নগর জীবনে এই ১/২ দিনেই যন্ত্রনায় নগরবাসীর কি যন্ত্রণা সেটা কেও হয় তো বোঝেও না আবার যারা বোঝেন তাদের করার কিছু ক্ষমতাও নেই।
# মাজারের পাশে বাসা সপ্তাহের বৃহষ্পতিবার চলে তাদের বিভিন্ন মাহফিল যেখানে শ্রোতা থেকে মাইকের সংখ্যা বেশি। আর এদেশে শব্দ দুষণ প্রতিরোধে কোন আইন আছে হয়তো কিন্তু কোন দিন প্রয়োগ হয়েছে কিনা আমার জানা নাই। তারপর আবার ধর্মীয় ব্যাপার, প্রতিবাদ করলে খরব আছে, সপ্তাহে তো মাত্র ১/২ দিন।
# বছর আন্তে মাইজভান্ডারীদের মাহফিল হয় নগরীর প্রাণ কেন্দ্রে কিন্তু মাইক থাকে ৫০০/৬০০ মিটার দুরেও। আশে পাশে শব্দের যন্ত্রণায় কান মাথা ঝালাপাল। কিছু বললে আপনি কি মুসলিম?? ধর্মীয় অনুষ্ঠানেও আপনার সমস্যা। যাস্ট ১/২দিনে কি আসে যায়। সমান্য একটু যন্ত্রণা সহ্য করতে পারেন না।
# পাড়ার মসজিদের মাহফিল, যে মাফফিলে ধর্মীয় কথাবার্তা যাই হউক বা না হউক হাসি তামশার অভাব নাই, চলে রাত ১১টা থেকে ১২টা অবধি। কিছু বলবেন তো মাইর খাবেন, বৎসারে যাস্ট ২/১টা দিন সহ্য তো করতেই হবে।
# বাসার অন্য পাশে পূঁজা মণ্ডব, গেল দুর্গা পুজা, গেল স্বরস্মতি পূজা, সর্ব শেষে কালি পূজা, চলে রাত ২/৩টা পর্যন্ত, ঢাকের শব্দ আর কান ফাটানো মাইকের আয়োজনে জানালা দড়জা বন্ধ করেও ঘরে থাকা দায়। হার্টের রোগিরা যে কি করে বেচে থাকে সেটাই আশ্চর্য় বিষয়। কিচ্ছু বলা যাবে না, যাস্ট ১/২দিন সহ্য করতে হবে।
# বৎপূর্তী উৎসব নামে চলে নানা আয়োজন। আয়োজন মানে মাইক আর বক্স ছাড়া চলে না, অন্যের বিরক্ত না করে কি আর অনুষ্ঠান জমে। ২/১টা দিন সহ্য করুন না, সমস্যা নাই।
# পলেহা বৈশাখ ও পহেলা জানুয়ারীর কথা তো বলা যাবে না, বললেই হয়ে যাবেন আনকালচার বা জামাত শিবির রাজাকার। রাত ১০টা থেকে চলে আতশ বাজি, ধামধুম শব্দ আর মাঝে মধ্যে হঠাৎ চিল্লানির শব্দে যাওয়ার কোন জায়গা নেই। কখনও কখনও দড়জা জানালা কেপে ওঠে। রাত ১২টা বাজার সাথে সাথে চিল্লানি আর সাউন্ড বক্সের উচ্চমাত্রার শব্দে ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা আমার মত সহজসরল শান্তিপ্রিয় মানুষের। কোন কথা হবে না, মেনে নিতে থাকুন মাত্র ১/২দিনই তো।
# মেলার আজকাল অভবা নাই, সীমের মেলা, আচারের মেলা, সরিষার তেলের মেলা, খই ভাজা মেলা, বউ ভাগানো মেলা, এমন কিছু নেই যা নিয়ে এখন মেলা হয় না। আর মেলা মানে উচ্চ মাত্রার সাউন্ডে সবাইকে জানান দেয়া, বেটা নগড় জীবনে ঘড়ে ঘুমাবি ক্যান। ওরে ভাই যাস্ট ১/২দিন সহ্য করে নিন।
# আর ধরেন দলীয় অনুষ্ঠান। আগে এলাকার উঠতি পোলাপানডি টাকার সমস্যায় পরলে সংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করত। এখন দিন বদলেছে এখন হয় সমাবেশ, ৩০জন লোক না থাকলেও মাইক লাগে ৩৬টা, অমুক ভাই তমুক নেতা এসবের চিল্লাচিল্লির যন্ত্রণায় এলাকায় বিরাজ করে যুদ্ধযুদ্ধভাব। কোন কথা হবে না, চুপচাপ মেনে নিন, পার্টির ছাওয়ালপল বলে কথা।
# বাজারে আইছে ঘষা মাজার নতুন সাবান অথবা গৃহীনিদের হাতের গ্লভ থেকে ন্যাপকিন, অথবা কোন নুডুলস যার মার্কেটিং প্রমোর নামে পিকাপের উপর সাউন্ড বক্স দিয়ে নগরীর ঘরে ঘরে সে বর্তা পৌছে না দিলে কি আর চলে। ভাই শান্তিপ্রিয় হয়ে লাভ নেই মেনে নিতে থাকুন শব্দে আপনার যত ভৃতিই থাকুক না কেন।
এরকম হাজারও যন্ত্রণার মাঝে যোগ হয়েছে শোক সংবাদ। আগের দিনে প্রথম প্রথম যখন শোক সংবাদ মাইকে প্রচার করা হত, ভাষাটা ছিল শোকার্ত, ছিল নমনীয় কিন্তু আজ কাল আর তা নেই, যে মারা গেছেন তার নাম বলার আগে তার চৌদ্দগুষ্ঠির নাম, দলীয় পদবী, বর্তমান অবস্থান, ব্যাবসায়িক ঠিকানা ইতিহাস বৃবিত্তি করে তারপর মৃত ব্যাক্তি নাম বলা হয়, সে বলায় না আছে কোন মাধুর্যতা, না আছে কোন শোক ছায়া। কি করবেন ভাই মানুষকে তো জানাতে হবে, একটু শব্দদুষণ না হয় হলোই কিইবা আসে যায়, ২/১টা দিন একটু সহ্য করুন না।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা নভেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৩:০৩