somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

লন্ডন ভন্ডুল, নাইটবাস আর ১০ পেনির গল্প

০৬ ই আগস্ট, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রথম পর্ব এইখানে

"আম গোইনটু বেকা স্ট্রীট ফার্স্টলি এন্ড টেইক আ বাস অর সামথিন ফ্রম দেয়া" - উচ্চারনে যথাসম্ভব ব্রিটিশ একসেন্ট ফুটিয়ে পাশে বসা ফ্রেন্চ ছেলেটিকে নিজের গন্তব্য বললো তানহা । ম্যাক্সিম ছেলেটার নাম। ফ্রান্স থেকে উইকেন্ডে গার্লফ্রেন্ডের সাথে দেখা করতে এসেছে । যদিও তাকে বেকার স্ট্রীট থেকে পিকআপ করতে আসবে লন্ডন নিবাসী গার্লফ্রেন্ড । কোচ বাসে উঠে তানহার সাথে কথা হয় ম্যাক্সিমের। দুজনেই মোটামুটি একই উদ্দেশ্যে লন্ডনে পা রেখেছে তাই আলাপ ক্যামন যেনো জমে উঠেছে কয়েক মিনিটের কথোপকথোনেই । ম্যাক্সিম জানালো মার্সেই ইউনিভার্সিটির ছাত্র সে। যদিও এই নাম জীবনেও শোনেনি তানহা তাও সর্বজ্ঞের ভংগিতে মাথা নাড়ালো একটু । আর মনে মনে ভাবতে লাগলো "শালা মাইনসেরও গার্লফ্রেন্ড আর আমারও গার্লফ্রেন্ড! একজনে রাইতের ২ টায় বয়ফ্রেন্ডরে পিকআপ করতে আইতাছে আর আরেকজন বাসায় বয়া ঘুমাইতাছে!" যদিও তানহা ভালো করেই জানে ঘুমানো তো দূরের কথা হয়তো একটা মিনিট শান্ত হয়ে বসতেও পারছে না অপরাজিতা! মেয়েটা এতো নার্ভাস! অল্পতেই পাগল হয় যায় ।
আর তাছাড়া ওর অবস্থান থেকে যতোখানি করা সম্ভব পুরোটাই ও করেছে! সিক্সফিল্ড ক্রিসেন্টের একটা হোটেলে ৪ দিনের জন্য একটা রুম ভাড়া করেছে নিজের পয়সায়! একটা পয়সাও তানহা দিতে পারেনি! দিবেই বা কিভাবে? ফ্লাইটের টাকাটাও ছোটোভাইয়ের জমানো টাকা থেকে নিতে হয়েছে! তানহা চেয়েছিলো আর কয়েকটাদিন পরে আসতে-নিজের টাকায়। কিন্তু অপরাজিতাকি আর সেসব শোনে? ওর একই কথা "টাকা নিয়া তোমার ভাবা লাগবো না! আমার বাপের গাছ ঝাড়া মারলেই টেকা পড়ে! তুমি খালি আসো এইখানে!" । তানহাও এক পাগল! ওর কথা হলো প্রথমবার দেখতে যাচ্ছে তাও যদি গার্লফ্রেন্ডের টাকা নিতে হয় এর চাইতে গার্মেন্টসের সখিনা মর্জিনার সাথে প্রেম করাই ভালো! যে ছেলে ২ বছরে একবার লন্ডন যাওয়ার টাকা জোগাড় করতে পারে না তার প্রেম না করাটাই উচিত! আবারো সেই ২ বছরের হিসাব, আসলে কিন্তু দেড় বছরের একটু বেশি!

ইজিবাস কোচ থেকে নেমে ড্রাইভারকে জিজ্ঞেস করলো বাস স্টপ কোনদিকে। হালকা কোকড়া চুলের মিশরীয় (তানহার তাই মনে হলো) ড্রাইভার জানালো সামনে গিয়ে হাতের বামে প্রথম মোড় ঘুরলেই বাস স্টপ আর আন্ডারগ্রাউন্ড স্টেশন কিন্তু আন্ডারগ্রাউন্ড ট্রেইন নাকি তখন বন্ধ! কি ভেবে যেনো তানহা ড্রাইভারকে জিজ্ঞেস করলো সে সিক্সফিল্ড ক্রিসেন্ট জায়গাটা চিনে কিনা যদিও অপরাজিতা হাজারবার বলে দিয়েছে বেকার স্ট্রিট থেকে ১৮ নং বাস নিলেই হবে তাও নতুন জায়গা তাই মনের সন্দেহ কাটাতে চাইছিলো সে। ড্রাইভার জানালো এমন কোনো জায়গা সে চেনেনা! আরেকবার শেষ চেস্টা করতে মোবাইলটা বের করে অপরাজিতার দেওয়া মেইলটা পড়ে দেখলো জায়গাটা সাডবারি এরিয়াতে পড়েছে! "ইটস সামহয়্যা নিয়া সাডবারি আই রেকন?" হালকা প্রশ্নবোধক সুরে আবারো ড্রাইভারকে জিজ্ঞেস করলো তানহা । ড্রাইভার জানালো সামনের স্টপ থেকে ১৮ নং বাস নিলেই সাডবারি যাওয়া যাবে। "ধুর বাল হুদাই ২ টা মিনিট সময় নষ্ট! এতোক্ষনে বাস স্টপে যাইতেগা পারতাম! আর ওরই বা ক্যামন আক্কেল? প্রথমবার আইলাম, কই এয়ারপোর্টে আয়া রিসিভ করবো তা না ঠিকানা আর ডিরেকশন দইয়া খালাস, আমার কি আর সব চিনা আছে? যদি হারায়া যাই?" ভাবতে ভাবতে বাস স্টপে পৌছালো! "আরে বাল বাস স্টপ তো ২ টা একটা ঐদিকে যায় আরেকটা ঐদিকে যায় তো আমি কোনটায় উঠতাম?" বিড়বিড় করতে করতে সামনে এগিয়ে এক সাদা চামড়াকে জিজ্ঞেস করলো সাডবারি কোনদিকে? লোকটা একটু উগ্র চোখে চাইলো তার থেকে প্রায় ফুটখানেক খাটো তানহার দিকে, তাকিয়ে বিরক্ত কন্ঠে বললো "দ্যা ওয়ে" যদিও মাথার হালকা মুভমেন্ট দেখে ঠিক বুঝলো না তানহা যে কোনদিকে। আরেকবার জিজ্ঞেস করতে যাবে এমন সময় দেখলো ২ জন বাংগালী মিল্কশেক হাতে সিলেটি ভাষায় বক বক করছে কি যেনো! সামনে এগিয়ে শুদ্ধ বাংলায় বললো "ভাইজান সাডবারি যাইতে চাইছিলাম, আমার ফ্রেন্ড বলছে ১৮ নং বাস নিতে কিন্তু কোনদিক থেকে নিবো ঠিক বুঝতে পারছি না! এইপাশ থেকেই নাকি ঐপাশ থেকে?" উৎসুক হয়ে উঠে দুজনেই ঘুরে চাইলো তানহার দিকে! বামের জন যথাসম্ভব শুদ্ধ বাংলায় বলার চেষ্টা করলো যে সাডবারির কোন জায়গাটায় যেতে চাই? কারন সাডবারি অনেক বড় জায়গা। যদিও সিলেটি আর শুদ্ধ বাংলা মিলিয়ে মোটামুটি হায়ারোগ্লিফিক টাইপের একটা ভাষা তৈরি করে ফেললো ভদ্রলোক। তানহার মুখে সিক্সফিল্ড ক্রিসেন্ট নামটা শুনে চিনতে পারলো না। হালকা চিন্তিত হলো তানহা, কারন এখন পর্যন্ত কেউই চিনলো না জায়গাটা তবে লন্ডন তো আর খিলক্ষেত না যে এর সব জায়গা সবাই চিনবে! তাও কি ভেবে যেনো ভাবলো একটা ফোন দেয়া যাক অপরাজিতাকে। লোকটার কাছে ফোন চাইলো! বললো এক মিনিটেই হয়ে যাবে। নিজের ফোন থেকে নাম্বারটা বের করে ভদ্রলোকের সামনে দাড়িয়েই ডায়াল করলো । ফিসফিস করে কথা বললো ওপাশ থেকে। আহ আমার অপরাজিতা! কতো যুগ যেনো ওর কথা শুনিনি, ওর মিষ্টি চিকন কন্ঠে বেইবি শুনিনি! কিন্তু এতো কিছু ভাবার সময় নেই! দ্রুত জিজ্ঞেস করলো তানহা "এই কেউ তো এই জায়গা চিনে না! কি ঠিকানা দিছো তুমি?? আমি বেকার স্ট্রিট আয়া খাড়ায়া আছি! এখন বাস স্টপ ২ টা রাস্তার ২ পাশে তো আমি কোনটায় উঠতাম?" উত্তর পাওয়ার আগেই পাশের লোকটা বলে উঠলো "আমারে দেনতো আমি জিগাই আপনে বুঝবেন না!" কি আর করা হাতের ফোনটা ঐ লোককে দিলো যদিও ভেতরে ভেতরে মেজাজটা সপ্তমে চড়ে গেলো তানহার! তার অপরাজিতার সাতহে কোথাকার কোন উল্লুক কথা বলতেছে তাও আবার রাতের ২ টায়! "হালার পোলার ফোন ওর পিছন দিয়া ঢুকায়া দিতাম ইটালিতে পাইলে! হালা লন্ডন দেইখা বাইচ্চা গেলি" নিজেই ঐলোকের সাহায্য চেয়েছে সেটা বেমালুম ভুলে গিয়ে মনে মনে আক্রোশ ঢালতে লাগলো তানহা। ১ মিনিট কথা বলেই ফোন রাখলো লোকটা, সামনে এসে বললো "ঐ পাশে যায়া ১৮ নাম্বার নিতায়। তারফর সোজা নিয়া নামায়া দিবো এক বাসেই!" আবার সেই জগাখিচুড়ি ভাষা! তবে যা বুঝার বুঝে নিলো তানহা। অনেক ধন্যবাদ জানিয়ে রাস্তা পার হওয়ার জন্য সামনে এগুলো।

যদিও লাল বাতি জ্বলছে তবুও ২ পাশে চোখ বুলিয়ে রাতের খালি রাস্তাটুকু পার হয়ে গেলো দ্রুত। ঐপাশের যাত্রী ছাউনির নিচে দাড়ালো এক মিনিট আর উশখুশ করতে লাগলো বাসের অপেক্ষায়! একটা বাস এলো "এন১৮" কিন্তু তানহা তো নিবে ১৮। তাই আর নড়লো না জায়গা থেকে। পরক্ষনেই কি ভেবে যেনো পাশে দাড়ানো এক সাদা চামড়াকে জিজ্ঞেস করলো ১৮ কখন আসবে। কিছুটা অবাক কন্ঠে লোকটা জানালো ১৮তো এই মাত্র গেলো। তানহা বোকা কন্ঠে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করলো যে সেটা ছিলো এন১৮। লোকটা এবার হালকা হাসি ফুটিয়ে বললো রাতের বাসগুলোতে এন যুক্ত করা হয়! আসলে ১৮ নং বাসটাই রাতের বেলায় এন১৮ নামে আসে। নিজের বোকামিতে একটু হাসলো তানহা! হাসি নিয়েই ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলো আরেকটা এন১৮ আসছে মোড় ঘুরে।

ওর সাথেই বাসে উঠলো সাদা চামড়া। তানহা ড্রাইভারের পাশে দাড়িয়ে জিজ্ঞেস করলো একটা সিক্সফিল্ড ক্রিসেন্ট যায় কিনা! ড্রাইভার মাথা নাড়লো ডানে বামে! অবাক হয়ে তানহা বললো সাডবারি যায় কিনা? এবার উপরে নিচে মাথা নেড়ে তানহার মনে ভরসা ফিরিয়ে দিলো! মুখে হাসি ফুটিয়ে ভেতরে যেতে উদ্ধত হওয়া তানহাকে তীব্র স্বরে বলে উঠলো কালো চামড়ার ড্রাইভার - "ইও ঠিকেট স্যা?" । "আমমম আই ডোন হ্যাভ এনি একচুয়ালী। ক্যান আই বাই ওয়ান ফ্রম ইউ?" আমটা আমতা করে জিজ্ঞেস করলো তানহা । এবারে ড্রাইভারের মাথা নাড়ার দিকটা ঠিক বুঝলো না তানহা! আন্দাজে পকেট থেকে ১০ পাউন্ডের একটা নোট বের করে ডিভাইডার গ্লাসের নিচে রাখলো! হঠাৎ অগ্নি চোখে তাকালো ড্রাইভার, তীব্রভাবে বলে উঠলো -"হোয়াচ্যা ডুইন স্যা?"। "আমমম আই থট আই কুড বাই আ ঠিকেট ফ্রম ইউ?" প্রশ্নবোধক ভংগিতে বললো তানহা। কিন্তু আগের মতোই অনড় ড্রাইভার রাগি কন্ঠে বললো "গেট অফ অফ দ্যা বাস" - কিছু না বুঝেই বোকার মতো বাস থেকে নেমে গেলো তানহা।
ঠিক কি করবে আনমনে ভাবছে তানহস এমন সময় নাকে সিগারেটের ধোয়ার গন্ধ পেয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলো আরেক বাংগালি দাড়িয়ে আছে! চোখাচোখি হওয়ায় বিব্রত হয়ে সিগারেট নামিয়ে পেছনে নিয়ে গেলো লোকটা। সম্ভবত তানহার চোখে হালকা বিরক্তির আভাস দেখতে পেয়েছে। ২ টানে সিগারেট টা শেষ করে সামনে এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করলো "কই যাইবেন? ১৮ নিবেন নাকি?" । "শালার এইটাও সিলেটি" একসেন্টে সিলেটি টান শুনেই বুঝে ফেললো তানহা! যদিও সিলেটিদের উপর তার রাগ বা ঘৃনা কোনোটাই নেই, আর তাছাড়া অপরাজিতাদের বাড়িও সিলেট অতএব শালা গালিটা যুক্ত করার কারনটা ঠিক বুঝা গেলো না! "হুম ১৮ই তো নিতাম" মনের গালিটা মনে রেখেই স্বাভাবিক কন্ঠে বললো তানহা। "ওয়েস্টার আছেতো??" ওয়েস্টার আবার কি জিনিস ? ড্রাগস ডিলার ভাবলো নাকি তানহাকে? "নাতো ভাই। এইটা কি জিনিস?" বোকা বোকা কন্ঠে বললো তানহা। "আরে মিয়া বাসে উঠবেন ওয়েস্টার লাগবো না? নাকি টিকেট কাটসেন? টিকেট কাটলে হুদাই টেকা লস" । নাহ এই লোকটার উচ্চারন অনেক ভালো! সিলেটি টান থাকলেো শব্দগুলা বুঝা যায় পরিষ্কার! উৎসুক হলো তানহা! এই মাঝরাতে টিকেট ছাড়া বাসে উঠে অপদস্থ হতে কেইবা চাইবে? "টিকেট কোথায় পাবো? আমিতো লন্ডনে নতুন তাই ওয়েস্টার নাই!" যদিও ওয়েস্টার কি জিনিস তাই জানেনা তাও আন্দাজে বলে দিলো তানহা! "ঐ যে দেহেন মেশিন ঐহানে পেনি ঢুকান টিকেট দিয়া দিবো।" কয়েক ফিট সামনে একটা বক্স দেখিয়ে বললো লোকটা। পকেট হাতড়ে কিছু কয়েন পেলো যদিও অন্ধকারে বুঝলো না কোনটা কতো পেনি! এয়ারপোর্টের এক্সচেন্জ ব্যুরো থেকে নিজের সর্বস্ব ১০০ ইউরোর নোটটা পাউন্ডে পরিবর্তন করে ৭০ পাউন্ড ৫৪ পেনি নেওয়ার সময়ই দেখে নিয়েছিলো কোনটা কোন কয়েন। কিন্তু এতোক্ষনে আবার তা ভুলেও গেছে! মেশিনটায় কয়েন ঢুকানোর জায়গাটায় কতোক্ষন ধাক্কাধাক্কি করেও সফল না হয়ে সরে আসবে এমন সময় কাগজের লেখাটা চোখে পড়লো "আউট অফ অর্ডার"!
"বালের কপাল একটা মেশিন হেইডাও কাম করে না! " মেজাজ আবারো সপ্তমে উঠে গেলো! পিছনে দাড়ানো লোকটা তানহাকে টিকেট ছাড়া সরে আসতে দেখে জিজ্ঞেস করলো "নষ্ট? রাস্তার ঐ পাশেরটায় যান ঐখানে আরেকটা আছে মেশিন"। আবারো লালবাতির মধ্য দিয়েই রাস্তা পার হয়ে গেলো তানহা। বাংগালি ২ জন নেই আর। একটু চোখ বুলিয়েই এককোনায় ল্যাম্প পোস্টের পাশে দেখতে পেলো মেশিনটা! ২ পাউন্ড ৫০ পেনি একটা টিকেট! "টাকাতো বলদের *** দিয়া আহে" গজরাতে গজরাতে কয়েন গুলা মেশিনে ঢুকালো! ১ মিনিট ধরে অপেক্ষা করলো তানহা! কিসের কি টিকেটের কোনো খবর নাই! অবশেষে ধৈর্য হারিয়ে চাপড় বসালো একটা মেশিনটার উপর! পাশে দাড়িয়ে থাকা এক সাদা চামড়া এগিয়ে এসে বললো "ইট ডাজ দ্যা সামটাইমস নাউ ইউ গটা পুট দ্যা কয়েনস এগেইন"।
"বালের এক দেশে আইছি এর থাইকা বাংলাদেশ বহুত ভালা! বালের দেশ বালের মেশিন বালছাল" গুপ্তকেশের প্রতি বিশেষ দূর্বলতা প্রকাশ করতে করতে মানিব্যাগ খুলে কয়েন খুজতে লাগলো। ২ পাউন্ড ৪০ পেনি মেলাতে পারলো সব পকেট মানিব্যাগ খুজে। মেশিনে আবার ব্যাংকনোট ঢুকানো যায় না! অপশন একটাই পাশের লোকটার কাছে চাওয়া! অগত্যা বাধ্য হয়ে পাশে সরে এসে লোকটার দিকে ঝুকে বললো "ক্যান আই বরো ১০ পেনস মেইট? আই এইনট গট এনিমোর লেফট অলদো আই ডু হ্যাভ ব্যাংকনোটস বাট দিস ফ্রিকিন মেশিন ঔনট একসেপ্ট ইট" ব্যাখ্যা শেষ করার আগেই পকেট হাতড়ে ২০ পেনস বের করে দিলো লোকটা হাসিমুখে। মুখ ভর্তি হাসির সাথে বোটকা বিয়ারের গন্ধ বেরিয়ে এলো কিন্তু তানহার কাছে ভালৈ লাগলো! ভালো লাগার কারন যে বিয়ারের গন্ধ না বরং ২০ পেনস সেটা অবশ্যাই বোধগম্য! ১০ পেনস রেখে বাকি ১০ পেনস ফেরত দিলো লোকটার হাতে। "থ্যাংকস মেইট!" বলে টিকেট মেশিনে কয়েন গুলো ঢুকিয়ে দিলো। টিকেট টা নিয়ে সরে এসে রাস্তা পার হওয়ার সময় একটা সুন্দর হাসি উফার দিয়ে এলো লোকটাকে। রাস্তা পার হতে না হতেই একটা বাস এলো। মোটামুটি দৌড়ে ধরতে হলো বাসটা।

বাসের ভেতর আশে পাশের দাড়িয়ে বসে থাকা লোকগুলোকে দেখতে দেখতে ঘুম পেতে লাগলো তানহার। যদিও একটা সজাগ চোখ রেখেছে বাস কোন স্টপে থামছে তা দেখার জন্য! কিন্তু এখন পর্যন্ত সিক্সফিল্ড ক্রিসেন্টের কোনো দেখা নেই! সে সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাসের লাস্ট স্টপেজ পর্যন্ত যাবে পরের টা পরে দেখা যাবে! এদিকে পকেটে থাকা গ্যালাক্সি এস২ এর চার্জ শেষ! স্মার্টফোন গুলোর চার্জের সমস্যা খুবই প্রকট! দেখতে দেখতে পৌছে গেলো লাস্ট স্টপ সাডবারি। কিন্তু কোথাও সিক্সফিল্ড ক্রিসেন্ট নামের কোনো জায়গা পড়েনি! এতো রাতে একটা দোকান খোলা দেখে নিজেকে ভাগ্যবান ভাবতে ভাবতে দোকানের দিকে এগুলো দ্রুত।
পাকিস্থানি দোকান! এখানে সেখানে উর্দু লেখা পোস্টার আর দুজন লোক উর্দুতে গল্প করছে চা খেতে খেতে আর একজন দোকানের এটা সেটা টানাটানি করছে। গল্পরত লোক দুজনের দিকে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো সিক্সফিল্ড ক্রিসেন্ট চেনে কিনা! কেউই বলতে পারলো না! পাকিস্থানিদের তানহা এমনিতেই পছন্দ করে না তারপরেও বাধ্য হয়ে সাহায্য চাইতে হলো! জিজ্ঞেস করলো ব্রিজ পার্ক হোটেলটা চিনে কিনা! অপরাজিতা এই হোটেলেই রুম ভাড়া করেছে ওর জন্য! একজন মাথা নাড়লো কিনতু আরেকজন উল্টা প্রশ্ন ছুড়ে দিলো ব্রিজ পার্ক নাকি পার্ক ব্রিজ হোটেল? তানহা মনে করতে পারলো না এদিকে মোবাইলেও চার্জ নেই যে মেইলটা আবার পড়ে দেখবে! তাই শুধু বললো যে আমি সিউর না! লোকটা উঠে দাড়িয়ে বললো উনি পার্ক ব্রিজ হোটেল চেনেন এবং তানহা চাইলে ওকে পৌছে দিতে পারে নিজের গাড়িতে কিন্তু এজন্য ওকে ১০ পাউন্ড দিতে হবে! "শালা পাকির বাচ্চারা উপকার করতেও টেকা ন্যায়" মনে মনে এটা বললেও বাইরে একেবারে বিনয়ে গলে রাজি হয়ে গেলো।

পথে গাড়িতে অনেক কথা হলো হাবিজাবি কিন্তু তানহা একটু চিন্তিত তাই মন দিতে পারলো না আলাপচারিতায়! আর পাকিদের তানহা এমনিতেও পছন্দ করে না! তাই উল্টা পাল্টা ভাবতে লাগলো - "শালা যদি চোর হয়? যদি ক্রিমিনাল হয়? যদি চিপায় ঢুকায়া মাইরা ফালায় আমারে? একটাবার অপরাজিতারে কি দেখা হইবো না?" এইসব ভাবতে ভাবতেই লোকটাকে গাড়ি থামাতে দেখলো! তানহা জিজ্ঞেস করলো "আর ইয়া সিউর দ্যাট দিস ইজ দ্যা হোটেল?" " ইয়া ইয়া" বলে সায় মেলালো পাকি লোকটা। গাড়ি থেকে নেমে ১০ পাউন্ড বের করে লোকটার দিকে বাড়িয়ে ধরলো আর মুখভর্তি হাসি নিয়ে ধন্যবাদ জানাতে ভুললো না!

গেটের বাইরে থেকে অনেকক্ষন বেল চেপেও কেউ এলো না দেখে দরজায় ধাক্কা দিতে লাগলো তানহা! অবশেষে ঘুম ঘুম চোখে কোট টাই পড়া এক লোক নেমে এলো সিড়ি বেয়ে। দেখতে কিছুটা বাংগালির মতো! লোকটার কাছে রুমের চাবি বুঝে নিয়ে দিতালায় ছিমছাম সাজানো রুমটায় ঢুকলো! প্রথমেই লোকটার কাছে ওয়ইফাইয়ের পাসওয়ার্ড জেনে নিলো! আর লোকটা বের হয়ে যেতে না যেতেই ল্যাপটপ খুলে ওয়াফাইতে কানেক্ট করলো! সবার আগে স্কাইপে ঢুকে দেখলো অপরাজিতা আছে কিনা! এইফাকে মোবাইলটা চার্জে লাগাতে গিয়ে দেখলো পোর্ট ত্রিভুজ আকৃতির কিন্তু ওর চার্জার তো এমন না! নিচে গিয়ে রিসেপশেনের লোকটাকে এটা বলতেই একটা এডাপ্টার বের করে দিলো। উপরে এসে ফোনটা চার্জে লাগিয়েই অপরাজিতাকে স্কাইপে ফোন দিলো তানহা। ফোনে যেনো ওপাশ থেকে কান্নার সাগর ভেঙে পড়লো! কান্নাজড়িত কন্ঠে নাক টানতে টানতে অপরাজিতা বলতে লাগলো "তুমি কই গেছো তুমি এমন ক্যান? একটা বার ফোন দিয়া কইবাতো যে ইউ আর সেইফ! আমি কানতে কানতে শেষ তোমার চিন্তায়! তুমি কই এখন? তুমি সেইফ আছোতো? কিছু হয় নাইতো তোমার বাবু??" কিছুই বললো না তানহা! শুধু বললো - "ভালোবাসি তোমারে বেইবি! আর কয়েক ঘন্টা জান আর কয়েকটা ঘন্টা পরেই দেখমু আপনারে!"


(ঘটনা সত্য হইলেও হইতে পারে)
to be continued.........
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই আগস্ট, ২০১২ রাত ৮:১৬
৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×