বাসা আর স্কুল,
স্কুল আর বাসা,
একঘেয়েমি, বিরক্তি, আর ক্লান্তির চরম সীমা পার করে ফেলেছি। একটু চেন্জ দরকার, মনে হচ্ছিল দূরে কোথা থেকে ঘুরে আসতে পারলে ভালো লাগত। খুব সমুদ্রে দেখতে ইচ্ছে করছে অনেকদিন যাবত। কিন্তু সময় আর সুযোগ একসাথে করা যাচ্ছেনা কিছুতেই। নাহ আজ বাসায় ফিরব না, স্বিদ্ধান্ত নিলাম আজ সারাদিন রিক্সায় ঘুরব, রাজবাড়িতে গিয়ে বসে থাকব। যা খেতে ইচ্ছে করে খাব। একদম ভাঙচুর করা একটা দিন হবে আজ। চারজন বেরিয়ে পড়েছিলাম স্কুল শেষে। ফুটপাতে দাঁড়িয়ে চা খেয়েছি, রাজবাড়িতে গিয়ে বসেছিলাম অনেক ক্ষণ। এখানে এলেই কোথা দিয়ে যে সময় পার হয়ে যায় বুঝতেই পারিনা। কত কত ইতিহাস লুকিয়ে আছে। রাজবাড়ির এই ইতিহাসটা আমাকে বরাবর মুগ্ধ করে। মিষ্টি রোদে বসে সাইনবোর্ডে লেখা ইতিহাস পড়তে পড়তে চলে গিয়েছিলাম সেই সময়ে।
নাটোরের রাজবাড়ি

ঐতিহাসিকদের মতে অষ্টাদশ শতকের শুরুতে নাটোর রাজবাড়ির উত্পত্তি হয়। ১৭০৬ সালে পরগনা বানগাছির বিখ্যাত জমিদার গনেশ রাম রায় ও ভবানিচরন চৌধুরী রাজস্ব প্রদানে ব্যর্থ হওয়ায় জমিদারি চ্যুত হন। দেওয়ান রঘুনন্দন উক্ত পরগনা নিজ ভাই রামজীবনের নামে বন্দোবস্ত নেন। এভাবেই রাজবংশের পত্তন হয়। রাজা রামজীবন নাটোর রাজবংশের প্রতিষ্ঠা করেন ১৭০৬ সালে মতান্তরে ১৭১০ সালে। তিনি ১৭৩৪ সাল পর্যন্ত রাজত্ব করেন এবং সেই বছর মৃত্যু বরন করেন। রাজা রামজীবনের মৃত্যুর পর তার দত্তক পুত্র রামকান্ত নাটোরের রাজা হন। উল্লেখ্য রাজা রামজীবনের সময় থেকে দেওয়ান দয়ারাম (দিঘাপতিয়া রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা ) নাটোরের জমিদারি তত্তাবধান করতেন।
১৭৩০ সালে রানী ভবানির সাথে রামকান্তের বিয়ে হয়। ১৭৪৮ সালে নবাব আলিবর্দা খাঁ রানী ভবানির উপর এই জমিদারী পরিচালনার ভার অর্পন করেন। জানা যায় এই নারী বগুড়া জেলার আদমদিঘীর ছাতিনা গ্রামে বাংলা ১১২২ সালে জন্ম গ্রহন করেন। পিতা আত্মরাম চৌধুরী মাতা জয়দূর্গা। রানী ভবানির রাজত্ব কালে নাটোরের জমিদারি ব্যাপক বিস্তার লাভ করে। বর্তমান রাজশাহী, পাবনা, বগুড়া, কুষ্টিয়া, যশোর রংপুর এবং ভারতের পশ্চিমঙ্গের মুর্শিদাবাদ, বীরভুম, মালদহ ইত্যাদি জেলাব্যাপি বিস্তৃত ছিল নাটোর রাজ্যের জমিদারি।
অর্ধেক বঙ্গের রাজত্ব করতেন রানী ভবানি। তাই তাকে বল হত অর্ধবঙ্গেশ্বরী।
রানীভবানির মৃত্যুর পর তার দত্তক পুত্র রামকৃষ্ণ জমিদারীর দায়িত্বভার গ্রহন করেন। বাংলা ১২০৩ সালে রামকৃষ্ণের মৃত্যুর পর রাজা বিশ্বনাথ ও রাজা শিবনাথের মধ্যে জমিদারি বন্টণ করা হয়। বিশ্বনাথ বড় তরফ ও শিবনাথ ছোট তরফ হিসেবে পরিচিত। রাজা বিশ্বনাথের বংশপরম্পরা হিসেবে যথাক্রমে রাজা গোবিন্দচন্দ্র (দত্তক), মহারাজা জগদিন্দ্রনাথ ও কুমার যোগেন্দ্রনাথ বড় তরফের জমিদারি দেখা শোনা করতেন। অন্যদিকে শিবনাথের বংশপরম্পরা হিসেবে আনন্দনাথ, চন্দ্রনাথ, যোগেন্দ্রনাথ, জিতেন্দ্রনাথ ও কুমার বিরেন্দ্রনাথ ছোট তরফের জমিদারী পরিচালনা করেন। তবে রানীর বংশধরদের মধ্যে মহারাজা জগদীন্দ্রনাথ সর্বাপেক্ষা জনদরদী ও সমাজসেবি হিসেবে পরিচিত লাভ করেন।
সমুদ্র দেখার সাধ রাজবাড়ির বিশাল দিঘী দেখে মেটাতে হোল। পেটের ক্ষিধে জানান দিচ্ছিল বেলা অনেক হয়েছে। দুপুর খেয়ে ছুটলাম দিঘাপতিয়াতে উত্তরা গণভবন দেখতে। দুটো বাড়ি সুন্দর তবে গণভবনের থেকে রানি ভবানির বাড়িটাই আমাদের সবার বেশী পছন্দ। গণভবনটা অনেক বেশি রঙচঙে, গোছানো আর কিত্রিমতায় পূর্ন। গণভবনকে মনে হয় পার্লার থেকে সেজে আসা ভারি মেকাপের কোন কন্যা, আর রানীভবানির বাড়িটা মেকাপ বিহিন সিম্পল একটা কন্যা।
অনেক ঘুরাঘুরি হৈচৈ শেষে একরাশ মুগ্ধতা নিয়ে নীড়ে ফিরে আসা।
জমানো ক্লান্তি, একঘেয়েমি আর বিরক্তি কেটে গেছে পুরোপুরি।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জানুয়ারি, ২০১২ বিকাল ৫:১৮

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




