সরকারের মন্ত্রী, এমপি ও প্রশাসনের কথা শুনলে মনে হয়, আমাদের দেশের মানুষের জন্য চাকুরী সৃষ্টির দায়িত্বে আছে সৌদী আরব, অন্যান্য আরবদেশ, মালয়েশিয়া, আফ্রিকা ও ইউরোপ। ঐসব দেশ আমাদের দেশ থেকে মানুষ না নিলে, আমাদের প্রশাসন ও মিডিয়া মাঝে মাঝে ওদের উপর ক্ষেপে যায়, ওদের আচরণে হতাশ হয়, ওদেরকে দোষারোপ করে, ওদের বন্ধুত্ব নিয়ে সন্দেহ পোষণ করে, অভিমান করে; এতে করে, আমাদের জনতারও বিশ্বাস জন্মে গেছে যে, আমাদের সরকার আমাদের জন্য চাকুরী সৃষ্টি করার কথা নয়, আমাদের সরকারের দায়িত্ব হলো, মানুষ পাঠানোর চুক্তি করা, ওসব দেশকে হাতেপায়ে ধরে মানুষ নিতে অনুরোধ করা।
বাংলাদেশ হলো ৩য় বিশ্বের গলাকাটা ক্যাপিটেলিষ্ট দেশ, এখন এখানে সবকিছুই পণ্য: ভুমিহীন চাষীর ছেলে, দরিদ্র ঘরের মেয়ে, বস্তির কিশোরী সবই পণ্য, দেশের একশ্রেণী মানুষ আবিস্কার করেছে যে, এদের বেচাকেনা করে লাভবান হওয়া যায়। বিশ্বের অনেক গরীবদেশ নিজেদের লোকদের অন্য দেশে কাজ করতে পাঠায়, এতে জাতির দরকারী হার্ড-কারেন্সী আয় হয়; তবে, তারা নিজেদের লোকদের সামাজিক, পারিবারিক, স্বাস্হ্য ও শ্রম-অধিকারকে সমুন্নত রাখে। বাংলাদেশের শ্রমিকদের নিয়ে যারা ব্যবসা করে, তারা "আদমবেপারী" নামেই পরিচিত, নামের সাথে এদের কামের মিল আছে, এরা আসলে এমনভাবে শ্রমিক পাঠায় যে, ইহা আধুনিক "ক্রীতদাস" ব্যবসা ছাড়া অন্য কিছু নয়। এদের কবলে পড়ে মানুষ ভুমিহীন হয়েছে, নতুন বউ'য়ের কানের দুল ও বাপ-মায়ের ভিটাবাড়ী বিক্রয় করে লাখ লাখ মানুষ নি:স্ব হয়ে গেছে; স্বামী স্ত্রী-হীন জীবন কাটায়েছে, স্ত্রী স্বামীহীন জীবন কাটিয়েছে; কিন্তু আদম বেপারীরা সমাজের উপরের তলায় আছে।
আজ সারা বিশ্বে জাতি সমুহের অর্হনীতির স্বাস্হ্য মাপা হয়, জিডিপি, মাথাপিছু আয় ও বেকারত্বের হার মেপে। আমাদের ১৮ কোটী লোকের জন্য আমাদের জিডিপি কম, মাত্র ২৪০/২৫০ বিলিয়ন ডলার হতে পারে; মাথাপিছু আয়ও কম ১২০০ ডলার হতে পারে; তবে, ইহা গড় সংখ্যা, একজন টোকাই'র আয় ১২০০ ডলার, বসুন্ধরার মালিকের আয়ও ১২০০ ডলার, সামিট পাওয়ারের মালিকের আয়ও ১২০০ ডলার।
আমাদের বেকারত্বের হার আসলে কেহ জানে বলে মনে হয় না; সরকার এই নিয়ে কখনো চিন্তিত নয়। বর্তমান বিশ্বে সব দেশের নির্বাচনে বেকারত্বের হার থাকে ১নং নির্বাচনী ইস্যু হিসেবে।
তাজুদ্দিন সাহেব, শেখ সাহেব ও শেখ হাসিনা কখনো বেকারত্বের অবসান ঘটানোর ঘোষণা দেননি; বেকারত্বই যে, আমাদের অর্থনীতির মুল সমস্যা, সেটা এরা ৩ জন বুঝেছিলেন বলে মনে হয় না।
মানুষ নিজের বেকারত্ব নিজে ঘুচানোর চেষ্টা করাতে আদমবেপারীরা, মানে আধুনিক ক্রীতদাস ব্যবসায়ীরা সুযোগ পেয়ে, আজ প্রায় ৪৫/৪৬ বছর এই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। ক্রীতদাস ব্যবসায়ীরা ও প্রশাসনে অবস্হিত তাদের বেরাদরেরা আমাদের দরিদ্র মেয়েদেরও বিদেশে বিক্রয় করাকে নাগরিক অধিকার হিসেবে চালিয়ে দিচ্ছে। বামরু না হামরু নামের কি এক অর্গেনাইজেশনের চীফ গবেষনাকারী এক পিএইচডি মহিলাও ঘোষণা করেছেন যে, আমাদের নারীদের বিদেশে(সৌদীতে) কাজ করার অধিকার আছে; কিন্তু উনি বলেননি যে, আমাদের দরিদ্র নারীদের বাংলাদেশে কাজ করার অধিকার আছে।