আমি কুইন্স বরোর সীমানার সাথে লাগানো, লংআইল্যান্ডের একটা এলাকায় বেশ কিছু সময় চাকুরী করেছিলাম; এক সন্ধ্যায় বাসায় ফেরার পথে এক সাদা রমনীকে সাহায্য করে, ধন্যবাদের বদলে হুশিয়ারী পেয়ে, কিছুটা গন্ডগোল লাগিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছিলাম; কিন্তু তাতেও সুবিধা করতে পারিনি, এটা সেই কাহিনী।
আমি কাজে যাবার সময়, ২টি সাবওয়ে ট্রেন বদলায়ে, অবশেষে লংআইল্যানডের ট্রেন ধরে কাজে যেতাম; ফেরার সময়ও একই পথে; কাজে দেরী হলে, সন্ধ্যার দিকে ট্রেন ঘন ঘন আসতো না, আসতো ৪৫ মিনিট পর পর; কোনদিন ২/১ মিনিটের জন্য ট্রেন হারালে, আমি পরের ট্রেনের জন্য বসে থাকতাম না, বাস ষ্টেশনে গিয়ে, এক্সপ্রেস বাস ধরে জামাইকা এসে, সেখান থেকে সাবওয়ে ট্রেন ধরে বাসায় ফিরতাম, এই পথে সময় কিছুটা বেশী লাগতো।
সন্ধ্যায় জামাইকা থেকে ট্রেনে ফেরার মাঝে একটা আনন্দ ছিলো, পেছনের ৩/৪ বগী সব সময় একেবারে খালি থাকতো, পরবর্তী ৬/৭ ষ্টেশনে পেছনের বগীগুলোতে কেহ উঠতো না, রাতে খালি বগীতে উঠতে মানুষ ভয় পায়। আমি সাবওয়ে ট্রেনে কখনো বসতাম না। অনেকটা পথ একা একা আসতে ভালো লাগতো; আমি বগীর ভেতর হাঁটতাম।
এক শরতের সন্ধ্যায়, আমি পেছনের বগীতে উঠে দরজার কাছে দাঁড়িয়ে আছি, ট্রেন ছাড়ার বেল বাজছে, দরজা বন্ধ হচ্ছে, দেখি এক নারী ২ হাতে বাজারের অনেকগুলো ব্যাগ নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে ঝড়ের গতিতে নামছে; সে নামার আগে দরজা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, আমি পা দিয়ে আটকায়ে দিলাম, সে উঠলো। পুরো বগী খালি, সে ব্যাগগুলো রেখে, ভালো করে বসলো; তারপর, আমার দিকে ঠান্ডা চোখে তাকালো। মাঝারি গঠন, বয়স ৩০'এর মতো হবে, ড্রেস প্যান্ট ও কোট পরা, ভালো স্বাস্হ্য, কমনীয় চেহারা।
আমি তার মুখের দিকে তাকিয়ে আছি, আশা করছি, সে ধন্যবাদ বলবে, সে ঠান্ডা চোখে আমাকে বললো,
-তুমি দরজা ধরে রেখে আমাকে সাহায্য করেছ; ইহার কোন দরকার ছিলো না, এভাবে ট্রেন আটকায়ে রাখা বেআইনী।
-তুমি যেভাবে নামছিলা, আমি তো মনে করছিলাম, তুমি ফ্লাইট মিস করছো!
-কেহ ফ্লাইট মিস করলেও ট্রেনের সেইফটি রুল ভংগ করে, আর কোনদিন ট্রেন থামাইও না; এভাবে এ্যাকসিডেন্ট হয়।
-ঠিক আছে, আমি বুঝেছি, আর লেকচারের দরকার নেই।
-আমি তোমার ভালো জন্য বলছি।
-বললাম তো বুঝেছি, এখন লেকচার বন্ধ করে বস; না'হয়, তোমাকে সামনের ষ্টেশনে নামিয়ে দেবো।
সে হো হো করে হেসে উঠলো,
-তুমি আমাকে নামিয়ে দিবে, কিভাবে?
-সোজা ব্যাপার, টেনে প্লাটফরমে নামিয়ে দেবো; তোমার বাজার টাজার ট্রেনেই থেকে যাবে।
-তুমি আমার সাথে পারবে?
-কি যে বলো, তুমি মেয়ে, নাকি পুরুষ?
-আমি মেয়ে, তুমি আমাকে টেনে সীট থেকেও তুলতে পারবে না।
-তুমি আমাকে হাসাচ্ছ!
-শেষ হাসি কিন্ত আমিই হাসবো।
-শক্তি ব্যতিতও আমার সাথে এটাসেটা আছে! দেখালে, তুমি ভয়ে বাপ ডেকে পালিয়ে যাবে।
-তাই? দেখাও তো, তোমার সাথে কি আছে! আমি তোমার পা থেকে মাথা সব জরীপ করে ফেলেছি, তোমার সাথে কোন অস্ত্র ইত্যাদি নেই। তুমি বরং এখন আমার দিকে তাকাও, দেখ, এটা কি!
সে তার কোট সরায়ে বাম বাহুর নীচে দেখালো, রিভলবার ঝুলছে! আমি বললাম,
- ব্যাপার কি?
-আমি পুলিশের ডিটেকটিভ, জামাইকাতে কাজ করি। তোমাকে এই ট্রেনে অনেকবার দেখেছি।
-তাই?
-বাহাদুরি করে মেয়েদের ভয় লাগাতে গিয়ে শেষে শ্রীঘরে চলে যাইও না; আজকে তুমি পরপর ২টি ভুল করেছ। আমি সামনের ষ্টেশনে নেমে যাবো; সামনের দিনগুলোতে এসব এ্যাডভেন্চার আর করিও না, তোমার বয়স হয়েছে!
-তোমাকে ব্যাগ নামিয়ে দিয়ে সাহায্য করতে হবে?
-ধন্যবাদ, লাগবে না, আমি অভ্যস্ত! ভালো থেকো, দেখা হবে।
-দেখা হবে।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে মে, ২০২০ রাত ১০:৫০