এবার অনেক দিন পর বাড়ি যাচ্ছি। প্রায় একমাস তো হবেই। জানুয়ারী মাসে একটা ছুটিও ছিলনা। পুরো ফেব্রুয়ারি মাস জুড়ে ছুটি আর ছুটি। এস,এস,সি পরীক্ষার ডিউটি নিলামনা। তাই মার্চ পর্যন্ত মায়ের কাছে থাকার এক বিশাল সুযোগ। এখন আমি বাসে বসেই ব্লগ লিখছি। আজ রাস্তায় যা যা দেখব তাই লিখে রাখব ভাবছি। বেশ রোদ উঠেছে, গরম পড়ে গেছে।
আমার পাশের সিটে এক মেয়ে বসেছে, মেয়েটা পড়ে আছে সাদা আর পেস্ট কালারের থ্রিপিস। বার বার আমাকেই খেয়াল করছে। হয়ত ভাবছে আমি মোবাইলে মনোযোগ দিয়া কি এত দেখছি! হুমম আমার সামনের সিটে দুটো মহিলা বসেছে। একজন লাল তাঁতের শাড়ি আরেক জন টিয়া রঙের থ্রিপিস পড়ে আছে।বাস ড্রাইভারের মাথায় বেশ চুল কম। তবে চুলে এত বেশী তেল দেয়া যে মনে হচ্ছে তেলের দাম কমে গেছে।
অনেকদিন পর আইয়ুব বাচ্চুর 'ফেরারি মন' শুনছি!
'গাছ লাগান
পরিবেশ বাঁচান
মহানবি নিজ হাতে গাছ লাগিয়েছেন'
ধুর বাস থেমে আছে কেন? বিরক্ত লাগছে!
চলা শুরু করল বাস। রাস্তায় মা কমপক্ষে দশ বার ফোন দেবে। কত দূর কত, দূর করে অস্হির করে ফেলবে।
আম গাছে এখনো মুকুল আসেনি।
রাস্তার ধারের মাছ বাজারে মাছের বিক্রেতা গুটি কয়েক মাছ নিয়ে ঝিমোচ্ছে।
ফাগুন আসি আসি করছে! বাতাসে সে আমেজ স্পস্ট।
আমাদের বাসটাকে ওভারটেক করল তিন তিনটে ট্রাক।
বাস মাঝারি স্পীডে ছুটে চলেছে। রাস্তার দু ধারে সবুজ আর সবুজ।
এত সুন্দর সবুজ। আমি বোঝার চেস্টা করলাম ক্ষেতে কিসের আবাদ হয়েছে কিন্তু বুঝতে পারছি না।
রাস্তার ধারে টং এর দোকানে দুই বৃদ্ধ বেশ আয়েশি ভঙ্গিতে রং চা খাওয়ায় মগ্ন। আমারো খুব চা খেতে ইচ্ছে করল ওদের খাওয়া দেখে। এমন টং দোকানে ধুলো মাখানো চা এর টেস্টই অন্যরকম।
কুমার বিশ্বজিতের কন্ঠে বেজে যাচ্ছে,
'তোর ভাবনার করিডোরে সারাদিন হেঁটে হেঁটে যেন আমি মরেছি'
ওহ এতক্ষনে বুঝতে পারলাম ক্ষেতে আলু চাষ করা হয়েছে। মাইলের পর মাইল শুধু আলু আর আলু! আলুর দাম নিশ্চয়ই এবারো কম হবে। মুল চাষিরা কখনো ফসলের ন্যায্য মূল্য পায়না। ফড়িয়া বা দালালেরা সব থেকে বেশী লাভবান হয়।
বাস একটা ব্রিজের উপর দিয়ে যাচ্ছে। আমি নীচের দিকে তাকাতে পারছিনা, এখান থেকে বাস নীচে পড়লে আজ আর বাড়ি ফেরা হবেনা। যাক আল্লাহর রহমতে ব্রীজ পার হোল বাস।
একটা গান পেলাম সেদিন নেটে। কথা গুলো বেশ,
'মাটি খুঁড়ে পুতে রাখি আমার অনেক ভুল,
কেউ দেখেনি ঘাসে হারানো তোমার খেলার পুতুল।
তাই খুঁজতেই কাটলো বেলা,
ডুবসাঁতার মন
চুরি করে নেওয়া সময়, আমার উপার্জন।'
এখন বাজে দুপুর দুটো। রাস্তায় লোকজনের চলাচল কমে গেছে। দোকানগুলোও বেশীর ভাগ বন্ধ। দুপুরের খাওয়া শেষে একটু বিছানায় গড়িয়ে নেয়ার সময় এখন।
বাস ছুটে চলেছে বাঁশ ঝাড়, বাবলা, কড়ই তালগাছ, নিমগাছের সারিকে পেছনে ফেলে।
খালি পায়ে ছাগলের পাল নিয়ে ঘরে ফেরে কিশোরি,
ক্লান্ত কৃষক ক্ষেতের আল ধরে হেঁটে যায় ঘারে কোদাল নিয়ে। ফেরীওয়ালা সাইকেলে করে দুটাকা দামের সামগ্রি ফেরি করে ফেরে। যা নেবেন তাই দুটাকা।
প্রচন্ড সুন্দর একটা দুপুর। একটা কবিতার লাইন মনে পড়ল ' থাকুক তোমার একটু স্মৃতি থাকুক. একলা থাকার খুব দুপুরে একটা ঘুঘু ডাকুক।'
আজকের দুপুরটা সত্যিই ঘুঘুডাকার দুপুর।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




