কলেজ জীবনের স্যারের একটি পোষ্টে একটা কমেন্টস করলাম। আমি জানতাম তার কাছে কোন উত্তর নেই তাই তিনি উত্তর করলেন ভালো কিছু ভাবতে পারো না। আমিও চিন্তা করে দেখলাম আমার মাথায় কেন এগুলি আসে, আমিও তো ভালো কিছু ভাবতে পারি।
পরের দিন সকালে প্রাণের ঢাকাতে যেতে হবে বলে ঘুম থেকে উঠলাম ভোরে, ফজর পড়েই বের হলাম রাস্তায়, উদ্দেশ্য মতিঝিল পৌছে হিরা ঝিলে নাস্তা করব। রাস্তার মোড়ে দাঁড়ানো বাসস্যান্ডে যাওয়ার উদ্দেশ্যে সিএনজিকে বললাম রিজার্ভ যাব কত চাও। সাধারণ ভাড়া যেখানে সর্বচ্চ ১০০টাকা সে দাবি করল ১৮০টাকা। মনে মনে বিরক্ত হলাম কেন নিজের কাছে একটা পকেট আয়না রাখলাম না, তা হলে নিজেকে দেখতে পারতাম যে চেহারার মধ্যে জমিদার জমিদার কোন ভাব ফুটে উঠেছে কিনা। তারপরও তাকে বললাম "কিরে সকাল বেলা আমার রূপে জমিদার জমিদার গ্লেস দিচ্ছে নাকি ৮০টাকার ভাড়া ১৮০চাইলি। শেষমেষ দরদাম শেষে ১২০টাকায় রওনা হলাম। বাসস্যান্ডে পৌছাতেই বাধল বিপত্তি। সিএনজি এ রুটের না তাই তাকে জরিমানা দিতে হবে, সে রুটের অন্যান্যরা ঘিরে ধরল। আমি ইচ্ছে করলেই নেমে যেতে পারতাম কিন্ত সকালবেলা তাকে বিপদে ফেলে স্বার্থপরের মত যেতে মন চাইল না। তাদের মধ্যে লাঠিহাতে থাকা লোককে জিঙ্গেস করলাম "কিরে ঘটনা কি"। ঘটনার বিবরণ দিল এক রুটের গাড়ি অন্যরুটে যেতে পারবে না, এক একজনার আলাদা আলাদা এলাকা, নিজ নিজ রুটে চলাচলের জন্য চাঁদা দিয়ে পারমিশন নিতে হয় এবং প্রতদিনি ১০-৩০টাকা পর্যন্ত টাকা দিতে হয়। অন্যান্যরা আসলে জরিমানা ৫০টাকা। সকালবেলা তাই নিজ থেকে ২০টাকা দিয়ে বললাম যা, ওর কোন দোষ নাই, ও আসতে চায় নাই, আমার তাড়া ছিল তাই নিয়ে এসেছি, যা বাবা মাফ করে দে। যা হউক তারা ভদ্রর লোকের সন্তান, সে যাত্রায় ক্ষমা করলেন। সিএনজি বলল দেখছেন মামা কেন ভাড়া বেশি চাই।
গাড়ীতে উঠে বসলাম, মুহুর্তে গাড়ী ভর্তি, কিন্তু গাড়ী ছাড়ার নামে কোন খোজ নেই। এ আবার কি আজিব কারবার। গাড়ী ভর্তি লোক গাড়ি কেন চলে না। সামনে দেখি আরেক গাড়ী ডাকছে ঢাকা ঢাকা ঢাকা তার অর্ধেক সীটও পূর্ণ হয় নাই। কিন্তু সে সাইড দিবে না তার গাড়ী না ভরা পর্যন্ত। যাহ্ বাবা এ আবার কি আজিব নিয়ম। দুই কোম্পানীর মধ্যে এভাবেই দফারফা করা যে, ১/১গাড়ী চলতে পারবে। এক কোম্পানীর ১টা অন্য কোম্পানীর একটা এমন। গাড়ী ভর্তি হলেও বের হতে পারবে না । আশ্চর্য হলাম না কেননা আমি বাংলাদেশী, আমার হতাশ হওয়া সাজে না, ৪৫টাকায় আমদানি করা পেয়াজ যেখানে ২২০টাকা কিনে খাচ্ছি আর সেখানে এই সামান্য কয়েক মিনিট অপেক্ষা করতে হবে সেখানে কি আর হতাশ হলে চলে।
অবশেষে যাত্রা শুরু হল প্রায় ১৫/২০মিনিট পর। সকালের রাস্তায় কোন বাধাবিপত্তি না পেড়িয়েই পৌছে গেলাম দাউদকান্দি, প্রথমে গাড়ীর লোকের চেকিং শেষে পুলিশি চেকিং নামের যাত্রীর মালের ব্যাগে লাঠির গুতাগুতি শেষ আবার যাত্রা শুরু। মেঘনা পার হতেই গাড়ী আবার ব্রেক। এবারও পুলিশি চেক, লাঠির গুতাগুতি, যাত্রীর পায়ের তলার মালামাল চেক। একজন যাত্রীকে ব্যগ সহ নামিয়ে নিল, সম্ববত নির্মান শ্রমিক, কাজ শেষে বা ছুটিতে গ্রামে ছুটেছে তাই নতুন ব্যাগ কিনেছে, ভেতরে পুরাতন জামাকাপড় লুঙ্গী ইত্যাদি মাত্র। অবশেষে পুলিশের সিনিয়র এসে সে যাত্রা চেকিং শেষ হল। পৌছলাম সায়েদাবাদ। সকালের যাত্রির চাপে রিক্সা নাই বললেই চলে। যাকেই জিঙ্গেস করি সেদিকে যাবে না। পরলাম আরেক ক্যারফায়!! মতিঝিলে কি সাপের আছর পরল নাকি, যা হউক মিনিট ১৫ অপেক্ষা করার পর একজন রাজি হল ভাড়া ৫০। যেখানে ৪০টাকার উপরে কোন দিন ভাড়া দেয়া লাগে নাই। যেহেতু হিরা ঝিলের পড়োটা আমার প্রিয় তাই ১০টাকা বেশি দিয়েই গেলাম সেখানে।
নাস্তা শেষে টুকিটাকি কাজ শেষে আসলাম গুলিস্থান, নওয়াবপুরে একজনার সাথে দেখা করে উদ্দেশ্য উত্তরা। বাইকে আমার প্রচণ্ড ভয় দুর্ঘটনা কবলিত হওয়ার পর থেকে। তাই স্বল্প ব্যয়ে সিএনজিই ভরসা, যদিও উবার আর সিএনজির পার্থক্য মাত্র ১০০ টাকা, এক মানুষ বিবেচনায় ১০০টাকা বাচাতে চাইলাম। মিটার নামক শব্দটা এদেশে ১০পয়সা আর আধুলির মত অচল তাই দরদাম করেই উঠতে হল। গাড়ী স্টার্ট দিতেই লাঠি হাতে সামনে হাজির ১০টাকা। এ চাঁদার চিত্র চেনা জানা সবারই তাই না বলি এ নিয়ে। গাড়ী সম্ভবত তেজগাঁ আসতেই পুলিশের লাঠির ইশারায় থেমে গেল। জিঙ্গেস করল আপনি কি মিটারে এসেছেন নাকি কন্ট্রাকে, তত সময়ে ড্রাইভার তার হাতে কিছু গুজে দিল তারপাও আমার উত্তরের আশায় চেয়ে থাকল। আমি কৌশলগত উত্তর দিলাম- বাংলাদেশের যে নিয়ম সেভাবেই এসেছি। সকাল বেলা তাদের মুড ভালো তাই কোনরূপ গালি না দিয়েই চলে গেল। এর আগে এরকম উত্তর দেয়ার জন্য মাদার--- টাইপের গালি দিয়েছিল। কথায় আছে পুলিশে ছুলে ৭০ঘা তাই চুপ থাকাই উত্তম।
উত্তরা পৌছে জিঙ্গেস করলাম খরচা কত হল- বলল মামা পুলিশরে দিছি ৩০টাকা আর পার্কিং ১০ মোট চল্লিশ। এ ৪০টাকা কিন্তু সিএনজি চালক বাড়ি বন্ধক রেখে দিবে না, যাত্রীদের পকেট থেকেই নিবে। যা হউক কাজ শেষে ফিরতে ফিরতে রাত ৯টা। এবার বাসস্ট্যান্ড থেকে নেমে ব্যাটারি চালিত অটোতে উঠলাম, পাশেই মটরবাইক পার্কিং করে মুখে চাপদাড়িওয়ালা সার্জেট বা তার নিম্নের কেও বাইকের উপর বসে আসে যার ফলে ৪রাস্তার মোড় হওয়াতে গাড়ীগুলি চলতে একটু কস্ট হচ্ছে এবং ঘুরতে পারছে না। অটোড্রাইভার বলল স্যার যদি একটু বাইকটা সরাতেন- ব্যস আর কিছু বলার আগেই খেকিয়ে উঠল, দাড়িয়ে থাক, আইছে জমিদারেরপুত তারজন্য আমারে সরতে হবে, একদম ভ--- দিমু। বেচারা বিরস মুখ ফিরয়ে নিল।
বাসায় ফিরে গোসলখানায় ঢুকে চিন্তা করতে থাকলাম কোন গ্যাপে ভালো কিছু ভাবা যায় এঘটনাগুলি মধ্যে।