একদিন ছুটি হবে,
অনেক দূরে যাব,
নীল আকাশে
সবুজঘাসে
খুশীতে হারাব।
উমমম! বিবিধ রকমের ঘন্টার চক্করে কেটেছে আমার জীবনের অনেকটা সময়। স্কুলজীবনে বিশেষ করে ক্লাশ সেভেন থেকে ক্লাশ টুয়েলভ পর্যন্ত ঘড়ির সাথে আমার কোন যোগাযোগ ছিলনা।
জীবনের ঐ সময়গুলোতে বিভিন্ন শব্দের ঘন্টার আওয়াজ বলে দিত এখন আমাকে কি করতে হবে।
ভোর সাড়ে পাঁচটায় ঢংঢংঢং করে বাজত ঘুম থেকে উঠার ঘন্টা। কি যে কষ্ট লাগত এই ঘন্টার আওয়াজ কানে আসলে। ঘন্টা বাজার সাথে সাথে আমাদের ঘুম থেকে উঠানোর কাজে নিয়োজিত দিদিরা লাঠি নিয়ে চলে আসতেন আমাদের জাগানোর জন্য। মাথার কাছে লোহার খাটের রেলিং এ লাঠি দিয়ে বাড়ি দিয়ে ডাকতেন দিদিরা। বলাইবাহুল্য সেই ডাকে স্নেহ ভালোবাসার কোন বালাই ছিলনা।
ঘুম ঘুম চোখে, চোখ কচলাতে কচলাতে ক্লাশের ইউনিফর্ম পড়তে পড়তেই ভোর ৬টায় আরেকটা ঢংঢংঢং ঘন্টা বেজে উঠত। এই ঢংঢংঢ়ং টাও বেশ কষ্ট বয়ে নিয়ে আসত। এই ঘন্টার সাথে সাথে আমাদের চলে যেতে হতো নিজ নিজ ডিউটিতে। কারো থাকত ক্লাশ রুম ঝাড়ুদেয়া মোছার ডিউটি, কারো কারো থাকত নিজেদের রুম ঝাড়ু দেয়ার ডিউটি, কারো কারো থাকত বারান্দা ঝাড়ু আর মোছার ডিউটি। কারো বা থাকত ড্রেন পরিস্কারের ডিউটি আর কারো বা থাকত বাথরুম পরিস্কারে ডিউটি। এই ডিউটিগুলো আমাদের বছরের শুরুতেই নির্ধারন করে দেয়া হোত।
নিজ নিজ ডিউটি পালন করতে করতেই সাড়ে ছটায় আরেকটা ঘন্ট। এটা থাকত ব্রেকফাস্টের ঘন্টা। হোস্টেলের খাবার তাও আবার ব্রেকফাস্ট!! বেশীর ভাগ দিনই ব্রেকফাস্টের ঘন্টায় সাড়া দেয়া হোত না। সাতটায় পড়ত এসেম্বলির ঘন্টা।
এসেম্বলি শেষে লাইন করে নিজ নিজ ক্লাশে যাওয়ার পর থেকে পর পর কয়েকটা ক্লাশের ঘন্টা বাজার পর সকাল সাড়ে দশটায় আবার বাজত টিফিনের ঢংঢ়ংঢং।
এই ঢংঢংঢং এর আওয়াজ কানে মধুর মত বাজত। ক্ষিধেয় পেট চোঁ চোঁ করছে তাই খাবার যত অপছন্দেরই হোক না কেন, না খেয়ে থাকা সম্ভব না! আর কথায় আছে ক্ষিধে থাকলে শুধু নুন দেয়া ভাতও স্বাদ লাগে। টিফিন শেষ হতে না হতেই আবার ক্লাশের ঘন্টা। টানা দুপুর দুটো পর্যন্ত চলত ক্লাশের ঘন্ট। দুপুর দুটোয় ছুটির ঘন্টাটার আওয়াজটা থাকত সবচেয়ে মেলোডিয়াস। কি যে সুরেলা ঢং এ বাজত সেই ঘন্টাটা।
ঘন্টা বাজা মানেই ক্লাশের সব মেয়ে একসাথে একটা দরজা দিয়ে একযোগে বের হবার জোড় প্রচেস্টা, অতঃপর মারামারি, কেউ কেউ কিঞ্চিত আহত। দুপুর আড়াইটায় লাঞ্চের ঘন্টা। লাঞ্চ শেষে কিছুক্ষন রেস্টের পর আবার একটা ঘন্টা!
মানে মানে এটা থাকত বিকেলের ডিউটির ঘন্টা। সকালের দিদিরা আবার এসে হাজির হতেন আমাদের ডিউটিতে পাঠানোর জন্য। একবারে বিকেলের স্টাডির জন্য রেডি হয়ে আমরা ডিউটিতে যেতাম। বিকেল সাড়ে চারটায় বাজত বৈকালিন টিফিনের ঘন্ট! পাঁচটায় বাজত স্টাডির ঘন্টা। সবাই মাঠে আবার লাইন করে দাঁড়িয়ে সারিবদ্ধ ভাবে নিজ নিজ ক্লাসের নিজ নিজ ডেস্কে বসে স্টাডি কম বাঁদরামি বেশী করতাম সন্ধ্যে সাড়ে সাতটা পর্যন্ত। যদিও স্টাডি টাইমে টিচাররা বারান্দা দিয়ে রাউন্ড দিতেন, তারপরেও সুযোগ খুঁজে চলত বদমাইশি, সয়তানি। সন্ধ্যে সাড়ে সাতটায় ঢংঢংঢং করে বেজে উঠত ডিনারের ঘন্টা। ডিনার শেষে আবার স্টাডির ঘন্টা। রাত দশটায় বাজত স্টাডি শেষের ঘন্টা। এই ঘন্টাটার আওয়াজও খুব মেলোডিয়াস ছিল।
দশটায় রুমে গিয়ে টুকিটাকি কাজ সারতে সারতেই রাত এগারটায় টিচার চলে আসত লাইট অফ করে দেয়ার জন্য। ঘুম আসুক বা নাই আসুক রাত এগারটার পর আর কোন রুমে লাইট জলবে না! সেটাই ছিল নিয়ম।
সেই সব ঘন্টাময় দিনগুলোতে আমাদের শত্রু ঘন্টা ছিল ঘুম থেকে উঠার ঘন্টা। উঠার ঘন্টাটা দোতলায় আমাদের সুপারিনটেনড মিসেস খানমের রুমের সামনে ঝোলান থাকত। কতবার ভেবেছি ঘন্টাটা দূরে কোথাও ভেনিস করে দেই, ফেলে দেই। কিন্তু শাশ্তির ভয়ে সেটা আর কখনো করা হয়ে উঠেনি।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




