somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভাঙচুর দিন।

১২ ই জানুয়ারি, ২০১২ রাত ৮:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাসা আর স্কুল,
স্কুল আর বাসা,
একঘেয়েমি, বিরক্তি, আর ক্লান্তির চরম সীমা পার করে ফেলেছি। একটু চেন্জ দরকার, মনে হচ্ছিল দূরে কোথা থেকে ঘুরে আসতে পারলে ভালো লাগত। খুব সমুদ্রে দেখতে ইচ্ছে করছে অনেকদিন যাবত। কিন্তু সময় আর সুযোগ একসাথে করা যাচ্ছেনা কিছুতেই। নাহ আজ বাসায় ফিরব না, স্বিদ্ধান্ত নিলাম আজ সারাদিন রিক্সায় ঘুরব, রাজবাড়িতে গিয়ে বসে থাকব। যা খেতে ইচ্ছে করে খাব। একদম ভাঙচুর করা একটা দিন হবে আজ। চারজন বেরিয়ে পড়েছিলাম স্কুল শেষে। ফুটপাতে দাঁড়িয়ে চা খেয়েছি, রাজবাড়িতে গিয়ে বসেছিলাম অনেক ক্ষণ। এখানে এলেই কোথা দিয়ে যে সময় পার হয়ে যায় বুঝতেই পারিনা। কত কত ইতিহাস লুকিয়ে আছে। রাজবাড়ির এই ইতিহাসটা আমাকে বরাবর মুগ্ধ করে। মিষ্টি রোদে বসে সাইনবোর্ডে লেখা ইতিহাস পড়তে পড়তে চলে গিয়েছিলাম সেই সময়ে।

নাটোরের রাজবাড়ি


ঐতিহাসিকদের মতে অষ্টাদশ শতকের শুরুতে নাটোর রাজবাড়ির উত্‍পত্তি হয়। ১৭০৬ সালে পরগনা বানগাছির বিখ্যাত জমিদার গনেশ রাম রায় ও ভবানিচরন চৌধুরী রাজস্ব প্রদানে ব্যর্থ হওয়ায় জমিদারি চ্যুত হন। দেওয়ান রঘুনন্দন উক্ত পরগনা নিজ ভাই রামজীবনের নামে বন্দোবস্ত নেন। এভাবেই রাজবংশের পত্তন হয়। রাজা রামজীবন নাটোর রাজবংশের প্রতিষ্ঠা করেন ১৭০৬ সালে মতান্তরে ১৭১০ সালে। তিনি ১৭৩৪ সাল পর্যন্ত রাজত্ব করেন এবং সেই বছর মৃত্যু বরন করেন। রাজা রামজীবনের মৃত্যুর পর তার দত্তক পুত্র রামকান্ত নাটোরের রাজা হন। উল্লেখ্য রাজা রামজীবনের সময় থেকে দেওয়ান দয়ারাম (দিঘাপতিয়া রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা ) নাটোরের জমিদারি তত্তাবধান করতেন।
১৭৩০ সালে রানী ভবানির সাথে রামকান্তের বিয়ে হয়। ১৭৪৮ সালে নবাব আলিবর্দা খাঁ রানী ভবানির উপর এই জমিদারী পরিচালনার ভার অর্পন করেন। জানা যায় এই নারী বগুড়া জেলার আদমদিঘীর ছাতিনা গ্রামে বাংলা ১১২২ সালে জন্ম গ্রহন করেন। পিতা আত্মরাম চৌধুরী মাতা জয়দূর্গা। রানী ভবানির রাজত্ব কালে নাটোরের জমিদারি ব্যাপক বিস্তার লাভ করে। বর্তমান রাজশাহী, পাবনা, বগুড়া, কুষ্টিয়া, যশোর রংপুর এবং ভারতের পশ্চিমঙ্গের মুর্শিদাবাদ, বীরভুম, মালদহ ইত্যাদি জেলাব্যাপি বিস্তৃত ছিল নাটোর রাজ্যের জমিদারি।
অর্ধেক বঙ্গের রাজত্ব করতেন রানী ভবানি। তাই তাকে বল হত অর্ধবঙ্গেশ্বরী।
রানীভবানির মৃত্যুর পর তার দত্তক পুত্র রামকৃষ্ণ জমিদারীর দায়িত্বভার গ্রহন করেন। বাংলা ১২০৩ সালে রামকৃষ্ণের মৃত্যুর পর রাজা বিশ্বনাথ ও রাজা শিবনাথের মধ্যে জমিদারি বন্টণ করা হয়। বিশ্বনাথ বড় তরফ ও শিবনাথ ছোট তরফ হিসেবে পরিচিত। রাজা বিশ্বনাথের বংশপরম্পরা হিসেবে যথাক্রমে রাজা গোবিন্দচন্দ্র (দত্তক), মহারাজা জগদিন্দ্রনাথ ও কুমার যোগেন্দ্রনাথ বড় তরফের জমিদারি দেখা শোনা করতেন। অন্যদিকে শিবনাথের বংশপরম্পরা হিসেবে আনন্দনাথ, চন্দ্রনাথ, যোগেন্দ্রনাথ, জিতেন্দ্রনাথ ও কুমার বিরেন্দ্রনাথ ছোট তরফের জমিদারী পরিচালনা করেন। তবে রানীর বংশধরদের মধ্যে মহারাজা জগদীন্দ্রনাথ সর্বাপেক্ষা জনদরদী ও সমাজসেবি হিসেবে পরিচিত লাভ করেন।

সমুদ্র দেখার সাধ রাজবাড়ির বিশাল দিঘী দেখে মেটাতে হোল। পেটের ক্ষিধে জানান দিচ্ছিল বেলা অনেক হয়েছে। দুপুর খেয়ে ছুটলাম দিঘাপতিয়াতে উত্তরা গণভবন দেখতে। দুটো বাড়ি সুন্দর তবে গণভবনের থেকে রানি ভবানির বাড়িটাই আমাদের সবার বেশী পছন্দ। গণভবনটা অনেক বেশি রঙচঙে, গোছানো আর কিত্রিমতায় পূর্ন। গণভবনকে মনে হয় পার্লার থেকে সেজে আসা ভারি মেকাপের কোন কন্যা, আর রানীভবানির বাড়িটা মেকাপ বিহিন সিম্পল একটা কন্যা।

অনেক ঘুরাঘুরি হৈচৈ শেষে একরাশ মুগ্ধতা নিয়ে নীড়ে ফিরে আসা।
জমানো ক্লান্তি, একঘেয়েমি আর বিরক্তি কেটে গেছে পুরোপুরি।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জানুয়ারি, ২০১২ বিকাল ৫:১৮
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×