান আছে। কিন্ত অসুস্থ বউ আর সন্তানদের নিয়ে আপনার জীবন হতাশায় ঘেরা। আরেকটা বিয়ে করতে পারছে না, কারন বাচ্চাদের সৎ মা কেমন হবে, আপনি জানেন না। তাছাড়া আপনার স্ত্রী আপনাকে ভালোবাসে।
এমন অবস্থায় দেখা হলো আপনার সেই প্রেমিকার সাথে। সেই মেয়েটাও বিবাহিত জীবনে সুখি নয়। সে তার হ্যাজবেন্ডের কাছে লাঞ্চিত হয় প্রতিনিয়ত। মানসিক অশান্তির ব্যাপারে খুব একটা পার্থক্য নেই আপনাদের মাঝে। এই অবস্থায় আপ্নারাই হতে পারেন আপনাদের বেস্ট কোম্পানি। আপনারা দুজন দুজন কে এখনো ভালোবাসেন। তাছাড়া এতদিন পর আবার যোগাজোগের পর আপনারা আবার খুজে পেয়েছেন "হতে পারতো" জীবন সঙ্গীকে। দু একদিনের এক্টুখানি দেখা আর ছোঁয়া আপনাদের মরুভূমি জীবনে এক পশলা বৃষ্টির মত সুখ দিয়ে যায়। কিন্ত লুকিয়ে লুকিয়ে কতদিন ? আপনার বয়স আর অবস্থান আপনাকে
পরস্ত্রীর সাথে বিছানায় যাবার পারমিশন দেয় না। কি করবেন এখন ? বস্তুত এখন একমাত্র আপনারাই নিজেদের একটা সুখী জীবনে সেট করতে পারেন। শুধুমাত্র হাত ধরে পালিয়ে যাবার অপেক্ষা...

ভেবে দেখলেন, স্ত্রী ও বাচ্চাদুটোর কথা ভেবে ডিভোর্স নেয়া একদম ঠিক হবেনা। এখন এক হতে পারে, আপনারা এক্সট্রা ম্যারিটাল এফেয়ার চালিয়ে যেতে পারেন। কিন্ত এতে করে আপনার অসুস্থ স্ত্রীর প্রতি অবিচার করা হবে। আর বাচ্চাদুটো বড় হচ্ছে। বিবাহ বহির্ভুত সম্পর্ক কোন সলিউশন নয়। এ অবস্থায় আপনি কি করবেন ?

একদিকে আপনার বিবেক, অন্যদিকে আপনার ইমোশন।

-----------------------------------------------------

তারমানে ব্যাপারটা দাড়াচ্ছে, মানুষ হিসেবে আমাদের বেশ কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। আমাদের যেহেতু চিন্তা করার ক্ষমতা আছে,
তাই আমরা অনেক কিছুই র‍্যাশনালিং করে বলে ফেলতে পারি। কিন্ত বাস্তব জীবনে আমরা তার অনেককিছুই করতে সক্ষম না।
এ ধরনের সমস্যায় যদি আমাদের কখনো পড়তে হয়, তাহলে আপনি হাইপোথিসিস বা অন্যদের উপদেশ শুনে আসলে কিছু করতে পারবেন না। মন ও মস্তিষ্কের একটা দ্বন্দের মাঝে আপনি পড়ে যাবেন। কখনো আপনি হয়ে উঠবেন আবেগী, আবার কখনো বাস্তবতার নীরিখে আপনি মুখ বুজে পড়ে থাকবেন। কিন্ত বয়ে বেড়াবেন অবর্ননীয় কষ্ট। আমাদের সমাজে আমরা যা খুশি তাই করতে পারিনা। এমন কি অনেক সময় সমাজ সাপোর্ট দিলেও আপনি করতে পারবেন না বিবেকের কাছে বাধা থাকবেন বলে। এখন আপনি যদি আবেগের বশে একটা ভুল ডিসিশান নিয়ে নেন,
তাহলে আপনাকে কি আদৌ খারাপ মানুষ বলা যাবে ? আবার আপনি যদি ঠিক কাজটি করতে গিয়ে সব হারান, তাহলে কি সমাজ কিংবা ভালো মানুষ তকমা আপনার কোন উপকারে আসবে ?

অন্যের সাথে তুলনায় যদি যেতেই চান, তাহলে এই মানুষগুলোর সাথে তুলনা করুন। তার গাড়ি আছে, আমার নেই কেন, কিংবা ওর গার্লফ্রেন্ড অনেক সুন্দর, আমার দিকে কোন মেয়েই তাকায় না-
এ ধরনের কম্পারিজনে গিয়ে আদতে কোন লাভ নেই। মনে রাখবেন, আপনার চেয়ে সুখে আছে, এমন মানুষের সঙ্খ্যা পৃথিবীতে যত, তার চেয়ে হাজার গুনে বেশি আছে, আপনার চেয়ে খারাপ অবস্থায় থাকা মানুষের সঙ্খ্যা।

লেখাটা লেখার সময় আমার নিজের কাছেই মনে হলো, আমি আসলে অনেক সুখী একজন মানুষ। আমার হয়তো অনেক কিছু নেই, তবে এ ধনের সমস্যাও নেই। আমি নিজে খুব একটা আস্তিক না হলেও, এইটুকু বুঝতে পেরেছি, কোন সময়টাতে ইশ্বরের কাছে প্রার্থনা করা ছাড়া আর কোন উপায় মানুষের হাতে থাকেনা।


জগতের সবচাইতে ক্ষমতাশালী জীব হলেও, জীবনে কাছে আমরা বড়ই অসহায় - এটাই বোধহয় সবচাইতে বড় আয়রনি।

আসুন একবার অন্তত নিজের জীবনের দিকে তাকিয়ে সব দুঃখ গুলো ভুলে যাবার চেষ্টা করি। আমরা হয়তো খারাপ আছি,
তবে অসহায় তো নয়। আমাদের চেয়ে খারাপ ও যে কেউ কেউ থাকতে পারে, তা তো দেখলেনই। তাই জীবনে অপ্রাপ্তির হিসেব না করে, বরং প্রাপ্তিগুলোকে এচিভমেন্ট হিসেবে দেখা উচিৎ। বৃদ্ধ বয়সে মরার আগে হয়তো আপনার কাঁদা লাগবে না। বরং আজকের কোন একটা সুখস্মৃতি মনে করে, তখন আপনার মুখে ঝুলে থাকবে এক টুকরো হাসি।

তাহলে এখন একটা কাজ করুন। জোরে জোরে কয়েক টা নিশ্বাস নিন। অক্সিজেনের উপস্থিতি অনুভব করুন। বেঁচে থাকার আনন্দ আস্বাদন করুন। এবার মুচকি একটা হাসি দিন, এবং আমার সাথে রিপিট করুন-

লাইফ ইজ বিউটিফুল, রিয়েলি বিউটিফুল।


-----------------------------------------------------------

( আমার এক বন্ধুর অসম্ভব মন খারাপ। তার নাকি বেচে থাকতে আর ইচ্ছা করছে না। আমাকে অনেক করে অনুরোধ করলো, কিছু একটা যেন করি।আমি নাদান মানুষ, কিইবা করতে পারি। তবে লেখক হিসেবে ছোট একটা লেখা তো তাকে ডেডিকেট করতেই পারি, তাই না ? আপনি যদি খুব খারাপ থাকেন, বা হতাশায় ভুগে থাকেন, লেখাটি আপনার জন্যেও।

জীবিত বা মৃত কোন চরিত্র বা ঘটনার সাথে এর লেখার কোন সম্পর্ক নেই, কোন কিছু মিলে গেলে তা নিতান্তই কাকতালীয় )


সর্বশেষ এডিট : ১২ ই অক্টোবর, ২০১৩ রাত ৯:১৪
১৯টি মন্তব্য ১৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×