কাকের সাথে কোকিলের গলায় গলায় ভাব। গভীর বন্ধুত্ব।
দেখতে দুবন্ধু অনেকটা একই রকম হলেও বড়সড়ো দুটো পার্থক্য কিন্তু আছে দুজনের মধ্যে।
প্রথম পার্থক্য হল, কাক মধুরকণ্ঠী, অসাধারণ গান গাইতে পারে সে।
অন্যদিকে কোকিলের কণ্ঠ কর্কশ। তার গান শুনে পালাতে ইচ্ছে করে সকলের।
দ্বিতীয় পার্থক্য, কোকিল ভীষণ সুন্দর বাসা বানাতে পারে, কাক পারে না।
বাসা বানাতে না পারায় কাক ডিম পাড়ে কোকিলের বাসায়। কোকিল অবশ্য কাকের এই কাজে বিরক্ত হয় না কখনও। বন্ধুত্বের খাতিরে বিষয়টাকে মেনে নেয় সহজভাবেই।
কাক আর কোকিল দূর বনে বেড়াতে গেল একদিন। হঠাৎ তাদের সাথে দেখা হল টিয়ের।
সবুজ শাড়ি পরা, পান খেয়ে ঠোঁট লাল করা টিয়েকে দেখে কাক তো পাগল প্রায়!
টিয়েকে বিয়ে করার জন্য নানা ধরনের গান গাইতে শুরু করলো সে।
কিন্তু টিয়ে ভীষণ বাস্তববাদী। সে জানে, বিয়ের পর গানের চাইতে বাসাই বেশী জরুরী। সুতরাং টিয়ের পছন্দ কোকিলকে।
ব্যাপার দেখে কাক ক্ষেপে অস্থির। সমস্ত বিষয়টাকে সে কোকিলের কারসাজি হিসেবে বিবেচনা করল। কোকিলের বাসা ভেঙেচুড়ে একাকার করল কাক।
কাকের এমন অহেতুক আচরণে কোকিলের রাগ চরমে উঠল। সেও কামড়ে-ঠোকরে ক্ষতবিক্ষত করল কাককে।
টিয়েকে নিয়ে এই ঘটনায় কাক-কোকিলের বন্ধুত্ব নষ্ট তো হলোই, উপরন্তু তাদের পারস্পরিক শত্রুতায়, রাতদিন ঝগড়াঝাটি-মারামারিতে শান্তি নষ্ট সমস্ত পাখিদের।
জরুরী সভায় বসল পাখিরা। দুটো পাখি রাতদিন যদি ঝগড়াঝাটি করে, মারামারি করে তবে তো ভারী মুশকিল! ডাক কাককে। ডাক কোকিলকে। ডাক টিয়েকে।
কাক এল, কোকিল এল, কিন্তু টিয়ে এল না। কেন? কারণ, টিয়ে বিয়ে করে শ্বশুরবাড়ি চলে গেছে ইতিমধ্যেই। কাকে বিয়ে করেছে সে? অন্য একটা টিয়েকে।
সবশুনে কাকের মাথায় হাত! কোকিল হতভম্ব!
যাই হোক, পাখিদের শান্তি নষ্ট করার শাস্তি তো পেতেই হবে কাক-কোকিলকে। কিন্তু কি শাস্তি দেয়া যায় তাদের?
অতি উৎসাহী ফিঙ্গে বলল, মৃত্যুদণ্ড!
না না! মৃত্যুদণ্ডের বিধান নেই পাখিদের মধ্যে, বলল দোয়েল।
তাহলে? বুলবুলি নাচতে নাচতে জিজ্ঞেস করল।
পাখিদের রাজা ঈগল বেশ বিজ্ঞ। বেশ সুক্ষ বিচারক্ষমতা তার। সে দৃঢ়ভাবে বলল, গান কেড়ে নাও কাকের! কেড়ে নিয়ে কোকিলকে দাও! আর কোকিলের কর্কশ কণ্ঠ জুড়ে দাও কাকের গলায়!
ঈগলের কথায় লাফিয়ে উঠল চড়ুই, বলল, এ-তো শুধু কাকের শাস্তি হল রাজামশাই! কাকের অপরাধ বেশী হলেও কাককে ছেড়ে কথা বলেনি কোকিল! আপনার কাছে বিচার প্রার্থণা না করে কোকিলও পাল্টা মেরেছে কাককে! তাই বিচার হওয়া উচিত কোকিলেরও!
ঠিক বলেছো তুমি, জলদগম্ভীর গলায় বলল ঈগল এবং স্পষ্টভাবে ঘোষণা করল, কোকিলের বাসা বানানোর ক্ষমতা কেড়ে নাও! সেই ক্ষমতা তুলে দাও কাকের হাতে!
কোকিল তাহলে থাকবে কোথায়? কোথায়ইবা ডিম পাড়বে? শঙ্কিতভাবে জানতে চাইল শালিক।
বিজ্ঞ ঈগল উত্তর দিল, কোকিল থাকবে গাছে গাছে! আর ডিম পাড়বে কাকের বাসায়! কাকের চোখ এড়িয়ে ডিম পাড়বে কোকিল! কাক যদি কোকিলের ডিম চিনতে ব্যর্থ হয়, তবে কাকের তা’তেই ফুটবে কোকিলের ছা’!
ঈগলের কথামতোই সম্পন্ন হল বিচার।
এই বিচার সম্পর্কে কোকিলের বক্তব্য কি? জানতে চাইল টুনটুনি।
কোকিল কর্কশকণ্ঠে জবাব দিতে গিয়ে দেখে অসাধারণ মিষ্টি স্বর বেরোচ্ছে তার গলা দিয়ে- কূ-উ-উ কূ-উ-উ-উ কূ-উ-উ-উ-উ-
আর কাকের বক্তব্য? জানতে চাইল কৌতূহলী মাছরাঙা।
রাজার বিচারে বিরক্ত হলেও তা প্রকাশ করা উচিত নয় মোটেই! তাই মিষ্টিস্বরে কাক জবাব দিতে গেল এবং আতঙ্কিতভাবে আবিস্কার করল, তার কণ্ঠ চিড়ে বেরোচ্ছে ভীষণ কর্কশ স্বর।
কেমন সেই স্বরটা?
কা- কা- কা-
ছবি: সংগৃহীত
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ৯:৫৫