স্মৃতি বড় উচ্ছৃঙ্খল। আজ খুব সেই সব বন্ধুদের কথা মনে পড়ছে যাদের সাথে তুমুল ঝগড়া হোত। খুব ছোটবেলায় তখন আমরা রাঙামাটিতে থাকতাম, আমার প্রথম খেলার সাথি যার নামটা খুব সম্ভবত কুলসুম ছিল, যার সাথে আমি নাওয়া খাওয়া বাদ দিয়ে টৈটৈ করে ঘুরে বেড়াতাম সারা পাড়া। আবার খুব ছোট ছোট কারনে তার সাথে ঝগড়া বেঁধে যেত এবং শেষ পর্যন্ত আড়ি নিয়ে মুখ গোমড়া করে বাড়ি ফিরতাম। মার কাছে এসে কান্নাকাটি করতাম, কেন কুলসুম আমার সাথে আড়ি নিল। শেষ অব্দি মা গিয়ে দুজনের ভাব করিয়ে দিয়ে আসত। কি সুন্দর দিন ছিল, কনিষ্ঠ আঙ্গুলে আড়ি আর বৃদ্ধাঙ্গুলিতে ভাব। ক্লাস সিক্স পর্যন্ত সব ঝগড়া মা মিটিয়ে দিত। আমিতো মাঝে মাঝে মার সাথেও আড়ি নিয়ে নিতাম। মার সাথে আড়ি নিতাম বেশী বেশী আদর পাওয়ার জন্য।
ক্লাশ সেভেন এ আমাকে একটা রেসিডেনসিয়াল হোস্টেলে ভর্তি করিয়ে দেয়া হোল। বছরে তিন বার তিন ছুটিতে বাড়িতে আসা যেত বাকি সময়টা হোস্টেলেই কেটে যেত। সেখানে আমার প্রথম বন্ধু তৃপ্তি, এত ভাব যে মাঝে মাঝে মনে হোত তৃপ্তিকে ছাড়া বেঁচে থাকা কঠীন। একদিন হঠাত্ ক্লাসে বসা নিয়ে দুজনের ঝগড়া লেগে গেল। রাগে দুঃখে অভিমানে পাঁচদিন দুজনের কথা বলা বন্ধ ছিল। অতঃপর ক্লাসের অন্য বন্ধুদের সহযোগীতায় সেই ঝগড়ার সমাপ্তি ঘটে। এরপর ক্লাস এইট এ আরো বন্ধু যোগ হতে থাকে আমার স্কুলবেলাতে। শিখা তাদের মধ্যে সবচাইতে কাছের হয়ে উঠে। হয়ত যাকে বেশী ভালবাসা যায় তার কাছ থেকে প্রত্যাশাটাও বেশী থাকে, এবং অভিমানটাও বেশী কাজ করে। শিখার সাথে প্রথম ঝগড়া লাগে হোস্টেলের
বাথরুম দখল করা নিয়ে, কি যে দুঃখের আর কষ্টের সময় ছিল শিখার সাথে কথা না বলার দিন গুলো। আজ অনেক বছর পর ফেসবুকে শিখাকে দেখে সেইসব কথা মনে করে দুজনেই হেসে খুন। কত ছোট ছোট অর্থহীন বিষয়ে আমাদের ঝগড়া হোত। আবার ভাব হবার পর কি সেই আনন্দ।
ক্লাশ টেন এ ছোটরিতার সাথে ভাব জমে যায়, রিতা আমার যতটা না বন্ধু তার চাইতে বেশী ছিল গার্জিয়ান। বেশ শাষন করত আমাকে, অনেক পছন্দ করতাম এই জন্য ওকে।
ওর মতের বিরুদ্ধে যাওয়ার জন্য দুজনের মধ্যে বেশ মান অভিমান চলে, সে অভিমানটা এত তিব্র ছিল যে শেষ পর্যন্ত আর ওর সাথে কথা হয়নি। ও এস,এস,সি পাশ করার পর অন্য স্কুলে চলে যায়। ওকে আর খুঁজে পাইনি। দুর্ভাগ্যজনক ভাবে ওর ঠিকানা হারিয়ে ফেলেছিলাম।
ক্লাস ইলেভেন এ আমাদের সাত জনের একটা গ্রুপ ছিল। আমরা যেন সাত দেহে একি আত্মা। একি সাথে খাওয়া, ঘুম, ক্লাশ, স্টাডি এবং বাঁদরামি। গ্রুপের সবচাইতে বেশী কাছের ছিল শম্পা। ক্লাশ টুয়েলভ এ উঠার পর পরীক্ষায় নম্বর কম বেশী পাওয়া নিয়ে একটু মন খারাপ চলে দুজনের। তবে তা বেশী দিন স্হায়ি হয়নি। এইচ,এস,সি পরীক্ষার পর হোস্টেল ছেড়ে চলে আসার দিন কি কান্নাটাই কেঁদেছিলাম বন্ধুদের গলা ধরে তা আজও মনে হলে চোখে জল আসে। বার বার নিজেদের ছোট ছোট ঝগড়া অভিমানের জন্য অনুতপ্ত হচ্ছিলাম। শুনেছি শম্পা এখন আমেরিকায় আছে। ফেসবুকে ওর নাম লিখে অসংখ্য বার সার্চ দিয়েছি। সার্চ রেজাল্ট অনেক শম্পাকে এনে হাজির করলেও আমার কাংখিত শম্পাকে এনে দিতে পারেনি।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




