আদি সাহিত্য রচিত হয়েছে কল্পিত চরিত্র সমুহকে ঘিরে; গ্রীক মাইথোলোজীর চরিত্রসমুহ ও তাদেকে ঘিরে সাহিত্য আজকের বিশ্বের জন্য অবশ্যই বিশাল বিস্ময়; গ্রীক মাইথিলোজীর উপর নির্ভর করে গ্রীক ও রোমান ধর্মের জন্ম হয়েছিলো; এখন গ্রীক ধর্মে বিশ্বাসী ৭০ জন মানুষ আছেন গ্রীসে। একই সময়ে ভারতে হিন্দু মাইথলোজীও বিশাল বিশাল চরিত্র ও সাহিত্যের সৃষ্টি করেছিল, ইহা এখনও পুরোদমে আছে ও বেড়েই চলেছে। দৈত্য-দানব, বীর, মহাবীরেরা এই সময়েই সাহিত্যকদের মনের মাঝে জন্ম গ্রহন করেন। কিতাবী ধর্মে মাইথোলোজী আছে? অবশ্যই নেই; কারণ, বাংগালীরা কিতাবী ধর্ম মেনে চলেন।
কল্পিত দৈত্য-দানব, বীরদের পরপরই সৃষ্টিকর্তা, ও উনার অনুসারীরা সাহিত্যের মুল চরিত্রে প্রবেশ করেন; এর সাথে সাথে সাহিত্যের বড় বড় চরিত্রে আসেন রাজাবাণী, উজির নাজির, সেনাপতি, রাজপুত্র, রাজকুমারীরা। এরপর বেশ কিছু সময় ধনী মানুষেরা সাহিত্যের চরিত্র হিসেবে থেকেছে।
ফরাসী বিপ্লবের কিছু আগের থেকে হঠাৎ করে পশ্চিমের সাহিত্যে কিছু সাধারণ মানুষের চরিত্র ঢুকে পড়ে: এরা সাধারণ কৃষক, পাড়ার দোকানী, সৈন্যবাহিনীর লোকজন, স্কুলের শিক্ষক, গ্রামের মোড়ল। আমাদের দেশে এখনো গার্মেন্টস'র মেয়েরা কিছুতেই সাহিত্যকদের মগজে স্হান করে নিতে পারেনি।
কিন্তু আমাদের সাহিত্যে একটি বিশাল চরিত্র হচ্ছে, "শয়তান"; এই চরিত্রটি কিতাবী ধর্মের বইয়ের পাতা হয়ে আকাশ থেকে জমিনে চলে এসেছে, তারপর স্হায়ী হয়ে গেছে বাংলাদেশে। এখন তরুণ যদি বিয়ে না করে কোন মেয়েকে বেশী ভালোবেসে ফেলে রাতে, সে বিচারের সময় ইমামের সামনে বলে, "শয়তানের" তালেভালে সে এই কর্ম করে ফেলেছে। সেদিন দেখলাম, সমকামী মানুষও নাকি শয়তানের পরিচালনায় এসব করে বেড়াচ্ছে। সমকামীতাকে কেহ কেহ মানসিক সমস্যা হিসেবে দেখছেন, কেহ কেহ শারীরিক সমস্যা হিসেবে ধরে নিয়ে সমাধান বের করার চেষ্টা করছেন; কিন্তু শয়তান এসবের মাঝে নেই ; ভালো দিক হলো, উহার কোন লিংগ দেননি বাংগালীরা; নাকি উহা পুরুষ?
আজকে সবকিছুর ব্যাখ্যা আছে; তবে, সব ব্যাখ্যা সবাই এখনো বুঝতে পারছেন না; বুঝার জন্য ভাবনাশক্তিকে একটা স্তরে যেতে হবে; আধুনিক শিক্ষাই উহার সমাধান। যখন মানুষের ভাবনাশক্তি সীমিত ছিলো, লজিক্যাল ব্যাখ্যা করার মতো সাধ্য ছিলো না, তখন সমস্যাগুলো শয়তানের কাঁধে দেয়া হতো; আজকে আপনি যদি নিজের বুদ্ধিমত্তার অভাবকে শয়তানের কাঁধে দিতে চান, আপনার কথার কোন মুল্য থাকবে না; উহা গার্বেজে পরিণত হবে।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ রাত ৮:২৬